বিএনপি, তত্ত্বাবধায়ক সরকার, এমনকি বিশ্বব্যাংকও আওয়ামী লীগের দুর্নীতি খুঁজে ব্যর্থ হয়েছে দাবি করে প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা বলেছেন, আমাদের দুর্নীতিবাজ বানাতে কেউ কম চেষ্টা করেনি। বিএনপি আর তত্ত্বাবধায়ক সরকার তন্ন তন্ন করে আমাদের দুর্নীতি খুঁজেছে কিন্তু আমাদের বিরুদ্ধে কোনো দুর্নীতি তারা প্রমাণ করতে পারেনি। পদ্মা সেতুর দুর্নীতি খুঁজতে খুঁজতে বিশ্বব্যাংক হয়রান হয়ে গেছে কিন্তু কোনো
দুর্নীতি খুঁজে পেল না। গতকাল সন্ধ্যায় গণভবনে অনুষ্ঠিত আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের বৈঠকের উদ্বোধনী বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। এ সময় বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার প্রতি ইঙ্গিত করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, দুর্নীতি প্রমাণের ভয়ে নিজে পালিয়ে বেড়ান আর অন্যদের বলেন দুর্নীতিবাজ। এতিমের টাকা মেরে খেয়ে ভয়ে মামলার হাজিরা থেকে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন। সাহস থাকে তো মামলা মোকাবেলা করুন। নিজেকে নির্দোষ প্রমাণ করুন। বিএনপি চেয়ারপারসনের নাম উল্লেখ না করে শেখ হাসিনা আরো বলেন, এতিমের টাকা চুরি করে খাবে আর তার জন্য মামলা হলে তার দোষ নাকি আমার। যার বিরুদ্ধে দুর্নীতি পাওয়া গেল তিনি আমাদের বলেন দুর্নীতিবাজ। কথায় বলে চেরের মার বড় গলা। শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে বৈঠকে হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দীর মৃত্যুবার্ষিকী, শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস, বিজয় দিবস ও ১০ জানুয়ারি বঙ্গবন্ধুর স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবসের কর্মসূচি চূড়ান্ত করা হয়। দলের চলমান তৃণমূল কাউন্সিলের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, ওয়ার্ড-ইউনিয়ন থেকে শুরু করে আমাদের জেলাপর্যায়ের কাউন্সিল চলছে। ইতোমধ্যে কিছু কাউন্সিল শেষ হয়েছে। কতগুলো চলমান রয়েছে। পাশাপাশি আমাদের সহযোগী সংগঠনগুলোর কাউন্সিলও শুরু হয়েছে। আমরা জনগণের ব্যাপক সাড়া পাচ্ছি। গত পাঁচ বছরে ব্যাপক হারে উন্নয়ন করেছি বলেই মানুষ আওয়ামী লীগ করার জন্য এগিয়ে আসছে। আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন বর্তমান ও পূর্ববর্তী সরকারের উন্নয়নের কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, গত পাঁচ বছরে যে কর্মসংস্থান হয়েছে অতীতে কোনো সময়ে তা দেখা যায়নি। আমরা এক কোটির কাছাকাছি লোকের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করতে পেরেছি। পাশাপাশি বিভিন্ন প্রশিণের ব্যবস্থা করেছি, যাতে মানুষ চাইলে নিজেই কাজ করে খেতে পারে। তিনি বলেন, আমরা পাঁচ হাজার ২৭৫টি ডিজিটাল সেন্টার করেছি। দেশে আট হাজারের মতো ডাকঘর রয়েছে, আমরা পর্যায়ক্রমে সবগুলোকে ডিজিটাল সেন্টারে রূপান্তর করব। তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ মতায় আছে বলেই মানুষ এত কিছু পাচ্ছে। অতীতে যারা মতায় ছিল তারা দুর্নীতি, সন্ত্রাস, জঙ্গিবাদ ছাড়া কিছুই দিতে পারেনি। অবশ্য যারা এতিমের টাকা মেরে খায় তারা জনগণকে দেবে কী করে। দেশের উন্নয়নে অনেকে অনেক তত্ত্ব দিচ্ছেন উল্লেখ করে তিনি বলেন, আকাশে-বাতাসে, পত্রিকার পাতায় দেশের উন্নয়নে অনেকের অনেক থিউরি (তত্ত্ব) শুনি। কিন্তু উনাদের দেয়া তত্ত্বাবধায়ক থিউরি ডুবে গেছে। আমি অতশত থিউরি বুঝি না। আমি একটাই থিউরি বুঝি যে, কিভাবে সব মানুষের মুখে অন্ন, চিকিৎসা, বাসস্থান