১৯৪০ থেকে ২০১৪, মাঝে দীর্ঘ ৭৪ বছর। ব্রিটিশ, পাকিস্তান হয়ে স্বাধীন বাংলাদেশে জনসাধারণের প্রয়োজনে অনেক আইন পরিবর্তন-পরিবর্ধন কিংবা রদবদল হলেও জীবনরক্ষাকারী ওষুধ নিয়ে নত
ুন করে পরিপূর্ণ ও সময়োপযোগী কোনো আইন এখনো তৈরি হয়নি। মাঝেমধ্যে কেবল কিছু অধ্যাদেশ জারি করে ১৯৪০ সালের পুরনো আইনে জোড়াতালি দিয়ে চালানো হচ্ছে অতি গুরুত্বপূর্ণ এ খাতটি। স্বাধীনতার পর দুইবার ওষুধনীতি করা হলেও অনেক ক্ষেত্রেই তা কার্যকারিতা হারিয়েছে। নতুন আরেকটি ওষুধনীতি তৈরির কাজে গত মহাজোট সরকার হাত দিলেও তা আটকে আছে চার বছর ধরে। আর বর্তমান সরকারের আমলে নতুন একটি ওষুধ আইন প্রণয়নের প্রক্রিয়া অতি গোপনে চলছে বলে জানা গেছে। এভাবে নীতিমালা আটকে রাখা ও গোপনে আইন তৈরির উদ্যোগ- এই দুই প্রক্রিয়ার ক্ষেত্রেই কিছু মুনাফালোভী ওষুধ ব্যবসায়ীর কারসাজি রয়েছে বলে অভিযোগ আছে। এ ক্ষেত্রে তাঁরা রোগী তথা জনগণের স্বার্থ জলাঞ্জলি দিয়ে নিজেদের স্বার্থটাই বড় করে দেখছেন। সরকারপক্ষও এই অপতৎপরতার দোসর হিসেবে কাজ করছে। জানা গেছে, এমন জোড়াতালির আইন আর নীতির ফাঁক গলে দেশের ওষুধশিল্পে এক ধরনের 'অসাধু' বাণিজ্য ফুলে-ফেঁপে উঠছে অস্বাভাবিক গতিতে। কোনো নিজস্ব ওষুধ আবিষ্কার না থাকলেও উৎপাদনের দিক থেকে ওষুধে স্বয়ংসম্পূর্ণতা লাভের গর্বে গর্বিত সরকার ও ওষুধ কম্পানিগুলো। ওষুধ বিশেষজ্ঞরা জানান, সময়োপযোগী ও কার্যকর কোনো আইন ও নীতিমালা না থাকার সুযোগে বাজারে অতিরিক্ত, অপ্রয়োজনীয়, নিম্নমানের বা ভেজাল ওষুধের ছড়াছড়ি; তেমনি চোরাই, নিষিদ্ধ বা ক্ষতিকর ওষুধের কারবার চলছে বেপরোয়াভাবে। মানুষের মধ্যে ওষুধ নিয়ে বাড়ছে বিভ্রান্তি ও হয়রানি। বাড়ছে ওষুধজনিত ক্ষতিকর রোগের মাত্রা। দামের ক্ষেত্রেও বিরাজ করছে নিয়ন্ত্রণহীন পরিস্থিতি। কয়েক দিন পরপরই ওষুধের দাম বাড়ছে লাগামহীনভাবে। আবার রয়েছে একই ওষুধের বিভিন্ন দাম। এ ছাড়া দেশি ও বিদেশি বাজারের জন্য পৃথক ওষুধ উৎপাদনের মতো অনৈতিক তৎপরতারও অভিযোগ রয়েছে। এ ক্ষেত্রে কেবল ওষুধ কম্পানির সংখ্যা, উৎপাদনের পরিমাণ কিংবা বিশ্ববাজারে রপ্তানির সাফল্যের দিক না দেখে পাশাপাশি উৎপাদন ক্ষেত্রে ওষুধের গুণগত মান সংরক্ষণ, ওষুধ ব্যবস্থাপনা, মূল্য নির্ধারণ, ওষুধ ক্রয়-বিক্রয়, প্রচারণা, চিকিৎসক ও ওষুধ প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর অনৈতিক ভূমিকাসহ সংশ্লিষ্ট সব বিষয়ে বড় ধরনের সংস্কারের ওপর গুরুত্ব দেওয়া দরকার বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা। একজন ওষুধশিল্প মালিক বলেন, 'আমরা জানি, দেশের কোনো চারটি প্রতিষ্ঠান যদি কোনো একটি আইটেম তৈরি করে তবে ওই আইটেমের ওষুধ আর আমদানি করা যাবে না। কিন্তু