দলীয় কোন্দলের জেরে ছাত্রলীগের দুটি পক্ষের পাল্টাপাল্টি কর্মসূচিতে প্রায় অচল হয়ে পড়েছে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়। গতকাল সোমবার সংগঠনটির একাংশ ক্যাম্পাসের মূল ফটকে তালা ঝুলিয়ে দেয়। আর অপর অংশের বাধার মুখে দ্বিতীয় দিনের মতো চলেনি শাটল ট্রেন ও শিক্ষকদের বহনকারী বাস। বিবদমান পক্ষ দুটি হলো ভিএক্স (ভার্সিটি এক্সপ্রেস) গ্রুপ এবং সিএফসি (চুজ ফ্রেন্ডস উইথ কেয়ার) ও ক্যাম্পাস ছাত্রলীগ গ্রুপ। ক্যাম্পাস
ে আধিপত্য বিস্তার নিয়ে এদের মধ্যে এক বছরেরও বেশি সময় ধরে উত্তেজনা চলছে। সর্বশেষ গত রোববার ক্যাম্পাসে প্রতিপক্ষের হাতে নিজেদের কর্মীদের প্রহৃত হওয়াকে কেন্দ্র করে উত্তেজনা বেড়ে যায়। দীর্ঘ ছুটি শেষে ওই দিনই ক্যাম্পাস খোলে। এদিকে উভয় পক্ষই প্রতিপক্ষের নেতা-কর্মীদের গ্রেপ্তার ও বহিষ্কার করাসহ বিভিন্ন দাবিতে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে ২৪ ও ৪৮ ঘণ্টা করে সময় বেঁধে দিয়েছে। অন্যথায় জোরালো আন্দোলন শুরু করা হবে বলে হুমকি দিয়েছে তারা। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, রোববার রাতে ও গতকাল সকালে নিজেদের তিনজন কর্মী প্রতিপক্ষের হাতে প্রহৃত হয়েছে অভিযোগ তুলে বেলা ১১টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসের মূল ফটকে তালা ঝুলিয়ে দেয় ভিএক্স গ্রুপ। পরে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের আশ্বাসে একটার দিকে তারা তালা খুলে দেয়। এর আগে সকাল পৌনে আটটায় ক্যাম্পাস অভিমুখী শাটল ট্রেন ছাড়ার মুহূর্তে ষোলশহরে সেটি আটকে দেয় সিএফসি ও ক্যাম্পাস ছাত্রলীগ গ্রুপ। পাশাপাশি এই পক্ষ হাটহাজারীর বিভিন্ন জায়গায় ক্যাম্পাস থেকে নগরের উদ্দেশে আসা শিক্ষকদের বহনকারী বাসের চাবি কেড়ে নেয় এবং চাকার হাওয়া ছেড়ে দেয়। এ অবস্থায় শিক্ষক পরিবহনকারী সব বাস শহরে ঢুকতে পারেনি। এ নিয়ে রোববার বেলা সাড়ে তিনটার পর থেকে শাটল ট্রেনের চলাচল বন্ধ আছে। শাটল ট্রেন ও শিক্ষকদের বহনকারী বাস আটকে দেওয়ায় ক্যাম্পাসে আসতে শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা শিকার হন চরম ভোগান্তির। তাঁদের এই ভোগান্তিতে পড়তে হয় রোববারও। ষোলশহর রেলওয়ে পুলিশ ফাঁড়ির ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আরব আলী বলেন, ‘সকালের প্রথম ট্রেনটা ছাড়ার পূর্ব মুহূর্তে একদল শিক্ষার্থী এসে তা আটকে দেয়। এরপর রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ ট্রেনের ইঞ্জিন ডকে নিয়ে যায়। পরে আর শাটল চলেনি।’ বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবহন দপ্তরের উপপরিচালক মোহাম্মদ রবিউল আলম বলেন, ‘প্রায় সব শিক্ষকবাসের চাবি কেড়ে নিয়েছে শিক্ষার্থীরা। তারা চাকার হাওয়াও ছেড়ে দেয়। কিছু চাবি ফেরত দিলেও অধিকাংশ ফেরত দেয়নি তারা।’ বিবদমান পক্ষগুলোর এমন কর্মকাণ্ডে গতকাল বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিকাংশ বিভাগেই ক্লাস হয়নি। সিএফসি ও ক্যাম্পাস ছাত্রলীগ পক্ষের নেতা অমিত কুমার বসু বলেন, ‘আজীবন বহিষ্কারের বিপরীতে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ সাময়িক বহিষ্কারের যে প্রহসনমূলক সিদ্ধান্ত নিয়েছে তা ছাত্রলীগ প্রত্যাখ্যান করেছে। আমরা জড়িতদের গ্রেপ্তার ও বহিষ্কারসহ সাত দফা দাবিতে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে ২৪ ঘণ্টা সময় দিয়েছি।’ উল্লেখ্য, রোববার ওই পক্ষের কর্মী মিঠুন চৌধুরীকে মারধরের সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে প্রতিপক্ষের কর্মী শাহরিদ শুভ ও জোবায়ের হোসেনকে সাময়িক বহিষ্কার করে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। ওদিকে ভিএক্স পক্ষের নেতা রাশেদ হোছাইন বলেন, ‘কর্তৃপক্ষ কোনো তদন্ত কমিটি ছাড়াই মৌখিক অভিযোগে আমাদের দুই কর্মীকে সাময়িক বহিষ্কার করেছে। কিন্তু পরে আমাদের তিন কর্মীকে মারধর করেছে ছাত্রলীগ নামধারী সন্ত্রাসীরা। তাদের ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে গ্রেপ্তার ও বহিষ্কার করতে হবে।’ ক্যাম্পাসের অচলাবস্থা নিয়ে জানতে চাইলে প্রক্টর সিরাজ উদ দৌল্লাহ বলেন, ‘রোববারের ঘটনায় জড়িতদের তাৎক্ষণিকভাবে সাময়িকভাবে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। এর পরও কেন আন্দোলন করছে তা আমাদের বোধগম্য না।’ তদন্ত কমিটি গঠন: ভিএক্স পক্ষের তিন কর্মীর ওপর হামলার ঘটনায় ছাত্র উপদেষ্টা খান তৌহিদ ওসমানকে প্রধান করে গতকাল দুই সদস্যের এক তদন্ত কমিটি গঠন করেছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। কর্মকাণ্ড স্থগিত: সিএফসি ও ক্যাম্পাস ছাত্রলীগ গ্রুপের নেতা অমিত কুমার বসু বলেন, ‘নগর আওয়ামী লীগের সভাপতি এ বি এম মহিউদ্দিন চৌধুরীর নির্দেশে আমাদের রাজনৈতিক কর্মসূচি আপাতত শিথিল করেছি। ২৪ ঘণ্টা সময় বেঁধে দিয়েছি। এর মধ্যে দাবি মেনে নেওয়া না হলে আমাদের অহিংস কর্মসূচি আবার শুরু হবে।’
No comments:
Post a Comment