Saturday, November 29, 2014

সীমান্ত, তিস্তা চুক্তির সুরাহা শিগগিরই:প্রথম অালো

ঐকমত্যের ভিত্তিতেই বাংলাদেশের সঙ্গে স্থলসীমান্ত চুক্তি আর তিস্তার পানি বণ্টন চুক্তির সুরাহা করতে যাচ্ছে বিজেপি সরকার। ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি গত বুধবার কাঠমান্ডুতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে বৈঠকে এ বিষয়টি স্পষ্ট করেছেন। নরেন্দ্র মোদি শেখ হাসিনার আমন্ত্রণের জবাবে এ আশ্বাস দিয়েছেন যে ঢাকা সফরের সময় চুক্তি দুটির বিরোধিতাকারী পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কেও সঙ্গে
নেবেন। কাঠমান্ডুর বৈঠকে উপস্থিত দায়িত্বশীল এক কর্মকর্তা গত বৃহস্পতিবার প্রথম আলোকে জানান, তিন দশকের অমীমাংসিত সমস্যাগুলো ভারত যেসব পক্ষকে নিয়ে সমাধান করছে, সেটি দৃশ্যমান করতে নরেন্দ্র মোদি নিজের সফরের আগেই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে ঢাকায় পাঠানোর আভাস দিয়েছেন। ঢাকার একজন জ্যেষ্ঠ কূটনীতিক গতকাল শুক্রবার এ প্রতিবেদককে বলেন, আগামী মাসের মধ্যে বিশেষ কোনো অনুষ্ঠানের মাধ্যমে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রীর সফর আয়োজনের জন্য দুই দেশের কর্মকর্তারা প্রাথমিক প্রস্তুতি শুরু করেছেন। দিল্লির কূটনৈতিক সূত্রে জানা গেছে, নরেন্দ্র মোদি স্থলসীমান্ত চুক্তিটি পার্লামেন্টে অনুমোদনের পর বাংলাদেশ সফর করবেন। এটি অনুমোদনের জন্য রাজ্যসভার শীতকালীন অধিবেশনে ভারতীয় সংবিধান সংশোধনী বিলটি পাসের উদ্যোগ চলছে। ডিসেম্বরের মধ্যে বিলটি পাস হওয়ার কথা। বিলটি ডিসেম্বরে পাস হলেও আগামী বছরের শুরুর দিকেই ঢাকা সফরে আসার পরিকল্পনা রয়েছে নরেন্দ্র মোদির। নেপালের রাজধানীতে অনুষ্ঠিত ১৮তম সার্ক শীর্ষ সম্মেলনের ফাঁকে শেখ হাসিনা ও নরেন্দ্র মোদি বৈঠক করেন। আলোচনার সময় অন্যান্যের মধ্যে বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ এইচ মাহমুদ আলী, ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী সুষমা স্বরাজ ও জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত দোভাল উপস্থিত ছিলেন। প্রায় ৪৫ মিনিটের আলোচনায় তিস্তা ও সীমান্ত চুক্তির বিষয়টি ছাড়াও সন্ত্রাসবাদ দমনের বিষয় নিয়ে কথা শুরু করেন নরেন্দ্র মোদি। ভারতের কূটনৈতিক সূত্রে জানা গেছে, বাংলাদেশের সঙ্গে অমীমাংসিত সমস্যা সমাধানে বিগত ইউপিএ সরকারের ব্যর্থতার কারণে ক্ষমতায় আসার পর থেকেই ঐকমত্যের ওপর বিশেষ গুরুত্ব দিয়েছে বর্তমান সরকার। কারণ, বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্ক নিবিড় করার ক্ষেত্রে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে এ দুটি বিষয়কে তালিকার শুরুতে রাখা হয়েছে। নরেন্দ্র মোদি ইতিমধ্যেই সুষমা স্বরাজকে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে যোগাযোগের দায়িত্ব দিয়েছেন। দুই দেশের কূটনীতিক সূত্রে জানা গেছে, সীমান্ত চুক্তি নিয়ে মমতার আর বিরোধিতা নেই—গত কয়েক মাসে বিভিন্ন আলোচনায় তিনি তা প্রকাশ করেছেন। তিস্তা চুক্তি নিয়ে স্পষ্ট করে কিছু না বললেও আগের মতো শক্ত অবস্থান প্রকাশ করছেন না। অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক পরিস্থিতি, বিশেষ করে আসন্ন রাজ্য বিধানসভা নির্বাচন, বর্ধমান বোমা বিস্ফোরণসহ বিভিন্ন পরিস্থিতির কারণে বিজেপি সরকারের সঙ্গে সুসম্পর্ক রাখতে আগ্রহী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এ ছাড়া তাঁর বিরোধিতায় তিস্তা চুক্তি না হওয়ায় বাংলাদেশে তাঁকে নিয়ে একটি নেতিবাচক ধারণা তৈরির বিষয়টি সম্পর্কেও তিনি সচেতন আছেন। মোদির সরকার যখন সীমান্ত আর তিস্তা চুক্তির সমাধান করতে চাইছে, সে সুযোগকে কাজে লাগাতে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ঢাকা সফরে আগ্রহী। দুই দেশের কর্তৃপক্ষ পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রীর এমন আগ্রহের কথা জেনেছে। ২০১১ সালের সেপ্টেম্বরে সে সময়ের প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংয়ের সঙ্গে ঢাকা সফরের কথা ছিল মমতার। কিন্তু শেষ মুহূর্তে তিনি বেঁকে বসেন। মনমোহন ঢাকা পৌঁছার আগেই তিনি গণমাধ্যমকে জানিয়ে দেন, তাঁর সম্মতি না নিয়ে তিস্তা চুক্তি করছে কংগ্রেস নেতৃত্বাধীন প্রগতিশীল গণতান্ত্রিক জোট (ইউপিএ) সরকার। শেষ পর্যন্ত চুক্তিটি সই হয়নি। মনমোহন সিংয়ের ওই সফরে স্থলসীমান্ত চুক্তি সই হয়েছিল।

No comments:

Post a Comment