ও উন্নত জীবন নিশ্চিত করব। এই থিউরি নিয়েই আমি দেশের জন্য কাজ করে যাচ্ছি। গত ২৬ ও ২৭ নভেম্বর নেপালে অনুষ্ঠিত সার্ক শীর্ষ সম্মেলন সফল ও ফলপ্রসূ হয়েছে দাবি করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, একটি সুন্দর পরিবেশে সার্ক সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছে। প্রত্যেক দেশের সরকারপ্রধান নিজেদের মধ্যে সুন্দরভাবে আলোচনার সুযোগ পেয়েছেন। সার্কভুক্ত সব দেশে এখন নির্বাচিত সরকার রয়েছে বলেই এটা সম্ভব হয়েছে। আমরা একটি চুক্তি সই করেছি। একটি ঘোষণা দিয়েছি তাতে এ অঞ্চলের আর্থসামাজিক উন্নয়নের ওপর গুরুত্ব দিয়েছি। বাংলাদেশের অগ্রযাত্রা দণি এশিয়াসহ বিশ্বের উন্নয়নশীল দেশের জন্য অনুকরণীয় হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছে বলেও প্রধানমন্ত্রী মন্তব্য করেন। বৈঠক সূত্র জানায়, বিভিন্ন শাখায় দলের চলমান কাউন্সিল তড়িঘড়ি শেষ করতে দায়িত্বপ্রাপ্ত কেন্দ্রীয় নেতাদের নির্দেশ দেন দলীয় সভাপতি শেখ হাসিনা। বৈঠকে বিভিন্ন দিবসে দলীয় কর্মসূচি নিয়ে আলোচনার একপর্যায়ে প্রেসিডিয়াম সদস্য মোহাম্মদ নাসিম বিজয় দিবস উপলক্ষে মাসব্যাপী কর্মসূচি গ্রহণের পরামর্শ দিলে শেখ হাসিনা তা প্রত্যাখ্যান করে দিয়ে বলেন, মন্ত্রীরা ব্যস্ততার কারণে অনুষ্ঠানে যেতে পারেন না। তাই শুধু শুধু মাসব্যাপী অনুষ্ঠান করে লাভ নেই। সভায় উপস্থিত এক নেতা তার এলাকায় ওয়ার্কার্স পার্টির এমপির বিরুদ্ধে অভিযোগ করে বলেন, ওই এমপি শুধু নিজের দলের লোকদের নিয়েই সব কাজ করেন। আমাদের দলের নেতাকর্মীদের রাখেন না। এতে স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের মধ্যে চরম ক্ষোভ বিরাজ করছে। এ ব্যাপারে একটু দৃষ্টি দেয়া উচিত। তার এমন বক্তব্যের তীব্র বিরোধিতা করে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম বলেন, এসব কথা আর বলবেন না। আমাদের নেত্রী যদি জাতীয় পার্টি, ওয়ার্কার্স পার্টি ও জাসদসহ অন্য দলগুলোকে কাছে না রাখতেন তবে ৫ জানুয়ারির নির্বাচন হতো না, আজকে দেশের পরিস্থিতিও এমন থাকত না। এমনকি আমরা আমাদের প্রিয় নেত্রীকেও বাঁচাতে পারতাম না। তাই সরকারে তাদেরও অবদান আছে। বৈঠকে এ ছাড়াও প্রেসিডিয়াম সদস্য ওবায়দুল কাদের, মতিয়া চৌধুরী, শেখ ফজলুল করিম সেলিম, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল আলম হানিফ ও ডা: দীপু মনি, সাংগঠনিক সম্পাদক আহমদ হোসেন, খালিদ মাহমুদ চৌধুরী ও সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন, ত্রাণ ও সমাজকল্যাণ সম্পাদক ফরিদুন্নাহার লাইলীসহ বিভিন্ন নেতরা উপস্থিত ছিলেন। প্রধানমন্ত্রী দেশে ফিরেছেন বাসস জানায়, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নেপালে দক্ষিণ এশীয় আঞ্চলিক সহযোগিতা সংস্থার (সার্ক) ১৮তম শীর্ষ সম্মেলনে যোগদানের পর গতকাল শুক্রবার দেশে ফিরেছেন। ছত্রিশ দফা কাঠমান্ডু ঘোষণা এবং সার্কভুক্ত দেশগুলোর মধ্যে বিদ্যুৎ সহযোগিতা চুক্তি স্বাক্ষরের মধ্য দিয়ে দু’দিনব্যাপী এ শীর্ষ সম্মেলন গতকাল নেপালের রাজধানীতে শেষ হয়। প্রধানমন্ত্রী ও তার সফরসঙ্গীদের বহন করা বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের একটি ভিভিআইপি ফাইট স্থানীয় সময় দুপুর ১২টা ১০ মিনিটে হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে এসে পৌঁছে। প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা তারিক আহমেদ সিদ্দিকী ও প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা বিমানবন্দরে উপস্থিত ছিলেন।
No comments:
Post a Comment