Wednesday, December 3, 2014

বিশেষ বিবেচনায় নবায়ন করা ঋণ আবার খেলাপি:যুগান্তর

বিশেষ বিবেচনায় যেসব খেলাপি ঋণ নবায়ন করা হয়েছে সেগুলো আবার খেলাপি হতে শুরু করেছে। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই কোনোরকম ডাউন পেমেন্ট ছাড়াই নবায়ন করা ঋণের বিপরীতে শর্ত অনুযায়ী কিস্তি পরিশোধ না করায় ঋণগুলো আবার খেলাপি হচ্ছে। রাজনৈতিক অস্থিরতার সুযোগ নিয়ে গত বছরের শেষ দিক থেকে এ বছরের জুন পর্যন্ত সময়ে বিশেষ বিবেচনায় প্রায় ১৪ হাজার কোটি টাকার খেলাপি ঋণ নবায়ন করা হয়েছে। এগুলো নতুন করে আবার খেলাপি হতে শুরু করায় একদ
িকে যেমন খেলাপি ঋণের পরিমাণ বেড়ে যাচ্ছে, তেমনি এর বিপরীতে প্রভিশন বাবদ ব্যাংকগুলোর মোটা অংকের টাকা আটকে যাবে। ফলে ব্যাংকগুলোর ঝুঁকির মাত্রা বেড়ে যাওয়ার আশংকাও রয়েছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংক সূত্র জানায়, বিশেষ বিবেচনায় নবায়ন করা ঋণ আবার খেলাপি হওয়ায় ব্যাংকিং খাতে সার্বিকভাবে খেলাপি ঋণের পরিমাণ বেড়ে গেছে। গত জুনে খেলাপি ঋণের পরিমাণ ছিল ৫১ হাজার ৩৪৪ কোটি টাকা। সেপ্টেম্বরে তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৫৭ হাজার ২৯০ কোটি টাকা। ৩ মাসের ব্যবধানে খেলাপি ঋণের পরিমাণ বেড়েছে প্রায় ৬ হাজার কোটি টাকা। এর বড় অংশই বিশেষ বিবেচনায় নবায়ন করা। ওই সময়ে বিশেষ বিবেচনায় যেসব খেলাপি ঋণ নবায়ন করেছিল সেগুলোর সার্বিক অবস্থা সম্পর্কে জানতে কেন্দ্রীয় ব্যাংকে গঠন করা হয়েছে ‘ঝুঁকিভিত্তিক সম্পদ ব্যবস্থাপনা ইউনিট’ বা সামু নামে বিশেষ ইউনিট। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ‘ব্যাংক পরিদর্শনের চার এবং বৈদেশিক মুদ্রা পরিদর্শন বিভাগে এ ইউনিট গঠন করা হয়েছে। প্রতিটি বিভাগের একজন করে উপ-মহাব্যবস্থাপক ইউনিটের প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন। ওই ঋণগুলোর বিপরীতে যথেষ্ট জামানত আছে কিনা, গ্রাহকের ব্যবসার অবস্থা, লেনদেন পরিস্থিতি, শর্ত অনুযায়ী নিয়মিত কিস্তি পরিশোধ হচ্ছে কিনা, ঋণগুলো কত দফা নবায়ন করা হয়েছে এসব বিষয় দেখছে সামু। তদন্তে এর মধ্যেই সামু দেখেছে, খেলাপি ঋণের অধিকাংশই ওই সময়ে নবায়ন করা। গত বছর রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে অনেক ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ফলে নিয়মিত ঋণের কিস্তি পরিশোধ করতে পারেনি। এতে অনেক প্রতিষ্ঠানের ঋণ খেলাপিতে পরিণত হয়। প্রচলিত নিয়ম অনুযায়ী কোনো ঋণ খেলাপি প্রতিষ্ঠান নতুন ঋণ পাবে না। এ কারণে অনেক প্রতিষ্ঠানেরই নতুন ঋণ পাওয়ার পথ বন্ধ হয়ে যায়। এ পরিস্থিতিতে কেন্দ্রীয় ব্যাংক গত বছরের ১৮ ডিসেম্বর একটি সার্কুলার জারি করে এসএমই খাতের খেলাপি