ন্ত্রী শেখ হাসিনাকে জানিয়েছেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। গতকাল বুধবার বিকেলে কাঠমাণ্ডুর সোয়েলটি হোটেলে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে বৈঠকে তিনি এ কথা জানান। প্রায় পৌনে এক ঘণ্টার ওই বৈঠকে দক্ষিণ এশিয়ায় গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠায় সহযোগিতা, বর্ধমান বিস্ফোরণ থেকে শুরু করে জঙ্গিবাদ-সন্ত্রাসবাদ নিয়েও দুই সরকারপ্রধানের বিস্তারিত আলোচনা হয়েছে। বৈঠকে পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী, প্রধানমন্ত্রীর নিরাপত্তা উপদেষ্টা মেজর জেনারেল (অব.) তারিক আহমেদ সিদ্দিকী, ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী সুষমা স্বরাজ, ভারতের প্রধানমন্ত্রীর জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত দোভালসহ উভয় দেশের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। বৈঠকের পর পররাষ্ট্রসচিব মো. শহীদুল হক সাংবাদিকদের জানান, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বৈঠকে ভারতের প্রধানমন্ত্রীর কাছে এলবিএ ও তিস্তা ইস্যুতে অগ্রগতি সম্পর্কে জানতে চেয়েছিলেন। এর জবাবে ভারতের প্রধানমন্ত্রী বলেন, দ্রুত ওই ইস্যুগুলো নিষ্পত্তির জন্য তিনি জোরালো প্রয়াস চালিয়ে যাচ্ছেন। এই চুক্তি দুটির বিষয়ে ভারতে ঐকমত্য গড়ার চেষ্টা চলছে। বৈঠকে নরেন্দ্র মোদি শেখ হাসিনাকে জানান, ভারতের যৌথ সংসদীয় কমিটি স্থলসীমান্ত চুক্তি নিয়ে একটি প্রতিবেদন সংসদে উপস্থাপন করবে। এরপর এটি নিয়ে সংসদের উভয় কক্ষ- লোকসভা ও রাজ্যসভায় আলোচনা হবে। আর তিস্তার পানি বণ্টন চুক্তি প্রসঙ্গে নরেন্দ্র মোদি বলেন, এ বিষয়ে আলোচনা চলছে। বৈঠকে উভয় নেতাই সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে তাঁদের অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করেন। নরেন্দ্র মোদি ভারতের ত্রিপুরায় পালাটানা বিদ্যুৎ কেন্দ্রের দ্বিতীয় পর্যায়ের উদ্বোধন অনুষ্ঠানে একজন মন্ত্রীর নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধিদল পাঠাতে শেখ হাসিনাকে অনুরোধ জানান। নরেন্দ্র মোদি বাংলাদেশ সফরেরও আগ্রহ প্রকাশ করেন। জানা গেছে, বাংলাদেশ ও ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রীরা দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর গণতন্ত্রে বৃহৎ পরিসরে সহযোগিতার বিষয়ে আলোচনা করেছেন। গতকাল সন্ধ্যায় কাঠমাণ্ডুর প্লাটিনাম হোটেলে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র সৈয়দ আকবর উদ্দিন বলেছেন, বৈঠকে উভয় প্রধানমন্ত্রী জঙ্গিবাদ-সন্ত্রাসবাদ নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করেছেন। গতকাল সন্ধ্যায় কাঠমাণ্ডুর র্যাডিসন হোটেলে অপর এক সংবাদ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার তথ্য উপদেষ্টা ইকবাল সোবহান চৌধুরী বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে বিকেল থেকে চারটি দ্বিপক্ষীয় বৈঠক হয়েছে। প্রথমে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে সৌহার্র্দ্যপূর্ণ পরিবেশে আলোচনা হয়েছে। মোদি জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশনের ফাঁকে শেখ হাসিনার সঙ্গে অনুষ্ঠিত বৈঠকের বিষয়টি স্মরণ করেন। আজও (গতকাল) দুই নেতার মাঝে খুব খোলামেলা আলোচনা হয়েছে। এ সময় মোদি সার্ককে আরো গতিশীল করার ওপর গুরুত্বারোপ করে একে আরো কার্যকর করার কথা বলেন। নতুবা সার্কের প্রয়োজনীয়তা অন্যদের উপলব্ধি করানো যাবে না বলে মন্তব্য করেন তিনি। ইকবাল সোবহান চৌধুরী ব্রিফিংয়ে জানান, নরেন্দ্র মোদি ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও আসিয়ানের উদাহরণ টেনে বলেছেন যে ওই সংস্থাগুলো অনেক বেশি ভূমিকা রাখছে। কিন্তু প্রায় তিন দশক পরেও সার্ক সেই ভূমিকা রাখতে পারছে না। মোদির এই কথার প্রেক্ষিতে শেখ হাসিনা তাঁর সঙ্গে একমত পোষণ করে বলেন, সার্কের গতিশীলতা আনতে এই অঞ্চলে সৌহার্দ্যপূর্ণ পরিবেশ তৈরি করতে হবে। ব্রিফিংয়ে বলা হয়, শেখ হাসিনা জঙ্গিবাদ দমনের কথা তুললে মোদি এর সঙ্গে একমত হন। মোদি বলেন, জঙ্গিবাদ দমনে এই অঞ্চলের সব দেশকে একযোগে কাজ করা উচিত। বর্ধমানের ঘটনার কথা তুলে ধরে মোদি বলেন, ‘জঙ্গিবাদ দমনে আমাদের একসঙ্গে কাজ করতে হবে।’ এ ক্ষেত্রে বাংলাদেশ-ভারতের গোয়েন্দা সংস্থার মধ্যে তথ্য বিনিময় করার ওপর গুরুত্বারোপ করেন মোদি। শেখ হাসিনা বলেন, ‘দক্ষিণ এশিয়ায় শান্তি ও উন্নয়নের অন্তরায় এই জঙ্গিবাদ। তাই জঙ্গিবাদ দমনে আমাদের একসঙ্গে কাজ করতে হবে।’ প্রধানমন্ত্রীর তথ্য উপদেষ্টা জানান, দুই দেশের দ্বিপক্ষীয় বিষয়গুলো নিয়ে মোদি নিজে থেকে আলোচনা শুরু করেন। তাঁর মধ্যে তিস্তা নদীর পানিবণ্টন চুক্তি এবং স্থল সীমান্ত চুক্তি কার্যকর করার বিষয়ে তিনি হিন্দিতে বলেন, ‘পানি অ্যান্ড জমি মে কসিস কাররাহু’ অর্থাৎ তিস্তা ও স্থল সীমান্ত চুক্তি নিয়ে তিনি চেষ্টা করছেন। মোদি বলেছেন, এই চেষ্টা অব্যাহত থাকবে। মোদি বাংলাদেশ সম্পর্কে হিন্দিতে বলেন, ‘বাংলাদেশ আপনা লাগতাহায়’ অর্থাৎ বাংলাদেশকে তাঁর কাছে আপন মনে হয়। বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্ক উন্নয়নের বিষয়ে মোদি শেখ হাসিনাকে আশ্বস্ত করেন। ইকবাল সোবহান চৌধুরী জানান, শেখ হাসিনা মোদিকে বাংলাদেশ সফরে আসতে আমন্ত্রণ জানালে মোদি হেসে বলেন, ‘আমি আসব, এ বিষয়ে আলোচনা চলছে।’ ইকবাল সোবহান চৌধুরী বলেন, মোদি তাঁর ঢাকা সফরের সময় তিস্তা ও স্থল সীমান্ত চুক্তির বিরোধিতাকারী পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে সঙ্গে নিয়ে যাবেন বলেও জানান। এ সময় মোদি আরো বলেন, সীমান্ত চুক্তি নিয়ে মমতার বিরোধিতা ছিল; এখন তিনি এর পক্ষে মত দিয়েছেন। তাই খুব দ্রুত হয়ে যাবে। প্রধানমন্ত্রীর তথ্য উপদেষ্টা বলেন, ‘জাতিসংঘের ৭০ বছর পূর্তির কথা উল্লেখ করে মোদি জাতিসংঘে দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর সক্রিয় ভূমিকা পালনের বিষয়ে শেখ হাসিনার সহযোগিতা চান। এই অঞ্চলের মানুষের উন্নয়নে আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোতে আমাদের ভূমিকা বাড়াতে হবে।’ শেখ হাসিনা এ সময় বলেন, ‘আমরা আলোচনা করে আমাদের করণীয় ঠিক করব।’ প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা আরো জানান, বাংলাদেশের নেপাল ও ভুটানের সঙ্গে ট্রানজিটের জন্য ভারতের ট্রানজিট দেওয়ার বিষয়ে মোদির সঙ্গে আলোচনা হয়েছে। মোদি এ বিষয়ে শেখ হাসিনাকে ইতিবাচক সাড়া দিয়েছেন। উল্লেখ্য, ১৯৭৪ সালে বাংলাদেশের সঙ্গে স্থল সীমান্ত চুক্তি স্বাক্ষর করলেও এখনো তা অনুমোদন করেনি ভারত। ২০১১ সালে ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ড. মনমোহন সিংয়ের বাংলাদেশ সফরের সময় ওই চুক্তির একটি প্রটোকল স্বাক্ষরিত হয়। এর পর থেকে ওই চুক্তি ভারতে অনুমোদনের অপেক্ষায় আছে। সীমান্তের বিষয়টি ভারতের সংবিধানে থাকায় এটি অনুমোদনের জন্য ওই দেশটির সংবিধান সংশোধন করতে হবে। সংসদে সংখ্যাগরিষ্ঠতার অভাবে মনমোহন সিংয়ের সরকারের সময় ওই চুক্তি অনুমোদন করা যায়নি। গত মে মাসে ভারতে নরেন্দ্র মোদির দল বিজেপি সংসদের নিম্নকক্ষ লোকসভায় একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা পাওয়ায় সেটি এখন অনুমোদন করা হবে বলে বাংলাদেশ আশা করছে। গত সেপ্টেম্বর মাসে নিউ ইয়র্কে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের অধিবেশনের ফাঁকে শেখ হাসিনার সঙ্গে বৈঠকে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি স্থলসীমান্ত চুক্তি ইস্যুর দ্রুত নিষ্পত্তির আশ্বাস দিয়েছিলেন। প্রায় দুই মাস পর গতকাল কাঠমাণ্ডুতে সার্ক শীর্ষ সম্মেলনের ফাঁকে অনুষ্ঠিত বৈঠকেও তিনি একই আশ্বাস দিলেন। সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো জানায়, ভারতের সংসদে এবারের শীতকালীন অধিবেশনেই স্থলসীমান্ত চুক্তি অনুমোদনের জন্য সংবিধান সংশোধন বিলটি ওঠার কথা রয়েছে। মোদি সরকারও বিষয়টিকে গুরুত্ব দিয়ে ভারতে জাতীয় ঐকমত্য সৃষ্টির জোর চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। অন্যদিকে তিস্তা নদীর পানিবণ্টন চুক্তিটিও ২০১১ সালের সেপ্টেম্বর মাসে ড. মনমোহন সিংয়ের বাংলাদেশ সফরের সময় স্বাক্ষরের কথা ছিল। কিন্তু সে সময় পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের আপত্তিতে তা ভেস্তে যায়। এরপর বাংলাদেশ বিভিন্ন বৈঠকে ভারতকে ওই চুক্তি স্বাক্ষরের আহ্বান জানিয়ে আসছে। ২০১১ সালের সেপ্টেম্বর মাসে তিস্তা চুক্তি স্বাক্ষরের উদ্যোগ ভেস্তে যাওয়ার দুই মাস পর নভেম্বর মাসে মালদ্বীপে ১৭তম সার্ক শীর্ষ সম্মেলনের ফাঁকে অনুষ্ঠিত বৈঠকেও ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ড. মনমোহন সিং যত দ্রুত সম্ভব স্থলসীমান্ত চুক্তি অনুমোদন ও