নরসিংদীতে ভ্রাম্যমাণ আদালতের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট, সাংবাদিক ও তিতাস কর্তৃপক্ষের ওপর হামলার ঘটনায় জড়িতদের গ্রেফতার করতে পারেনি পুলিশ। অভিযোগ উঠেছে অবৈধ গ্যাস সংযোগের মূল হোতা পলাশ থানা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক মনির মোল্লা ও জেলা বঙ্গবন্ধু জাতীয় যুব পরিষদের সাংগঠনিক সম্পাদক সজিব হোসেন স্থানীয় এমপির আশ্রয়ে রয়েছেন। পলাশে এমপির বাসভবনেই আত্মগোপন করে আছেন তারা। এ অবস্থায় জড়িতদের অবস্থান নিশ্চিত হয়েও
পুলিশ তাদের গ্রেফতার করতে পারছে না। তবে নরসিংদী-২ পলাশ আসনের সংসদ সদস্য কামরুল আশ্রাফ খান পোটন তার বাসভবনে আত্মগোপনের বিষয়টি অস্বীকার করেছেন। এদিকে জেলা প্রশাসক ও পুলিশ প্রশাসনকে অবহিত না করে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করায় শৃংখলা ভঙ্গের অভিযোগে আনা হয়েছে ভ্রাম্যমাণ আদালতের ম্যাজিস্ট্রেটের বিরুদ্ধে। একই সঙ্গে ভ্রাম্যমাণ আদালতের ম্যাজিস্ট্রেট জহিরুল ইসলামকে কারণদর্শানো নোটিশ দিয়েছেন জেলা প্রশাসক আবু হেনা মোর্শেদ জামান। ওই ঘটনায় জেলা প্রশাসন ও পুলিশ বাহিনী একেঅপরের বিরুদ্ধে দায়িত্বহীনতার অভিযোগ তুলেছেন। এ অবস্থায় প্রশাসনের দুই গুরুত্বপূর্ণ বিভাগের মধ্যে দ্বন্দ্ব প্রকাশ্যের রূপ নিয়েছে। জানা যায়, নির্বাচনী ম্যান্ডেট পূরণের অংশ হিসেবে সাম্প্রতিক সময়ে নরসিংদী-২ পলাশ আসনের সংসদ সদস্য কামরুল আশ্রাফ খান পোটন বিভিন্ন এলাকায় সভা সমাবেশে এলাকাবাসী ও আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের অলিখিতভাবে অবৈধ গ্যাস সংযোগ নেয়ার অনুমতি প্রদান করেন। যেসব এলাকায় গ্যাস সংযোগ পৌঁছেনি সেসব এলাকার লোকজন এমপি পোটনের দারস্থ হলে তাদেরও অবৈধ গ্যাস সংযোগ নেয়ার পরামর্শ প্রদান করেন। এরই ফলশ্র“তিতে আওয়ামী লীগ-ছাত্রলীগ নেতারা অবৈধ গ্যাস সংযোগ স্থাপন শুরু করেন। অবৈধ গ্যাস সংযোগের ব্যাপকতা ছড়িয়ে পড়ে পুরো পলাশ উপজেলায়। আর অবৈধ গ্যাস সংযোগকে পুঁজি করে সাধারণ মানুষের কাছ থেকে মোটা অংকের টাকা হাতিয়ে নিচ্ছেন আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগ সমর্থিত নেতাকর্মীরা। অবৈধ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করতে ক্ষমতাসীন দলের নেতাকর্মীদের রোষানলে পড়তে হচ্ছে তিতাস কর্তৃপক্ষকে। স্থানীয় তিতাস আঞ্চলিক কার্যালয়ের মতে, জেলায় অবৈধ সংযোগ রয়েছে প্রায় ১ লাখ। এতে প্রতিদিন সরকার রাজস্ব হারাচ্ছে প্রায় ৩০ কোটি টাকা। সরকারের বিপুল পরিমাণ ক্ষতি ও রাষ্ট্রীয় সম্পদ লুট হলেও তা রক্ষায় কার্যকরী পদক্ষেপ নিচ্ছে না সংশ্লিষ্ট প্রশাসন। এ পর্যন্ত অবৈধ গ্যাস সংযোগ চক্রের বিরুদ্ধে ৩২টি মামলা হলেও একজন আসামিও গ্রেফতার হয়নি। অভিযোগ উঠেছে রাজনীতিবিদদের পাশাপাশি পুলিশকে ম্যানেজ করে এ অবৈধ কর্মযজ্ঞ চালানো হচ্ছে। এদিকে অবৈধ গ্যাস সংযোগের জড়িতদের আত্মগোপনের বিষয়ে সংসদ সদস্য কামরুল আশ্রাব খান পোটন বলেন, আমার বাড়িতে ভাইবোন ছাড়া কেউ প্রবেশ করতে পারেন না। ছাত্রলীগ নেতারা কিভাবে আমার বাড়িতে আত্মগোপন করবেন। তাছাড়া আমি তাদের চিনি না। সভা