Saturday, November 29, 2014

মাতিয়ে রাখলেন দেশের শিল্পীরা:প্রথম অালো

ভোর থেকেই আকাশ কুয়াশায় ঘন ঘোর। মধ্য দুপুরেও মুখ দেখাল না সূর্য। সকালবেলার ভাবখানা বজায় রইল সারা দিন। সেই সঙ্গে থেকে থেকে গায়ে কাঁটা দেওয়া ঠান্ডা হাওয়ার ঝাপটা। শীত জাঁকিয়ে বসার লক্ষণ পুরোপুরি। সন্ধ্যার আবছায়া এখন নেমে আসে পাঁচটা বাজলেই। সেটাই স্বাভাবিক। অগ্রহায়ণ ফুরিয়ে এল। এই সময়টি আবহমানকাল থেকেই বাংলায় উৎসবের মৌসুম হিসেবে খ্যাত। গানবাজনায় আনন্দময় হয়ে ওঠে গ্রামবাংলার পরিবেশ। সেই আনন
্দ এখন মাতিয়ে রেখেছে রাজধানীবাসীকেও। গতকাল শুক্রবার ছুটির দিন সন্ধ্যায় রাজধানীর আর্মি স্টেডিয়াম মুখর হয়ে উঠেছিল তবলা, মৃদঙ্গম, পাখোয়াজের তাল ও বোলে।  বেঙ্গল ফাউন্ডেশন আয়োজিত উচ্চাঙ্গসংগীত উৎসবের দ্বিতীয় দিনের পরিবেশনা শুরু হয়েছিল দেশের তরুণ শিল্পীদের সম্মিলিত তালবাদ্য পরিবেশনার মধ্য দিয়ে। বাদক দলে ছিলেন তবলায় গৌতম সরকার ও জাকির হোসেন, পাখোয়াজে বিশ্বজিৎ নট্ট ও মৃদঙ্গমে এনামুল হক। শুরুটা হয়েছিল এককথায় দুর্দান্ত। ‘ধাতাং ধাতাং ধে রে না’ বোলের সঙ্গে তবলার লহরা ও মৃদঙ্গম আর পাখোয়াজের ছন্দোবদ্ধ তাল শ্রোতাদের মাতিয়ে তোলে। মুহুর্মুহু করতালি দিয়ে তাঁরা দেশের নবীন বাজিয়েদের অভিনন্দিত করেন। এবারের উৎসবে প্রতিদিনের অধিবেশনই শুরু হচ্ছে বাংলাদেশের শিল্পীদের পরিবেশনা দিয়ে। প্রথম দিনে ছিল সম্মিলিত কণ্ঠে দেশের গানের পরিবেশনা। স্থানীয় শিল্পীরা এই বিপুল দর্শকের সমাগমে আয়োজিত উৎসবে গান ও বাদন পরিবেশন করতে পারায় উৎসবে ভিন্ন মাত্রা সংযোজিত হয়েছে। এরপরের পরিবেশনা ছিল বাংলাদেশের আরেক শিল্পী সুপ্রিয়া দাশের। সুরেলা ও দরদি কণ্ঠে আনন্দ কল্যাণ রাগে খেয়াল গেয়ে তিনি শ্রোতাদের মন ভরিয়ে দেন। তাঁর বন্দিশটি বাঁধা ছিল প্রথমে বিলম্বিত এক তাল এবং শেষে দ্রুত তিন তালে। শোনে অনেককেই বলতে শোনা গেছে, পণ্ডিত উলহাস কাশালকারের যোগ্য শিষ্যা। শিল্পীকে তবলায় সহযোগিতা করেছেন বাংলাদেশের আরেক শিল্পী সবুজ আহমেদ ও হারমোনিয়ামে সঞ্জীবন স্যানাল। গত বৃহস্পতিবার থেকে তৃতীয়বারের মতো শুরু হয়েছে পাঁচ দিনের এই সংগীত মহাযজ্ঞ। আয়োজনে সার্বিক সহায়তা দিচ্ছে প্রথম আলো। স্কয়ার নিবেদিত বেঙ্গল ফাউন্ডেশনের এই আয়োজনে আরও সহায়তা দিচ্ছে ব্র্যাক ব্যাংক, ডেইলি স্টার, এবিসি রেডিও ও মাছরাঙা টেলিভিশন। সুপ্রিয়া দাশের পরিবেশনার পর ছিল সংক্ষিপ্ত উদ্বোধনী পর্ব। প্রধান অতিথি ছিলেন প্রধানমন্ত্রীর পররাষ্ট্রবিষয়ক উপদেষ্টা গওহর রিজভী। বিশেষ অতিথি ছিলেন সংগীতজ্ঞ আলিমুর রহমান খান ও পল্লিকবি জসীমউদ্দীনের মেয়ে হাসনা মওদুদ। স্বাগত বক্তব্য দেন বেঙ্গল ফাউন্ডেশনের সভাপতি আবুল খায়ের। এরপর সরোদ বাদন দিয়ে শুরু হয় সারা রাতের সংগীতযাত্রা। মাইহার ঘরানার তরুণ শিল্পী আবির হোসেন পরিবেশন করেন রাগ জয়জয়ন্তী। এতটা করতালি ও হর্ষধ্বনি সচরাচর ক্রিকেট অথবা ফুটবল মাঠে দেখা যায়। কিন্তু গতকাল সন্তুর বাজিয়ে রাহুল শর্মা দর্শক-শ্রোতার কাছ থেকে সেই রকম করতালি আর হর্ষধ্বনিই আদায় করে নিলেন। প্রলম্বিত আলাপ, জোড় ও ঝালা এবং শেষে মধ্যম ও দ্রুত লয়ের তিন তালে তিনি বাজিয়ে শোনান রাগ কৌশিক ধ্বনি। তাঁকে তবলায় সহযোগিতা করেন সত্যজিৎ তেলওয়ালকর। রাহুল যখন বাজাচ্ছিলেন, তখন গর্বিত বাবা পণ্ডিত শিবকুমার শর্মা দর্শকসারিতে বসে শুনছিলেন আত্মজ ও প্রিয় শিষ্যের বাজনা। এ প্রতিবেদন লেখার সময় মঞ্চে আসেন উপমহাদেশের বিখ্যাত ডাগর ঘরানার ধ্রুপদ গাইয়ে দুই ভাই পণ্ডিত উমাকান্ত ও রমাকান্ত গুন্দেচ্চা। সূচি অনুযায়ী এরপর মঞ্চে আসার কথা কর্ণাটকি মৃদঙ্গম শিল্পী কড়াইকুডি মানি ও বেনারস ঘরানার দুই ভাই পণ্ডিত রাজন মিশ্র ও সাজন মিশ্র। আজকের পরিবেশনা: আজ তৃতীয় দিনের শুরুতে থাকবে স্থানীয় শিল্পীদের সম্মেলক গান। এরপর থাকবে নিশিত দে, মঞ্জুষা পাতিল, শিবকুমার শর্মা, অসিত রায়, অরুণা সাইরাম ও উলহাস কাশালকারের পরিবেশনা। অনুষ্ঠান শুরু হবে সন্ধ্যা ছয়টায়।

No comments:

Post a Comment