Friday, December 5, 2014

চাঁদার ভাগ নিয়ে ছাত্রলীগ শ্রমিক সংঘর্ষ অবরোধ:কালের কন্ঠ

কুমিল্লায় পরিবহনের চাঁদার টাকা ভাগাভাগি নিয়ে বিরোধের জের ধরে ছাত্রলীগ-যুবলীগের সঙ্গে শ্রমিকদের সংঘর্ষ, হামলা ও ভাঙচুরের ঘটনা ঘটেছে। এ ঘটনার প্রতিবাদে শ্রমিকরা ঢাকা-চট
্টগ্রাম মহাসড়ক অবরোধ করলে অন্তত ৬০ কিলোমিটারজুড়ে যানজটের সৃষ্টি হয়। গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুর ১টা থেকে এই অবরোধ করা হয়। পরে দায়ীদের গ্রেপ্তারের আশ্বাস দিলে সন্ধ্যা ৫টার দিকে অবরোধ তুলে নেয় শ্রমিকরা। অবরোধের এই চার ঘণ্টায় অবর্ণনীয় দুর্ভোগ পোহায় মহাসড়কে আটকে পড়া সাধারণ যাত্রী ও রোগীরা। স্থানীয় সূত্র জানায়, এক মাস ধরে কুমিল্লার পদুয়ারবাজার চৌরাস্তায় ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে চলাচলকারী হাজার হাজার যাত্রীবাহী বাসের প্রতিটি থেকে ১০০ টাকা করে চাঁদা তোলা হয়। পরিবহন শ্রমিক ও ছাত্রলীগের কর্মীরা এ চাঁদা তোলে, যা ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ, পরিবহন মালিক ও পরিবহন শ্রমিকদের মধ্যে ভাগভাটোয়ারা হয়। এই টাকার শতকরা হিসাবে পরিবহন মালিক গ্রুপ ৩০ টাকা, শ্রমিক সংগঠন ৩০ টাকা এবং আওয়ামী লীগ ৪০ টাকা পাওয়ার অলিখিত চুক্তি রয়েছে। কিন্তু মাসখানেক ধরে টাকার ভাগ নিয়ে দ্বন্দ্ব শুরু হয়। এর জের ধরে গতকাল সকালে পদুয়ারবাজার এলাকায় ছাত্রলীগ ও যুবলীগকর্মীরা ‘সম্মান না পেলে’ টাকা তোলার দরকার নেই বলে চাঁদা তুলতে বাধা দেয়। প্রতিবাদে দুপুর ১টার দিকে কুমিল্লা জেলা বাস ও মিনিবাস শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি মোহাম্মদ আলীর নেতৃত্বে শ্রমিকরা ‘বলাকা’, ‘উপকূল’, ‘দোয়েল’ ও ‘ট্রান্সপোর্ট’ পরিবহনের বাস কুমিল্লার পদুয়ারবাজার এলাকায় ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে এলোপাতাড়ি রেখে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে ব্যারিকেড দেয়। খবর পেয়ে ছাত্রলীগ নেতা দুলাল হোসেন অপু, দেলোয়ার হোসেন, আবাদ প্রমুখের নেতৃত্বে ছাত্রলীগ ও যুবলীগের কর্মীরা ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিবহন শ্রমিক নেতাদের ওপর হামলা চালায় এবং গাড়ি ভাঙচুর করে ব্যারিকেড তুলে দেয়। হামলায় কুমিল্লা জেলা বাস ও মিনিবাস শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি মোহাম্মদ আলী, সাধারণ সম্পাদক ও বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশনের যুগ্ম সম্পাদক কাজী মোতাহার হোসেন, বাসচালক মিজান, লিটন ও শাহিন আহত হন। মোহাম্মদ আলীকে শহরের মুন হসপিটালের আইসিইউতে ভর্তি করা হয়েছে। অন্যদের স্থানীয় হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। হামলার সময় অন্তত ১০টি বাস ভাঙচুর করা হয়। এ ঘটনার প্রতিবাদে দুপুর ১টার দিকে পরিবহন শ্রমিকরা ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে কুমিল্লার আলেখারচরে এবং শহরের জাঙ্গালিয়া বাসস্ট্যান্ডে ব্যারিকেড দিয়ে যান চলাচল বন্ধ করে দেয়। এতে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে কুমিল্লার দাউদকান্দির গৌরীপুর থেকে কুমিল্লার মিয়ারবাজার পর্যন্ত মহাসড়কে হাজার হাজার যানবাহন আটকা পড়ে। বিকেল ৫টার দিকে মহাসড়ক পুলিশের সুপার রেজাউল করিম, এএসপি সার্কেল জাহাঙ্গীর আলম, কোতোয়ালি থানার ওসি খোরশেদ আলম ছাত্রলীগ নেতা দুলাল হোসেন অপুকে গ্রেপ্তার করার আশ্বাস দিলে