Sunday, October 12, 2014

বস্তি উচ্ছেদ হলেও উচ্ছেদ হয়নি মাদক স্পট:নয়াদিগন্ত

রেললাইনের পাশের বস্তি ও দোকানপাট উচ্ছেদ হলেও উচ্ছেদ হয়নি মাদক ব্যবসায়। বনানী থেকে কমলাপুর পর্যন্ত অন্তত দেড়শত স্পটে চলছে এই ব্যবসায়। শুধু ব্যবসায়ই নয়, কোনো কোনো স্পটে প্রকাশ্যে মাদক সেবনের চিত্র দেখা যাচ্ছে। অনেক সময় আইনশৃঙ্খলাবাহিনীর সামনেই চলে এই ব্যবসয়। তবে মহানগর পুলিশ বলেছে, মাদক ব্যবসায় নিয়ন্ত্রণে পুলিশ দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছে। রাজধানীর রেললাইনের আশপাশ থেকে সম্প্রতি উচ্ছেদ করা হয়েছে বস্তিসহ
বিভিন্ন স্থাপনা। গোটা রেললাইনের আশপাশেই এই অভিযান চালানো হয়। অভিযানে বস্তি, দোকানপাটসহ অন্যান্য স্থাপনা উচ্ছেদ হলেও বহাল থেকে যায় মাদকের রাজ্য। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, রেললাইনের আশপাশে অন্তত দেড়শত মাদক স্পট এখনো বহাল। এমনকি কমলাপুর স্টেশনের ভেতরেও চলে মাদক সেবন। কমলাপুর রেলওয়ে থানার পাশেও মাদকদ্রব্যের কেনাবেচা চলছে বলে অভিযোগ রয়েছে। নারায়ণগঞ্জ হয়ে ঢাকার দিকে ঢুকতেই জুরাইন রেললাইন বস্তি এলাকা। স্থানীয় সূত্র জানায়, এই রেললাইনের পাশে গড়ে ওঠা বস্তি বা খুপরিঘরে দীর্ঘদিন মাদকদ্রব্য কেনাবেচা হয়ে আসছে। পারুলি ও পিস্তল কামাল এই বস্তির মাদক ব্যবসায় নিয়ন্ত্রণ করছে। পারুলির লোকজন বিক্রি করছে হেরোইন, আর পিস্তল কামালের নিয়ন্ত্রণে ফেনসিডিল ব্যবসায়। কিছু দূর এগিয়ে গেন্ডারিয়ার ঘুণ্টিঘর এলাকা। এখানেও চলছে মাদক ব্যবসা। এই এলাকায় এক সময়ে মাদক ব্যবসার নিয়ন্ত্রক ছিল বুদ্দিন। বর্তমানে সাজু, মমতা, রহিমা ও হাসিসহ ১০-০১২ জন মিলে এখানে মাদক ব্যবসায় চালিয়ে যাচ্ছে। এর একটু সামনেই দয়াগঞ্জ ব্রিজের আশপাশে বেশ কিছু খুপরিঘর এবং টিনশেড বাড়িতে চলছে মাদক ব্যবসায়। সায়েদাবাদ রেলক্রসিং পার হয়েই রেললাইনের পাশে গড়ে উঠেছে ওয়াসা বস্তি। এখানে দীর্ঘদিন ধরে মাদক ব্যবসায় চলে আসছে। বর্তমানে এখানে মাদক ব্যবসায় নিয়ন্ত্রণ করছে সুফিয়া। গোলাপবাগ রেললাইনের পাশে রয়েছে মাদকের কয়েকটি স্পট। কমলাপুর রেলস্টেশন ঘিরে রয়েছে টিটিপাড়া বস্তি, কমলাপুর স্টেডিয়াম এলাকা, শাহজাহানপুর বস্তিসহ বেশ কয়েকটি মাদক স্পট। সূত্র জানায়, কমলাপুর আইসিডি সংলগ্ন রাস্তায় প্রকাশ্যে মাদক ব্যবসায় চলছে। কমলাপুর পার হয়ে শাহজাহানপুর রেললাইনের দুই পাশে বেশ কিছু খুপরিঘরের মধ্যে চলছে মাদক ব্যবসায়। মালিবাগ রেলক্রসিং পার  হয়েই এক কাবে দীর্ঘদিন মাদক ব্যবসায় চলছে। অতীতে এই কাবকে কেন্দ্র করে খুনখারাবির ঘটনাও ঘটেছে। সূত্র জানায়, সন্ধ্যার পর থেকেই এই কাবে বসছে মাদকাসক্তদের আড্ডা। এর কিছু দূরেই মগবাজার রেললাইন বস্তি। এই বস্তিকে ঘিরে রয়েছে মাদক ব্যবসায়ীদের একটি বিশাল চক্র। মগবাজার থেকে কারওয়ানবাজার ক্রসিং পর্যন্ত গোটা রেললাইনের পাশে গড়ে উঠেছে বেশ কয়েকটি মাদক স্পট। এক সময় এখানের মাদক ব্যবসায় নিয়ন্ত্রণ করত পিচ্চি হান্নান, মনোয়ারা ও ভাগ্নে সেলিম। এখনো তাদের শিষ্য-সাগরেদরা এখানের মাদক ব্যবসায় নিয়ন্ত্রণ করছে। তেজগাঁও রেললাইনের পাশে বিশাল বস্তিতে দীর্ঘদিন মাদক কেনাবেচা করে আসছে আতা এবং তার সহযোগীরা। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, এখানে এক সময় মাদক ব্যবসায় নিয়ন্ত্রণ করত সেলিম ওরফে রায় পুইর‌্যা সেইল্লা। উত্তরায় এক পুলিশ কনস্টেবল হত্যা মামলায় সে এখন জেলহাজতে। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, এভাবে মহাখালী, বনানী এবং বিমানবন্দর রেলস্টেশনের আশপাশে রেললাইন ঘিরে গড়ে উঠেছে মাদক স্পট। কারওয়ানবাজার থেকে তেজগাঁও ক্রসিং পর্যন্ত অন্তত অর্ধশত স্পট রয়েছে। এসব স্পটে প্রকাশ্যেই মাদক ব্যবসায় ও মাদক সেবন চলছে। অনেক সময় টহল পুলিশের সামনে বসেই মাদক সেবন করতে দেখা যায় বলেও অভিযোগ রয়েছে। মহানগর পুলিশের এক কর্মকর্তা লোকজনকে বলেন, রেললাইনের আশপাশে কী হলো-না-হলো তা দেখার দায়িত্ব রেলওয়ে পুলিশের। রেলওয়ে পুলিশের এক কর্মকর্তা বলেছেন, তাদের লোকবল কম থাকায় অনেক সময় সব কিছু দেখা সম্ভব হয় না। তবে তাদের চেষ্টায় কমতি নেই। ঢাকা মহানগর পুলিশের মিডিয়া সেলের ডিসি মাসুদুর রহমান বলেছেন, মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণে পুলিশ নিরলস দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছে।

No comments:

Post a Comment