ামারি, যা নিয়ন্ত্রণে এখন ঘুম হারাম হয়ে গেছে এ কাজে যুক্ত স্থানীয় স্বাস্থ্য বিভাগের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের। আর এর পেছনে দায়ী করা হচ্ছে ম্যালেরিয়া থেকে রক্ষার জন্য বিনা মূল্যে বিতরণ করা এক ধরনের বিশেষ মশারিকে। অভিযোগ উঠেছে, টাকা লুটপাটের উদ্দেশ্যেই এসব ‘অবৈধ’ মশারি গছিয়ে দেওয়া হয় ম্যালেরিয়াপ্রবণ এলাকার লোকজনকে। জানা গেছে, খোদ সরকারের মধ্যেই এখন সংশয় দেখা দিয়েছে ম্যালেরিয়ার মশা থেকে রক্ষার জন্য বিনা মূল্যে বিতরণ করা ওই বিশেষ মশারির কার্যকারিতা নিয়ে। এগুলো হলো এক ধরনের কীটনাশকযুক্ত মশারি। এর নাম এলএলআইএন (লং লাস্টিং ইনসেকটিসাইডাল নেটস) মশারি। ২০১১ সাল থেকে দফায় দফায় তিন পার্বত্য জেলায় ৬৫ লাখ বিশেষ মশারি বিতরণ করা হয়েছে; আরো সাড়ে সাত লাখ বিতরণের অপেক্ষায় আছে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের একাধিক সূত্র জানায়, আগে থেকেই মশারিতে কীটনাশকের কার্যকারিতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছিল। কিন্তু এক শ্রেণির কর্মকর্তা ও মশারি সরবরাহকারী প্রভাবশালী মহলের দাপটে সবার মুখ বন্ধ হয়ে যায়। কেউ আর এ নিয়ে কথা বলার সাহস দেখায়নি। এমনকি কারো কারো চাকরি চলে যাওয়ার মতো অবস্থাও হয়েছিল। ওদিকে কৃষি মন্ত্রণালয়ের কীটতত্ত্ব বিভাগ দাবি করছে, স্বাস্থ্যঝুঁকির কথা বিবেচনা করে কীটনাশকযুক্ত ওই মশারি আনার অনুমোদন তারা দেয়নি। লাখ লাখ মশারি আনা হয়েছে অবৈধভাবে। আর স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট বিভাগ আবার দাবি করছে, জনস্বাস্থ্যের কথা বিবেচনা করেই তারা অনুমোদনের তোয়াক্কা করেনি। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিচালক (রোগ নিয়ন্ত্রণ) ও ম্যালেরিয়া নিয়ন্ত্রণ কার্যক্রমের মুখ্য ব্যক্তি ডা. বে-নজীর আহম্মেদ কালের কণ্ঠকে বলেন, চলতি বছরের শুরু থেকে তিন পার্বত্য জেলা- রাঙামাটি, বান্দরবান ও খাগড়াছড়িতে ম্যালেরিয়ায় আক্রান্ত হয়েছে ২৯ হাজার ৩৯৬ জন, আর এ সময়ে মৃত্যু হয়েছে ৪০ জনের। এর মধ্যে গত জুলাই মাসে মারা গেছে ২২ জন, আক্রান্ত হয়েছে ১০ হাজার ৯৯৪ জন। আর চলতি মাসে মারা গেছে সাতজন, আক্রান্ত হয়েছে তিন হাজার ২৪০ জন। পার্বত্য অঞ্চলে ম্যালেরিয়ায় মৃত্যু ও আক্রান্তের সংখ্যা দ্রুত বেড়ে যাওয়ায় স্বাস্থ্য অধিদপ্তর থেকে তিন পার্বত্য জেলায় বিভাগীয় জরুরি অবস্থা জারি করা হয়েছে। ম্যালেরিয়া নিয়ন্ত্রণে জরুরি কার্যক্রম গ্রহণের জন্য স্বাস্থ্য অধিদপ্তর থেকে তিন পার্বত্য জেলাসহ চট্টগ্রাম ও কক্সবাজারের সিভিল সার্জনদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত ওই সব এলাকার স্বাস্থ্য বিভাগের সব পর্যায়ের কর্মকর্তা ও কর্মচারীর ছুটি বাতিল করা হয়েছে। একই সঙ্গে ম্যালেরিয়া পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের বিশেষ টিম পার্বত্য অঞ্চলে পাঠানো হয়েছে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিচালক বলেন, ‘পার্বত্য অঞ্চলের ম্যালেরিয়া পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে ওই সব এলাকার স্বাস্থ্য বিভাগীয় চিকিৎসক-কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জন্য জরুরি অবস্থার ভিত্তিতে সার্বক্ষণিক দায়িত্ব পালনে ও এলাকায় অবস্থানের ব্যবস্থা নিয়েছি।’ স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিচালক বলেন, ‘পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে ও পর্যবেক্ষণে আমি নিজেও একটি টিম নিয়ে পার্বত্য অঞ্চলে ঘুরেছি। এ সময়ে স্থানীয় স্বাস্থ্য বিভাগীয় কর্মকর্তা ও প্রশাসনের প্রতিনিধিদের সমন্বয়ে কয়েকটি সভাও করা হয়েছে। গঠন করা হয়েছে বিশেষ কমিটি। জেলার স্বাস্থ্যকর্মী ও চিকিৎসকদের মাঠপর্যায়ে চিকিৎসাসেবা বাড়ানোর পাশাপাশি ম্যালেরিয়া নিয়ন্ত্রণে গুরুত্বের সঙ্গে কাজ করার নির্দেশ দিয়েছে কমিটি। তিন পার্বত্য জেলায় জরুরি ভিত্তিতে পর্যাপ্ত ওষুধ ও আরো সাড়ে সাত লাখ কীটনাশকযুক্ত মশারি দেওয়া হচ্ছে।’ কার্যকারিতা নিয়ে সংশয় থাকা সত্ত্বেও ওই মশারি আবারও বিতরণ কেন- এ প্রশ্নে ওই কর্মকর্তা বলেন, আপাতত পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার জন্যই এটা করা হয়েছে। তবে এর পাশাপাশি নতুন করে বিকল্প কিছু পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে। কীটনাশক বা বিষযুক্ত ওই মশারিতে মানুষের ক্ষতি হয় কি না জানতে চাইলে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণাপ্রতিষ্ঠান আইইডিসিআরের পরিচালক অধ্যাপক ড. মাহামুদুর রহমান কালের কণ্ঠকে বলেন, এ বিষয়ে এখন পর্যন্ত কোনো রকম পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা যায়নি। তবে তিনি সংশয় প্রকাশ করে বলেন, আরো অনেক দেশেই মশারি ব্যবহৃত হয়; কিন্তু এর কার্যকারিতা সঠিক মাত্রায় থাকলে এমনভাবে ম্যালেরিয়ার বিস্তৃতি ঘটল কেন তা নিয়ে প্রশ্ন জাগতেই পারে। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, কীটনাশক মেশানো এসব মশারি ৯০ শতাংশ ম্যালেরিয়া জীবাণুবাহী মশা নিয়ন্ত্রণের কথা। কিন্তু সম্প্রতি পরিচালিত এক গবেষণায় মেয়াদ শেষ হওয়ার আগেই এই ক্ষমতা ২৬ শতাংশেরও নিচে নেমে যাওয়ার প্রমাণ মিলেছে। একইভাবে উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন এসব মশারির স্পর্শে এলে ‘নকডাউন’ বা মাথা উল্টো হয়ে ১০০ ভাগ মশাই মরে যাওয়ার কথা। কিন্তু গবেষণাকালে মশারির ভেতরে ১০০টি মশা ঢুকিয়ে দেখা গেছে, একটি মশাও নকডাউন বা মরে উল্টে পড়েনি। স্বাস্থ্য বিভাগের তথ্য অনুযায়ী, প্রতিটি মশারি প্রতিদিন ১০০টি করে নারী মশার মৃত্যু ঘটালে দৈনিক ৬৫ কোটি মশা মরার কথা। সূত্রের দাবি- এটি সফল হলে এত ভয়াবহ আকারে ম্যালেরিয়া ছড়িয়ে পড়ার কোনো কারণ থাকতে পারে না। এদিকে যেকোনো ধরনের কীটনাশক বা কীটনাশক জাতীয় পণ্য দেশে আমদানি, উৎপন্ন, বিতরণ, ব্যবহারের ক্ষেত্রে