Thursday, January 22, 2015

অর্থনৈতিক নীতির সাফল্যের ফিরিস্তি:প্রথম অালো

প্রেসিডেন্ট ওবামা তাঁর ষষ্ঠ স্টেট অব দি ইউনিয়ন ভাষণে কী বলবেন, সে কথা নিজেই আগেভাগে সবিস্তারে জানিয়ে দিয়েছিলেন। ফলে তাঁর ভাষণে কার্যত কোনো চমকই ছিল না। বস্তুত, প্রায় এক ঘণ্টা স্থায়ী এ ভাষণে মার্কিন প্রেসিডেন্ট তাঁর অনুসৃত অর্থনৈতিক নীতির সাফল্যের ফিরিস্তিই দিয়েছেন। যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতি আবার সুদিনের মুখ দেখেছে। ওবামা সে জন্য অবশ্যই কৃতিত্ব দাবি করতে পারেন। এ দেশে এখন বার্ষিক প্রবৃদ্ধি ৫ শত
াংশের বেশি, বেকারত্ব ৫ দশমিক ৬ শতাংশ। এ ছাড়া গত পাঁচ বছরে ১ কোটি ১০ লাখের মতো নতুন কর্মসংস্থান হয়েছে। প্রায় এক কোটি মানুষ প্রথমবারের মতো স্বাস্থ্যবিমার আওতায় এসেছে। কিন্তু এ কথাও ঠিক, যুক্তরাষ্ট্রের এই অর্থনৈতিক সুস্থিরতা থেকে সবচেয়ে বেশি লাভবান হয়েছে দেশের মাত্র ১ শতাংশ মানুষ। প্রকৃত আয়ের স্থবিরতার কারণে মধ্যবিত্ত ও নিম্নবিত্ত মানুষ এখনো মন্দাবস্থা কাটিয়ে উঠতে সক্ষম হয়নি। সে কারণে ওবামা প্রস্তাব রেখেছেন, অর্থনীতির এই সুফল দেশের সবার মধ্যে ভাগ করে নেওয়ার। যারা গত পাঁচ বছরে সবচেয়ে লাভবান হয়েছে, তাদের ওপর অতিরিক্ত করারোপের মাধ্যমে মধ্যবিত্তের জন্য সেই সুযোগ সৃষ্টি করতে হবে। ওবামার কথায়, ‘আমরা কি এমন এক অর্থনীতি চাই, যেখানে শুধু স্বল্পসংখ্যক মানুষ সব সুবিধা ভোগ করবে? নাকি আমরা এমন এক অর্থনীতি গড়তে মন দেব, যেখানে বাড়তি আয়ের ব্যবস্থার মাধ্যমে পরিশ্রমে আগ্রহী এমন সবাই লাভবান হয়?’ ওবামা তাঁর ভাষণে মধ্যবিত্ত ও নিম্নবিত্তের সুবিধা হয়, এমন একাধিক নতুন প্রস্তাব রেখেছেন। এর মধ্যে নতুন কর রেয়াত ছাড়াও আছে উভয়েই চাকরি করেন এমন স্বামী-স্ত্রীর জন্য বার্ষিক ৫০০ ডলার কর রেয়াত, প্রতিটি শিশুর জন্য তিন হাজার ডলারের কর মওকুফ, এক সপ্তাহের সবেতন ছুটি, স্বল্পমূল্যে ইন্টারনেট। এসবের জন্য অর্থের জোগান দিতে ওবামা সবচেয়ে ধনীগোষ্ঠীর ওপর অতিরিক্ত করারোপের মাধ্যমে আগামী এক দশকে অতিরিক্ত ৩২০ বিলিয়ন ডলার সংগ্রহ করার প্রস্তাব করেছেন। শুধু অর্থনীতি নয়, জলবায়ু পরিবর্তন থেকে সাইবার নিরাপত্তা, সন্ত্রাসী হামলা নিয়ন্ত্রণ থেকে কিউবা ও ইরানের সঙ্গে নতুন রাজনৈতিক সমঝোতা ইত্যাদি নানা প্রশ্নে অতি উচ্চাভিলাষী এক কর্মসূচি তুলে ধরেছেন ওবামা। কিন্তু সে সবই ঢাকা পড়ে গেছে অর্থনীতি প্রশ্নে তাঁর সাহসী পরিকল্পনায়। বিত্তবানদের সম্পদ কেড়ে গিরবদের মধ্যে তা পুনর্বণ্টনের পরিকল্পনার জন্য প্রতিপক্ষ রিপাবলিকান পার্টি ওবামাকে রবিনহুড নামে অভিহিত করেছে। স্তুতি নয়, উপহাস করেই এ কথা বলা। চলতি কংগ্রেসের উভয় কক্ষ এখন রক্ষণশীল রিপাবলিকান পার্টির নিয়ন্ত্রণে। বলাই বাহুল্য, তারা ওবামার এসব প্রস্তাবের কোনোটাই সমর্থন করবে না। কংগ্রেসের সমর্থন ছাড়া নতুন করারোপ বা ব্যয় বরাদ্দ অনুমোদন—কোনোটাই ওবামার একার পক্ষে সম্ভব নয়। সে কথা জানা সত্ত্বেও ওবামার এ প্রস্তাব উত্থাপনের লক্ষ্য দুিট—উদারনৈতিক রাজনীতিক হিসেবে নিজের পরিচয় সুদৃঢ় করা এবং আগামী নির্বাচনের আগে ডেমোক্রাটিক পার্টির জন্য একটি ‘রোডম্যাপ’ হাজির করা। গত কয়েক মাসে ওবামা নির্বাহী ঘোষণার মাধ্যমে একের পর যেসব উদ্যোগ নিয়েছেন, তা প্রতিপক্ষ রিপাবলিকানদের ক্ষিপ্ত করলেও দেশের মানুষ এটাকে স্বাগত জানিয়েছে। এ উদ্যোগের মধ্যে আছে কিউবার সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক পুনঃপ্রতিষ্ঠা এবং লাখ লাখ অবৈধ অভিবাসীর বৈধকরণের ব্যবস্থা। এর ফলে প্রায় রাতারাতি ওবামার জনপ্রিয়তা বেড়ে গেছে। সর্বশেষ জনমত জরিপে দেশের ৪৯ শতাংশ মানুষ তাঁর প্রতি সমর্থন জানিয়েছে। ছয় সপ্তাহ আগেও এর হার ছিল মাত্র ৩৭ শতাংশ। ওবামাকে আর কোনো নতুন নির্বাচনী প্রতিযোগিতায় দাঁড়াতে হবে না এ কথা ঠিক, কিন্তু এই ভাষণ দেওয়ার সময় তাঁর এক চোখ ছিল ভবিষ্যতে, ইতিহাসে তাঁর স্থান কোথায় হয়, সেদিকে। অন্য চোখ ২০১৬ সালে হোয়াইট হাউস কার দখলে যায়, তার ওপর। বিদায়ের আগে ওবামা নিশ্চিত করতে চান পরবর্তী প্রেসিডেন্ট তাঁর ‘রোডম্যাপ’ বাজে কাগজ বলে ফেলে দেবে না। রিপাবলিকান পার্টি ওবামার আয় পুনর্বণ্টনের সব প্রস্তাব এককথায় নাকচ করে দিলেও তাদেরও কিন্তু ২০১৬ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের কথা মাথায় রাখতে হবে। ছয় বছর আগে যুক্তরাষ্ট্রের সবচেয়ে প্রগতিশীল রাজনৈতিক কর্মসূচি নিয়ে প্রথম নির্বাচিত হয়েছিলেন ওবামা। রিপাবলিকান বাধার মুখে প্রথম চার বছর সে কর্মসূচি বাস্তবায়িত করার পূর্ণ সুযোগ পাননি। এখন শেষ দুই বছরে সে পরিকল্পনা বাস্তবায়িত হোক বা না হোক, তা নিয়ে কথা বলার সুযোগ এসেছে। অর্থনীতির সুস্থাবস্থা ও নিজের নবলব্ধ জনপ্রিয়তা ব্যবহার করে ওবামা সে কাজ করায় দৃঢ়প্রতিজ্ঞ বলেই মনে হয়। রিপাবলিকান পার্টি যদি তাঁকে সে জন্য রবিনহুড বলে পরিহাসও করে, মনে হয় ওবামা সে তিরস্কার সানন্দেই গ্রহণ করবেন।

No comments:

Post a Comment