Sunday, March 29, 2015

কর্মসূচি পুরোপুরি ছাড়ছে না বিএনপি:কালের কন্ঠ

সিটি করপোরেশন নির্বাচনে বিএনপি নেমে পড়লেই সব ধরনের আন্দোলন কর্মসূচি প্রত্যাহার করা হবে- এমন একটি ধারণা জনমনে তৈরি হলেও পুরোপুরি সে পথে হাঁটছে না বিএনপি। বরং হরতাল পর্যায়ক্রমে কমিয়ে এনেও কী করে সরকারকে ব্যতিব্যস্ত বা চাপে রাখা যায় সুকৌশলে সে চিন্তাই করছে দলটি। এদিকে চট্টগ্রাম ও ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে প্রার্থিতা নিয়ে বিএনপির মধ্যে সমস্যা না হলেও ঢাকা দক্ষিণের প্রার্থিতা নিয়ে চির বৈরী দু
ই নেতা মির্জা আব্বাস ও সাদেক হোসেন খোকার মধ্যকার দ্বন্দ্ব আবারও মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সরকারকে চাপে রাখার কৌশল থেকেই দলের প্রার্থীদের মনোনয়নপত্র দাখিলের আজকের শেষ দিনটিকে হরতালমুক্ত রেখে দেশব্যাপী বিক্ষোভ মিছিলের কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়েছে। পাশাপাশি বহাল রাখা হয়েছে অবরোধ কর্মসূচি। কিন্তু আগামীকাল সোমবার বা তার পরে কী করা হবে- বিএনপিসহ ২০ দলের বিভিন্ন পর্যায়ের একাধিক নেতার সঙ্গে আলাপ করেও সে বিষয়ে স্বচ্ছ কোনো ধারণা পাওয়া যায়নি। নেতা-কর্মীরা নিজেরাই এ নিয়ে বিভ্রান্তির মধ্যে আছে বলে জানা গেছে। খালেদা জিয়া এবং গুলশান কার্যালয়ের মনোভাব দেখে তারা ধারণা করছে, আগামী দিনেও বিভিন্ন ইস্যুতে প্রতি সপ্তাহে কোনো না কোনো কর্মসূচি দেওয়ার চিন্তা আছে। গতকাল শনিবার দলের যুগ্ম মহাসচিব বরকতউল্লা বুলু স্বাক্ষরিত ২০ দলীয় জোটের পক্ষে দেওয়া বিবৃতিতে প্রথমে অবরোধ কর্মসূচির ব্যাপারে কিছু বলা হয়নি। এ পরিপ্রেক্ষিতে 'এবারের বিবৃতিতে অবরোধ নেই' এই মর্মে একটি বার্তা সংস্থা রিপোর্ট করার পর সংশোধিত বিবৃতিতে অবরোধ কর্মসূচি বহাল রাখার কথা জানানো হয়। সূত্র মতে, নির্বাচনের কারণে ঢাকা ও চট্টগ্রামে না হলেও দেশের অন্যান্য স্থানে বিএনপি জোট নিয়মিত কর্মসূচি বহাল রাখার পক্ষে। গত শুক্রবার বিএনপিপন্থী সুধীসমাজের সঙ্গে বৈঠকে খালেদা জিয়া এমন আভাস দিয়েছেন বলে জানা গেছে। তবে প্রকৃত অর্থে কী কর্মসূচি এবং কেন দেওয়া হবে, এ নিয়ে দলের মধ্যে অস্পষ্টতা রয়েছে। পাশাপাশি অকার্যকর হয়ে পড়ায় হরতাল-অবরোধ কর্মসূচি বহাল রাখার ব্যাপারে বিএনপির নেতৃত্বাধীন জোটের মধ্যেও রয়েছে মতভিন্নতা। জানতে চাইলে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান কালের কণ্ঠকে বলেন, 'আগামীতে হরতাল-অবরোধসহ কর্মসূচি দেব কি না তা নির্ভর করবে সরকারের ওপর। সরকার যদি নেতা-কর্মীদের মুক্তি দিয়ে নির্দলীয় সরকারের বিষয়ে আলোচনার জন্য সংলাপের উদ্যোগ নেয়, কেবল তখনই কর্মসূচি পুরোপুরি প্রত্যাহার করা হবে।' নির্বাচনে অংশ নেওয়ার পরেও হরতাল-অবরোধ কর্মসূচি কতখানি যুক্তিযুক্ত জানতে চাইলে তিনি বলেন, হরতাল দেওয়া যাবে না কেন? সরকার দাবি না মানলে নির্বাচন এবং আন্দোলন পাশাপাশি চলতে