Tuesday, August 26, 2014

বৃষ্টি-বন্যায় সবজির দামে হঠাৎ লাফ:কালের কন্ঠ

বেশি দিন নয়, মাত্র এক সপ্তাহ আগেই ঢাকার বাজারে প্রতি কেজি লম্বা বেগুন মিলত ৩০ থেকে ৩৫ টাকা দরে। এখন বাজারে গেলে সেই বেগুনই কিনতে হচ্ছে ৬০ টাকা দরে। রোজা শেষ হয়েছে, তার পরও বেগুনের দাম দ্বিগুণ কেন- রাজধানীর মহাখালী বাজারের এক সবজি বিক্রেতা বললেন, শুধু বেগুন নয়, সব সবজির দামই বেড়েছে। শুধু পেঁপে, কচুমুখীর মতো দু-একটি সবজি মিলছে ৪০ টাকা বা তার চেয়ে কিছুটা কম দরে। দাম বেশি হলেও সবজিগুলো তেমন তাজা নয়। ক
াঁচামরিচে পচন ধরেছে, শসার রং বিবর্ণ হয়ে গেছে, বেগুনও নেতিয়ে, সবুজ থাকার বদলে বরবটির রং হলুদ হয়ে গেছে। অন্য সময় হলে ক্রেতারা এসব সবজি কিনতে চাইত না। কিন্তু সেগুলোই এখন বাজারে বিকোচ্ছে আগের চেয়ে প্রায় দ্বিগুণ দামে। দাম বাড়ায় কৃষক যে লাভবান হচ্ছে তা কিন্তু নয়। দেশের সবজি উৎপাদন বেশি হওয়া জেলাগুলোতে বৃষ্টির কারণে জমিতে পানি জমে গেছে। গাছের গোড়া পচে গেছে। ফলে কৃষককে একসঙ্গে সব সবজি বিক্রি করে দিতে হচ্ছে পানির দরে। গতকাল সোমবার কারওয়ান বাজারের সবজি বিক্রেতা মো. আলী জানান, এক সপ্তাহ আগের তুলনায় এখন বিভিন্ন সবজির দর কেজিতে ২০ টাকা বেশি। যে সবজিটি ৩০ টাকা ছিল, সেটি এখন ৫০ টাকা। সব মিলিয়ে প্রতি কেজি সবজির দাম ৫০ শতাংশ বেড়েছে বলে মনে করেন তিনি। দেশে গত জুলাই মাসে স্বাভাবিকের তুলনায় বৃষ্টিপাত ৩৪ শতাংশ কম হয়েছে। কিন্তু চলতি মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহ থেকে প্রায় ১৩ দিন ধরে বৃষ্টিপাত হচ্ছে। এখন পর্যন্ত যে পরিমাণ বৃষ্টি হয়েছে তাতে মনে করা হচ্ছে, এ মাসের মোট বৃষ্টিপাত স্বাভাবিক বৃষ্টিপাতকে অতিক্রম করতে পারে। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের (ডিএই) হিসাবে, গতকাল পর্যন্ত দেশের মোট ১৩টি জেলায় কৃষিজমিতে পানি জমে ছিল।  দেশের সবজি উৎপাদন হয় এমন জেলাগুলোর মধ্যে অন্যতম বগুড়া। ওই জেলার কৃষি কর্মকর্তাদের তথ্য অনুযায়ী, প্রায় চার হাজার হেক্টর জমির সবজি বৃষ্টিতে নষ্ট হয়েছে। বগুড়ার শিবগঞ্জ উপজেলার চণ্ডিহারা গ্রামের কৃষক নোয়াব আলী আধাবিঘা জমিতে পেঁপের চাষ করেছিলেন। গাছে ফলও ধরেছিল। টানা বৃষ্টিতে সে জমিতে পানি জমে যাওয়ায় সব পেঁপেগাছ মরে গেছে। নোয়াব আলী বসতবাড়ির পাশে মরিচ ও লালশাক আবাদ করেছিলেন। টানা বৃষ্টির কারণে মরিচগাছ ও লালশাক মরে যাচ্ছিল। শেষমেশ মাত্র এক হাজার টাকায় সেই মরিচ ও লালশাক বিক্রি করে দিয়েছেন তিনি। হবিগঞ্জ সদর উপজেলার নিজামপুর ও লস্করপুর ইউনিয়নের বেশ কিছু গ্রাম সবজি উৎপাদনের জন্য বিখ্যাত। সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, অধিকাংশ কৃষকের জমিতে গাছ মরে হলুদ হয়ে যাচ্ছে। আবার প্রতিদিনই বৃষ্টি হওয়ায় সঠিকভাবে পরাগায়ণ হচ্ছে না। ফলে উৎপাদন কম হচ্ছে। নিজামপুর গ্রামের কৃষক মো. সাইফুল ইসলাম দুটি জমিতে জালি কুমড়া চাষ করেছেন। গাছগুলো ভালোভাবে বেড়ে উঠলেও এখনো ফলন হচ্ছে না। নুরপুর ইউনিয়নের অলিপুর ব্লকের উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা অলক কুমার চন্দ জানান, বেশি বৃষ্টিপাত হওয়ায় সঠিকভাবে পরাগায়ণ না হওয়ায় এ ঘটনা ঘটছে। হবিগঞ্জ সদর উপজেলার সুঘর গ্রামের কৃষক আব্দুল হান্নান প্রতিবছরই সবজি চাষ করে লাভের মুখ দেখেন। এ বছর তিনি করলা চাষ করলেও খারাপ আবহাওয়ার জন্য গত বছরের তুলনায় অর্ধেকও ফলন পাননি। তার ওপর দাম কম হওয়ায় উৎপাদন খরচ তুলতে পারবেন কি না আশঙ্কা করছেন।  কারওয়ান বাজারের আড়ত মালিক মোশারফ হোসেন কালের কণ্ঠকে বলেন, বৃষ্টি আর বন্যায় সবজির ক্ষেত তলিয়ে যাওয়ায় সরবরাহ কমে গেছে। আগের চেয়ে কারওয়ান বাজারে সবজির ট্রাক আসার সংখ্যা ৪০ শতাংশ কমে গেছে। তিনি বলেন, মৌসুমের এ সময়টায় শীতের সবজি আগাম চাষ হয়। ফুল কপি, বাঁধা কপি ও শিম এ সময় বাজারে আসতে শুরু করে। কিন্তু বৃষ্টির কারণে কৃষকদের আগাম চাষও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। গতকাল কারওয়ান বাজারে প্রতিকেজি পটোল ৪০, বেগুন ৫০, শসা ৪০, বটবটি ৬০-৭০, ঝিঙা ৫০, চিচিঙ্গা ৫০ টাকা, করলা ৬০ টাকা, কাঁচামচির ১৪০-১৬০ ও ঢেঁড়শ ৫০ টাকা দরে বিক্রি করতে দেখা গেছে। এর কম দামের সবজির মধ্যে ছিল পেঁপে, যার কেজি ২৫ টাকা। পাশাপাশি কচুমুখী ৪০, মিষ্টি কুমড়া ৩০, জালি কুমড়া প্রতিটি ৩০-৩৫ টাকা দরে বিক্রি করতে দেখা যায়। (এ প্রতিবেদনটি লিখতে কালের কণ্ঠের বগুড়ার নিজস্ব প্রতিবেদক লিমন বাসার, মাগুরা প্রতিনিধি শামীম খান ও হবিগঞ্জ প্রতিনিধি শাহ ফকরুজ্জামান সহায়তা করেছেন)

No comments:

Post a Comment