বাস্তবে অনেকেই বিভিন্নভাবে ইচ্ছামতো ওষুধ আমদানি করছে। আবার দেশে নিষিদ্ধ- এমন ওষুধও পাওয়া যাচ্ছে বিভিন্ন ফার্মেসিতে। বিশেষজ্ঞরা বলেন, দেশে কেবল অ্যালোপ্যাথিকের ২০ হাজার ওষুধের মধ্যে ২০ শতাংশ নিম্নমানের ওষুধ থাকলেও এর সংখ্যা চার হাজারের কম নয়। তাই মানুষের মধ্যে এই বিপুল নিম্নমানের ওষুধ নিয়ে বিভ্রান্তি ও শঙ্কা কাজ করে। এমনকি ডাক্তাররাও বিভ্রান্ত হন। আবার ওষুধজনিত ক্ষতি বা পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া থেকেও বাড়ছে নতুন নতুন রোগ। কারো কারো দাবি, এমন পরিস্থিতি থেকে রক্ষার উদ্দেশ্যেই মূলত উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিল নতুন স্বাস্থ্যনীতি ও আইনের। বিশেষ করে আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে ২০০৮ সালে নির্বাচনী ইশতেহারে (১১ নম্বর) স্বাস্থ্যসেবা ও পরিবার কল্যাণ বিষয়ে প্রতিশ্রুতি অংশের এক স্থানে (১১.৩) উল্লেখ ছিল, 'মানসম্পন্ন ওষুধ উৎপাদনে আত্মনির্ভরশীলতা অর্জন ও রপ্তানি বৃদ্ধির লক্ষ্যে ওষুধনীতি যুগোপযোগী করা হবে। হোমিওপ্যাথি, ইউনানি, আয়ুর্বেদসহ দেশজ চিকিৎসা শিক্ষা এবং ভেষজ ওষুধের মানোন্নয়নে কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।' স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, ড্রাগ অ্যাক্ট ১৯৪০-কে মূল ধরে পরবর্তী সময়ে ১৯৪৫ ও ১৯৪৬ সালে দুই দফা বিধিমালা, ১৯৮২ ও ২০০৬ সালে দুই দফা ড্রাগ কন্ট্রোল অর্ডিন্যান্স এবং ২০০৫ সালে একটি ড্রাগ পলিসি তৈরি হয়। এর মাঝে কেবল আলাদা করে একবার ওষুধের মূল্য নির্ধারণে একটি নীতিমালা হয়। কিন্তু এই দীর্ঘ সময়ে দেশের ওষুধ সেক্টরে বিপ্লব ঘটে গেছে। সরকারি হিসাবে দেশে বর্তমানে অনুমোদিত অ্যালোপ্যাথিক ওষুধ প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা ২৫০টির বেশি। এসব প্রতিষ্ঠানের জেনেরিক ওষুধের আওতায় ব্র্যান্ড বা ট্রেড হিসেবে তৈরি বা বাজারজাতকৃত ওষুধ আছে প্রায় ২২ হাজার। এর বাইরে ২৬৮টি ইউনানি প্রতিষ্ঠানে প্রায় দেড় হাজার, ২০১টি আয়ুর্বেদিকে প্রায় চার হাজার ও প্রায় ১০০টি হোমিওপ্যাথিক প্রতিষ্ঠানের প্রায় এক হাজার ব্র্যান্ড ওষুধ রয়েছে। সব মিলিয়ে মোট ব্র্যান্ড ওষুধ রয়েছে প্রায় ৩০ হাজার। যদিও এসব ওষুধের জেনেরিক সংখ্যা মাত্র এক হাজার ২০০টির কিছু বেশি। জনস্বাস্থ্যবিদরা বলছেন, ওষুধ সরাসরি মানুষের জীবনরক্ষায় জড়িত বলে এ সেক্টরে সবার আগে গুরুত্ব দেওয়া দরকার মানবিক দৃষ্টিভঙ্গিকে। কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে- সরকার ও ওষুধ প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠানের মালিকরা এ সেক্টরকে এখন দেশের অন্যতম প্রধান বাণিজ্যিক সেক্টরে