লেটি’ কিংবা ‘ঘরের’ কমলা নামে পরিচিত সিলেটের হাট-বাজারগুলোতে স্থানীয়ভাবে উৎপাদিত সুবাসিত কমলা উঠতে শুরু করেছে এ সপ্তাহে। ‘কমলাফুলি’র ঘরের কমলার প্রচুর কেনাবেচাও চলছে। সিলেট নগরে মৌসুমি ফলের সবচেয়ে বড় আড়ত কদমতলী এলাকায়। সেখানকার ফলবিক্রেতাদের ব্যস্ততা শুধু কমলা নিয়ে। কয়েকটি ফলের হাট ঘুরে দেখা গেছে, আমদানি করা কমলার চেয়ে এগুলো কিছুটা ছোট আকারের। সবুজের মধ্যে লালচে রং লেগেছে মাত্র। তাতে কমলার পরিপূর্ণ স্বাদ না মিললেও এর ঘ্রাণ অসাধারণ। মৌসুমের শুরুতেই বাজারে তোলা হলে চাহিদা আর দাম বেশি পাওয়া যাবে, এই আশায় ব্যবসায়ীরা কমলাগুলো বাজারে তুলছেন। সিলেট কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের পর্যবেক্ষণে এসব কমলা টক-মিষ্টি। স্থানীয়ভাবে উৎপাদিত হয় বলে ‘ঘরের’ অথবা ‘সিলেটি’ কমলা নামে ডাকা হয়। ঘরের কমলা উৎপাদন বাড়াতে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর ২০০১ সালের দিকে একটি প্রকল্প হাতে নেয়। ‘বৃহত্তর সিলেট সমন্বিত কমলা চাষ উন্নয়ন’ নামে আট বছর মেয়াদি এ প্রকল্পে আট হাজারের বেশি কমলার বাগান করার পরিকল্পনা ছিল। ২০০১ সালের জুলাই থেকে ২০০৬ সালের জুন পর্যন্ত প্রকল্পের প্রথম পর্যায় পরিচালিত হয়। চার জেলায় ২৫০টি বাগান তৈরির স্থান নির্ধারণ এবং পাঁচ হাজার কমলা চাষিকে প্রশিক্ষণ দেওয়ার পর প্রকল্পের মেয়াদ বাড়ানো হয় ২০০৮ সালের জুন পর্যন্ত। এরপর এ প্রকল্প আর এগোয়নি। প্রকল্প গোটালেও কমলা চাষের দিকে চাষিদের মনোযোগ বাড়াতে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর তৎপর রয়েছে বলে জানান সিলেটের উপপরিচালক মো. আবু নাসের। তিনি জানান, বৃহত্তর সিলেট সমন্বিত কমলা চাষ উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়ন সূত্রে সিলেট অঞ্চলে ২৮২ হেক্টর জমিতে কমলা চাষ হচ্ছে। এবার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে এক হাজার ৪৭০ মেট্রিক টন কমলা উৎপাদনের। সিলেটের মৌসুমি ফলবিক্রেতারা জানান, আমদানি করা কমলা হাটে উঠতে আরও প্রায় তিন সপ্তাহ সময় লাগবে। এ সময় চাহিদা পূরণ করতে স্থানীয় কমলা হিসেবে সিলেটি কমলার কেনাবেচা চলছে। সিলেট জেলার বিয়ানীবাজার, জৈন্তাপুর, কানাইঘাট ও জকিগঞ্জ উপজেলার সীমান্ত এলাকার পাহাড়-টিলা এলাকা ছাড়াও সুনামগঞ্জের ছাতক, মৌলভীবাজারের জুড়ী উপজেলা থেকে কমলা আসছে হাটে। কদমতলীর হাটে আলাপ হয় কমলার কারবারি আবদুল বারিকের সঙ্গে। তিনি জানান, এবার আবহাওয়া অনুকূল থাকায় চাষ ভালো হয়েছে। কানাইঘাটের মুমতাজগঞ্জ ও জকিগঞ্জের আটগ্রাম বাজারে সপ্তাহের হাটবারে কমলার হাট বসে। সেখান থেকে তাঁরা পাইকারি দরে কিনে সিলেট নগরসহ অন্যান্য হাটে তুলছেন। পাইকারি বিক্রেতা মো. মইনুদ্দিন জানান, আকৃতিভেদে তাঁরা ১০ থেকে ২০ টাকা দরে হালি বিক্রি করছেন। সেগুলো খুচরা বিক্রি করা হচ্ছে ৩০ থেকে ৪০ টাকায়। আড়ত থেকে পাইকারি দরে কমলা কিনছিলেন স্কুলশিক্ষক রয়েল পাল। ছড়ার সেই ‘কমলাফুলি’ প্রসঙ্গ তুলে ধরে রয়েল বলেন, ‘কমলার জন্য সিলেট বিখ্যাত—এ কথা সবার জানা। কিন্তু এ চাহিদার পুরোটাই যে আমদানি করা কমলায় মেটানো হয়, এ বিষয়টি অনেকেরই অজানা। ঘরের কমলা দিয়ে পুরোটা মৌসুম যদি চলত, তখন সিলেট আক্ষরিক অর্থেই কমলাফুলির ঘর হতো।’
Headlines from most popular newspapers of Bangladesh. বাংলাদেশে প্রকাশিত প্রধান প্রধান দৈনিক পত্রিকার সংবাদ শিরোনামগুলো এক নজরে দেখে নিন।