সরকারের কৃষি মন্ত্রণালয়ের কীটতত্ত্ব বিভাগের অনুমোদন বা লাইসেন্স দরকার হয়। কিন্তু এই কীটনাশকযুক্ত মশারি দেশে আমদানি, ব্যবহার কিংবা বিতরণের ক্ষেত্রে কোনো রকম অনুমোদন নেওয়া হয়নি। এমনিতেই পার্বত্য অঞ্চলে পুরনো বা স্থানীয় মশারিতে যে কে-ও ট্যাব নামের আলাদা কীটনাশক সরকার থেকে বিতরণ ও ব্যবহার করা হয়, এরও কোনো অনুমোদন নেই। কৃষি মন্ত্রণালয়ভুক্ত কীটতত্ত্ব উইংয়ের পেস্টিসাইড রেগুলেশন অফিসার মো. শাহ আলম কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘আমি রীতিমতো বিস্মিত হয়ে যাচ্ছি সরকারের আইন ভেঙে সরকারের আরেকটি বিভাগ কী করে লাখ লাখ বিষাক্ত মশারি বিনা অনুমোদনে সংগ্রহ, বিতরণ ও ব্যবহার করছে! জনস্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর বলেই তো আমরা এ ধরনের কীটনাশকযুক্ত মশারির অনুমোদন দিইনি।’ ওই কর্মকর্তা বলেন, ‘মশারির মধ্যে থাকলে ওই মশারিতে যুক্ত থাকা কীটনাশকে মানুষের ক্ষতি হওয়াই স্বাভাবিক। তবে যদি কীটনাশকের কার্যকারিতা না থাকে তাহলে হয়তো মানুষের তেমন কোনো ক্ষতির সম্ভাবনা থাকে না। কিন্তু তাতে মশা প্রতিরোধ হবে না। ফলে ম্যালেরিয়া ছড়িয়ে পড়া সহজ। তবে কাজ হোক বা না হোক কীটনাশকযুক্ত মশারিগুলো যে অবৈধ, এটা নিশ্চিত।’ একই দপ্তরের আরেক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে কালের কণ্ঠকে জানান, এর আগে বিষয়টি নিয়ে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়কে অবহিত করা হলেও তারা পাত্তা দেয়নি। এমনকি কে-ও ট্যাব আমদানি ও বিতরণের ক্ষেত্রেও আপত্তি করা হয়েছিল। কিন্তু স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের এক শ্রেণির কর্মকর্তা-কর্মচারীর যোগসাজশে ওই কীটনাশক ব্যবসার সঙ্গে জড়িত প্রভাবশালী মহল কৌশলে ম্যালেরিয়া নিয়ন্ত্রণের অজুহাতে সরকারের সহায়তায় অবৈধ ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে। বিশেষ মশারির কার্যকারিতা সম্পর্কে জানতে চাইলে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিচালক (রোগ নিয়ন্ত্রণ) ও ম্যালেরিয়া নিয়ন্ত্রণ কার্যক্রমের প্রধান ডা. বে-নজীর আহম্মেদ বলেন, ‘সব কিছুরই মেয়াদ অনুযায়ী কার্যকারিতা থাকে। কীটনাশকের ক্ষেত্রে এটা আরো বেশি প্রযোজ্য। আমাদের কাছে থাকা মশারিগুলোর মেয়াদ ছিল তিন বছর। সময় প্রায় ফুরিয়ে যাওয়ায় স্বাভাবিকভাবেই কার্যকারিতা কমে যাওয়ার কথা। এ ছাড়া বারবার ধুয়ে ফেলায় কীটনাশকের কার্যকারিতা এমনিতেই কমে যায়। আমরা জরিপ করে এর কার্যকারিতা কমে যাওয়ার নমুনা পেয়েছি।’ ডা. বে-নজীর জানান, গ্লোবাল ফান্ডসহ বিভিন্ন সংস্থা ও সরকারের এইচপিএসএনডিপি কার্যক্রমের আওতায় ২০১১ সাল থেকে এ পর্যন্ত মোট প্রায় বিভিন্ন পদ্ধতির ৬৫ লাখ কীটনাশকযুক্ত মশারি বিতরণ করা হয়েছে। এ ছাড়া সম্প্রতি জুমচাষিদের জন্য কীটনাশকযুক্ত আরো তিন হাজার জ্যাকেট বিতরণ হয়েছে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের একাধিক সূত্র জানায়, প্রতিটি বিশেষ মশারির মূল্য পড়েছে তিন মার্কিন ডলার। এগুলো বিভিন্ন সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে গ্লোবাল ফান্ড কিংবা সরকার সংগ্রহ করে মানুষের মধ্যে বিতরণ করে থাকে। মশারি ও জ্যাকেট ছাড়াও বিভিন্ন ধরনের ওষুধ ও রোগ নির্ণায়ক সরঞ্জামাদিও দেওয়া হয়েছে ম্যালেরিয়াপ্রবণ এলাকাগুলোতে। এর মধ্যে মশারি বিতরণ নিয়ে সবচেয়ে বেশি তৎপর দেখা যায় এ কার্যক্রমের সঙ্গে যুক্ত কর্মকর্তা ও কর্মীদের। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্যমতে চলতি বছরের এপ্রিল মাস পর্যন্ত ৩৭ লাখ ৩৫ হাজার ৯০৫টি এলএলআইএন (লং লাস্টিং ইনসেকটিসাইডাল নেটস) বিতরণ করা হয়েছে। এ ছাড়া পাঁচ লাখ মশারি পুনঃস্থাপন করা হয়েছে। পাশাপাশি ১৫ লাখ ৬৩ হাজার ৯৮৪টি কীটনাশকে চুবানো সাধারণ মশারি (আইটিএন) বিতরণ করা হয়। যদিও এ কাজে যুক্ত বড় বড় একাধিক এনজিও কর্মকর্তা দাবি করছেন, মশারির গুণ-মান নিয়ে তাঁদের কোনো সংশয় নেই। বরং ম্যালেরিয়ার প্রকোপ বৃদ্ধির জন্য তাঁরা দুষছেন জলবায়ু পরিবর্তনজনিত সমস্যাকে। সরকারের ম্যালেরিয়া নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচির সঙ্গে ২১টি এনজিওর একটি কনসোর্টিয়াম যৌথ অংশীদারির মাধ্যমে ২০০৭ সাল থেকে কাজ করছে। পাশাপাশি আইসিডিডিআরবি ও ম্যালেরিয়া রিসার্চ গ্রুপসহ আরো কয়েকটি প্রতিষ্ঠান প্রশিক্ষণ ও গবেষণাকাজে সহায়তা করে। এদিকে গত ১৮ আগস্ট বান্দরবান সিভিল সার্জন কার্যালয়ে একটি কর্মপরিকল্পনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় জানানো হয়, গত বছর খাগড়াছড়িতে আক্রান্তের সংখ্যা ছিল দুই হাজার ২৬১। এবার তা পৌঁছেছে পাঁচ হাজার ২৯৬ জনে। রাঙামাটিতে গত বছর আক্রান্ত ছিল তিন হাজার ৮৩১; এবার সাত হাজার ১৪৮। বান্দরবানে আক্রান্তের সংখ্যা ছিল চার হাজার ৬৪৭; এবার তা ১০ হাজার ৩২১-এ দাঁড়িয়েছে। গত বছর ম্যালেরিয়ায় আক্রান্ত হয়ে এ জেলায় মারা যায় মাত্র দুজন। এবার তা ১২ জনে দাঁড়ায়। এ অবস্থাকে ‘অস্বাভাবিক’ বলে মন্তব্য করেছেন সভায় উপস্থিত স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিচালক নিজেই। কর্মপরিকল্পনা সভায় বলা হয়, দেশের ১৩টি জেলাকে ম্যালেরিয়াপ্রবণ ধরা হলেও পার্বত্য চট্টগ্রামের তিনটি জেলায় রয়েছে মোট রোগীর ৮০ শতাংশ। এ জন্য এ তিন জেলা ‘হাই রিস্ক জোন’ হিসেবে বিবেচিত হয়ে আসছে। স্বাস্থ্য পরিচালক বলেন, প্রাথমিকভাবে ম্যালেরিয়ার প্রকোপ বেড়ে যাওয়ার জন্য তিনটি কারণকে তাঁরা সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিচ্ছেন। এগুলো হচ্ছে- বৃষ্টিপাত কম হওয়ায় বিভিন্ন স্থানে জলাবদ্ধতায় ব্যাপক হারে মশার ডিম পাড়া, কীটনাশক মেশানো মশারির কার্যকারিতা হারানো এবং চিকিৎসায় শৈথিল্য।
Headlines from most popular newspapers of Bangladesh. বাংলাদেশে প্রকাশিত প্রধান প্রধান দৈনিক পত্রিকার সংবাদ শিরোনামগুলো এক নজরে দেখে নিন।
