Friday, August 8, 2014

সংকট সামলাতে তহবিল নেই বিজিএমইএর:কালের কন্ঠ

তোবা গ্রুপের পাঁচটি কারখানার শ্রমিকদের বেতন পরিশোধ করতে গিয়ে এক নতুন নজির গড়ছে গার্মেন্ট মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএ। অন্যান্য মালিকের কাছ থেকে ধার করে টাকা নিয়ে তারা তোবা গ্রুপের শ্রমিকদের বেতন পরিশোধের উদ্যোগ নিয়েছে। এরই মধ্যে টাকা দিতে সম্মত হয়েছেন এমন কিছু মালিকের তালিকা করা হয়েছে। অবশ্য আপদ সামলাতে অন্যের কাছে হাত পাতা বিজিএমইএর জন্য নতুন নয়। রানা প্লাজা দুর্ঘটনার পর শ্রমিকদের চিকিৎসা সহায়তা ও ক্
ষতিপূরণের অর্থ দেওয়ার জন্য তারা তাদের সদস্যদের কাছ থেকে ২৫ হাজার টাকা করে অনুদান নিয়েছিল। ব্যাংক মালিকসহ সমাজের বিভিন্ন মহল থেকে তখন অর্থ সহায়তা নেওয়া হয়েছিল রানা প্লাজা দুর্ঘটনায় হতাহত শ্রমিকদের সহায়তার জন্য। কারণ বিজিএমইএর নিজস্ব কোনো তহবিল নেই এ ধরনের আপৎকালীন সহায়তার জন্য। তবে বিজিএমইএ বলেছে, তারা ‘ক্রাইসিস ম্যানেজমেন্ট ফান্ড’ নামের একটি তহবিল করবে, যার মাধ্যমে আপৎকালীন সমস্যা মোকাবিলা করা হবে। তবে ওই তহবিল থেকে কারখানার শ্রমিকদের বকেয়া বেতন-ভাতা দেবে না তারা। বাংলাদেশ এখন বিশ্বে পোশাক রপ্তানিতে দ্বিতীয় অবস্থানে আছে। বছরে সাড়ে ২৪ বিলিয়ন ডলারের পোশাক রপ্তানির মাধ্যমে বিশ্বের পোশাক বাজারের প্রায় ৫ শতাংশ বাংলাদেশের দখলে। এ খাতে বড় অনেক প্রতিষ্ঠান আছে, যাদের পক্ষে নিয়মিত কাজ না থাকলেও শ্রমিকদের বেতন-ভাতা নিয়মিত পরিশোধ করা সম্ভব। আবার দুর্ঘটনায় বড় অঙ্কের ক্ষতিপূরণ দেওয়ার সামর্থ্যও তাদের আছে। আবার অনেক কারখানা, যারা সামান্য ধাক্কা সামলানোর সক্ষমতাও রাখে না। ওই সব কারখানায় কোনো বিপদ এলেই দানখয়রাত আর প্রধানমন্ত্রীর ত্রাণ তহবিলের ওপর নির্ভরশীল হতে হয় বিজিএমইএ-কে। তোবা গ্রুপের শ্রমিকদের দুই মাসের বেতন দিতে দুই কোটি ৩৬ লাখ টাকার প্রয়োজন হবে। এ টাকার বড় অংশ বড় বড় কারখানার মালিকদের কাছ থেকে ধার করে সংগ্রহ করছে বিজিএমইএ। তবে তোবার মালিকপক্ষ ২০ লাখ টাকা দিতে সম্মত হয়েছে। গতকাল সোমবার তারা ১৫ লাখ টাকা দিয়েছে। অন্যদিকে বিজিএমইএর সাবেক কয়েকজন সভাপতি বেশ কিছু টাকা দিতে সম্মত হয়েছেন। বিজিএমইএর ভারপ্রাপ্ত সভাপতি এস এস মান্নান কচি কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘আমরা বিভিন্ন উৎস থেকে এ টাকা সংগ্রহ করছি। আশা করছি, আগামী বুধবার শ্রমিকরা বেতন নিতে আসবেন, আর আমরা তা দিতে পারব।’ ২০১২ সালের ২৪ নভেম্বর তাজরীন ফ্যাশনসে আগুন লেগে ১১২ জন শ্রমিকের মৃত্যুর পর তাদের পরিবারপ্রতি সাত লাখ টাকা করে ক্ষতিপূরণ দেওয়া হয়। এই সাত লাখ টাকার মধ্যে প্রধানমন্ত্রীর ত্রাণ তহবিল থেকে দুই লাখ, শ্রমিক কল্যাণ ফাউন্ডেশন, র‌্যাব ও বিদেশি একটি ক্রেতাপ্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে এক লাখ করে দেওয়া হয়। আর বিজিএমইএ দিয়েছিল দুই লাখ টাকা করে। তবে সেই টাকা পরে তাজরীনের মালিক দেলোয়ার হোসেনের কাছ থেকে আদায় করেছে তারা। রানা প্লাজার দুর্ঘটনার পর বিজিএমইএ দুই কোটি টাকা জমা দিয়েছে প্রধানমন্ত্রীর ত্রাণ তহবিলে। এর মধ্যে এক কোটি টাকা দিয়েছে বিকেএমইএ। এ ছাড়া শ্রমিকদের চিকিৎসা ও অন্যান্য খরচ বাবদ তারা প্রায় ১৪ কোটি টাকা ব্যয় করেছে। এটা তারা মালিকদের দান ও সদস্যদের কাছ থেকে ২৫ হাজার টাকা করে চাঁদা নিয়ে সংগ্রহ করেছে। অবশ্য সেই ২৫ হাজার টাকাও পরিশোধ করেননি কিছু মালিক। টাকা আদায় করতে বিজিএমইএ-কে মালিকদের ইউডি (কাঁচামাল ব্যবহারের সনদ) আটকে রাখতে হয়েছে। রানা প্লাজার ক্ষতিপূরণের জন্য বড় সহায়তা দিয়েছিল ব্যাংকগুলো। বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকস (বিএবি) প্রধানমন্ত্রীর ত্রাণ তহবিলে ৮০ কোটি টাকা দেয়। অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্স বাংলাদেশ (এবিবি) দেয় চার কোটি টাকা। ২৮টি নন-ব্যাংক আর্থিক প্রতিষ্ঠান মিলে দেয় তিন কোটি এক লাখ টাকা। কিন্তু এ দানখয়রাত কোনো স্থায়ী ব্যবস্থা নয় বলে মনে করেন বাংলাদেশ ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্রের সাধারণ সম্পাদক ডা. ওয়াজেদুল ইসলাম খান। তিনি বলেন, ‘বিজিএমইএর একটি আপৎকালীন তহবিল থাকা উচিত। মালিকদের কাছ থেকে বছরে নির্দিষ্ট পরিমাণ টাকা নিয়ে ওই তহবিল গঠন করা যায়, যা দিয়ে বিভিন্ন সমস্যায় জর্জরিত মালিককে সহায়তা বা শ্রমিকদের সহায়তা করা যাবে।’ তিনি বলেন, ‘আমরা জানতাম এ ধরনের একটি তহবিল আছে। কিন্তু তোবার বেতন নিয়ে সংকটের পর জানতে পারলাম, তারা মালিকদের কাছ থেকে ধারকর্জ করে টাকা এনে বেতনের ব্যবস্থা করছে। যদি আপৎকালীন একটি তহবিল থাকত, তবে সেখান থেকে এখন স্বল্প সুদে ঋণ দেওয়ার ব্যবস্থা করা যেত।’ তবে বিজিএমইএ বেতন পরিশোধে ঋণ দেওয়ার জন্য তহবিল গঠন করতে রাজি নয়। তারা একটি তহবিল করবে, সেটি ব্যবহার করা হবে শ্রমিকদের কল্যাণ, ক্ষতিপূরণ ও অন্যান্য সহায়তার জন্য। বিজিএমইএর সহসভাপতি শহীদুল্লাহ আজিম কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘আমরা ক্রাইসিস ম্যানেজমেন্টের জন্য একটি তহবিল করব। ইউডির ওপর বাড়তি মাসুল আরোপ করে এ তহবিল গঠন করা হবে।’

No comments:

Post a Comment