অসুবিধা কোথায়? বিএনপি নির্বাচনেও যাবে; আন্দোলনও করবে, জানান তিনি। এবারে বিএনপিকে নির্বাচনে নিয়ে যাওয়ার অন্যতম উদ্যোক্তা 'শত নাগরিক'-এর আহ্বায়ক অধ্যাপক এমাজউদ্দীন আহমদ বলেন, 'এ ব্যাপারে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়ার মালিক বিএনপি। তবে সরকার সুষ্ঠু পরিবেশ বজায় রাখলে এগুলোর (কর্মসূচি) দরকার হয় না। কারণ সুষ্ঠু পরিবেশ সংলাপের ভূমিকা পালন করে। এখন সরকার যদি ওই পরিবেশ সৃষ্টিতে সহায়ক ভূমিকা পালন করে তা হলে আমরা আশা করতে পারি যে হরতাল আর হবে না। এর পরও আমরা নিশ্চিত করে এ ব্যাপারে বলতে পারব না। কারণ দল চালান খালেদা জিয়া; আমরা নই।' কমিটির যুগ্ম আহ্বায়ক অধ্যাপক ড. মাহবুবউল্লাহ বলেন, কর্মসূচি বহাল বা প্রত্যাহার কোনো বিষয়েই আমার জানা নেই। তবে নির্বাচনে টিকে থাকতে পারলে হয়তো কিছু 'ছাড়' পাওয়া যাবে বলে মনে হয়। শুক্রবার খালেদা জিয়ার সঙ্গে বৈঠকের সূত্র ধরে কমিটির সদস্যসচিব আবদুল হাই সিকদার জানান, কর্মসূচি পুরোপুরি প্রত্যাহার করা হবে বলে মনে হয় না। ঢাকা-চট্টগ্রামে হরতাল নাও হতে পারে। কিন্তু দেশের অন্যান্য স্থানে কর্মসূচি বহাল থাকবে বলেই মনে হয়েছে। এদিকে কর্মসূচি প্রণয়ন কিংবা প্রার্থী নির্বাচন কোনো ইস্যুতেই ২০ দলের অন্য শরিকদের সঙ্গে বিএনপির আলোচনা হয়নি বলে খবর নিয়ে জানা গেছে। ইসলামী ঐক্যজোটের চেয়ারম্যান মাওলানা আবদুল লতিফ নেজামীসহ জোটের একাধিক নেতার সঙ্গে আলাপ করে এ তথ্য জানা গেছে। নেজামী কালের কণ্ঠকে বলেন, 'নির্বাচনে অংশ নেওয়ার পরেও হরতাল বা কর্মসূচি কী হবে আমরা জানি না। আমাদের সঙ্গে এ নিয়ে কোনো আলোচনাও হয়নি।' ঢাকা দক্ষিণের প্রার্থিতা নিয়ে দ্বন্দ্ব মাথাচাড়া : এদিকে ঢাকা সিটি উত্তরের প্রার্থিতা চূড়ান্ত করতে বিএনপিকে ঝামেলায় পড়তে না হলেও দক্ষিণের প্রার্থিতা নিয়ে দলের পুরনো দ্বন্দ্ব আবারও মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে। সিটি নির্বাচনকে সামনে রেখে মহানগরীর চির বৈরী দুই নেতা মির্জা আব্বাস ও সাদেক হোসেন খোকাকেন্দ্রিক ওই দ্বন্দ্ব আস্তে আস্তে দলের মধ্যেও ছড়িয়ে পড়তে শুরু করেছে। জানা গেছে, খোকা সমর্থন করছেন মহানগরীর সাবেক সদস্যসচিব কেন্দ্রীয় অর্থবিষয়ক সম্পাদক আবদুস সালামকে। অন্যদিকে আব্বাস নিজেই প্রার্থী হয়েছেন। এ অবস্থায় দুজনই আজ মনোনয়নপত্র জমা দেবেন বলে জানা গেছে। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, তফসিল ঘোষণার পর নির্বাচনে যাওয়া-না যাওয়া প্রশ্নে কয়েক দিন দ্বিধাদ্বন্দ্বে ছিল বিএনপি। ওই অবস্থায় নির্বাচনে যাওয়ার ব্যাপারে তেমন কেউই আগ্রহী ছিলেন না। সমর্থক বুদ্ধিজীবীদের পরামর্শে খালেদা জিয়া রাজি হন। এরপর তিনি যুক্তরাষ্ট্রের নিউ ইয়র্কে অবস্থানকারী মহানগরীর সাবেক নেতা সাদেক হোসেন খোকাকে ফোন করে তাঁর সমর্থক সালামকে মনোনয়নপত্র কেনার নির্দেশ দেন। খোকার পরামর্শে গত বুধবার মনোনয়নপত্র কেনেন সালাম। এরপর দুই দিন চুপচাপ থাকলেও হঠাৎ করে মির্জা আব্বাস গত শুক্রবার মনোনয়নপত্র কেনেন। এরপর থেকে খোকা ও আব্বাস সমর্থকদের মধ্যে ঠাণ্ডা লড়াই শুরু হয়। 