আরো অবনতি হয়েছে দেশের বন্যা পরিস্থিতির। তীব্র নদীভাঙনের পাশাপাশি ধসে যাচ্ছে বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধও। বৃহস্পতিবার গভীর রাতে বগুড়ার সারিয়াকান্দি উপজেলার রৌহদহ এলাকায় যমুনা নদীর বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ ভেঙে নতুন করে চার উপজেলার শতাধিক গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। অন্যদিকে গতকাল শুক্রবার সকালে সিরাজগঞ্জের কাজীপুর উপজেলার মেঘাই এলাকায় রিং বাঁধের ৩০ মিটার অংশ ধসে যাওয়ায় নতুন করে প্লাবিত হয়েছে চারটি গ্রাম। কুড়িগ্রামে
র রৌমারী সীমান্তঘেঁষা বারবান্দা গ্রামে পাহাড়ি ঢলে ডুবে এক শিশুর মৃত্যু হয়েছে। এ ছাড়া আড়িয়াল খাঁ নদের ভয়াবহ ভাঙনে ঢাকা-খুলনা-বরিশাল মহাসড়ক রক্ষা বাঁধের মাদারীপুরের শিবচর অংশের প্রায় ২৫০ মিটার ভেঙে গেছে। যেকোনো মুহূর্তে ভাঙনের ছোবল বসতে পারে মহাসড়কটিতে। গাইবান্ধার ফুলছড়ি উপজেলায় চলছে ব্রহ্মপুত্র নদের ব্যাপক ভাঙন। নদ থেকে মাত্র ১৫ কিলোমিটার দূরে সিংড়িয়া-রতনপুর বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ রয়েছে হুমকির মুখে। বন্যায় মানুষের চরম দুর্ভোগের পাশাপাশি গৃহপালিত পশুপাখি ও আবাদি জমির ব্যাপক ক্ষতি হচ্ছে। পানিবন্দি মানুষ ঠিকমতো ত্রাণ সহায়তা পাচ্ছে না বলে অভিযোগ রয়েছে। বন্যার্তদের মধ্যে দেখা দিচ্ছে নানা ধরনের রোগ। বগুড়া : বৃহস্পতিবার রাত পৌনে ২টার দিকে মানুষ যখন গভীর ঘুমে, তখন সারিয়াকান্দির শেখপাড়া পয়েন্টে নবনির্মিত রৌহদহ বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধটি আকস্মিক ভেঙে যায়। বাঁধের ৫০০ মিটার ভেঙে মুহূর্তেই যমুনার পানি মানাস খাল হয়ে জনপদে ঢুকে পড়ে। রাতের মধ্যেই পানিবন্দি হয়ে পড়ে কুতুবপুর, কামালপুর, চন্দনবাইশা ও ভেলাবাড়ি ইউনিয়ন ছাড়াও গাবতলী, ধুনট ও সোনাতলা উপজেলার নিম্নাঞ্চলের শতাধিক গ্রামের দুই লাখের বেশি মানুষ। গতকাল বগুড়ার সারিয়াকান্দির চন্দনবাইশা রহদহে বাঁধ ভেঙে বিস্তীর্ণ এলাকায় বন্যার পানি প্রবেশ করে। ছবি : কালের কণ্ঠ সরেজমিন ঘুরে জানা যায়, বর্ষা মৌসুম শুরুর প্রথম থেকেই বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধটিতে কয়েক দফা ধস নামে। ধস ঠেকাতে বালির বস্তা ফেলে তা মেরামতও করা হয়। কিন্তু গত দুই দিনে যমুনায় অস্বাভাবিকভাবে পানি বেড়ে যাওয়ায় বৃহস্পতিবার গভীর রাতে আকস্মিক বাঁধটি ভেঙে শোঁ শোঁ করে পানি ঢুকতে শুরু করে লোকালয়ে। ঘুমন্ত মানুষেরা জেগে ওঠে দিশাহারার মতো এদিক-সেদিক ছোটাছুটি শুরু করে। মাত্র এক ঘণ্টার মধ্যে বেশির ভাগ বাড়ির ছাদ সমান উঁচুতে পানি উঠে যায়। ওই সময় কিছু মানুষ বাঁধের ভালো অংশে গিয়ে আশ্রয় নিলেও বেশির ভাগই ঘরের চালায় উঠে রাত পার করে। সকালে স্থানীয় লোকজন তাদের নৌকাযোগে উদ্ধার করে নিরাপদ স্থানে নিয়ে আসে। বন্যাদুর্গতদের অনেকেই জানিয়েছে, রাতে হঠাৎ করে তীব্র বেগে পানি চলে আসায় অনেকেই ঘর থেকে মালামাল সরিয়ে নিতে পারেনি। প্রবল স্রোতে ঘরবাড়ি, ঘরের ধান-চাল, টাকা-পয়সা, গবাদি পশুসহ বিভিন্ন সামগ্রী ভেসে গেছে কিংবা পানির নিচে তলিয়ে গেছে। বাঁধে আশ্রয় নেওয়া নবীর হোসেন প্রামাণিক কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, ‘আমার ঘরে রাখা পাঁচ হাজার টাকা ও ধান-চালসহ সব ভেসে গেছে। দুপুরে খাওয়ার মতোও কিছু নাই।’ লালভানু বেওয়া বলেন, ‘গভীর রাতে ঘুম থেকে জেগে দেখি চারপাশে পানি আর পানি। তখন জীবন নিয়ে টানাটানি। ঘরের জিনিসপত্র কিচ্ছু টানতে পারিনি।’ কুতুবপুর-চন্দনবাইশা, রৌহাদহ-কড়িতলা সড়কের ওপর দিয়ে পানি প্রবল বেগে প্রবাহিত হওয়ায় সড়ক ভেঙে গেছে। এসব সড়কের ব্রিজ, কালভার্ট হুমকির মুখে পড়েছে। চন্দনবাইশা, ঘুঘুমারি, কড়িতলা, কাঁশাহার, রৌহাদহ, কামালপুর গ্রামের লোকজন বেশি বিপাকে পড়েছে। এসব এলাকার মসজিদ, মাদ্রাসা, স্কুল-কলেজ পানিতে তলিয়ে গেছে। গতকাল সকাল থেকে ধলিরকান্দি থেকে চন্দনবাইশা পর্যন্ত প্রায় আট কিলোমিটার লম্বা বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধের ওপর লোকজনকে গৃহপালিত পশুসহ গাদাগাদি করে অবস্থান করতে দেখা গেছে। গতকাল সকালে রাজশাহী বিভাগীয় কমিশনার হেলাল উদ্দিন আহমেদ, ত্রাণ ও পুনর্বাসন মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব গৌতম কুমার ভট্টাচার্য, জেলা প্রশাসক শফিকুর রেজা বিশ্বাস, বগুড়ার পুলিশ সুপার মোজাম্মেল হকসহ সেনাবাহিনী কর্মকর্তারা বাঁধের ভেঙে যাওয়া স্থান ও বন্যাদুর্গত এলাকা পরিদর্শন করেছেন। এ ছাড়া স্থানীয় সংসদ সদস্য আব্দুল মান্নানও ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে ক্ষতিগ্রস্তদের উদ্ধারকাজ তদারকি করেন। বগুড়া জেলা প্রশাসন সূত্র জানায়, বাঁধ ভাঙার পর প্রাথমিকভাবে বন্যার্তদের মধ্যে সমাজসেবা অধিদপ্তরের উদ্যোগে পাঁচ কেজি করে চাল, এক লিটার করে তেল, দুই কেজি করে আলু ও এক কেজি করে ডাল বিতরণ করা হয়েছে। পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) উপবিভাগীয় প্রকৌশলী আব্দুল মোত্তালিব বলেন, ‘ভেঙে যাওয়ার আগে বাঁধের ওই অংশে ফাটল দেখা দিয়েছিল। আমরা চেষ্টা করেও বাঁধটি রক্ষা করতে পারিনি।’ পাউবোর বগুড়ার নির্বাহী প্রকৌশলী নূরুল ইসলাম সরকার জানান, গতকাল যমুনার পানি বিপদসীমার ৯৯ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়। সিরাজগঞ্জ : যমুনার পানি অস্বাভাবিক বৃদ্ধির কারণে গতকাল কাজিপুর উপজেলার মেঘাই রিং বাঁধের ৩০ মিটার এলাকা ধসে চার গ্রামের অন্তত ৬০০ বাড়িঘর প্লাবিত হয়েছে। আকস্মিক বাঁধটি ধসের কারণে মানুষজন তাদের ঘরের আসবাবপত্রসহ প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র রক্ষা করতে পারেনি। ফলে তারা পড়েছে চরম ভোগান্তিতে। এ ছাড়া বাঁধ ভাঙার কারণে কাজিপুর-সোনামুখী আঞ্চলিক সড়কটিও তলিয়ে গেছে। এ সড়ক দিয়ে যেকোনো মুহূর্তে যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়ে যেতে পারে। এসব তথ্য জানিয়েছেন কাজিপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শাফিউল ইসলাম। গতকাল প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন ব্যক্তিরা বাঁধ এলাকা পরির্দশন করেছেন। এদিকে সিরাজগঞ্জ পয়েন্টে যমুনা নদীর পানি আরো বেড়েছে। গতকাল দুপুরে বিপদসীমার ৪৩ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হয়। পানি উন্নয়ন বোর্ড জানিয়েছে, গত ২৪ ঘণ্টায় সিরাজগঞ্জে ১৮ সেন্টিমিটার পানি বেড়েছে। ফলে জেলার সার্বিক বন্যা পরিস্থিতির আরো অবনতি হয়েছে। বিশেষ করে কাজিপুর উপজেলাসহ চরাঞ্চলের মানুষ আবারও নতুন করে পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। চরাঞ্চলগুলোর কয়েক হাজার ঘরবাড়ি এখন এক থেকে তিন ফুট পানিতে তলিয়ে রয়েছে। বিশুদ্ধ খাবার পানির অভাবে ডায়রিয়া, আমাশয়সহ নানা ধরনের পেটের পীড়া দেখা দিচ্ছে। সেইসঙ্গে বন্যাকবলিত মানুষের হাত-পায়ে ঘাসহ চুলাকানিও দেখা দিয়েছে। সরকারিভাবে কিছু ত্রাণ বিতরণ করা হলেও প্রত্যন্ত অঞ্চলের বন্যাকবলিতরা এখনো কোনো ত্রাণ পায়নি বলে অভিযোগ রয়েছে। সিরাজগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী বাবুল চন্দ্র শীল জানান, প্রবল স্রোতের কারণে ব্রহ্মপুত্র বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধে প্রচণ্ড চাপ পড়ছে। এ ছাড়া সিরাজগঞ্জ-সোনামুখী আঞ্চলিক সড়কের কাজিপুর থানার কাছে সড়কের ওপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হচ্ছে। সড়ক বিভাগ সেখানে বালির বস্তা ফেলে নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করছে। শিবচর (মাদারীপুর) : ২৪ ঘণ্টায় আড়িয়াল খাঁ নদের ভয়াবহ ভাঙনে ঢাকা-খুলনা-বরিশাল মহাসড়ক রক্ষা বাঁধের শিবচর অংশের প্রায় ২৫০ মিটার বাঁধ ও সংলগ্ন ৩০টি ঘরবাড়ি বিলীন হয়ে গেছে। মহাসড়কটি থেকে নদের ব্যাপক ভাঙন মাত্র ২০০ মিটার দূরত্বে অব্যাহত থাকলেও সড়ক ও জনপথ বিভাগ ও পানি উন্নয়ন বোর্ড বিভাগের কর্মকর্তারা নির্বাক রয়েছেন। এতে আতঙ্কিত হয়ে পড়েছে দক্ষিণাঞ্চলবাসী। ক্ষতিগ্রস্ত মতি সিকদার বলেন, ‘আমার তিনটি ঘর নদীতে চলে গেছে। কোনো রকমে প্রাণে বেঁচে আছি।’ দত্তপাড়া ইউনিয়নের ইউপি সদস্য সুরুজ মিয়া বলেন, যেভাবে ভাঙছে তাতে দুই-তিন দিনের মধ্যে দক্ষিণাঞ্চলের ২১ জেলার গুরুত্বপূর্ণ মহাসড়কটি আক্রান্ত হতে পারে। গতকাল ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে মাদারীপুর সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী আবুল কাশেম বলেন, গতবারও পাশেই ভেঙেছিল। কিন্তু মহাসড়ক পর্যন্ত আসেনি। মাদারীপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. মনিরুজ্জামান বলেন, যেহেতু মহাসড়কটি সড়ক ও জনপথ বিভাগের আওতাভুক্ত, তাই বাঁধটির ব্যাপারে আমাদের কিছু করার নেই। কুড়িগ্রাম : জেলার সার্বিক বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে। রৌমারী সীমান্তঘেঁষা বারবান্দা গ্রামে গতকাল বিকেলে পাহাড়ি ঢলে ডুবে লাম মিয়া (৫) নামের এক শিশু মারা গেছে। ভোরের দিকে পাহাড়ি ঢলের স্রোতে সীমান্তঘেঁষা রৌমারী-রাজীবপুর বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধটি ভেঙে যায়। এতে তীব্র বেগে পানি ঢুকে শিবেরডাঙ্গী ও নয়াপাড়া এলাকায় রোপা আমনের সর্বনাশ ঘটছে। এ ছাড়া পানির তোড়ে রৌমারী উপজেলার দাঁতভাঙ্গা-ধর্মপুর পাকা সড়কের পাকা ব্রিজ ও অন্তত ২০ কিলোমিটার পাকা সড়ক ধসে গেছে। উলিপুর উপজেলার হাতিয়া ইউনিয়নে বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ ভেঙে প্লাবিত হয়েছে ১৫টি গ্রাম। জেলায় প্রায় পাঁচ লাখ মানুষ পানিবন্দি। পরিস্থিতি মোকাবিলায় সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের সব কর্মচারীর ছুটি বাতিল করা হয়েছে। রৌমারীতে পানিতে ডুবে মারা যাওয়া শিশুর পরিবার জানায়, বিকেল ৫টার দিকে শিশুটি ঢলের পানিতে পড়ে ডুবে যায়। পরে আশঙ্কাজনক অবস্থায় তাকে উদ্ধার করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেওয়া হলে কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন। শিশুটির বাবা জামাল উদ্দিন উপজেলার কর্তিমারী বাজারের বিশিষ্ট ব্যবসায়ী। গাইবান্ধা : ব্রহ্মপুত্রে নতুন করে পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় ব্যাপক নদী ভাঙন শুরু হয়েছে। ফুলছড়ি উপজেলার সিংড়িয়ায় গত ৪৮ ঘণ্টায় ৫০টি পরিবার জমিজমা, বাড়িঘর হারিয়ে নিঃস্ব হয়ে গেছে। নদী থেকে মাত্র ১৫ মিটার দূরে সিংড়িয়া-রতনপুর বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ হুমকি মুখে। বালিভর্তি জিও ব্যাগ ডাম্পিং করে ভাঙন রোধের