ভূমি, ইমারত নির্মাণ, সম্পত্তি হস্তান্তরসহ মোট ২৬টি খাতে পৌর কর বাড়ছে। গতকাল বুধবার স্থানীয় সরকার বিভাগ থেকে এ-সংক্রান্ত গেজেট জারি করা হয়েছে। এর ফলে প্রায় ১১ বছর পর দেশের ৩২৪টি পৌরসভার কর বাড়ল। সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, পৌরসভাকে আত্মনির্ভরশীল করতেই কর বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এ লক্ষ্যে পৌরসভা আদর্শ কর তফসিল ২০১৪ প্রণয়ন করা হয়েছে। বিবাহ, পুনর্বিবাহ ও তালাক প্রদানের ক্ষেত্রেও নতু
ন কর আরোপ করা হয়েছে। নাগরিকত্বের নিবন্ধন সনদ ও সনদের সংশোধনেও নতুন হারে ফি দিতে হবে এখন থেকে। কর বৃদ্ধিসংক্রান্ত স্থানীয় সরকার বিভাগের সারসংক্ষেপে বলা হয়েছে, গত এক দশকে দুটি পে-স্কেল দেওয়ায় পৌরসভার কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন বেড়েছে। বেড়েছে মেয়র ও কাউন্সিলরদের সম্মানী ভাতা। একই সঙ্গে রাস্তাঘাট নির্মাণ-সংস্কার ও অবকাঠামো উন্নয়নেও ব্যয় বেড়েছে। ফলে নতুন করে কর বাড়ানোর প্রয়োজনীয়তা দেখা দিয়েছে। পৌরসভার রাজস্ব তহবিল থেকে কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের বেতন-ভাতা, জ্বালানি খরচ, বিদ্যুৎ বিলসহ অন্যান্য ব্যয় পরিশোধ করা হয়। একই সময়ে পৌর এলাকায় ব্যবসা-বাণিজ্যের সম্প্রসারণ হয়েছে। এসব বিবেচনায় পৌরসভা আদর্শ কর তফসিল ২০০৩ সংশোধন করে যুগোপযোগী করা জরুরি হয়ে পড়েছিল বলে স্থানীয় সরকার বিভাগ বলছে। ইমারত ও ভূমি কর: পৌরসভা এলাকায় মালিকানাধীন ও দখলস্বত্বের সব হোল্ডিংয়ে অবস্থিত ইমারত ও ভূমির বার্ষিক মূল্যের ওপর সাত শতাংশ হারে কর আরোপ করা হয়েছে। তবে কোনো ইমারত বা ভূমি সরকারি দাতব্য প্রতিষ্ঠান হিসেবে ব্যবহৃত হলে তা থেকে হোল্ডিং কর আদায় করা যাবে না। কিন্তু মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য বসবাসের নিজস্ব মালিকানাধীন হোল্ডিংয়ে অবস্থিত ইমারত বা ভূমির এক হাজার বর্গফুট আয়তন পর্যন্ত হোল্ডিং কর আদায়ের আওতামুক্ত থাকবে। তবে ধর্মীয়, সরকারি দাতব্য প্রতিষ্ঠান অথবা মুক্তিযোদ্ধাদের নিজস্ব মালিকানাধীন ভূমি বা ইমারতের কোনো অংশ বাণিজ্যিক বা লাভজনক উদ্দেশ্যে ব্যবহৃত হলে ওই ইমারত বা ভূমির অংশ থেকে হোল্ডিং আদায়যোগ্য হবে। স্থাবর সম্পত্তি হস্তান্তর কর আরোপ: স্থাবর সম্পত্তি হস্তান্তরের ক্ষেত্রে দলিলে উল্লিখিত মূল্যের সর্বোচ্চ দুই শতাংশ হারে কর আরোপ করা যাবে। তবে ওয়াকফ-ই-আল আওলাদ ছাড়া নিবন্ধনকৃত ধর্মীয়, দাতব্য, ক্রীড়া বা সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠানের অনুকূলে যেকোনো দান বা উইল-সংক্রান্ত হস্তান্তর দলিলের ক্ষেত্রে এই কর আরোপ করা যাবে না। এ ছাড়া বৈধ ঋণ পরিশোধের জন্য কোনো স্থাবর সম্পত্তি হস্তান্তর দলিলের ক্ষেত্রে এ কর আরোপ করা যাবে না। ইমারত নির্মাণ এবং পুনর্নির্মাণের ওপর কর আরোপ: ‘ক’ শ্রেণির পৌরসভার নকশা অনুমোদনের ফি এক হাজার টাকা। এ ছাড়া সীমানাপ্রাচীর এক শ বর্গফুটের জন্য তিন শ টাকা, অস্থায়ী কাঁচা স্থাপনা ৫০০ বর্গফুটের জন্য ৪০০ টাকা, আধা-পাকা (আবাসিক) ৫০০ বর্গফুট পর্যন্ত ৬০০ টাকা, আধা-পাকা (বাণিজ্যিক) ৫০০ বর্গফুটের পর্যন্ত এক হাজার টাকা, পাকা ইমারত (আবাসিক) ৫০০ বর্গফুট পর্যন্ত এক হাজার টাকা ও পাকা ইমারত (বাণিজ্যিক) ৫০০ বর্গফুট পর্যন্ত ১৫০০ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। খ ও গ শ্রেণির জন্য নকশা অনুমোদনের ফি ৫০০ হাজার টাকা, সীমানাপ্রাচীর এক শ বর্গফুটের জন্য ২৫০ টাকা, অস্থায়ী কাঁচা স্থাপনা ৫০০ বর্গফুটের জন্য ৩০০ টাকা, আধা-পাকা (আবাসিক) ৪০০ বর্গফুট পর্যন্ত ৪০০ টাকা, আধা-পাকা (বাণিজ্যিক) ৫০০ বর্গফুটের পর্যন্ত ৮০০ টাকা, পাকা ইমারত (আবাসিক) ৫০০ বর্গফুট পর্যন্ত ৮০০ টাকা ও পাকা ইমারত (বাণিজ্যিক) ক্ষেত্রে ৫০০ বর্গফুট পর্যন্ত ১২০০ টাকা করা হয়েছে। বিজ্ঞাপনের ওপর কর: সাধারণ সাইনবোর্ড বা বিজ্ঞাপনের ওপর করের মধ্যে বেসরকারি জমি বা ভবনের ওপর স্থাপিত বিজ্ঞাপনের জন্য ১০০ টাকা, একই ক্ষেত্রে আলোকসজ্জা করা হলে ১৫০ টাকা এবং সরকারি জমি বা ভবনের ওপর স্থাপিত বিজ্ঞাপনের জন্য ১৫০ টাকা এবং আলোকসজ্জার জন্য ২০০ টাকা কর আরোপ করা হয়েছে। হোল্ডিং এবং নামজারির ওপর: কোনো ইমারত বা ভূমির সম্পূর্ণ মালিকানাস্বত্ব হস্তান্তর করা হলে, হস্তান্তর গ্রহীতাকে ওই হস্তান্তর বা দলিল রেজিস্ট্রেশনের তিন মাসের মধ্যে ইমারত বা ভূমির নামজারির জন্য পৌরসভায় আবেদন করতে হবে। এ ছাড়া শিল্পকারখানা ও বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রে (মূলধন অনুযায়ী) বার্ষিক কর ১৫০০ থেকে পাঁচ হাজার টাকা পর্যন্ত আরোপ করা হয়েছে। আর ক্ষুদ্র ও কুটিরশিল্পের জন্য ২০০ থেকে তিন হাজার ২০০ টাকা পর্যন্ত কর নির্ধারণ করা হয়েছে।
No comments:
Post a Comment