Thursday, December 25, 2014

আদালতে মহড়ার দিনেই বকশীবাজার রণক্ষেত্র:কালের কন্ঠ

রাজধানীর বকশীবাজার আলিয়া মাদ্রাসা মাঠে স্থাপিত বিশেষ জজ আদালতে খালেদা জিয়ার হাজিরাকে কেন্দ্র করে বিএনপি ও এর অঙ্গসংগঠনের নেতা-কর্মীদের সঙ্গে পুলিশ ও ছাত্রলীগের ব্যাপক
সংঘর্ষ হয়েছে। বকশীবাজার, চানখাঁরপুলসহ আশপাশের এলাকায় প্রায় এক ঘণ্টা ধরে দফায় দফায় তাণ্ডব চলে। ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের জরুরি বিভাগে ঢুকেও সেখানে লুকানো প্রতিপক্ষের ওপর হামলা চালানো হয়। এতে রোগী ও দর্শনার্থীদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়ায়। সংঘর্ষে আওয়ামী লীগের এমপি ছবি বিশ্বাসসহ প্রায় অর্ধশত ব্যক্তি আহত হয়েছে। হামলাকারীরা এমপির গাড়িতে আগুন ধরিয়ে দেয়। এ ঘটনায় ভ্রাম্যমাণ আদালত এক কলেজছাত্রকে দুই বছরের সাজা দিয়েছেন। সংঘর্ষে আহতদের ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশ শতাধিক রাউন্ড টিয়ার গ্যাসের শেল ও ফাঁকা গুলি ছোড়ে। এ ঘটনার পর এলাকায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়। ওদিকে সংঘর্ষ চলাকালেই আদালতে হাজিরা দেন বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। এ সময় দলীয় নেতারা ও চেয়ারপারসনের ব্যক্তিগত নিরাপত্তা বাহিনী (সিএসএফ) তাঁকে বহনকারী গাড়িটি ঘিরে ছিল। সংঘর্ষের পরপরই বিএনপি সমর্থিতদের খুঁজতে ছাত্রলীগকর্মীরা আশপাশের বিভিন্ন স্থাপনাসহ ঢাবির কবি সুফিয়া কামাল ছাত্রী হলেও অতর্কিত হামলা চালায় বলে অভিযোগ উঠেছে। এ হামলার সময় পুলিশ নীরব ভূমিকা পালন করেছে বলে অভিযোগ করেছেন বিএনপির নেতা-কর্মীরা। হামলা-সংঘর্ষের ঘটনায় গতকাল রাতে রাজধানী চকবাজার থানায় পুলিশ বাদী হয়ে বিএনপির শতাধিক নেতা-কর্মীর বিরুদ্ধে একটি মামলা দায়ের করেছে। রাত পর্যন্ত ৫৪ জনকে আটক করা হয়েছে বলে জানা গেছে। প্রত্যক্ষদর্শী ও পুলিশ সূত্র জানায়, আলিয়া মাদ্রাসা মাঠে স্থাপিত বিশেষ জজ আদালতে খালেদা জিয়ার হাজিরাকে ঘিরে দুপুর সোয়া ১২টার দিকে বিএনপি, যুবদল ও ছাত্রদলের সহস্রাধিক নেতা-কর্মী বকশীবাজার আলিয়া মাদ্রাসা মোড়, ঢাকা মেডিক্যাল মোড়, মেডিক্যালের শহীদ ফজলে রাব্বি হল এলাকায় অবস্থান নেয়। এ সময় তারা খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে দায়েরকৃত মামলা প্রত্যাহারের দাবিসহ সরকারবিরোধী বিভিন্ন স্লোগান দিতে থাকে। এ সময় প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের ১ নম্বর গেটের সামনে ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা অবস্থান নেয়। সেখানে তারা বকশীবাজারের দিকে আসা ছাত্রদল ও বিএনপি কর্মীদের বাধা দেয়। ছাত্রলীগ নেতা-কর্মীদের হাতে ছিল লোহার রড, হকিস্টিক ও বাঁশের লাঠি। মুহূর্তের মধ্যে উভয় পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ ছড়িয়ে পড়ে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশ ফাঁকা গুলি ও টিয়ার গ্যাসের শেল ছোড়ে। সংঘর্ষের মধ্যেই