Friday, August 22, 2014
৬৫ লাখ মশারির বিনিময়ে ম্যালেরিয়া মহামারি!:কালের কন্ঠ
ামারি, যা নিয়ন্ত্রণে এখন ঘুম হারাম হয়ে গেছে এ কাজে যুক্ত স্থানীয় স্বাস্থ্য বিভাগের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের। আর এর পেছনে দায়ী করা হচ্ছে ম্যালেরিয়া থেকে রক্ষার জন্য বিনা মূল্যে বিতরণ করা এক ধরনের বিশেষ মশারিকে। অভিযোগ উঠেছে, টাকা লুটপাটের উদ্দেশ্যেই এসব ‘অবৈধ’ মশারি গছিয়ে দেওয়া হয় ম্যালেরিয়াপ্রবণ এলাকার লোকজনকে। জানা গেছে, খোদ সরকারের মধ্যেই এখন সংশয় দেখা দিয়েছে ম্যালেরিয়ার মশা থেকে রক্ষার জন্য বিনা মূল্যে বিতরণ করা ওই বিশেষ মশারির কার্যকারিতা নিয়ে। এগুলো হলো এক ধরনের কীটনাশকযুক্ত মশারি। এর নাম এলএলআইএন (লং লাস্টিং ইনসেকটিসাইডাল নেটস) মশারি। ২০১১ সাল থেকে দফায় দফায় তিন পার্বত্য জেলায় ৬৫ লাখ বিশেষ মশারি বিতরণ করা হয়েছে; আরো সাড়ে সাত লাখ বিতরণের অপেক্ষায় আছে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের একাধিক সূত্র জানায়, আগে থেকেই মশারিতে কীটনাশকের কার্যকারিতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছিল। কিন্তু এক শ্রেণির কর্মকর্তা ও মশারি সরবরাহকারী প্রভাবশালী মহলের দাপটে সবার মুখ বন্ধ হয়ে যায়। কেউ আর এ নিয়ে কথা বলার সাহস দেখায়নি। এমনকি কারো কারো চাকরি চলে যাওয়ার মতো অবস্থাও হয়েছিল। ওদিকে কৃষি মন্ত্রণালয়ের কীটতত্ত্ব বিভাগ দাবি করছে, স্বাস্থ্যঝুঁকির কথা বিবেচনা করে কীটনাশকযুক্ত ওই মশারি আনার অনুমোদন তারা দেয়নি। লাখ লাখ মশারি আনা হয়েছে অবৈধভাবে। আর স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট বিভাগ আবার দাবি করছে, জনস্বাস্থ্যের কথা বিবেচনা করেই তারা অনুমোদনের তোয়াক্কা করেনি। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিচালক (রোগ নিয়ন্ত্রণ) ও ম্যালেরিয়া নিয়ন্ত্রণ কার্যক্রমের মুখ্য ব্যক্তি ডা. বে-নজীর আহম্মেদ কালের কণ্ঠকে বলেন, চলতি বছরের শুরু থেকে তিন পার্বত্য জেলা- রাঙামাটি, বান্দরবান ও খাগড়াছড়িতে ম্যালেরিয়ায় আক্রান্ত হয়েছে ২৯ হাজার ৩৯৬ জন, আর এ সময়ে মৃত্যু হয়েছে ৪০ জনের। এর মধ্যে গত জুলাই মাসে মারা গেছে ২২ জন, আক্রান্ত হয়েছে ১০ হাজার ৯৯৪ জন। আর চলতি মাসে মারা গেছে সাতজন, আক্রান্ত হয়েছে তিন হাজার ২৪০ জন। পার্বত্য অঞ্চলে ম্যালেরিয়ায় মৃত্যু ও আক্রান্তের সংখ্যা দ্রুত বেড়ে যাওয়ায় স্বাস্থ্য অধিদপ্তর থেকে তিন পার্বত্য জেলায় বিভাগীয় জরুরি অবস্থা জারি করা হয়েছে। ম্যালেরিয়া নিয়ন্ত্রণে জরুরি কার্যক্রম গ্রহণের জন্য স্বাস্থ্য অধিদপ্তর থেকে তিন পার্বত্য জেলাসহ চট্টগ্রাম ও কক্সবাজারের সিভিল সার্জনদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত ওই সব এলাকার স্বাস্থ্য বিভাগের সব পর্যায়ের কর্মকর্তা ও কর্মচারীর ছুটি বাতিল করা হয়েছে। একই সঙ্গে ম্যালেরিয়া পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের বিশেষ টিম পার্বত্য অঞ্চলে পাঠানো হয়েছে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিচালক বলেন, ‘পার্বত্য অঞ্চলের ম্যালেরিয়া পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে ওই সব এলাকার স্বাস্থ্য বিভাগীয় চিকিৎসক-কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জন্য জরুরি অবস্থার ভিত্তিতে সার্বক্ষণিক দায়িত্ব পালনে ও এলাকায় অবস্থানের ব্যবস্থা নিয়েছি।’ স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিচালক বলেন, ‘পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে ও পর্যবেক্ষণে আমি নিজেও একটি টিম নিয়ে পার্বত্য অঞ্চলে ঘুরেছি। এ সময়ে স্থানীয় স্বাস্থ্য বিভাগীয় কর্মকর্তা ও প্রশাসনের প্রতিনিধিদের সমন্বয়ে কয়েকটি সভাও করা হয়েছে। গঠন করা হয়েছে বিশেষ কমিটি। জেলার স্বাস্থ্যকর্মী ও চিকিৎসকদের মাঠপর্যায়ে চিকিৎসাসেবা বাড়ানোর পাশাপাশি ম্যালেরিয়া নিয়ন্ত্রণে গুরুত্বের সঙ্গে কাজ করার নির্দেশ দিয়েছে কমিটি। তিন পার্বত্য জেলায় জরুরি ভিত্তিতে পর্যাপ্ত ওষুধ ও আরো সাড়ে সাত লাখ কীটনাশকযুক্ত মশারি দেওয়া হচ্ছে।’ কার্যকারিতা নিয়ে সংশয় থাকা সত্ত্বেও ওই মশারি আবারও বিতরণ কেন- এ প্রশ্নে ওই কর্মকর্তা বলেন, আপাতত পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার জন্যই এটা করা হয়েছে। তবে এর পাশাপাশি নতুন করে বিকল্প কিছু পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে। কীটনাশক বা বিষযুক্ত ওই মশারিতে মানুষের ক্ষতি হয় কি না জানতে চাইলে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণাপ্রতিষ্ঠান আইইডিসিআরের পরিচালক অধ্যাপক ড. মাহামুদুর রহমান কালের কণ্ঠকে বলেন, এ বিষয়ে এখন পর্যন্ত কোনো রকম পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা যায়নি। তবে তিনি সংশয় প্রকাশ করে বলেন, আরো অনেক দেশেই মশারি ব্যবহৃত হয়; কিন্তু এর কার্যকারিতা সঠিক মাত্রায় থাকলে এমনভাবে ম্যালেরিয়ার বিস্তৃতি ঘটল কেন তা নিয়ে প্রশ্ন জাগতেই পারে। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, কীটনাশক মেশানো এসব মশারি ৯০ শতাংশ ম্যালেরিয়া জীবাণুবাহী মশা নিয়ন্ত্রণের কথা। কিন্তু সম্প্রতি পরিচালিত এক গবেষণায় মেয়াদ শেষ হওয়ার আগেই এই ক্ষমতা ২৬ শতাংশেরও নিচে নেমে যাওয়ার প্রমাণ মিলেছে। একইভাবে উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন এসব মশারির স্পর্শে এলে ‘নকডাউন’ বা মাথা উল্টো হয়ে ১০০ ভাগ মশাই মরে যাওয়ার কথা। কিন্তু গবেষণাকালে মশারির ভেতরে ১০০টি মশা ঢুকিয়ে দেখা গেছে, একটি মশাও নকডাউন বা মরে উল্টে পড়েনি। স্বাস্থ্য বিভাগের তথ্য অনুযায়ী, প্রতিটি মশারি প্রতিদিন ১০০টি করে নারী মশার মৃত্যু ঘটালে দৈনিক ৬৫ কোটি মশা মরার কথা। সূত্রের দাবি- এটি সফল হলে এত ভয়াবহ আকারে ম্যালেরিয়া ছড়িয়ে পড়ার কোনো কারণ থাকতে পারে না। এদিকে যেকোনো ধরনের