Thursday, October 30, 2014

অনানুষ্ঠানিক কার্যকলাপ বেশি বলেই কালো টাকার ছড়াছড়ি:প্রথম অালো

‘কালোটাকা আমাদের সাদা অর্থনীতির অবিচ্ছেদ্য অংশ হয়ে আছে, মস্তিষ্কের মাঝখানে একটি টিউমারের মতো—এটা অপসারণের চেষ্টা করলে আপনি রোগীকেই মেরে ফেলবেন,’ বিশিষ্ট ভারতীয় লেখক রোহিন্তন মিস্ত্রি তাঁর ফ্যামিলি ম্যাটারস উপন্যাসে এ কথা লিখেছেন। সহজ কথায় বললে কালোটাকা হচ্ছে সেই অর্থ, যার জন্য সরকারকে কর দেওয়া হয়নি। ভারতের অপরাধ জগতের অর্থনীতি সচল রাখতে এই কালোটাকা সহায়তা করছে। এখানে রাজনীতিবিদেরা তাঁদের ব্য
য়বহুল নির্বাচনী প্রচার কার্যক্রমে অবৈধ অর্থ ব্যবহার করে থাকেন বলে অভিযোগ আছে। লোকে জমিজমা কেনা-বেচায় লেনদেনও কালোটাকায় সেরে ফেলতে পছন্দ করে। দিল্লিতে কালোটাকা ছাড়া এ ধরনের লেনদেন হতে পারে তা প্রায় অকল্পনীয় ব্যাপার। ভারতে অনানুষ্ঠানিক কার্যকলাপ বেশি বলেই অবৈধ অর্থের লেনদেন এতটা প্রচলিত। মূলত কালো টাকা অসৎ লোকদের জন্য লাভজনক এবং সৎ মানুষের ক্ষতির কারণ। ভারতীয়দের বিদেশে লুকিয়ে রাখা কালোটাকার পরিমাণ নিয়ে নানা রকমের ধারণা প্রচলিত রয়েছে—এই অঙ্ক ৫০ হাজার কোটি থেকে দুই লাখ কোটি ডলার পর্যন্ত হতে পারে। যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক গবেষণা প্রতিষ্ঠান গ্লোবাল ফিন্যানশিয়াল ইন্টেগ্রিটির প্রধান অর্থনীতিবিদ দেব কর মনে করেন, অবৈধ অর্থ পাচারের মধ্য দিয়ে ভারত ১৯৪৮ থেকে ২০০৮ সাল পর্যন্ত আনুমানিক ২১ হাজার ৩০০ কোটি ডলার হারিয়েছে। দুর্নীতি, অনিয়ম, অপরাধ এবং কর ফাঁকি দেওয়ার মধ্য দিয়ে এসব অর্থ পাচার হয়েছে, যার পরিমাণ ভারতের মোট দেশজ উৎপাদনের ১৬ শতাংশ। দ্য ব্ল্যাক ইকোনমি ইন ইন্ডিয়া বইয়ের লেখক অধ্যাপক অরুণ কুমার মনে করেন, ভারত থেকে পাচার হওয়া অবৈধ অর্থের পরিমাণ দুই লাখ কোটি ডলারের চেয়ে অনেক বেশি। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি বিদেশে অর্থ পাচার করার বিরুদ্ধে কঠোর অভিযান চালানোর প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। নির্বাচনী প্রচারণার সময় তিনি অঙ্গীকার করেছিলেন ক্ষমতায় এলে এক শ দিনের মধ্যে পাচারকারীদের নাম প্রকাশ করবেন। তার পরও নতুন সরকার বিদেশি ব্যাংকে অর্থ পাচারে জড়িত থাকার অভিযোগে কয়েকজনের নাম গত সোমবার প্রকাশ করলে অনেকেই ব্যাপারটিকে নাটুকে আখ্যা দিয়ে বিস্ময় প্রকাশ করেছেন। সেদিন যাঁদের নাম প্রকাশ করা হয়েছে, তাঁরা কেউ শিল্পপতি, কেউ ব্যবসায়ী। সে অর্থে তাঁদের কেউই ‘রুই-কাতলা’ নন। অনেকে মনে করেন, কালোটাকা নিয়ে সরকারের রাজনীতি বন্ধ করা এবং এ রকম হেঁয়ালিপূর্ণভাবে নাম প্রকাশ করা বন্ধ রাখা উচিত। পরে অবশ্য অর্থ পাচারে জড়িত সবার নাম প্রকাশ করার জন্য সুপ্রিম কোর্ট নির্দেশ দিলে সরকার ছয় শতাধিক নাম জমাও দিয়েছে আদালতে। ভারতীয়দের অনেকে মনে করেন, সোনা আমদানি এবং দেশীয় শেয়ারবাজারে বিনিয়োগের মাধ্যমে বিপুল পরিমাণ অবৈধ অর্থ বিদেশ থেকে ফিরিয়ে আনা যেতে পারে। তবে ভারতকে এখন বিদেশে রাখা অবৈধ অর্থের পেছনে ছোটার আগে দেশে অস্বচ্ছ রাজনৈতিক অর্থায়ন জরুরি ভিত্তিতে বন্ধ করতে হবে এবং দুর্নীতিগ্রস্ত আবাসন ব্যবসাকে পরিচ্ছন্ন করতে হবে।

No comments:

Post a Comment