Thursday, October 16, 2014
‘সিলেট আমার ঘর’:প্রথম অালো
লেটি’ কিংবা ‘ঘরের’ কমলা নামে পরিচিত সিলেটের হাট-বাজারগুলোতে স্থানীয়ভাবে উৎপাদিত সুবাসিত কমলা উঠতে শুরু করেছে এ সপ্তাহে। ‘কমলাফুলি’র ঘরের কমলার প্রচুর কেনাবেচাও চলছে। সিলেট নগরে মৌসুমি ফলের সবচেয়ে বড় আড়ত কদমতলী এলাকায়। সেখানকার ফলবিক্রেতাদের ব্যস্ততা শুধু কমলা নিয়ে। কয়েকটি ফলের হাট ঘুরে দেখা গেছে, আমদানি করা কমলার চেয়ে এগুলো কিছুটা ছোট আকারের। সবুজের মধ্যে লালচে রং লেগেছে মাত্র। তাতে কমলার পরিপূর্ণ স্বাদ না মিললেও এর ঘ্রাণ অসাধারণ। মৌসুমের শুরুতেই বাজারে তোলা হলে চাহিদা আর দাম বেশি পাওয়া যাবে, এই আশায় ব্যবসায়ীরা কমলাগুলো বাজারে তুলছেন। সিলেট কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের পর্যবেক্ষণে এসব কমলা টক-মিষ্টি। স্থানীয়ভাবে উৎপাদিত হয় বলে ‘ঘরের’ অথবা ‘সিলেটি’ কমলা নামে ডাকা হয়। ঘরের কমলা উৎপাদন বাড়াতে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর ২০০১ সালের দিকে একটি প্রকল্প হাতে নেয়। ‘বৃহত্তর সিলেট সমন্বিত কমলা চাষ উন্নয়ন’ নামে আট বছর মেয়াদি এ প্রকল্পে আট হাজারের বেশি কমলার বাগান করার পরিকল্পনা ছিল। ২০০১ সালের জুলাই থেকে ২০০৬ সালের জুন পর্যন্ত প্রকল্পের প্রথম পর্যায় পরিচালিত হয়। চার জেলায় ২৫০টি বাগান তৈরির স্থান নির্ধারণ এবং পাঁচ হাজার কমলা চাষিকে প্রশিক্ষণ দেওয়ার পর প্রকল্পের মেয়াদ বাড়ানো হয় ২০০৮ সালের জুন পর্যন্ত। এরপর এ প্রকল্প আর এগোয়নি। প্রকল্প গোটালেও কমলা চাষের দিকে চাষিদের মনোযোগ বাড়াতে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর তৎপর রয়েছে বলে জানান সিলেটের উপপরিচালক মো. আবু নাসের। তিনি জানান, বৃহত্তর সিলেট সমন্বিত কমলা চাষ উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়ন সূত্রে সিলেট অঞ্চলে ২৮২ হেক্টর জমিতে কমলা চাষ হচ্ছে। এবার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে এক হাজার ৪৭০ মেট্রিক টন কমলা উৎপাদনের। সিলেটের মৌসুমি ফলবিক্রেতারা জানান, আমদানি করা কমলা হাটে উঠতে আরও প্রায় তিন সপ্তাহ সময় লাগবে। এ সময় চাহিদা পূরণ করতে স্থানীয় কমলা হিসেবে সিলেটি কমলার কেনাবেচা চলছে। সিলেট জেলার বিয়ানীবাজার, জৈন্তাপুর, কানাইঘাট ও জকিগঞ্জ উপজেলার সীমান্ত এলাকার পাহাড়-টিলা এলাকা ছাড়াও সুনামগঞ্জের ছাতক, মৌলভীবাজারের জুড়ী উপজেলা থেকে কমলা আসছে হাটে। কদমতলীর হাটে আলাপ হয় কমলার কারবারি আবদুল বারিকের সঙ্গে। তিনি জানান, এবার আবহাওয়া অনুকূল থাকায় চাষ ভালো হয়েছে। কানাইঘাটের মুমতাজগঞ্জ ও জকিগঞ্জের আটগ্রাম বাজারে সপ্তাহের হাটবারে কমলার হাট বসে। সেখান থেকে তাঁরা পাইকারি দরে কিনে সিলেট নগরসহ অন্যান্য হাটে তুলছেন। পাইকারি বিক্রেতা মো. মইনুদ্দিন জানান, আকৃতিভেদে তাঁরা ১০ থেকে ২০ টাকা দরে হালি বিক্রি করছেন। সেগুলো খুচরা বিক্রি করা হচ্ছে ৩০ থেকে ৪০ টাকায়। আড়ত থেকে পাইকারি দরে কমলা কিনছিলেন স্কুলশিক্ষক রয়েল পাল। ছড়ার সেই ‘কমলাফুলি’ প্রসঙ্গ তুলে ধরে রয়েল বলেন, ‘কমলার জন্য সিলেট বিখ্যাত—এ কথা সবার জানা। কিন্তু এ চাহিদার পুরোটাই যে আমদানি করা কমলায় মেটানো হয়, এ বিষয়টি অনেকেরই অজানা। ঘরের কমলা দিয়ে পুরোটা মৌসুম যদি চলত, তখন সিলেট আক্ষরিক অর্থেই কমলাফুলির ঘর হতো।’
Subscribe to:
Post Comments (Atom)
No comments:
Post a Comment