চূড়ান্ত চুক্তি হলেই ইরানের ওপর থেকে জাতিসংঘের সব নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করা হবে। আর তা না হলেও ক্ষতি নেই। কারণ, তখন অবিলম্বে পারমাণবিক কর্মসূচি শুরু করতে পারবে তেহরান। গত শনিবার এভাবেই ছয় বিশ্বশক্তির সঙ্গে প্রাথমিক চুক্তির যৌক্তিকতা ইরানিদের কাছে তুলে ধরেছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মোহাম্মদ জাভেদ জারিফ। বিশ্বশক্তির সঙ্গে আলোচনায় ইরানের পক্ষে নেতৃত্ব দিয়েছেন জারিফ। খবর রয়টার্স ও এপির। তেহরানের সঙ্গে সমঝ
োতার ব্যাপারে সন্দেহপ্রবণ কংগ্রেস সদস্যদের মন জয় করতে কাজ শুরু করেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা। গত শনিবার দেওয়া সাপ্তাহিক ভাষণে তিনি চুক্তিটি নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে যাঁদের মধ্যে সংশয় রয়েছে, তাঁদের সঙ্গে আলোচনার ইঙ্গিত দিয়েছেন। একইভাবে চুক্তিটি নিয়ে নিজ দেশের জনগণের সংশয় দূর করার চেষ্টা করছেন ইরানি নেতারাও। জাভেদ জারিফ শনিবার এক টেলিভিশন সাক্ষাৎকারে বলেন, বিশ্বশক্তির সঙ্গে একটি চূড়ান্ত চুক্তির লক্ষ্যে যে আলোচনা এগিয়ে নেওয়া হচ্ছে, তা ইরানের স্বার্থেই। প্রাথমিক চুক্তিটি হওয়ার পরপরই যুক্তরাষ্ট্র যে ‘তথ্যপত্র’ প্রকাশ করেছে, তার বিরোধিতা করেন তিনি। ওই ‘তথ্যপত্রে’ বলা হয়েছে, ইরানই বেশি ছাড় দিয়েছে। আর তেহরানের বিরুদ্ধে চলমান অবরোধ প্রত্যাহার নয়, বরং স্থগিত করা হবে। সেটাও করা হবে, শুধু ইরান চুক্তির শর্তগুলো মেনে চলছে, তা নিশ্চিত হওয়ার পরই। তবে টেলিভিশন সাক্ষাৎকারে ইরানি পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘মার্কিনরা যা চায়, তা-ই ওই তথপত্রে রেখেছে...আমি এ বিষয়ে এমনকি (মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী) জন কেরির সঙ্গে প্রতিবাদ করেছি।’ জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদ চুক্তি পর্যবেক্ষণ করবে জানিয়ে জারিফ আরও বলেন, ‘কোনো পক্ষ সমঝোতা লঙ্ঘন করলে, অন্য পক্ষও তার নিজস্ব পদক্ষেপ স্থগিত করতে পারবে।’ ইরান তার কথা না রাখলে অবরোধগুলো আবার প্রযোজ্য হবে বলে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ওবামা যে মন্তব্য করেছেন, তারই প্রতিফলন ঘটেছে জারিফের বক্তব্যে। তিনি বলেন, ‘পারমাণবিক কর্মসূচির ওপরে আমরা যেসব কাজ করেছি, তা পুনঃস্থাপন করা যাবে।...আমাদের প্রযুক্তি জ্ঞান নিজস্ব। তাই এটা কেউই আমাদের কাছ থেকে কেড়ে নিতে পারবে না।’ তবে ইরান তার প্রতিশ্রুতি রক্ষা করে চলবে বলেই ইঙ্গিত দেন জারিফ। ইরান অতীতে কখনো পারমাণবিক বোমা তৈরির চেষ্টা করেনি এবং ভবিষ্যতেও করবে না জানিয়ে তিনি বলেন, পাশ্চাত্য যত দিন প্রতিশ্রুতি রক্ষা করে চলবে, তেহরানও তত দিনই তা করে যাবে। ইরানি প্রেসিডেন্ট হাসান রুহানিও গত শুক্রবার এমন মন্তব্যই করেছিলেন। ইরান এবং আলোচনার অপর পক্ষ যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, রাশিয়া, চীন, ফ্রান্স এবং জার্মানির মধ্যে সুইজারল্যান্ডের লুজান শহরে টানা আট দিনের আলোচনার পর গত বৃহস্পতিবার একটি প্রাথমিক ‘রূপরেখা’ সমঝোতার যৌথ ঘোষণা আসে। ওই চুক্তিটির বিষয়ে উভয় পক্ষের ব্যাখ্যায় কেন তারতম্য ঘটছে, তার একটা কারণ পাওয়া গেছে একজন জ্যেষ্ঠ মার্কিন কর্মকর্তার বক্তব্যে। তিনি গত শুক্রবার জানিয়েছেন, চুক্তির বিষয়ে নিজস্ব ব্যাখ্যা প্রকাশ করার বিষয়ে সম্মত হয়েছে ইরান এবং ছয় বিশ্বশক্তি। ওই কর্মকর্তা বলেন, ‘ভিন্ন ভিন্ন ব্যাখ্যা আসার বিষয়টি আমরা জানি। কিন্তু আমাদের একে অপরকে বেঠিক বলব না।’
No comments:
Post a Comment