ওই এলাকা দিয়ে বকশীবাজারে আদালতের দিকে অগ্রসর হয় খালেদা জিয়ার গাড়িবহর। খালেদা জিয়ার গাড়ি আলিয়া মাদ্রাসা মাঠে আদালতের ফটকে পৌঁছালে বিএনপি ও ছাত্রদলের কর্মীরাও ভেতরে ঢোকার চেষ্টা করে। এ সময় পুলিশ আবারও লাঠিপেটা শুরু করলে তারা পুলিশকে লক্ষ্য করে ইটপাটকেল ছুড়তে থাকে। একপর্যায়ে বিএনপি ও ছাত্রদলের কর্মীরা চানখাঁরপুলের দিকে সরে যায়। পরে পুলিশ ব্যাপক অ্যাকশনে গেলে সংঘর্ষ ছড়িয়ে পড়ে বুয়েটের পলাশী মোড়, চকবাজারের নাজিম উদ্দিন রোড, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকা, চানখাঁরপুল মোড়সহ আশপাশের এলাকায়। এ সময় সরকারবিরোধীরা রাস্তায় টায়ার জ্বালিয়ে বিক্ষোভ করতে থাকে। তারা ঢাকা মেডিক্যাল কলেজের ফজলে রাব্বি হলের দিকে এগোলে পুলিশ সাঁজোয়া যান নিয়ে তাদের তাড়া করে। এ ছাড়া ছাত্রলীগ কর্মীরা ওই এলাকায় ধাওয়া দিয়ে বিএনপি ও ছাত্রদলের বেশ কয়েকজনকে রাস্তায় ফেলে বেধড়ক পিটিয়ে আহত করে। আহতদের অনেকেই আত্মরক্ষার্থে যে যেখানে পারে পালিয়ে যায়। আবার অনেকে ঢামেক হাসপাতালে গিয়ে আশ্রয় নেয়। সেখানেও ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা হামলা চালায়। পাশাপাশি পুলিশও অ্যাকশনে যায়। এতে হাসপাতালের রোগী ও দর্শনার্থীদের মধ্যে ছড়িয়ে পড়ে আতঙ্ক। এ ছাড়া বিএনপির কিছু নেতা-কর্মী বঙ্গবাজার ও পুলিশ হেডকোয়ার্টার্সের সামনে গেলে সেখানেও হামলা চালায় ছাত্রলীগ। এ সময় দুটি সিএনজি বেবিট্যাক্সি ও কয়েকটি রিকশা ভাঙচুর হয়। পরে পুলিশ এসে লাঠিপেটা করলে বিএনপির নেতা-কর্মীরা ছত্রভঙ্গ হয়ে যায়। এমপির ওপর হামলা ও গাড়িতে আগুন : দুপুর ১২টা ৫০ মিনিটে ঢাকা মেডিক্যালের মূল গেটের সামনে একটি কালো রঙের নোয়া মাইক্রোবাস (ঢাকামেট্রো-চ-১৫-৬১৯৯) সংঘর্ষের মধ্যে পড়ে যায়। ওই সময় মাইক্রোবাসে ছিলেন নেত্রকোনা-১ (দুর্গাপুর-কলমাকান্দা) আসনের সরকারদলীয় সংসদ সদস্য ছবি বিশ্বাস, তাঁর এপিএস রকিব ও চালক মোহাম্মদ হাসনাইন। এ সময় কয়েকজন দুর্বৃত্ত গাড়ির গ্লাস ভাঙা শুরু করে দেয়। এক পর্যায়ে এমপি ছবি বিশ্বাসের ওপরও হামলা চালায় তারা। এমপি নিজেকে বাঁচাতে গায়ের কালো রঙের কোট খুলে গাড়ি থেকে নিচে নেমে পড়েন। সেখানেই তাঁকে মারধরের চেষ্টা হলে তিনি একটি চায়ের দোকানে আশ্রয় নেন। সেখানে তাঁকে কিলঘুষি মারতে থাকে হামলাকারীরা। পরে তিনি ঢামেক হাসপাতাল পুলিশ ক্যাম্পে গিয়ে আশ্রয় নেন। সংঘর্ষ থেমে গেলে তাঁকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। এ প্রসঙ্গে সংসদ সদস্য ছবি বিশ্বাস কালের কণ্ঠকে জানান, ‘পাবলিক লাইব্রেরিতে একটি আলোচনা সভার অনুষ্ঠানে মুক্তিযোদ্ধা ইয়াকুব আলী অসুস্থ হয়ে পড়েন। তাঁকে ঢামেক হাসপাতালের জরুরি বিভাগে নিয়ে যাচ্ছিলাম। হাসপাতালসংলগ্ন পুলিশ ক্যাম্পের কাছে আসতেই ধাওয়া-পাল্টাধাওয়া শুরু হয়। এ সময় দ্রুত গাড়ি ঘুরিয়ে হাসপাতাল ছেড়ে যাওয়ার সময় তাঁর গাড়িতে অতর্কিত হামলা চালিয়ে ভাঙচুর ও আগুন দেয় দুর্বৃত্তরা। তাঁর গাড়িতে সংসদ সদস্যের স্টিকার লাগানো ছিল। হামলাকারীদের একজন লাঠি দিয়ে তাঁর মাথা ও কানে আঘাত করে। এতে তাঁর কানের পেছনের অংশ ফেটে যায়। পরে তিনি পুলিশ ক্যাম্পে গিয়ে আশ্রয় নিয়ে নিজেকে রক্ষা করেন। তাঁকে উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।’ তিনি বলেন, বিএনপি-জামায়াত জোটের নেতা-কর্মীরাই তাঁকে হত্যার জন্য হামলা চালায়। এ ছাড়া গায়ে মুজিব কোট থাকায় দুর্বৃত্তরা বেশি করে হামলা চালায়। ঢামেক হাসপাতালের চিকিৎসক ডা. আফরিন কালের কণ্ঠকে জানান, আঘাতের কারণে এমপির বাম কানের লতির পেছন অংশ ফেটে গেছে। তাঁর কান থেকে রক্তক্ষরণ হয়। তবে তিনি আশঙ্কামুক্ত। তাঁকে দেখতে পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা এসেছেন। নেতা-কর্মীসহ অর্ধশত আহত : ত্রিমুখী সংঘর্ষে বিএনপি, ছাত্রদল, যুবদলকর্মীসহ অন্তত অর্ধশত ব্যক্তি আহত হয়েছে। তাদের ঢামেক হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। আবার অনেকে গ্রেপ্তার এড়াতে চিকিৎসা না নিয়েই চলে যায়। আহতদের মধ্যে প্রায় সাত-আট জনের অবস্থা গুরুতর। আহতদের মধ্যে আছেন- যুবদলের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক আ ফ ম মোজাম্মেল হক, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রদলকর্মী সোহেল রানা, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের আবদুল জলিল, এম এ ইসলাম, ছাত্রদলকর্মী সাঈফ উদ্দিন, এম মিজান, মো. হাসান, ফরহাদ, মিলন রায়, আল আমিন, কাওসার আহমেদ প্রমুখ। ওই এলাকায় কর্তব্যরত অবস্থায় আহত হন আরটিভির ক্যামেরাপারসন মোর্শেদ হোসেন। তিনি প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়েছেন। বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর দাবি করেন, ছাত্রলীগ-যুবলীগের হামলায় তাদের পক্ষের ছয় শতাধিক নেতা-কর্মী আহত হয়েছে। এদের মধ্যে গুরুতর আহত অর্ধশতাধিক। পুলিশের সামনে এই হামলা চালানো হয় বলে অভিযোগ করেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। একজনকে তাৎক্ষণিক সাজা : সংসদ সদস্য ছবি বিশ্বাসের গাড়িতে আগুন দেওয়ার অপরাধে গতকাল বিকেল সাড়ে ৩টার দিকে ঢামেক হাসপাতালের সামনে থেকে আফজাল হোসেন নামের এক যুবককে আটক করে পুলিশ। পরে ডিএমপির ভ্রাম্যমাণ আদালতকে তলব করা হয়। আদালতের ম্যাজিস্ট্রেট সারওয়ার আলম তাৎক্ষণিক আফজালকে দুই বছরের সাজা দেন। পরে তাঁকে কারাগারে পাঠানো হয়। সাজা দেওয়ার আগে আফজাল সাংবাদিকদের জানান, তিনি দনিয়া বিশ্ববিদ্যালয় কলেজের হিসাববিজ্ঞান বিভাগের তৃতীয় বর্ষের ছাত্র। একটি পারিবারিক কাজে শাহবাগ এলাকায় এসেছিলেন। মিছিল বা গাড়িতে আগুন দেওয়ার ঘটনায় তিনি জড়িত ছিলেন না। বিনা কারণে তাঁকে সাজা দেওয়া হয়েছে। তবে শাহবাগ থানার ইন্সপেক্টর তদন্ত হাবিল হোসেন জানান, আগুন দেওয়ার সময় আফজালকে ধরা হয়েছে। তিনি ছাত্রদলের কর্মী। আর আগুন লাগিয়েছে ছাত্রদল ও যুবদলের দুর্বৃত্তরা। ঢাবিতে ছাত্রলীগের আগাম প্রস্তুতি : খালেদা জিয়ার শুনানিকে