সমাবেশে গ্যাস সংযোগের অনুমতি প্রসঙ্গে তিনি বলেন, গ্যাস সংযোগ দিতে হবে নির্বাচনে এমন কোনো প্রতিশ্র“তি আমি দেইনি। তিনি আরও বলেন, আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগের ছোটখাটো নেতারা যদি অবৈধ কোনো কর্মকাণ্ড করে তাদের তো আমি পেটাতে পারি না। তবে অন্যায়কে আমি প্রশ্রয় দেই না। এদিকে ভ্রাম্যমাণ আদালতের ওপর হামলা মারধরের ঘটনা পলাশ উপজেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক মনির মোল্লাকে প্রধান আসামি করে একাধিক ব্যক্তির নামে মামলা করেছে তিতাসের বিক্রয় সহকর্মী মো. ওকিল উদ্দিন। মামলার আসামিরা হল- পলাশ উপজেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক মনির মোল্লা, জেলা বঙ্গবন্ধু জাতীয় যুব পরিষদের সাংগঠনিক সম্পাদক সজিব হোসেন, গ্যাসের ঠিকাদার শাজাহান খানসহ অজ্ঞাতনামা একাধিক আসামি। এদিকে সাংবাদিকদের ওপর হামলাকারীদের দ্রুত গ্রেফতারের দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল, মানববন্ধন ও পুলিশ সুপারের কার্যালয় ঘেরাও করেছে বিভিন্ন প্রিন্ট ও ইলেক্ট্রনিক্স মিডিয়ার সাংবাদিকরা। বেলা সাড়ে ১১টার দিকে জেলা রিপোর্টার্স ক্লাবের ব্যানারে নরসিংদী প্রেস ক্লাবের সামনে মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করা হয়। মানববন্ধন শেষে গণমাধ্যমকর্মীরা বিক্ষোভ মিছিল বের করে। মিছিলটি শহরের গুরুত্বপূর্ণ সড়ক প্রদক্ষিণ শেষে পুলিশ সুপারের কার্যালয় ঘেরাও করা হয়। অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ডিএসবি) মোখলেছুর রহমান জড়িতদের গ্রেফতারের আশ্বাস প্রদান করেন। পরে পুলিশ সুপার শেখ রফিকুল ইসলাম বিষয়টি নিয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে খোলামেলা আলোচনা করেন এবং পুলিশ প্রশাসনের নিরপেক্ষ অবস্থান তুলে ধরেন। মানববন্ধনে বক্তব্য রাখেন নরসিংদী টেলিভিশন সাংবাদিক ফোরামের আহ্বায়ক ও যুগান্তরের সাংবাদিক, বিশ্বজিৎ সাহা, ৭১-এর প্রতিনিধি মোবারক হোসেন, বাংলাভিশনের প্রতিনিধি মাজহারুল পারভেজ মন্টি, আরটিভির প্রতিনিধি মোর্শেদ শাহরীয়ার, দৈনিক বাণীর সম্পাদক ফারুক মিয়া, দৈনিক মুক্ত চিন্তার সম্পাদক জয়নাল আবেদিন, ইউএনপির প্রতিনিধি আসাদুল হক পলাশ, চ্যানেল টোয়েন্টিফোরের স্টাফ রিপোর্টার সঞ্জিত সাহা, চ্যানেল আইয়ের প্রতিনিধি সুমন রায়, দেশ টিভির প্রতিনিধি সুমন বর্মন, সময় টিভির প্রতিনিধি পিয়াল, ইনডিপেন্ডেন্টের প্রতিনিধি রিপন, প্রথম আলোর প্রতিনিধি মো. মনিরুজ্জামান মনির, নরসিংদী সংবাদপত্র পরিষদের সাধারণ সম্পাদক নসিবুর রহমান খান, দৈনিক বণিক বার্তার প্রতিনিধি সালাম রানা, জেলা রিপোর্টার্স ক্লাবের সভাপতি শফিকুল ইসলাম মতি প্রমুখ। উল্লেখ্য, নরসিংদীর ভাটপাড়ায় অবৈধ গ্যাস সংযোগ বিচ্ছিন্ন অভিযানে গেলে পলাশ থানা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক মনির মোল্লা ও সজিবের নেতৃত্বে ভ্রাম্যমাণ আদালতের ওপর হামলা চালায়। এ সময় নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট, সাংবাদিক, পুলিশ, আনসার ও তিতাস গ্যাসের কর্মকর্তাসহ আহত হয় ২০ জন।
No comments:
Post a Comment