'শত নাগরিক'-এর নেতাদের সঙ্গে গত শুক্রবারের বৈঠকেও প্রার্থিতা নিয়ে সংকটের এ বিষয়টি আলোচনায় ওঠে। খালেদা জিয়া এ ব্যাপারে সমর্থক বুদ্ধিজীবীদের মতামত জানতে চান। একটি সূত্রের দাবি, এ সময় দুই ধরনের মতামত বেরিয়ে আসে। এদিকে গতকাল একটি বেসরকারি চ্যানেলে দেওয়া সাক্ষাৎকারে এমাজউদ্দীন আহমদের বক্তব্যেও সালাম সমর্থকরা অসন্তুষ্ট হন। সাক্ষাৎকারে এমাজউদ্দীন আহমদ বলেন, ঢাকা দক্ষিণের প্রার্থী হিসেবে আব্বাসের কথা ভাবা হচ্ছে। বিষয়টি চ্যানেলের খবরে দেখে কয়েক নেতা খালেদা জিয়ার নজরে আনেন। তবে এ সম্পর্কিত এক প্রশ্নের জবাবে গুলশান কার্যালয়ে অবস্থানকারী স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান বলেন, 'দক্ষিণের প্রার্থী কে হবেন সে বিষয়ে সিদ্ধান্ত এখনো হয়নি। এটা বিএনপির ব্যাপার এবং বিএনপিই চূড়ান্ত সিদ্ধান্তের মালিক। তাই এমাজউদ্দীন সাহেবের এটা বলার বিষয় নয়। তাঁরা বড়জোর প্রস্তাব দিতে পারেন।' অধ্যাপক এমাজউদ্দীন আহমদ এ ব্যাপারে বলেন, 'বিএনপি চেয়ারপারসনের সঙ্গে বৈঠককালে মির্জা আব্বাসের বিষয়টা আলোচনা হয়েছে। যেটুকু জানি তাঁকে প্রার্থী করা হবে। তবে সর্বসম্মত সিদ্ধান্ত হয়েছে, এটা আমি বলিনি।' অধ্যাপক ড. মাহবুবউল্লাহ বলেন, দক্ষিণের প্রার্থী নিয়ে কিছুটা সংকট থাকলেও বিএনপি তা কাটিয়ে উঠতে পারবে। বিএনপির কয়েক নেতার দাবি অনুযায়ী মূলত তিন কারণে আব্বাস প্রার্থী হওয়ার ব্যাপারে আগ্রহ দেখান। ১. নির্বাচনে অংশ নেওয়ার মধ্য দিয়ে আত্মগোপন থেকে তাঁর বেরিয়ে আসার সুযোগ কাজে লাগানো। ২. সাদেক হোসেন খোকার সমর্থক সালামকে মেয়র নির্বাচিত হওয়া ঠেকানো, পাশাপাশি মহানগরীর নেতৃত্ব ধরে রাখা এবং ৩. আত্মগোপনে থাকা এবং আন্দোলন ব্যর্থ হওয়ার দায় থেকে মুক্তি। তাঁর বিরোধী নেতাদের মতে, আসলে আন্দোলন ব্যর্থ হওয়ায় খালেদা জিয়া মির্জা আব্বাসের ওপর কিছুটা ক্ষুব্ধ। তাই নির্বাচনে অংশ নিয়ে আব্বাস দেখাতে চান যে দলের দুর্দিনেও নির্বাচন করতে তিনি পিছপা হননি। এদিকে আব্বাস প্রার্থী হওয়ায় প্রচণ্ড ক্ষুব্ধ হয়েছেন খোকা। যুক্তরাষ্ট্র থেকে কালের কণ্ঠকে তিনি বলেন, 'ম্যাডামের পরামর্শে সালামকে মনোনয়নপত্র কেনার জন্য বলা হয়েছে। এখন দেখা যাক দল কী সিদ্ধান্ত নেয়।' জানতে চাইলে আবদুস সালাম কালের কণ্ঠকে বলেন, 'খোকা ভাই আমাকে যখন নির্বাচনে নামতে বলেছেন তখন কেউ প্রার্থী হতে রাজি ছিলেন না। আমি রাজি হওয়ার পর আরো প্রার্থী দেখা গেল। যাহোক দল কী করে দেখি।' তবে মনোনয়নপত্র আজ জমা দেবেন বলে জানান সালাম। এদিকে কয়েক দফা চেষ্টা করেও মির্জা আব্বাসের সঙ্গে গতকাল কথা বলা সম্ভব হয়নি। জানা গেছে, গতকাল পর্যন্ত তিনি আত্মগোপনেই ছিলেন।    

No comments:

Post a Comment