রূপ দিতে মরিয়া হয়ে উঠেছে। ফলে মানুষের স্বার্থকে গুরুত্ব না দিয়ে বরং ব্যবসায়িক বিষয়টিকে গুরুত্ব দিয়েই নেওয়া হচ্ছে নানা সিদ্ধান্ত। কোনোভাবে কোনো উদ্যোগ সাধারণ মানুষের স্বার্থমুখী করার চেষ্টা হলেই সেখানে প্রকাশ্যে বা অপ্রকাশ্যে তৎপর হয়ে ওঠেন ওষুধ কম্পানির অসাধু ব্যবসায়ীরা। সরকারও তাঁদের সঙ্গে সহজে পেরে ওঠে না। প্রস্তাবিত ওষুধ আইন ও ওষুধনীতির ক্ষেত্রেও এর প্রভাব পড়েছে বলে জানা যাচ্ছে। তবে সরকারের ওষুধ প্রশাসন অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মেজর জেনারেল মো. জাহাঙ্গীর হোসেন মল্লিক কালের কণ্ঠকে বলেন, বিরাজমান বিশৃঙ্খলা কাটাতেই এবার দীর্ঘ ৭৪ বছর পরে একটি পরিপূর্ণ ওষুধ আইন করা হচ্ছে। একই সঙ্গে একটি ওষুধনীতির কাজও চলছে। ওষুধ আইন ও নীতি হলে কেবল ওষুধ শিল্পই না, সাধারণ মানুষেরও উপকারের মাত্রা আগের তুলনায় অনেক বেড়ে যাবে। ওষুধ উৎপাদন ও বাজারজাতকরণেও ফিরে আসবে শৃঙ্খলা। বাংলাদেশ মেডিক্যাল অ্যাসোসিয়েশন- বিএমএর সাবেক সভাপতি ও স্বাস্থ্য আন্দোলন জাতীয় কমিটির সভাপতি অধ্যাপক ডা. রশিদ ই মাহবুব কালের কণ্ঠকে বলেন, এ সরকারের প্রতিশ্রুতি ছিল যুগোপযোগী একটি ওষুধনীতি করার। কিন্তু এখন পর্যন্ত এর আশানুরূপ অগ্রগতি নেই। আবার এ ওষুধনীতি ও আইন কতটা ওষুধশিল্প মালিকদের প্রভাবমুক্তভাবে করা যাবে তা নিয়েও প্রশ্ন থাকতে পারে। এ ক্ষেত্রে দায়সারাভাবে না করে বরং সত্যিকার অর্থেই মানুষের উপকারে আসে এমন আইন ও কার্যকর ওষুধনীতি প্রণয়ন করা জরুরি। ওষুধ প্রস্তুতকারী শিল্পের সঙ্গে যুক্ত একজন জ্যেষ্ঠ উদ্যোক্তা নাম প্রকাশ না করার অনুরোধ জানিয়ে বলেন, 'আমাদের মধ্যেই অনেকে ওষুধ সেক্টর আর অন্য সেক্টরের ব্যবসার পার্থক্য বুঝতে চান না। তাঁরা অন্য ব্যবসার মতো এখানেও যেনতেনভাবে মুনাফা আদায়কেই বড় করে দেখছেন। ফলে এ সেক্টরে এখন আগের তুলনায় অনেক বেশি মাত্রায় অনৈতিক তৎপরতা শুরু হয়েছে; যাদের অনেকের দাপটের কাছে প্রকৃত সেবার মানসিকতা নিয়ে এ সেক্টরে কাজ করতে আসা ভালো প্রতিষ্ঠানগুলোকেও গুটিয়ে থাকতে হচ্ছে।' ওই উদ্যোক্তা অনেকটা ক্ষোভ প্রকাশ করেই বলেন, 'আমাদের ওষুধ সেক্টরে সরকারের কোনো নিয়ন্ত্রণ আছে বলে মনে হয় না।' উদাহরণ তুলে ধরে তিনি বলেন, সর্বজন পরিচিত প্যারাসিটামলের কথাই ধরুন। ওর্যাল লিকুইড, সাপোজিটরি ও ট্যাবলেট ক্যাটাগরির মিলে এ ওষুধটি তৈরি করছে কমপক্ষে ১১০টি ওষুধ প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান। কিন্তু বড়জোর ৮-১০টি প্রতিষ্ঠানের প্যারাসিটামল ছাড়া বাকিগুলোর নাম ভালো কোনো ডাক্তাররা লেখেন না। কারণ সবাই জানে, এর বাইরে প্যারাসিটামলের যে আইটেমগুলো বাজারে পাওয়া যায় তা মানসম্মত নয়। এর