তিস্তা চুক্তি স্বাক্ষরের বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে আশ্বাস দিয়েছিলেন। আফগানিস্তানের প্রেসিডেন্ট, পাকিস্তান ও নেপালের প্রধানমন্ত্রীদের সঙ্গে শেখ হাসিনার বৈঠক : এদিকে পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী বলেছেন, নেপালের প্রধানমন্ত্রী সুশীল কৈরালার সঙ্গে শেখ হাসিনার বৈঠকে উভয় পক্ষই দুই দেশের মধ্যে আন্তযোগাযোগ বৃদ্ধি এবং ব্যবসা-বাণিজ্যের প্রসার এবং সার্ক দেশগুলোর যৌথ প্রাকৃতিক সম্পদ ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে সমষ্টিগত সমৃদ্ধির প্রত্যয় ব্যক্ত করেন। বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী নেপালের বিপুল জলবিদ্যুৎ সম্ভাবনার কথা উল্লেখ করে নেপাল থেকে বিদ্যুৎ আমদানির বিষয়ে আগ্রহ প্রকাশ করেন। এ ছাড়া বাংলাদেশ থেকে ওষুধ সামগ্রী, তৈরি পোশাক, চামড়াজাত, সিরামিক এবং সবজি ও অন্যান্য কৃষিজাত পণ্য নেপালে রপ্তানির আগ্রহ ব্যক্ত করেন। পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফের সঙ্গে শেখ হাসিনার বৈঠক প্রসঙ্গে তাঁর তথ্য উপদেষ্টা ইকবাল সোবহান জানান, শেখ হাসিনা তৃতীয়বারের মতো বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হওয়ায় পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফ তাঁকে অভিনন্দন জানান। শেখ হাসিনার নেতৃত্বে জঙ্গিবাদ দমন এবং বিদ্যুৎ সমস্যা সমাধান করার জন্য তাঁর ভূয়সী প্রশংসা করেন। বাংলাদেশের বিদ্যুৎ সমস্যা সমাধানের কৌশল জানতে পাকিস্তানের একটি প্রতিনিধিদল আসবে উল্লেখ করে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিদ্যুৎ এবং জঙ্গিবাদ আমাদের প্রধান সমস্যা। জঙ্গিবাদের জন্য পাকিস্তানের ১০৩ বিলিয়ন ডলার ক্ষতি হয়েছে। পাকিস্তানের গণতন্ত্রের জন্য সংগ্রাম করা এবং গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনার জন্য শেখ হাসিনা নওয়াজ শরিফের প্রশংসা করেন। তাঁর স্ত্রী এবং মেয়ে শেখ হাসিনার ভক্ত বলে উল্লেখ করেন নওয়াজ। বাংলাদেশে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার নিয়ে পাকিস্তানের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী চৌধুরী নিসার আলী খানের বিরূপ মন্তব্য নিয়ে কোনো আলোচনা হয়েছে কি না জানতে চাইলে প্রধানমন্ত্রীর তথ্য উপদেষ্টা বলেন, এ বিষয়ে বৈঠকে কোনো আলোচনা হয়নি। প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকে আফগানিস্তানের প্রেসিডেন্ট আশরাফ ঘানি বাংলাদেশে জঙ্গিবাদ দমনে সাফল্যের কৌশল সম্পর্কে জানতে চান। শেখ হাসিনা বলেন, জঙ্গি দমনে তাঁকে অনেক ঝুঁকি নিতে হয়েছে। বাংলাদেশসহ সার্কের অপর সদস্য দেশগুলোর সম্মতিক্রমে আগামী সার্ক শীর্ষ সম্মেলন পাকিস্তানে অনুষ্ঠিত হবে।
Headlines from most popular newspapers of Bangladesh. বাংলাদেশে প্রকাশিত প্রধান প্রধান দৈনিক পত্রিকার সংবাদ শিরোনামগুলো এক নজরে দেখে নিন।
