Friday, May 15, 2015

বুরুন্ডিতে নিয়ন্ত্রণ নিয়ে লড়াই:প্রথম অালো

দক্ষিণ-পূর্ব আফ্রিকার দেশ বুরুন্ডির নিয়ন্ত্রণ নিয়ে সেনাবাহিনীর বিভিন্ন গ্রুপের মধ্যে প্রতিদ্বন্দ্বিতা চলছে। সেনাপ্রধান জেনারেল প্রাইম নিয়োনগাবো গতকাল বৃহস্পতিবার দাবি করেছেন, সামরিক অভ্যুত্থানের চেষ্টা ব্যর্থ হয়েছে এবং প্রেসিডেন্ট পিয়েরে এনকুরুনজিজার অনুগত বাহিনী দেশের নিয়ন্ত্রণ নিয়েছে। তবে সেনাপ্রধান এ দাবি করলেও রাজধানী বুজুমবুরায় প্রচণ্ড যুদ্ধ চলছে। খবর এএফপি ও রয়টার্সের। বুরুন্ডির সরক
ারি বাহিনী আসলেই পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নিয়েছে কি না, তা পরিষ্কার নয়। বুধবার সেনা কর্মকর্তা মেজর জেনারেল গোডফ্রয়ড নিয়মবারে দাবি করেছিলেন, অসাংবিধানিকভাবে তৃতীয় মেয়াদে ক্ষমতায় থাকতে চাওয়ায় অভ্যুত্থানের মাধ্যমে তিনি প্রেসিডেন্ট এনকুরুনজিজাকে ক্ষমতাচ্যুত করেছেন। এর এক দিন পরই দেশটির সেনাপ্রধান বললেন, সরকারের অনুগত বাহিনী পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নিয়ে নিয়েছে। মেজর জেনারেল গোডফ্রয়ড নিয়মবারেকে গত ফেব্রুয়ারিতে গোয়েন্দা প্রধানের পদ থেকে অপসারণ করা হয়। প্রেসিডেন্ট এখনো তানজানিয়ায়: প্রেসিডেন্ট এনকুরুনজিজা ও সেনাপ্রধান নিয়োনগাবো তানজানিয়ায় অবস্থান করছেন। গত বুধবার যখন এনকুরুনজিজাকে ক্ষমতাচ্যুত করার ঘোষণা দেওয়া হয়, তখন তিনি তানজানিয়ায় আফ্রিকার নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করছিলেন। দেশে সামরিক অভ্যুত্থানের ঘোষণা হওয়ার পর প্রেসিডেন্টের কার্যালয়ের ওয়েবসাইটে ও এনকুরুনজিজার টুইটার ফিডে জনগণকে শান্ত থাকার আহ্বান জানানো হয়। প্রেসিডেন্টের বর্তমান অবস্থার ব্যাপারে দাপ্তরিকভাবে কোনো তথ্যই নিশ্চিত করা হয়নি। তবে তানজানিয়ার দুটি সূত্র জানিয়েছে, এনকুরুনজিজা বর্তমানে তানজানিয়ার দারেস সালাম শহরে অবস্থান করছেন। একটি সূত্র জানিয়েছে, তিনি ‘নিরাপদ স্থানে’ রয়েছেন। সরকারি রেডিওতে এক বিবৃতিতে সেনাপ্রধান নিয়নগাবো বলেন, ‘সামরিক অভ্যুত্থানের চেষ্টা ব্যর্থ হয়েছে। সব কৌশলগত এলাকা এখনো প্রেসিডেন্টের অনুগত বাহিনী নিয়ন্ত্রণ করছে।’ বুরুন্ডিতে গত ২৬ এপ্রিল থেকে সহিংসতা শুরু হয়। ওই সহিংসতায় ২০ জনের বেশি নিহত হয়। এর পরিপ্রেক্ষিতে সাম্প্রতিক সপ্তাহগুলোতে হাজার হাজার নাগরিক প্রতিবেশী দেশগুলোতে পালিয়ে যান। রাজধানীতে গোলাগুলির খবর: সরকারি বাহিনী পুরোপুরি পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নিয়েছে কি না, তা গতকাল শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত পরিষ্কার ছিল না। সামরিক অভ্যুত্থানের ঘোষণার পরিপ্রেক্ষিতে বুধবার রাস্তাঘাটসহ বিভিন্ন স্থান থেকে পুলিশ চলে যায়। তবে গতকাল পথে পুলিশকে দায়িত্ব পালন করতে দেখা গেছে। প্রত্যক্ষদর্শী এক ব্যক্তি রয়টার্সকে বলেন, একটি উপশহর এলাকায় একদল তরুণ শহরের কেন্দ্রস্থলে যাওয়ার চেষ্টা করলে পুলিশ তাঁদের বাধা দেয়। শহরের কেন্দ্রস্থলও ঘিরে রেখেছে পুলিশ। আরেকটি এলাকায় পুলিশ সদস্যদের এক তরুণকে পেটাতে দেখা গেছে। রাষ্ট্রীয় একটি সম্প্রচারমাধ্যমে এক সাংবাদিক বলেছেন, গতকাল সকালে রাষ্ট্রীয় টেলিভিশন ও রেডিওর কার্যালয়ের আশপাশে প্রচণ্ড বন্দুকযুদ্ধের শব্দ শোনা গেছে। আরেক প্রত্যক্ষদর্শী জানিয়েছেন, শহরে বিস্ফোরণের শব্দ শোনা গেছে। প্রত্যক্ষদর্শী রয়টার্সের প্রতিনিধি জানিয়েছেন, পুলিশের পোশাক পরা অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিরা বেসরকারি দুটি রেডিও ও একটি টেলিভিশন স্টেশনে হামলা চালায়। বুধবার মেজর জেনারেল নিয়মবারের সামরিক অভ্যুত্থান ঘটানোর বিবৃতি সম্প্রচার করা গণমাধ্যমগুলোর মধ্যে ওই দুটি রেডিও স্টেশনও ছিল। তবে এসব ঘটনার ব্যাপারে সামরিক অভ্যুত্থান ঘটানোর দাবি করা সেনা কর্মকর্তা নিয়মবারে বা তাঁর কোনো মুখপাত্রের কোনো বক্তব্য গতকাল পাওয়া যায়নি। নিয়মবারে বুধবার জানিয়েছিলেন, রাজধানীর বিমানবন্দর ও সব সীমান্ত বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। ২০০৫ সালে বুরুন্ডিতে গৃহযুদ্ধের অবসান ঘটে। এরপর প্রেসিডেন্ট এনকুরুনজিজার নেতৃত্বে সংখ্যালঘু সম্প্রদায় টুটসিদের নিয়ন্ত্রণে ছিল সেনাবাহিনী। তারা সংখ্যাগুরু হুটুদের বিদ্রোহী সংগঠনগুলোর সঙ্গে লড়াই করে। গৃহযুদ্ধ অবসানের পর বিভক্তি দূর করতে সেনাবাহিনীতে সংস্কার করা হয়। তবে পদবিন্যাসে ভুল থেকেই যায়। আঞ্চলিক নেতাদের নিন্দা: এদিকে পূর্ব আফ্রিকার নেতারা বুরুন্ডিতে সামরিক অভ্যুত্থানের ‘চেষ্টার’ নিন্দা জানিয়েছেন। আঞ্চলিক জোট আফ্রিকান ইউনিয়ন (এইউ) অভ্যুত্থানচেষ্টার নিন্দা জানিয়েছে। এইউ কমিশনের চেয়ারপারসন এনকোসাজানা দামিনি জুমা এক বিবৃতিতে দেশটিতে সাংবিধানিক শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনার আহ্বান জানিয়েছেন। তানজানিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী বার্নার্ড মেম্বে সাংবাদিকদের বলেছেন, ‘আফ্রিকা চায় না অস্ত্রের মুখে কেউ কোনো দেশের ক্ষমতা দখল করুক।’

No comments:

Post a Comment