Monday, July 21, 2014

আশুলিয়া–বাইপাইল সড়ক নিয়ে যত আশঙ্কা:প্রথম অালো

ঈদে ঢাকা থেকে টাঙ্গাইল ও উত্তরবঙ্গের ১৭টি জেলার মানুষকে সড়কপথে ঘরে ফেরার জন্য আবদুল্লাহপুর-বাইপাইল, টঙ্গী-কালিয়াকৈর ও নবীনগর-চন্দ্রা সড়ক ব্যবহার করতে হবে। এ তিন সড়কের মধ্যে টঙ্গী-কালিয়াকৈর ও নবীনগর-চন্দ্রার অবস্থা ভালো। তবে আবদুল্লাহপুর-বাইপাইল সড়কের আশুলিয়া-বাইপাইল অংশ নিয়ে যত আশঙ্কা। মাত্র দুই কিলোমিটার খারাপ অংশের মেরামতকাজ দুই দিনে শেষ না হলে এ পথের যাত্রীদের জন্য ভোগান্তি অপেক্ষা করছে।
যাত্রীদের দীর্ঘ যানজটে আটকে থাকতে হতে পারে। এই তিনটি সড়কের অবস্থা জানতে গতকাল রোববার সরেজমিনে গিয়ে পাওয়া গেছে এই চিত্র। চন্দ্রার পর থেকে টাঙ্গাইল হয়ে বঙ্গবন্ধু সেতুর পূর্ব প্রান্ত পর্যন্ত মহাসড়কের অবস্থা ভালো বলে জানালেন ওই পথের বাস ও ট্রাকের কয়েকজন চালক। তাঁরা বললেন, চন্দ্রা থেকে বঙ্গবন্ধু সেতু পর্যন্ত টাঙ্গাইলের এলেঙ্গা ছাড়া পথে কোনো সমস্যা তাঁরা দেখেননি। বাসচালক সানোয়ার হোসেন বললেন, এলেঙ্গায় যত্রতত্র বাস রেখে যাত্রী ওঠা-নামা করানোয় যানজট লেগে থাকে। বঙ্গবন্ধু সেতুর পর উত্তরবঙ্গের পথে আর কোনো সমস্যা নেই। আবদুল্লাহপুর-বাইপাইল সড়ক: সড়কটির হাল দেখতে গতকাল মাইক্রোবাস নিয়ে বাইপাইল হয়ে চন্দ্রার উদ্দেশ্যে ছুটে যাওয়া। দুপুর ১২টায় আশুলিয়া থেকে যানবাহনের চাপ ছিল কম। পথে প্রথম বিপত্তি হয় জামগড়ায় ফ্যান্টাসি কিংডমের সামনে। মনে হচ্ছিল, গাড়ি নিচে নেমে গিয়ে আবারও ওপরে ওঠার চেষ্টা করছে। কিছুক্ষণ উঁচু-নিচু সড়কে ‘দোল’ খেতে খেতে গাড়ি থামল হেরিটেজ পার্কের ফটকের কাছে। সামনে যানবাহনের দীর্ঘ সারি। সড়কের এক পাশে বৃষ্টির পানি বের করতে কাঁচা নালা তৈরি করা হয়েছে। অন্য পাশের ময়লা-আবর্জনা সরিয়ে সড়কটি বড় করা হয়েছে। ঈদ সামনে রেখে স্থানভেদে ৫ থেকে ১০ ফুট পর্যন্ত সড়ক প্রশস্ত করা হয়েছে। কিন্তু গাড়িগুলো তার পরও এখানে এসে থেমে যাচ্ছে। ওই এলাকা পার হতে হচ্ছে খুবই ধীরগতিতে। যোগাযোগমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেছিলেন, ২০ জুলাইয়ের (গতকাল) মধ্যে সব সড়ক ও মহাসড়ক ঠিক করা হবে। সড়কের এই অবস্থা দেখে গাড়ি থেকে নেমে সামনের দিকে হাঁটতে শুরু করলাম। এক কিলোমিটার হেঁটে বোঝা গেল, কেন এই অবস্থা। সড়কের ফ্যান্টাসি কিংডম থেকে আইয়ুব আলী মার্কেট পর্যন্ত অংশ মেরামতের কাজ চলছে। গতকাল কাজ শেষ হওয়ার কথা থাকলেও শেষ হতে আরও কয়েক দিন লাগবে বলে জানা গেছে। সড়কের পাশে ইট-বালু স্তূপ করে রাখা। আইয়ুব আলী মার্কেটের সামনের সড়কটি প্রায় দুই ফুট উঁচু করার কাজ প্রায় শেষ। কিন্তু এর আগের ২০ ফুটের মতো সড়ক উঁচু করা হয়নি। ফলে গাড়িগুলোকে অনেকটা পাহাড়ে ওঠার মতো করে ওপরে উঠতে হচ্ছে। বড় গাড়িগুলো ধীরে হলেও উঠতে পারছে। কিন্তু রিকশা, রিকশাভ্যান, হিউম্যান হলার, ব্যক্তিগত গাড়িগুলোকে তুলতে চালককে বেগ পেতে হচ্ছে। উঠতে