Wednesday, June 17, 2015

যাচাই ছাড়াই ফিরছে 'বাংলাদেশি' দাবিদাররা:কালের কন্ঠ

পাচারের শিকার হয়ে বিভিন্ন দেশে আটকে পড়াদের যাচাই-বাছাই ছাড়াই ফেরত আনা হচ্ছে 'বাংলাদেশি' হিসেবে। সাগর থেকে উদ্ধার করার পর মালয়েশিয়া, ইন্দোনেশিয়া, থাইল্যান্ড ও মিয়ান
মার থেকে 'বাংলাদেশি দাবিদার' এক হাজার ৪৬৬ জনের তালিকা পাঠানো হয়। এর মধ্যে মিয়ানমার ছাড়া অন্য তিন দেশের তালিকাভুক্তদের যাচাই-বাছাই করা সম্ভব হয়নি। এর পরও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে এ পর্যন্ত থাইল্যান্ড ও মালয়েশিয়া থেকে ৬৫ জনকে ফেরত আনা হয়েছে। আরো অনেককে আনার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা জানান, যারা উদ্ধার হওয়ার পর নিজেদের বাংলাদেশি হিসেবে পরিচয় দিয়েছে তাদের চিহ্নিত করা হয়েছে। কিন্তু যাচাই-বাছাই না করে তাদের ফেরত আনা হলে এদের মধ্যে রোহিঙ্গাও থাকতে পারে। তিনি উদাহরণ দিয়ে বলেন, অনেক যাচাই-বাছাই করে মিয়ানমার থেকে যে ১৫০ জনকে ফেরত আনা হয়েছে সেখানে দুজনকে পাওয়া গেছে যারা রোহিঙ্গা। তাদের মধ্যে দালালও পাওয়া গেছে। সূত্র জানায়, পক্ষকাল আগে ইন্দোনেশিয়া ৯০৮, মালয়েশিয়া ৩০৩, থাইল্যান্ড ৫৫ ও মিয়ানমারের তরফ থেকে ২০০ জনের তালিকা পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়। তালিকাভুক্তরা দাবি করলেও প্রকৃতপক্ষে তারা বাংলাদেশি কি না তা যাচাই-বাছাই করার জন্য পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় তালিকা স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে পাঠায়। তাদের মধ্যে মিয়ানমার সরকারের উদ্ধার করা ২০০ জনের তালিকা আগে যাছাই-বাছাই করে এর মধ্যে ১৫০ জন বাংলাদেশি নাগরিক বলে প্রমাণ পাওয়া যায়। যাছাইকৃতদের নামের তালিকা স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় পাঠায় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে। পরে দ্রুত সিদ্ধান্ত নিয়ে ১৫০ জনকে মিয়ানমার থেকে দেশে ফেরত আনা হয়। কিন্তু মালয়েশিয়া, ইন্দোনেশিয়া ও থাইল্যান্ড থেকে পাঠানো এক হাজার ২৬৬ জনের তালিকা যাচাই-বাছাই শেষ করা যায়নি। এর আগেই পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে গত সোমবার সন্ধ্যায় থাইল্যান্ড থেকে ৪৭ জন এবং গত সপ্তাহে মালয়েশিয়া থেকে ১৮ জনকে বিমানে করে ফিরিয়ে আনা হয়েছে। এ বিষয়ে জানতে চাইলে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ডিজি (কনস্যুলার অ্যান্ড ওয়েলফেয়ার উইং) মো. লুৎফর রহমান গতকাল কালের কণ্ঠকে বলেন, 'যাদের ফেরত আনা হয়েছে তাদের যাচাই-বাছাই করেই আনা হয়েছে।' পুলিশের তরফ থেকে জানা গেছে, মিয়ানমার ছাড়া অন্য তিন দেশের তালিকাভুক্তদের এখন পর্যন্ত যাচাই-বাছাই করার কাজ শেষ হয়নি। বিষয়টি তাঁর দৃষ্টিতে আনা হলে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এ কর্মকর্তা বলেন, 'এটা ঠিক। তবে যাদের ফেরত আনা হয়েছে তারা আগেই আটক হয়েছিল।' কত দিনের মধ্যে সবাইকে দেশে আনা সম্ভব হবে জানতে চাইলে তিনি বলেন, 'শিগগিরই নিয়ে আসা হবে।' জানা গেছে, থাইল্যান্ড ও মালয়েশিয়া থেকে যে ৬৫ জনকে ফেরত আনা হয়েছে তারা তাদের বাড়ি চলে গেছে। এ বিষয়ে জানতে চাইলে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের ইমিগ্রেশন পুলিশের এক কর্মকর্তা কালের কণ্ঠকে বলেন, 'বিদেশ থেকে আসার পর যেভাবে যাত্রীরা চলে যায় সেভাবেই চলে গেছে তারা। এখানে আমাদের কী করার আছে?' এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিমানবন্দর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) কামাল হোসেন কালের কণ্ঠকে বলেন, 'যাদের ফেরত আনা হয়েছে তাদের কাউকে আটক করা হয়নি।' পুলিশ জানায়, সোমবার সন্ধ্যায় থাইল্যান্ড থেকে ফেরত আসা ৪৭ জনের মধ্যে নূর আলম নামের একজন সোমবার রাত ২টার দিকে বিমানবন্দর থানায় মানবপাচার আইনে একটি মামলা করেন। সেখানে মিজান ও ফারুক নামের দুই দালালকে আসামি করা হয়। পুলিশ সূত্র জানায়, থাইল্যান্ড, মালয়েশিয়া ও ইন্দোনেশিয়া থেকে পাঠানো তালিকাভুক্তদের মধ্যে থেকে এ পর্যন্ত ৯০০ জনের খোঁজখবর নেওয়া সম্ভব হয়েছে। দেখা গেছে কোনো ব্যক্তির গ্রামের বাড়ির ঠিকানা ঠিক থাকলেও তাঁর বাবা ও তিনি সেই গ্রামের বাসিন্দা ছিলেন বা আছেন এমন তথ্য মিলছে না। যে কারণে সন্দেহের কারণ রয়েছে যে রোহিঙ্গারা পরিচিত কোনো গ্রামের নাম ব্যবহার করে নিজেদের বাংলাদেশি পরিচয় দিয়ে তালিকাভুক্ত হয়েছে। এ কারণে যাছাই-বাছাই না করে আনার ফলে দালাল বা রোহিঙ্গাদের চিহ্নিত করা যাচ্ছে না। সংশ্লিষ্ট এক কর্মকর্তা জানান, যাদের তালিকা যাছাই-বাছাই করে এখন পর্যন্ত নিশ্চিত হওয়া গেছে যে তারা বাংলাদেশি তাদের অনেকেই দেশের বিভিন্ন জেলার চর অঞ্চলের বাসিন্দা। এর মধ্যে সিরাজগঞ্জ, কক্সবাজার, নরসিংদী, সাতক্ষীরা, নারায়ণগঞ্জসহ দেশের বিভিন্ন জেলার বাসিন্দা রয়েছে।

No comments:

Post a Comment