ব্যারিকেড তুলে নেয় শ্রমিকরা। কুমিল্লা পরিবহন মালিক গ্রুপের সভাপতি অধ্যক্ষ কবির আহমেদ জানান, চাঁদার দাবিতে ছাত্রলীগ-যুবলীগকর্মীরা দুলাল হোসেন অপুর নেতৃত্বে শ্রমিক নেতাদের ওপর হামলা চালায় এবং বাস ভাঙচুর করে। এর প্রতিবাদে মহাসড়ক অবরোধ করে শ্রমিকরা। পুলিশের উপস্থিতিতে এ হামলার ঘটনা ঘটে। কুমিল্লা জেলা বাস-মিনিবাস শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক ও বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশনের যুগ্ম সম্পাদক কাজী মোতাহার হোসেন জানান, কিছু বুঝে ওঠার আগে ছাত্রলীগকর্মীরা ইটপাটকেল নিক্ষেপ শুরু করে। এতে অজ্ঞান হয়ে ড্রেনে পড়ে যাই।  কুমিল্লা জেলা যুবলীগের সাবেক সমাজকল্যাণ সম্পাদক কবির হোসেন ভূঁইয়া বলেন, ‘মহাসড়কে প্রতিটি বাস থেকে মালিক-শ্রমিকরা টাকা তোলে। টার্মিনাল ফিয়ের বাইরে টাকা তোলা অবৈধ। এ জন্য আমরা টাকা তুলতে নিষেধ করেছি। কিন্তু তারা আমাদের কথা না শুনে টাকা তুলতে থাকে।’ কবির হোসেন আরো বলেন, ‘বিগত সরকারের সময় বিএনপি টাকা তুলত, আমাদের এ অভিজ্ঞতা নাই। আমরা বলেছি জুনিয়র ছেলেদের সম্মান করতে। তারা সম্মান দিতে রাজি হয়নি।’ সদর দক্ষিণ মহানগর ছাত্রলীগের নেতা দুলাল হোসেন অপু জানান, মালিক-শ্রমিক নিজেরা টাকা তুলে নেওয়ার কারণে পদুয়ারবাজার এলাকায় যারা কাজ করত তারা বেকার হয়ে গেছে। এখান থেকে আগে যারা কাজ করত তার কিছু পেত, কিন্তু এখন পায় না। ৪০ টাকা দিতে পরিবহন রাজি নয় কেন- এ প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, তারা বলতে চায় আরো কম দেবে। অভিযোগ প্রসঙ্গে কুমিল্লা সদর দক্ষিণ থানার ওসি প্রশান্ত পাল বলেন, ‘চাঁদা তোলা নিয়ে নিজেদের মধ্যে সমস্যা হয়েছে। স্থানীয় ছেলেরা বলেছে, তাদের এলাকায় চাঁদা তোলা যাবে না। আমরাও বলেছি, চাঁদাবাজি চলবে না। এতে পরিবহনের লোকদের আঁতে ঘা লেগেছে। এ জন্য তারা আমার বিরুদ্ধে কথা বলছে।’ এ ঘটনায় কোনো মামলা হয়নি জানিয়ে তিনি বলেন, ‘মামলা হলে আমরা তা দেখব।’ অবর্ণনীয় দুর্ভোগ পোহাতে হলো রোগী জামেলাকে : দুপুর ১টা থেকে মহাসড়কে অবরোধ শুরু হলে চিকিৎসার জন্য ঢাকামুখী অ্যাম্বুল্যান্সে থাকা ৮০ বছর বয়সী মুমূর্ষু রোগী জামেলা খাতুন ও তাঁর স্বজনরা আটকা পড়ে। দীর্ঘ সময় অ্যাম্বুল্যান্সের ভেতরেই নিশ্চুপ বসে থাকতে হয় তাদের। জামেলা খাতুনের সঙ্গে থাকা মেয়ে আনোয়ারা খাতুন ও ছেলে শামীম মিয়ার চোখেমুখে তখন রাজ্যের অসহায়ত্ব। আনোয়ারা সাংবাদিককে দেখে বলেন, ‘ভাই, আমরা কিভাবে মাকে নিয়ে ঢাকায় যাব? পথ দেখছি না তো। যেভাবে রাস্তা আটকে রাখা হয়েছে কোনো উপায় পাচ্ছি না। আমার মাকে কি বাঁচাতে পারব না?’ ছেলে শামীম বলেন, ‘আমাদের দেশে গুরুত্বপূর্ণ সড়কগুলো যদি কথাকাটাকাটি কিংবা ঝগড়া হলেই বন্ধ করে দেয়, তাহলে বিপদে-আপদে আমাদের সীমাহীন মূল্য দিতে হয়। এ রকম কর্মকাণ্ড থেকে আমরা মুক্তি চাই। কারণ কিছু লোকের জন্য তো হাজার হাজার মানুষ ভোগান্তির শিকার হতে পারে না। অসুস্থ মাকে নিয়ে চিকিৎসার জন্য যেতে পারছি না। আসলে জনগণের কথা কেউ ভাবে না।’ জানা গেছে, জামেলা খাতুনের বাড়ি কুমিল্লার দেবিদ্বার থানার চানপুর এলাকায়। বার্ধক্য ও ডায়াবেটিসে আক্রান্ত জামেলাকে কুমিল্লা মা ও শিশু হাসপাতালের একটি অ্যাম্বুল্যান্সে করে কুমিল্লা থেকে উন্নততর চিকিৎসার জন্য দ্রুত ঢাকায় নেওয়ার পরামর্শ দেন চিকিৎসক। তাই দ্রুত ঢাকার উদ্দেশে কুমিল্লা থেকে রওনা হন তাঁরা।

No comments:

Post a Comment