Thursday, November 27, 2014
সীমান্ত ও তিস্তা চুক্তিতে জোর চেষ্টা চলছে:কালের কন্ঠ
ন্ত্রী শেখ হাসিনাকে জানিয়েছেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। গতকাল বুধবার বিকেলে কাঠমাণ্ডুর সোয়েলটি হোটেলে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে বৈঠকে তিনি এ কথা জানান। প্রায় পৌনে এক ঘণ্টার ওই বৈঠকে দক্ষিণ এশিয়ায় গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠায় সহযোগিতা, বর্ধমান বিস্ফোরণ থেকে শুরু করে জঙ্গিবাদ-সন্ত্রাসবাদ নিয়েও দুই সরকারপ্রধানের বিস্তারিত আলোচনা হয়েছে। বৈঠকে পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী, প্রধানমন্ত্রীর নিরাপত্তা উপদেষ্টা মেজর জেনারেল (অব.) তারিক আহমেদ সিদ্দিকী, ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী সুষমা স্বরাজ, ভারতের প্রধানমন্ত্রীর জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত দোভালসহ উভয় দেশের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। বৈঠকের পর পররাষ্ট্রসচিব মো. শহীদুল হক সাংবাদিকদের জানান, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বৈঠকে ভারতের প্রধানমন্ত্রীর কাছে এলবিএ ও তিস্তা ইস্যুতে অগ্রগতি সম্পর্কে জানতে চেয়েছিলেন। এর জবাবে ভারতের প্রধানমন্ত্রী বলেন, দ্রুত ওই ইস্যুগুলো নিষ্পত্তির জন্য তিনি জোরালো প্রয়াস চালিয়ে যাচ্ছেন। এই চুক্তি দুটির বিষয়ে ভারতে ঐকমত্য গড়ার চেষ্টা চলছে। বৈঠকে নরেন্দ্র মোদি শেখ হাসিনাকে জানান, ভারতের যৌথ সংসদীয় কমিটি স্থলসীমান্ত চুক্তি নিয়ে একটি প্রতিবেদন সংসদে উপস্থাপন করবে। এরপর এটি নিয়ে সংসদের উভয় কক্ষ- লোকসভা ও রাজ্যসভায় আলোচনা হবে। আর তিস্তার পানি বণ্টন চুক্তি প্রসঙ্গে নরেন্দ্র মোদি বলেন, এ বিষয়ে আলোচনা চলছে। বৈঠকে উভয় নেতাই সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে তাঁদের অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করেন। নরেন্দ্র মোদি ভারতের ত্রিপুরায় পালাটানা বিদ্যুৎ কেন্দ্রের দ্বিতীয় পর্যায়ের উদ্বোধন অনুষ্ঠানে একজন মন্ত্রীর নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধিদল পাঠাতে শেখ হাসিনাকে অনুরোধ জানান। নরেন্দ্র মোদি বাংলাদেশ সফরেরও আগ্রহ প্রকাশ করেন। জানা গেছে, বাংলাদেশ ও ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রীরা দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর গণতন্ত্রে বৃহৎ পরিসরে সহযোগিতার বিষয়ে আলোচনা করেছেন। গতকাল সন্ধ্যায় কাঠমাণ্ডুর প্লাটিনাম হোটেলে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র সৈয়দ আকবর উদ্দিন বলেছেন, বৈঠকে উভয় প্রধানমন্ত্রী জঙ্গিবাদ-সন্ত্রাসবাদ নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করেছেন। গতকাল সন্ধ্যায় কাঠমাণ্ডুর র্যাডিসন হোটেলে অপর এক সংবাদ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার তথ্য উপদেষ্টা ইকবাল সোবহান চৌধুরী বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে বিকেল থেকে চারটি দ্বিপক্ষীয় বৈঠক হয়েছে। প্রথমে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে সৌহার্র্দ্যপূর্ণ পরিবেশে আলোচনা হয়েছে। মোদি জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশনের ফাঁকে শেখ হাসিনার সঙ্গে অনুষ্ঠিত বৈঠকের বিষয়টি স্মরণ করেন। আজও (গতকাল) দুই নেতার মাঝে খুব খোলামেলা আলোচনা হয়েছে। এ সময় মোদি সার্ককে আরো গতিশীল করার ওপর গুরুত্বারোপ করে একে আরো কার্যকর করার কথা বলেন। নতুবা সার্কের প্রয়োজনীয়তা অন্যদের উপলব্ধি করানো যাবে না বলে মন্তব্য করেন তিনি। ইকবাল সোবহান চৌধুরী ব্রিফিংয়ে জানান, নরেন্দ্র মোদি ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও আসিয়ানের উদাহরণ টেনে বলেছেন যে ওই সংস্থাগুলো অনেক বেশি ভূমিকা রাখছে। কিন্তু প্রায় তিন দশক পরেও সার্ক সেই ভূমিকা রাখতে পারছে না। মোদির এই কথার প্রেক্ষিতে শেখ হাসিনা তাঁর সঙ্গে একমত পোষণ করে বলেন, সার্কের গতিশীলতা আনতে এই অঞ্চলে সৌহার্দ্যপূর্ণ পরিবেশ তৈরি করতে হবে। ব্রিফিংয়ে বলা হয়, শেখ হাসিনা জঙ্গিবাদ দমনের কথা তুললে মোদি এর সঙ্গে একমত হন। মোদি বলেন, জঙ্গিবাদ দমনে এই অঞ্চলের সব দেশকে একযোগে কাজ করা উচিত। বর্ধমানের ঘটনার কথা তুলে ধরে মোদি বলেন, ‘জঙ্গিবাদ দমনে আমাদের একসঙ্গে কাজ করতে হবে।’ এ ক্ষেত্রে বাংলাদেশ-ভারতের গোয়েন্দা সংস্থার মধ্যে তথ্য বিনিময় করার ওপর গুরুত্বারোপ করেন মোদি। শেখ হাসিনা বলেন, ‘দক্ষিণ এশিয়ায় শান্তি ও উন্নয়নের অন্তরায় এই জঙ্গিবাদ। তাই জঙ্গিবাদ দমনে আমাদের একসঙ্গে কাজ করতে হবে।’ প্রধানমন্ত্রীর তথ্য উপদেষ্টা জানান, দুই দেশের দ্বিপক্ষীয় বিষয়গুলো নিয়ে মোদি নিজে থেকে আলোচনা শুরু করেন। তাঁর মধ্যে তিস্তা নদীর পানিবণ্টন চুক্তি এবং স্থল সীমান্ত চুক্তি কার্যকর করার বিষয়ে তিনি হিন্দিতে বলেন, ‘পানি অ্যান্ড জমি মে কসিস কাররাহু’ অর্থাৎ তিস্তা ও স্থল সীমান্ত চুক্তি নিয়ে তিনি চেষ্টা করছেন। মোদি বলেছেন, এই চেষ্টা অব্যাহত থাকবে। মোদি বাংলাদেশ সম্পর্কে হিন্দিতে বলেন, ‘বাংলাদেশ আপনা লাগতাহায়’ অর্থাৎ বাংলাদেশকে তাঁর কাছে আপন মনে হয়। বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্ক উন্নয়নের বিষয়ে মোদি শেখ হাসিনাকে আশ্বস্ত করেন। ইকবাল সোবহান চৌধুরী জানান, শেখ হাসিনা মোদিকে বাংলাদেশ সফরে আসতে আমন্ত্রণ জানালে মোদি হেসে বলেন, ‘আমি আসব, এ বিষয়ে আলোচনা চলছে।’ ইকবাল সোবহান চৌধুরী বলেন, মোদি তাঁর ঢাকা সফরের সময় তিস্তা ও স্থল সীমান্ত চুক্তির বিরোধিতাকারী পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে সঙ্গে নিয়ে যাবেন বলেও জানান। এ সময় মোদি আরো বলেন, সীমান্ত চুক্তি নিয়ে মমতার বিরোধিতা ছিল; এখন তিনি এর পক্ষে মত দিয়েছেন। তাই খুব দ্রুত হয়ে যাবে। প্রধানমন্ত্রীর তথ্য উপদেষ্টা বলেন, ‘জাতিসংঘের ৭০ বছর পূর্তির কথা উল্লেখ করে মোদি জাতিসংঘে দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর সক্রিয় ভূমিকা পালনের বিষয়ে শেখ হাসিনার সহযোগিতা চান। এই অঞ্চলের মানুষের উন্নয়নে আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোতে আমাদের ভূমিকা বাড়াতে হবে।’ শেখ হাসিনা এ সময় বলেন, ‘আমরা আলোচনা করে আমাদের করণীয় ঠিক করব।’ প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা আরো জানান, বাংলাদেশের নেপাল ও ভুটানের সঙ্গে ট্রানজিটের জন্য ভারতের ট্রানজিট দেওয়ার বিষয়ে মোদির সঙ্গে আলোচনা হয়েছে। মোদি এ বিষয়ে শেখ হাসিনাকে ইতিবাচক সাড়া দিয়েছেন। উল্লেখ্য, ১৯৭৪ সালে বাংলাদেশের সঙ্গে স্থল সীমান্ত চুক্তি স্বাক্ষর করলেও এখনো তা অনুমোদন করেনি ভারত। ২০১১ সালে ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ড. মনমোহন সিংয়ের বাংলাদেশ সফরের সময় ওই চুক্তির একটি প্রটোকল স্বাক্ষরিত হয়। এর পর থেকে ওই চুক্তি ভারতে অনুমোদনের অপেক্ষায় আছে। সীমান্তের বিষয়টি ভারতের সংবিধানে থাকায় এটি অনুমোদনের জন্য ওই দেশটির সংবিধান সংশোধন করতে হবে। সংসদে সংখ্যাগরিষ্ঠতার অভাবে মনমোহন সিংয়ের সরকারের সময় ওই চুক্তি অনুমোদন করা যায়নি। গত মে মাসে ভারতে নরেন্দ্র মোদির দল বিজেপি সংসদের নিম্নকক্ষ লোকসভায় একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা পাওয়ায় সেটি এখন অনুমোদন করা হবে বলে বাংলাদেশ আশা করছে। গত সেপ্টেম্বর মাসে নিউ ইয়র্কে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের অধিবেশনের ফাঁকে শেখ হাসিনার সঙ্গে বৈঠকে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি স্থলসীমান্ত চুক্তি ইস্যুর দ্রুত নিষ্পত্তির আশ্বাস দিয়েছিলেন। প্রায় দুই মাস পর গতকাল কাঠমাণ্ডুতে সার্ক শীর্ষ সম্মেলনের ফাঁকে অনুষ্ঠিত বৈঠকেও তিনি একই আশ্বাস দিলেন। সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো জানায়, ভারতের সংসদে এবারের শীতকালীন অধিবেশনেই স্থলসীমান্ত চুক্তি অনুমোদনের জন্য সংবিধান সংশোধন বিলটি ওঠার কথা রয়েছে। মোদি সরকারও বিষয়টিকে গুরুত্ব দিয়ে ভারতে জাতীয় ঐকমত্য সৃষ্টির জোর চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। অন্যদিকে তিস্তা নদীর পানিবণ্টন চুক্তিটিও ২০১১ সালের সেপ্টেম্বর মাসে ড. মনমোহন সিংয়ের বাংলাদেশ সফরের সময় স্বাক্ষরের কথা ছিল। কিন্তু সে সময় পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের আপত্তিতে তা ভেস্তে যায়। এরপর বাংলাদেশ বিভিন্ন বৈঠকে ভারতকে ওই চুক্তি স্বাক্ষরের আহ্বান জানিয়ে আসছে। ২০১১ সালের সেপ্টেম্বর মাসে তিস্তা চুক্তি স্বাক্ষরের উদ্যোগ ভেস্তে যাওয়ার দুই মাস পর নভেম্বর মাসে মালদ্বীপে ১৭তম সার্ক শীর্ষ সম্মেলনের ফাঁকে অনুষ্ঠিত বৈঠকেও ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ড. মনমোহন