পরও কেন এগুলো বাজারে থাকছে কিংবা আরো প্যারাসিটামলের অনুমোদন দেওয়া হচ্ছে! যদি এমনটাই হয় তবে চিংড়ি মাছ বা আলু-পটোলের ব্যবসার মধ্যে জীবনরক্ষাকারী ওষুধের ব্যবসার পার্থক্য কী? ওষুধনীতি বা আইন প্রণয়নে ওষুধ কম্পানির স্বার্থ রক্ষা ও মালিকদের প্রভাব বা চাপের বিষয়ে জানতে চাইলে বাংলাদেশ ওষুধশিল্প সমিতির সাধারণ সম্পাদক আবদুল মুক্তাদির কালের কণ্ঠকে বলেন, 'নীতি ও আইন করছে সরকার। সরকার থেকে যখন আমাদের কাছে মতামত চাওয়া হয় আমরা মতামত দেই। এর বাইরে আমাদের দিক থেকে কোনো চাপ বা প্রভাবের বিষয় নেই। এ ছাড়া ওষুধনীতি বিলম্বিত হওয়ার পেছনে মামলাজনিত সমস্যা এবং বিশৃঙ্খলাও দায়ী।' গোপনে নতুন আইন সম্পর্কে ওষুধশিল্প সমিতির এই নেতা বলেন, 'আইনের ক্ষেত্রে সবারই মতামতের সুযোগ থাকবে। যখন সংসদে যাবে অনন্ত পক্ষে তখন সবাই জানতে পারবে।' তিনি দাবি করেন আইনের খসড়া প্রস্তুতকালে তাঁদের কোনো মতামত নেওয়া হয়নি বা এ-সংক্রান্ত কোনো কমিটিতেও তাঁদের কেউ নেই। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা যায়, সরকারের সদিচ্ছার অংশ হিসেবেই ১৯৮২ ও ২০০৫ সালের জাতীয় ওষুধনীতি পর্যালোচনার ভিত্তিতে নতুন একটি সময়োপযোগী ওষুধনীতি প্রণয়নের জন্য ২০১০ সালে জাতীয় পর্যায়ে একটি কমিটি গঠন করা হয়। ১৪ সদস্যবিশিষ্ট কমিটিতে দুজন সংসদ সদস্য, ওষুধ প্রশাসন অধিদপ্তরের প্রতিনিধি, ওষুধবিদ, চিকিৎসক, ওষুধ প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠানসহ সংশ্লিষ্ট ক্ষেত্র থেকে প্রতিনিধি রাখা হয়েছিল। ওই জাতীয় কমিটি পরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফার্মেসি বিভাগের অধ্যাপক আ ব ম ফারুককে প্রধান করে আরেকটি সাবকমিটি করে দিয়েছে পুরনো ওষুধনীতি পর্যালোচনা করে প্রাথমিক পর্যায়ের একটি খসড়া তৈরি করে দেওয়ার জন্য। তারা মূল কমিটির কাছে ওই খসড়া জমা দেওয়ার পর তা নিয়ে মূল কমিটি সভায় আলোচনা, পর্যালোচনা ও জনমতের ভিত্তিতে খসড়ার আরেক ধাপ সম্পন্ন করে তা মন্ত্রণালয়ে পাঠাবে। মন্ত্রণালয় পর্যায়ে একইভাবে আবারও আলোচনা-পর্যালোচনা এবং সুপারিশ-সংযোজন-বিয়োজন শেষে তা মূল কমিটিকে দেবে। এরপর মূল কমিটি একটি চূড়ান্ত খসড়া তৈরি করে তা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে জাতীয় সংসদে পাঠাবে। ওষুধ প্রশাসন অধিদপ্তর সূত্র জানায়, এবারের ওষুধনীতি প্রায় চূড়ান্ত করে মন্ত্রণালয়ে পাঠানোর পর হঠাৎ করেই একটি ওষুধ কম্পানির মালিক বাংলাদেশ ফার্মাসিউটিক্যালস সোসাইটির নামে উচ্চ আদালতে রিট করেন। ফলে উচ্চ আদালতের নির্দেশে ওই খসড়া নিয়ে ফের কাজ করতে হয়। এ কারণেই পুরো প্রক্রিয়াটি পিছিয়ে পড়ে। এ বিষয়ে জানতে চাইলে বাংলাদেশ ফার্মাসিউটিক্যালস সোসাইটির সভাপতি ও রেডিয়েন্ট ফার্মাসিউটিক্যাল লিমিটেডের চেয়ারম্যান আবু নাসের শাহরিয়ার জাহেদী কালের কণ্ঠকে বলেন, 'একটি ওষুধনীতি হবে; কিন্তু সেখানে ফার্মাসিস্টদের কোনো অংশগ্রহণ থাকবে না, তা হতে পারে না। এ দিকটি বিবেচনায় নিয়েই ওষুধনীতি প্রণয়নের প্রক্রিয়ার শুরুতে গঠিত কমিটিতে আমাদের প্রতিনিধিত্ব রাখার নির্দেশনা দিয়েছিল মন্ত্রণালয়। কিন্তু ওই নির্দেশনা উপক্ষো করে আমাদের বাদ দিয়ে একটি খসড়া করে মন্ত্রণালয়ে পাঠানোর পর আমরা বাধ্য হয়ে উচ্চ আদালতের আশ্রয় নিই। পরে উচ্চ আদালত আমাদের পক্ষে আদেশ দেন। পরবর্তী সময়ে মন্ত্রণালয় থেকে ওই খসড়া ফেরত এনে ফের আমাদের অন্তর্ভুক্ত করে খসড়াটি প্রস্তুত করে মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে কয়েক মাস আগে। এখন কেন আটকে আছে আমরা জানি না।' আইনের বিষয়ে জানতে চাইলে বাংলাদেশ ফার্মাসিউটিক্যালস সোসাইটির সভাপতি বলেন, 'নীতির মতো আইন প্রণয়নেও ওষুধ সেক্টরের সব মহলের প্রতিনিধিদের নিয়ে খসড়া তৈরি ও মতামত নেওয়া প্রয়োজন। কিন্তু এ পর্যন্ত আমরা কিছুই জানতে পারিনি।' ওষুধ প্রশাসন অধিদপ্তরের পরিচালক সেলিম বারামী কালের কণ্ঠকে বলেন, ওষুধনীতিটির খসড়া প্রায় চূড়ান্ত করে মন্ত্রণালয়ে পাঠানোর একপর্যায়ে আদালতের নির্দেশে তা ফিরিয়ে আনতে হয়েছে। এখন আদালতের নির্দেশনা অনুসরণ করে খসড়া তৈরির কাজ চলছে। ওই কর্মকর্তা বলেন, কেবল নীতিই নয়, পুরনো সব আইন-অধ্যাদেশ-বিধি মিলিয়ে নতুন একটি আইনের কাজও অনেক দূর এগিয়েছে। আইনের খসড়াটি এখন মন্ত্রণালয়ে রয়েছে। ওষুধনীতি প্রণয়নে খড়সা প্রস্তুতকারী প্রথম কমিটির প্রধান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফার্মেসি বিভাগের অধ্যাপক আ ব ম ফারুক কালের কণ্ঠকে বলেন, 'আমরা আইনের খসড়ার কাজ শেষ করে পাঠিয়ে দিয়েছিলাম। এরপর কী হয়েছে জানা নেই। আর অনেক দিন ধরে কেউ এ বিষয়ে আমাকে ডাকছেও না।' অধ্যাপক আ ব ম ফারুক বলেন, একটি সার্থক ওষুধনীতি বা আইন করতে হলে সেখানে জনগণ, ওষুধ প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান ও সরকার- তিন পক্ষেরই স্বার্থের সমন্বয় থাকতে হবে। কেবল কোনো একটি পক্ষের স্বার্থ বেশি প্রতিফলিত হলে এর সুফল পাওয়া যাবে না। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ওষুধ প্রযুক্তি বিভাগের আরেক অধ্যাপক মো. মুনীরুদ্দীন আহম্মেদ কালের কণ্ঠকে বলেন, 'একটি আইন হলে সেটা হতে হবে সবাইকে জানিয়ে-শুনিয়ে, সবার মতামত নিয়ে। কিন্তু ওষুধ আইনের ক্ষেত্রে জনমতের কোনো প্রতিফলনের সুযোগ নেই। সাধারণ মানুষ তো দূরের কথা, আমরাও কোথাও খুঁজে এই ওষুধ আইনের খসড়া পাই না।'
No comments:
Post a Comment