কীটনাশক বা কীটনাশক জাতীয় পণ্য দেশে আমদানি, উৎপন্ন, বিতরণ, ব্যবহারের ক্ষেত্রে সরকারের কৃষি মন্ত্রণালয়ের কীটতত্ত্ব বিভাগের অনুমোদন বা লাইসেন্স দরকার হয়। কিন্তু এই কীটনাশকযুক্ত মশারি দেশে আমদানি, ব্যবহার কিংবা বিতরণের ক্ষেত্রে কোনো রকম অনুমোদন নেওয়া হয়নি। এমনিতেই পার্বত্য অঞ্চলে পুরনো বা স্থানীয় মশারিতে যে কে-ও ট্যাব নামের আলাদা কীটনাশক সরকার থেকে বিতরণ ও ব্যবহার করা হয়, এরও কোনো অনুমোদন নেই। কৃষি মন্ত্রণালয়ভুক্ত কীটতত্ত্ব উইংয়ের পেস্টিসাইড রেগুলেশন অফিসার মো. শাহ আলম কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘আমি রীতিমতো বিস্মিত হয়ে যাচ্ছি সরকারের আইন ভেঙে সরকারের আরেকটি বিভাগ কী করে লাখ লাখ বিষাক্ত মশারি বিনা অনুমোদনে সংগ্রহ, বিতরণ ও ব্যবহার করছে! জনস্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর বলেই তো আমরা এ ধরনের কীটনাশকযুক্ত মশারির অনুমোদন দিইনি।’ ওই কর্মকর্তা বলেন, ‘মশারির মধ্যে থাকলে ওই মশারিতে যুক্ত থাকা কীটনাশকে মানুষের ক্ষতি হওয়াই স্বাভাবিক। তবে যদি কীটনাশকের কার্যকারিতা না থাকে তাহলে হয়তো মানুষের তেমন কোনো ক্ষতির সম্ভাবনা থাকে না। কিন্তু তাতে মশা প্রতিরোধ হবে না। ফলে ম্যালেরিয়া ছড়িয়ে পড়া সহজ। তবে কাজ হোক বা না হোক কীটনাশকযুক্ত মশারিগুলো যে অবৈধ, এটা নিশ্চিত।’ একই দপ্তরের আরেক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে কালের কণ্ঠকে জানান, এর আগে বিষয়টি নিয়ে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়কে অবহিত করা হলেও তারা পাত্তা দেয়নি। এমনকি কে-ও ট্যাব আমদানি ও বিতরণের ক্ষেত্রেও আপত্তি করা হয়েছিল। কিন্তু স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের এক শ্রেণির কর্মকর্তা-কর্মচারীর যোগসাজশে ওই কীটনাশক ব্যবসার সঙ্গে জড়িত প্রভাবশালী মহল কৌশলে ম্যালেরিয়া নিয়ন্ত্রণের অজুহাতে সরকারের সহায়তায় অবৈধ ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে। বিশেষ মশারির কার্যকারিতা সম্পর্কে জানতে চাইলে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিচালক (রোগ নিয়ন্ত্রণ) ও ম্যালেরিয়া নিয়ন্ত্রণ কার্যক্রমের প্রধান ডা. বে-নজীর আহম্মেদ বলেন, ‘সব কিছুরই মেয়াদ অনুযায়ী কার্যকারিতা থাকে। কীটনাশকের ক্ষেত্রে এটা আরো বেশি প্রযোজ্য। আমাদের কাছে থাকা মশারিগুলোর মেয়াদ ছিল তিন বছর। সময় প্রায় ফুরিয়ে যাওয়ায় স্বাভাবিকভাবেই কার্যকারিতা কমে যাওয়ার কথা। এ ছাড়া বারবার ধুয়ে ফেলায় কীটনাশকের কার্যকারিতা এমনিতেই কমে যায়। আমরা জরিপ করে এর কার্যকারিতা কমে যাওয়ার নমুনা পেয়েছি।’ ডা. বে-নজীর জানান, গ্লোবাল ফান্ডসহ বিভিন্ন সংস্থা ও সরকারের এইচপিএসএনডিপি কার্যক্রমের আওতায় ২০১১ সাল থেকে এ পর্যন্ত মোট প্রায় বিভিন্ন পদ্ধতির ৬৫ লাখ কীটনাশকযুক্ত মশারি বিতরণ করা হয়েছে। এ ছাড়া সম্প্রতি জুমচাষিদের জন্য কীটনাশকযুক্ত আরো তিন হাজার জ্যাকেট বিতরণ হয়েছে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের একাধিক সূত্র জানায়, প্রতিটি বিশেষ মশারির মূল্য পড়েছে তিন মার্কিন ডলার। এগুলো বিভিন্ন সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে গ্লোবাল ফান্ড কিংবা সরকার সংগ্রহ করে মানুষের মধ্যে বিতরণ করে থাকে। মশারি ও জ্যাকেট ছাড়াও বিভিন্ন ধরনের ওষুধ ও রোগ নির্ণায়ক সরঞ্জামাদিও দেওয়া হয়েছে ম্যালেরিয়াপ্রবণ এলাকাগুলোতে। এর মধ্যে মশারি বিতরণ নিয়ে সবচেয়ে বেশি তৎপর দেখা যায় এ কার্যক্রমের সঙ্গে যুক্ত কর্মকর্তা ও কর্মীদের। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্যমতে চলতি বছরের এপ্রিল মাস পর্যন্ত ৩৭ লাখ ৩৫ হাজার ৯০৫টি এলএলআইএন (লং লাস্টিং ইনসেকটিসাইডাল নেটস) বিতরণ করা হয়েছে। এ ছাড়া পাঁচ লাখ মশারি পুনঃস্থাপন করা হয়েছে। পাশাপাশি ১৫ লাখ ৬৩ হাজার ৯৮৪টি কীটনাশকে চুবানো সাধারণ মশারি (আইটিএন) বিতরণ করা হয়। যদিও এ কাজে যুক্ত বড় বড় একাধিক এনজিও কর্মকর্তা দাবি করছেন, মশারির গুণ-মান নিয়ে তাঁদের কোনো সংশয় নেই। বরং ম্যালেরিয়ার প্রকোপ বৃদ্ধির জন্য তাঁরা দুষছেন জলবায়ু পরিবর্তনজনিত সমস্যাকে। সরকারের ম্যালেরিয়া নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচির সঙ্গে ২১টি এনজিওর একটি কনসোর্টিয়াম যৌথ অংশীদারির মাধ্যমে ২০০৭ সাল থেকে কাজ করছে। পাশাপাশি আইসিডিডিআরবি ও ম্যালেরিয়া রিসার্চ গ্রুপসহ আরো কয়েকটি প্রতিষ্ঠান প্রশিক্ষণ ও গবেষণাকাজে সহায়তা করে। এদিকে গত ১৮ আগস্ট বান্দরবান সিভিল সার্জন কার্যালয়ে একটি কর্মপরিকল্পনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় জানানো হয়, গত বছর খাগড়াছড়িতে আক্রান্তের সংখ্যা ছিল দুই হাজার ২৬১। এবার তা পৌঁছেছে পাঁচ হাজার ২৯৬ জনে। রাঙামাটিতে গত বছর আক্রান্ত ছিল তিন হাজার ৮৩১; এবার সাত হাজার ১৪৮। বান্দরবানে আক্রান্তের সংখ্যা ছিল চার হাজার ৬৪৭; এবার তা ১০ হাজার ৩২১-এ দাঁড়িয়েছে। গত বছর ম্যালেরিয়ায় আক্রান্ত হয়ে এ জেলায় মারা যায় মাত্র দুজন। এবার তা ১২ জনে দাঁড়ায়। এ অবস্থাকে ‘অস্বাভাবিক’ বলে মন্তব্য করেছেন সভায় উপস্থিত স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিচালক নিজেই। কর্মপরিকল্পনা সভায় বলা হয়, দেশের ১৩টি জেলাকে ম্যালেরিয়াপ্রবণ ধরা হলেও পার্বত্য চট্টগ্রামের তিনটি জেলায় রয়েছে মোট রোগীর ৮০ শতাংশ। এ জন্য এ তিন জেলা ‘হাই রিস্ক জোন’ হিসেবে বিবেচিত হয়ে আসছে। স্বাস্থ্য পরিচালক বলেন, প্রাথমিকভাবে ম্যালেরিয়ার প্রকোপ বেড়ে যাওয়ার জন্য তিনটি কারণকে তাঁরা সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিচ্ছেন। এগুলো হচ্ছে- বৃষ্টিপাত কম হওয়ায় বিভিন্ন স্থানে জলাবদ্ধতায় ব্যাপক হারে মশার ডিম পাড়া, কীটনাশক মেশানো মশারির কার্যকারিতা হারানো এবং চিকিৎসায় শৈথিল্য।
Subscribe to:
Post Comments (Atom)
No comments:
Post a Comment