সিং যত দ্রুত সম্ভব স্থলসীমান্ত চুক্তি অনুমোদন ও তিস্তা চুক্তি স্বাক্ষরের বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে আশ্বাস দিয়েছিলেন। আফগানিস্তানের প্রেসিডেন্ট, পাকিস্তান ও নেপালের প্রধানমন্ত্রীদের সঙ্গে শেখ হাসিনার বৈঠক : এদিকে পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী বলেছেন, নেপালের প্রধানমন্ত্রী সুশীল কৈরালার সঙ্গে শেখ হাসিনার বৈঠকে উভয় পক্ষই দুই দেশের মধ্যে আন্তযোগাযোগ বৃদ্ধি এবং ব্যবসা-বাণিজ্যের প্রসার এবং সার্ক দেশগুলোর যৌথ প্রাকৃতিক সম্পদ ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে সমষ্টিগত সমৃদ্ধির প্রত্যয় ব্যক্ত করেন। বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী নেপালের বিপুল জলবিদ্যুৎ সম্ভাবনার কথা উল্লেখ করে নেপাল থেকে বিদ্যুৎ আমদানির বিষয়ে আগ্রহ প্রকাশ করেন। এ ছাড়া বাংলাদেশ থেকে ওষুধ সামগ্রী, তৈরি পোশাক, চামড়াজাত, সিরামিক এবং সবজি ও অন্যান্য কৃষিজাত পণ্য নেপালে রপ্তানির আগ্রহ ব্যক্ত করেন। পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফের সঙ্গে শেখ হাসিনার বৈঠক প্রসঙ্গে তাঁর তথ্য উপদেষ্টা ইকবাল সোবহান জানান, শেখ হাসিনা তৃতীয়বারের মতো বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হওয়ায় পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফ তাঁকে অভিনন্দন জানান। শেখ হাসিনার নেতৃত্বে জঙ্গিবাদ দমন এবং বিদ্যুৎ সমস্যা সমাধান করার জন্য তাঁর ভূয়সী প্রশংসা করেন। বাংলাদেশের বিদ্যুৎ সমস্যা সমাধানের কৌশল জানতে পাকিস্তানের একটি প্রতিনিধিদল আসবে উল্লেখ করে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিদ্যুৎ এবং জঙ্গিবাদ আমাদের প্রধান সমস্যা। জঙ্গিবাদের জন্য পাকিস্তানের ১০৩ বিলিয়ন ডলার ক্ষতি হয়েছে। পাকিস্তানের গণতন্ত্রের জন্য সংগ্রাম করা এবং গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনার জন্য শেখ হাসিনা নওয়াজ শরিফের প্রশংসা করেন। তাঁর স্ত্রী এবং মেয়ে শেখ হাসিনার ভক্ত বলে উল্লেখ করেন নওয়াজ। বাংলাদেশে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার নিয়ে পাকিস্তানের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী চৌধুরী নিসার আলী খানের বিরূপ মন্তব্য নিয়ে কোনো আলোচনা হয়েছে কি না জানতে চাইলে প্রধানমন্ত্রীর তথ্য উপদেষ্টা বলেন, এ বিষয়ে বৈঠকে কোনো আলোচনা হয়নি। প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকে আফগানিস্তানের প্রেসিডেন্ট আশরাফ ঘানি বাংলাদেশে জঙ্গিবাদ দমনে সাফল্যের কৌশল সম্পর্কে জানতে চান। শেখ হাসিনা বলেন, জঙ্গি দমনে তাঁকে অনেক ঝুঁকি নিতে হয়েছে। বাংলাদেশসহ সার্কের অপর সদস্য দেশগুলোর সম্মতিক্রমে আগামী সার্ক শীর্ষ সম্মেলন পাকিস্তানে অনুষ্ঠিত হবে।
Subscribe to:
Post Comments (Atom)
No comments:
Post a Comment