চেষ্টা চালাচ্ছে পাউবো। কিন্তু স্থানীয়দের মধ্যে শুধুই ভাঙন আতঙ্ক। এলাকাবাসী জানায়, পানির প্রবল চাপে ফুলছড়ি উপজেলার অন্তত ৩০টি পয়েন্টে ব্যাপক নদী ভাঙন দেখা দিয়েছে। এর মধ্যে উদাখালী ইউনিয়নের সিংড়িয়া, গজারিয়ার গণকবর ও কামারপাড়া এলাকা সবচেয়ে বিপদের মুখে। পাউবো সহকারী প্রকৌশলী অরুণ কুমার সেন বলেন, পাউবো সার্বক্ষণিক তদারকিতে ওইসব এলাকাকে সুরক্ষা দেওয়ার চেষ্টা চালাচ্ছে। ভাঙনের শিকার সিংড়িয়া গ্রামের সন্ধ্যা রানী বলেন, ‘দুপুরের খাবার খেতে বসেছি, এরই মধ্যে আমার ছোট মেয়ে জানায় পূর্ব পাশের গোয়ালঘরটি নদীতে দেবে গেছে। ঘর থেকে বের হয়ে দেখি পানিতে পাঁচ-ছয়টি মুরগি ভাসছে।’ তিনি বলেন, ‘নদীর ভাঙন থেকে কোনো কিছুই বাঁচাতে পারলাম না। রাতে কী খাব, কোথায় থাকব বলতে পারছি না।’ সিংড়িয়া ঘুরে দেখা গেছে, মানুষ তাদের ঘরবাড়ি ভেঙে, দামি গাছ কেটে অন্য জায়গায় সরিয়ে নিচ্ছে। উদাখালী ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুল বাকী সরকার জানালেন, বাঁধটি ভেঙে গেলে বাঁধের পশ্চিম পাশের অন্তত চারটি ইউনিয়নের লক্ষাধিক মানুষের বাড়িঘর ও হাজার হাজার একর ফসলি জমি পানির নিচে তলিয়ে যাবে। ফুলছড়ি উপজেলা সদরের সঙ্গে গাইবান্ধা জেলার যোগাযোগব্যবস্থাও বিচ্ছিন্ন হয়ে যাবে। মুন্সীগঞ্জ : জেলার বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে। গতকাল ভাগ্যকূল পয়েন্টে পদ্মা নদীর পানি বেড়ে বিপদসীমার ১৯ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়। এর ফলে জেলার নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। এদিকে লৌহজং উপজেলার কুমারভোগ ও টঙ্গিবাড়ী উপজেলার কামারখাড়ায় পদ্মার ভাঙন আরো ব্যাপক আকার ধারণ করেছে। সরকারি হিসাবে, ৪৯টি পরিবারের বাড়িঘর পদ্মায় বিলীন হয়েছে। ৮২৩ পরিবার আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত। বাকি ক্ষতিগ্রস্তদের তালিকা তৈরি করা হচ্ছে। শ্রীনগর উপজেলার ভাগ্যকূল ও বাঘরা, লৌহজংয়ের মেদিনীমণ্ডল, হলদিয়া, কনকসার, কুমারভোগ, সিরাজদিখানের চিত্রকোট, টঙ্গিবাড়ীর পাঁচগাঁও, হাসাইলবানারী, সদর উপজেলার শিলইসহ প্লাবিত বিস্তীর্ণ এলাকার বন্যায় কয়েক হাজার মানুষ পানিবন্দি রয়েছে। মুন্সীগঞ্জের জেলা প্রশাসক মো. সাইফুল হাসান বাদল জানান, বন্যাকবলিত গ্রামগুলোতে মেডিক্যাল টিম কাজ করছে। বন্যার্তদের জন্য সরকারিভাবে ১০০ টন চাল বরাদ্দ পাওয়া গেছে। ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোতে জেলা প্রশাসন থেকে দুই লাখ ৩০ হাজার টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। হবিগঞ্জ : বৃষ্টি ও উজান থেকে নেমে আসা পানিতে আকস্মিক বন্যায় জেলার সাতটি উপজেলায় রোপা আমন, বীজতলা ও সবজির ক্ষেত, ধান তলিয়ে গেছে। এতে দিশাহারা হয়ে পড়েছেন কৃষকরা। কৃষি বিভাগ জানায়, চলতি মৌসুমে জেলায় ৬৬ হাজার ৩৪৮ হেক্টর রোপা আমন আবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়। নাটোর : সিংড়া ও গুরুদাসপুর উপজেলায় চলনবিলের বিশাল অংশজুড়ে রোপা আমনের ক্ষেত পানিতে তলিয়ে গেছে। এতে বড় ধরনের লোকসানের আশঙ্কা করছেন কৃষকরা। নাটোর কৃষি সম্প্রসারণ অধিপ্তরের উপপরিচালক রহমতউল্লাহ সরকার বলেন, এ পর্যন্ত গুরুদাসপুরে ১৭৫ এবং সিংড়ায় ২১৫ হেক্টর জমির রোপা আমন ক্ষেত পানিতে ডুবেছে। সিংড়ার ভাগনাগরকান্দি এলাকার কৃষক আবুল কালাম আজাদ বলেন, ‘কয়েক বিঘা জমিতে ধান রোপণ করেছিলাম। কিন্তু ধান পানিতে তলিয়ে গেছে। ধান না হলে না খেয়ে মরা ছাড়া উপায় নেই।’ রাজবাড়ী : জেলার ভাগ্যকূল পয়েন্টে গতকাল দুপুরে বিপদসীমার ২৪ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হয়। জেলা সদরের মিজানপুর, বরাট ও দাদশী ইউনিয়নের এবং পাংশা উপজেলার হাবাসপুর ইউনিয়নের বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধের বাইরে থাকা নদী-তীরবর্তী কয়েকটি গ্রামের বাসিন্দারা দুর্ভোগের মধ্যে রয়েছে। সবচেয়ে বেশি বিপাকে আছে সদর উপজেলার মিজানপুর ইউনিয়নের মৌকুরি ও কুঠরি গ্রামের শতাধিক পরিবার। গত দুই সপ্তাহে এক ছটাক ত্রাণও গ্রাম দুটিতে পৌঁছেনি। সুনামগঞ্জ : তাহিরপুর উপজেলার সীমান্ত এলাকায় প্রায় ২০০ একর ফসলি জমি পাহাড়ি ঢলের সঙ্গে আসা বালুতে ভরাট হয়ে গেছে। সীমান্তের রাজাইছড়া, চানপুরছড়া, কড়ইগড়াছড়া দিয়ে বালু এসে এসব ফসলি জমি ভরাট হয়েছে। অন্যদিকে কড়ইগড়াছড়ায় স্লুইসগেটের তীরের বাঁধ ভেঙে ১০টি আদিবাসী পরিবারের বাড়িঘর, গাছপালা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। শেরপুর : পুরনো ব্রহ্মপুত্র নদে পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকায় শেরপুরে বন্যা পরিস্থিতির অবনতি ঘটেছে। পানি উন্নয়ন বোর্ড জানিয়েছে, গত ২৪ ঘণ্টায় ২০ সেন্টিমিটার পানি বৃদ্ধি পেয়ে ১৬.৬ মিটার উচ্চতায় প্রবাহিত হচ্ছে। গতকাল স্থানীয় সংসদ সদস্য ও হুইপ মো. আতিউর রহমান আতিক ভাঙনে ক্ষতিগ্রস্ত সদর উপজেলার চরপক্ষীমারী ইউনিয়নের কুলুরচর বেপারীপাড়া এলাকা পরিদর্শন ও ত্রাণ বিতরণ করেছেন। (প্রতিবেদন তৈরিতে তথ্য দিয়েছেন- নিজস্ব প্রতিবেদক, বগুড়া; সিরাজগঞ্জ, কুড়িগ্রাম, রৌমারী, শিবচর (মাদারীপুর), গাইবান্ধা, হবিগঞ্জ, মুন্সীগঞ্জ, নাটোর, রাজবাড়ী, সুনামগঞ্জ ও শেরপুর প্রতিনিধি)
No comments:
Post a Comment