ঋণ নবায়নে বিশেষ ছাড় দেয়। একই বছরের ২৩ ডিসেম্বর আরেক সার্কুলার জারি করে সব ধরনের ঋণ নবায়নের ক্ষেত্রে বিশেষ ছাড় দেয়া হয়। ওই দুই সার্কুলার অনুযায়ী ব্যাংক-গ্রাহক সম্পর্কের ভিত্তিতে যৌক্তিকভাবে ডাউন পেমেন্ট নির্ধারণ করে খেলাপি ঋণ নবায়ন এবং ঋণ পরিশোধের মেয়াদ নির্ধারণ করা যাবে। এই সুযোগ নিয়ে বেশিরভাগ ক্ষেত্রে নামমাত্র ডাউন পেমেন্ট দিয়ে দীর্ঘ মেয়াদে ঋণ নবায়ন করা হয়েছে। এর মধ্যে জাল-জালিয়াতির মাধ্যমে যেসব ঋণ নেয়া হয়েছে সেগুলোও এর আওতায় করা হয়েছে নবায়ন। ফলে ওইসব ঋণের কোনো কিস্তি পরিশোধ না করায় আবার সেগুলো খেলাপিতে পরিণত হচ্ছে। সূত্র জানায়, ওই সময়ে বিশেষ বিবেচনায় সবচেয়ে বেশি খেলাপি ঋণ নবায়ন করেছে সরকারি ব্যাংকগুলো। এর মধ্যে সরকারি খাতের চার বাণিজ্যিক ব্যাংক প্রায় ৭ হাজার কোটি, বেসরকারি ব্যাংকগুলো করেছে ৬ হাজার কোটি এবং বিশেষায়িত ও বিদেশী ব্যাংকগুলো করেছে আরও প্রায় ১ হাজার কোটি টাকা। সরকারি খাতের জনতা ব্যাংক দেড় হাজার কোটি, অগ্রণী ব্যাংক ১ হাজার ৪০০ কোটি, রূপালী ব্যাংক ১ হাজার ৯০০ কোটি, সোনালী ব্যাংক ৫৪৭ কোটি, সাউথইস্ট ব্যাংক ১ হাজার কোটি, এবি ব্যাংক ৩৩০ কোটি, ইস্টার্ন ব্যাংক ৩২৬ কোটি, ইউসিবিএল ২৩৭ কোটি, ন্যাশনাল ব্যাংক ১০০ কোটি, পূবালী ব্যাংক ৬৩ কোটি এবং প্রাইম ব্যাংক ১৭ কোটি টাকার ঋণ নবায়ন করেছে। সূত্র জানায়, ওই নীতিমালার আওতায় ঢাকার একটি বড় শিল্প গ্র“পের প্রায় ১ হাজার ৬০০ কোটি টাকার ঋণ নবায়ন করা হয়েছে। ওই ঋণের কিস্তি সময়মতো পরিশোধ করতে না পারায় খেলাপির উপক্রম হলে গ্রাহকের অনুরোধে এগুলোর মেয়াদ আরও এক দফা বাড়ানো হয়েছে। থার্মেক্স গ্র“পের প্রায় ৪০০ কোটি টাকার ঋণ নবায়ন করার পর আবার খেলাপি হয়। পরে এর মেয়াদ আবার বাড়ানো হয়েছে। চট্টগ্রামের একটি বড় গ্রুপের ৮০০ কোটি টাকার ঋণ নবায়ন করা হয়েছে। এর কিছু ঋণের মেয়াদ নতুন করে আবার বাড়ানো হয়েছে। আনন্দ গ্রুপের ৩৩৭ কোটি, এনআর গ্র“পের ২১৩ কোটি, মেঘনা গ্রুপের ২৩২ কোটি, এমআর ট্রেডিং ১৪৩ কোটি, এসআর গ্রুপের ৫০ কোটি, শাহ জুটের ৩৫ কোটি টাকার ঋণ নবায়ন করা হয়েছে। এগুলোর মধ্যে কয়েকটি আবার খেলাপিতে পরিণত হয়েছে। সূত্র জানায়, কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে এ সুযোগ দেয়ার পর কিছু অসাধু উদ্যোক্তা ব্যাংকের সহায়তায় ব্যাপকভাবে ওই নীতিমালার অপব্যবহার করে। রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে খেলাপি না হয়েও এই বিশেষ সুবিধা নিয়েছেন। বিশেষ করে যেসব ঋণের বিপরীতে কোনো জামানত নেই, কারখানা দীর্ঘদিন ধরে বন্ধ রয়েছে, ঋণের টাকা অন্য খাতে স্থানান্তর করেছেন, ওইসব ঋণই আবার খেলাপি হচ্ছে।  

No comments:

Post a Comment