কেন্দ্র করে গতকাল সকাল থেকেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মধুর ক্যান্টিনে অবস্থান নেয় ছাত্রলীগ। ক্যাম্পাসের প্রতিটি প্রবেশপথে বসানো হয় পুলিশি প্রহরা। মধুর ক্যান্টিনে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সভাপতি বদিউজ্জামান সোহাগ, কেন্দ্রীয় নিবার্হী সংসদের নেতা-কর্মী ও অন্যান্য শাখা হল ইউনিটের নেতা-কর্মী উপস্থিত ছিল। একপর্যায়ে বিএনপির অঙ্গসংগঠনের নেতা-কর্মীরা বুয়েট শাখা ছাত্রলীগের ওপর হামলা করেছে- এমন তথ্যে বদিউজ্জামান সোহাগসহ কেন্দ্রীয় নেতাদের নেতৃত্বে মিছিল সহকারে বুয়েটের দিকে এগিয়ে যায় ছাত্রলীগের কর্মীরা। এ সময় মিছিলটি মধুর ক্যান্টিন থেকে শুরু হয়ে উদয়ন স্কুলের সামনে দিয়ে পলাশীর মোড় হয়ে বুয়েটের দিকে এগিয়ে যায়। বুয়েট থেকে মিছিলটি বকশীবাজারের সামনে দিয়ে ফিরে এলে বুয়েটে ও মেডিক্যাল কলেজের ফজলে রাব্বী হলের সামনে বিএনপির অঙ্গসংগঠনের সঙ্গে ছাত্রলীগের নেতাদের সংঘর্ষ হয়। সংঘর্ষের সময় উপস্থিত ছাত্রলীগের সহসভাপতি জয়দেব নন্দী বলেন, বিএনপির অঙ্গসংগঠনের নেতা-কর্মীরা ছাত্রলীগের নেতাদের ওপর হামলা করেছে- এমন তথ্যের ভিত্তিতে মধুর ক্যান্টিন থেকে ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা সেদিকে এগিয়ে যায়। এ ছাড়া তারা ক্যাম্পাসে অস্থিতিশীল পরিবেশ সৃষ্টি করতে পারে- এমন তথ্যও ছিল। কাজেই ক্যাম্পাসের অস্থিতিশীল পরিস্থিতি রোধ করতে গেলে সংঘর্ষ বেধে যায়।’ ক্যাম্পাসে শোডাউন ও সমাবেশ : বিএনপির অঙ্গসংগঠনের সঙ্গে ছাত্রলীগের দফায় দফায় সংঘর্ষের পর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে নেতা-কর্মীদের নিয়ে শোডাউন ও সমাবেশ করেছে ছাত্রলীগ। দুপুর ১টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের অপরাজেয় বাংলার পাদদেশে এ সমাবেশ হয়। বদিউজ্জামান সোহাগের সভাপতিত্বে সমাবেশে ছাত্রলীগের সহসভাপতি জয়দেব নন্দী, জিয়াউল হক জিয়া, মহানগর দক্ষিণের সভাপতি আনিসুর রহমান আনিস প্রমুখ বক্তব্য দেন। সংঘর্ষ শেষে ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীদের একটি বিশাল মিছিল বুয়েটের ভেতর দিয়ে পলাশীর মোড় হয়ে জগন্নাথ হল এবং টিএসসিতে গিয়ে রাজু ভাস্কর্যের সামনে সমাবেশ করে। এতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও হল ইউনিট, মহানগর উত্তর, ঢাকা কলেজ, তিতুমীর কলেজ, তেজগাঁও কলেজ, বাঙলা কলেজ ও জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েক শ নেতা-কর্মী অংশ নেয়। ছাত্রলীগ সভাপতির বক্তব্য : ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা বিএনপির অঙ্গসংগঠনের ওপর হামলা করেছে- এ অভিযোগ অস্বীকার করে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সভাপতি বদিউজ্জামান সোহাগ বলেন, ছাত্রলীগের কেউ তাদের ওপর হামলা করেনি। বরং তারাই ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীর ওপর হামলা করেছে। আমি ও কেন্দ্রীয় নির্বাহী সংসদের সিনিয়র নেতারা বিক্ষুব্ধ নেতা-কর্মীদের শান্ত করে ফিরিয়ে নিয়ে এসেছি। তারা সকাল থেকে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ, সুফিয়া কামাল হল ও বুয়েটে হামলা করেছে। আমরা নেতা-কর্মীদের ফিরিয়ে এনে বড় ধরনের সংঘাত এড়াতে সক্ষম হই।’ ছাত্রদলের বক্তব্য : ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক ইসহাক সরকার সাংবাদিকদের বলেন, প্রথমে ছাত্রলীগ আমাদের ওপর হামলা চালায়। আর হামলার নেতৃত্ব দেন ছাত্রলীগের সভাপতি বদিউজ্জামান সোহাগ। আমাদের নেতা-কর্মীরা বকশীবাজারের দিকে আসতে থাকলে ছাত্রলীগ অনেককে আটকে মারধর করে। আবার অনেকের পকেটে থাকা টাকা-পয়সা ও ঘড়ি-মোবাইল ফোনসেট ছিনিয়ে নেয়। ছাত্রদলের দপ্তর সম্পাদক আবদুস সাত্তার পাটোয়ারী জানান, ম্যাডামের (খালেদা জিয়া) হাজিরাকে কেন্দ্র করে আমাদের শান্তিপূর্ণ অবস্থানের ওপর ছাত্রলীগ অতর্কিতে হামলা চালিয়েছে। এ সময় পুলিশ নীরব ভূমিকা পালন করে। পুলিশের বক্তব্য : লালবাগ ডিভিশনের উপপুলিশ কমিশনার মফিজ উদ্দিন আহম্মেদ কালের কণ্ঠকে বলেন, সংঘর্ষের সময় পুলিশের বেশ কয়েকজন সদস্য আহত হয়েছেন। ফজলে রাব্বী হলের সামনে থেকে রিপন মণ্ডল, সুমন, আরিফুল ইসলাম, আল-আমিনসহ বেশ কয়েকজনকে আটক করা হয়েছে। তাঁদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। মামলা ও আটক : গতকাল রাতে চকবাজার থানায় বিএনপি নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে একটি মামলা দায়ের করেছে পুলিশ। তাৎক্ষণিকভাবে আসামিদের নাম জানা যায়নি। চকবাজার থানার ওসি আজিজুল হক জানান, পুলিশের কর্তব্য কাজে বাধা এবং পুলিশের ওপর হামলার অভিযোগে শতাধিক ব্যক্তিকে আসামি করা হয়েছে। এজাহারে ৬০-৭০ জনের নাম উল্লেখ এবং আরো ৪০ জনকে অজ্ঞাতপরিচয় আসামি করা হয়েছে। এদিকে ঢাকা মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত উপকমিশনার (মিডিয়া) সাঈদুর রহমান জানান, গতকাল সংঘর্ষের পর রাত পর্যন্ত ৫৪ জনকে আটক করা হয়েছে। তাদের মধ্যে কদমতলী থানা ৩০, শাহবাগ থানা ১৮ এবং চকবাজার থানা ছয়জনকে আটক করেছে। কলমাকান্দা বিএনপি অফিস ভাঙচুর : আমাদের নেত্রকোনা প্রতিনিধি জানান, সংসদ সদস্য ছবি বিশ্বাসের ওপর হামলা ও গাড়িতে অগ্নিসংযোগের প্রতিবাদে নেত্রকোনার দুর্গাপুর ও কলমাকান্দা উপজেলা আওয়ামী লীগ-ছাত্রলীগ-যুবলীগ বিক্ষোভ মিছিল বের করে। দুপুর ২টার দিকে দুর্গাপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের একাংশ দলীয় কার্যালয় থেকে একটি মিছিল নিয়ে বাজার প্রদক্ষিণ শেষে দলীয় কার্যালয়ে এসে শেষ হয়। একই সময় ছবি বিশ্বাসের নিজ এলাকা কলমাকান্দায় উপজেলা আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগের একাংশ মিঠি মিছিল বের করে। মিছিলকারীরা উপজেলা বিএনপি কার্যালয়ে ভাঙচুর, বিএনপির নেতা ব্যারিস্টার কায়সার কামালের ব্যক্তিগত চেম্বার, ব্যবসায়ী জহিরুল ইসলাম মোস্তফা সানতু মিয়া, আলী উসমানের গেস্টহাউস ও একটি প্রাইভেট কার ভাঙচুর করে।

No comments:

Post a Comment