গিয়ে কয়েকটি হিউম্যান হলারের ইঞ্জিন বন্ধও হয়েছে। পুলিশের একজন উপপরিদর্শক (এসআই) ও দুজন ট্রাফিক কনস্টেবলকে যানজট নিয়ন্ত্রণে হিমশিম খেতে হচ্ছে। বিরক্ত এসআই সাহাবউদ্দিন বললেন, ২০ ফুট জায়গার জন্য ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে হাজার হাজার মানুষকে। যারা কাজ করবে, তারা ইচ্ছা করেই কৃত্রিম সংকট তৈরি করেছে। একসঙ্গে কাজটা করে ফেললে এই অবস্থা হতো না। ঈদের আগে কাজ শেষ না হলে ভয়াবহ অবস্থা হবে। পাশেই সড়ক মেরামতের কাজ করছিলেন সাব-কন্ট্রাক্টর আয়নাল হোসেন। তিনি বললেন, ওই অংশের কাজ আরেকজনের। তাঁর অংশের কাজ আজ-কালের মধ্যেই শেষ হবে। এই এলাকায় নয় কিলোমিটারের মতো সড়ক মেরামত করা হচ্ছে। তবে দুই কিলোমিটারের অবস্থা বেশি খারাপ। তিনি বললেন, ‘অল্প বৃষ্টি হলে সমস্যা হবে না। কিন্তু ভারী বৃষ্টি হলে এই সড়ক দিয়ে যাঁরা চলাচল করবেন, তাঁদের খবর আছে।’ ওই দুই কিলোমিটার ছাড়া বাকি পথ ভালোভাবেই পার হলো মাইক্রোবাস। সড়কে ছিল না কোনো বড় গর্ত বা খানাখন্দ। যাত্রীদের জন্য সুখবর হলো, বাইপাইল বাসস্ট্যান্ডে যত্রতত্র গাড়ি ও ট্রাক রাখা বন্ধ করেছে পুলিশ। রাস্তা ঘেঁষে থাকা দোকানগুলোও তুলে দেওয়া হয়েছে। তবে নরসিংহপুরে এক কিলোমিটারের মতো সড়ক বেশ সরু। সড়কের পাশে কিছু স্থায়ী দোকানও হয়েছে। ট্রাফিক কনস্টেবল সামাদ বললেন, পুলিশের পক্ষ থেকে এই এলাকায় কড়া নজর না দিলে যাত্রীদের ভোগান্তি হতে পারে। নবীনগর-চন্দ্রা সড়ক: চন্দ্রা থেকে নবীনগর পর্যন্ত সড়কের পুরোটাই চার লেন। সড়কের কোথাও খানাখন্দ চোখে পড়েনি। তবে সড়কের পাশের মার্কেট, কাঁচাবাজার ও যাত্রী তোলার জন্য বাসের যত্রতত্র থেমে থাকা ঈদে ঘরমুখী মানুষকে ভোগান্তিতে ফেলতে পারে। এই সড়কের ইপিজেডে প্রবেশ এলাকায় যানবাহনের গতি রোধ হয়। সেখানে একটি মোড় দিয়ে সব দিকের গাড়ি সড়ক পরিবর্তন করায় যানজট তৈরির আশঙ্কা থাকছে। টঙ্গী-কালিয়াকৈর সড়ক: সড়কটি মিলেছে চন্দ্রা মোড়ে ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কে। অন্যতম ব্যস্ত এই সড়কের অবস্থাও ভালো। কিছু কিছু এলাকা সামান্য মেরামত করা হয়েছে। তবে বেশির ভাগ অংশই আগে থেকে ভালো ছিল। এই সড়কের টঙ্গী অংশের শুরুতে বিভিন্ন ধরনের যানবাহনকে সড়কের বড় একটি অংশ দখল করে রাখতে দেখা গেছে। চন্দ্রা মোড়ে ওঠার আগের অংশ সম্প্রসারণ করা হয়েছে। মোড়ে বাস দাঁড়ানো বন্ধ করা হয়েছে। এ ছাড়া সড়কের আশপাশে দখল করে গড়ে ওঠা দোকানপাট সরিয়ে ফেলা হয়েছে। ফলে যান চলাচলে বিঘ্ন সৃষ্টি করার মতো তেমন কিছু চোখে পড়েনি। পুলিশের ঢাকা রেঞ্জের এক কর্মকর্তা প্রথম আলোকে বলেন, যে তিনটি সড়ক ধরে উত্তরবঙ্গে যেতে হবে, সেগুলোর ব্যবস্থাপনা এখন প্রধান চ্যালেঞ্জ। পর্যাপ্ত পুলিশ ও ট্রাফিক পুলিশকে দায়িত্ব দেওয়া হলে এবং বেশি বৃষ্টি না হলে এবার এই পথে ঘরে ফিরতে যাত্রীদের তেমন ভোগান্তিতে পড়তে হবে না।

No comments:

Post a Comment