নেপালে প্রায়ই ভূমিকম্প আঘাত হানে। দেশটি বিশ্বের সবচেয়ে ভূমিকম্পপ্রবণ এলাকার একটি। নেপালে কেন ঘন ঘন ভূমিকম্প আঘাত হানে, তা কেবল হিমালয়ের দিকে তাকালেই বোঝা যায়। মধ্য এশীয় টেকটোনিক প্লেটের নিচ দিয়ে ভারতীয় প্লেট অতি ধীরে ধীরে ঢুকে যাওয়ার ফলে এখানকার পর্বতগুলো আকার পাচ্ছে। প্রতিবছর এই দুটি প্লেট দুই ইঞ্চি করে পরস্পরের দিকে সরে আসছে। এতে সৃষ্টি হয় প্রচণ্ড চাপ। টেকটোনিক প্লেট হচ্ছে ভূত্বকের বিশা
ল খণ্ড, যা সঞ্চরণশীল। যুক্তরাজ্যের ওপেন ইউনিভার্সিটির ভূ-বিজ্ঞানবিষয়ক প্রফেসর ডেভিড রথারি বলেন, ‘হিমালয়ের পর্বতগুলো ভারতীয় প্লেটের ওপর দিয়ে প্রবলভাবে ধাক্কা দিচ্ছে। সেখানে দুই থেকে তিনটি বড় ধরনের চ্যুতি রয়েছে। আর আছে কিছু খুব মৃদু গতিতে সঞ্চরণশীল চ্যুতি। এগুলোর সঞ্চরণের কারণেই ভূমিকম্পের ঘটনা ঘটেছে।’ বড় ধরনের ভূমিকম্পের ক্ষেত্রেও হতাহতের সংখ্যার ব্যাপারে প্রাথমিকভাবে কম ধারণা করা হয়। পরবর্তী সময়ে তা বাড়তে থাকে। এই ভূমিকম্পের ক্ষেত্রেও চূড়ান্ত হতাহতের সংখ্যা অনেক বেশি হবে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। শুধু ভূমিকম্পটির মাত্রা (৭ দশমিক ৮) অনেক বেশি বলেই এই আশঙ্কা করা হচ্ছে না। আরেকটি কারণ হলো, ভূমিকম্পটির উৎপত্তিস্থলের গভীরতা কম। ভূপৃষ্ঠের মাত্র ১০ থেকে ১৫ কিলোমিটার নিচে ভূমিকম্পটির উৎপত্তি। এর ফলেই ভূপৃষ্ঠে তীব্র কম্পনের সৃষ্টি হয়। মূল ভূমিকম্পের পর চার ঘণ্টা পর্যন্ত কমপক্ষে ১৪টি কম্পন রেকর্ড করা হয়েছে। ৬ দশমিক ৬ মাত্রার একটিসহ কম্পনগুলোর মাত্রা ছিল ৪ থেকে ৫। পরবর্তী কম্পনগুলোর শক্তি ৩০ গুণ কমে গেলেও যেসব ভবন এরই মধ্যে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, সেগুলো পরবর্তী ছোট কম্পনেও ধসে পড়ার জন্য যথেষ্ট। হিমালয় অঞ্চলের অধিবাসীদের বেশির ভাগই যে ধরনের অবকাঠামোতে বাস করে, সেগুলো অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ। সাধারণত এগুলো দুর্বল ইট ও চুনসুরকি দিয়ে তৈরি। আগের অভিজ্ঞতা থেকে আরেকটি বড় ধরনের যে উদ্বেগ রয়েছে তা হলো, এখানে ভূমিধসের আশঙ্কা রয়েছে। এ ছাড়া পর্বতময় এ অঞ্চলে এমন অনেক গ্রাম রয়েছে যেগুলো পাহাড়ের ঢালে অবস্থিত। এসব গ্রাম মাটি ও পাথরের নিচে চাপা পড়ে একেবারেই ধ্বংস হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা থাকে। এ কারণে হতাহতের প্রকৃত সংখ্যা নিয়ে বিভ্রান্তির সৃষ্টি হয়। এসব কারণেই নেপালে ভূমিকম্প আঘাত হানার পর হতাহত ও ক্ষয়ক্ষতির বিষয়টি দেরিতে প্রকাশ পায়। এর আগে হিমালয় অঞ্চলের মধ্যে কাঙরায় ১৯০৫ সালে ৭ দশমিক ৫ মাত্রার ভূমিকম্প আঘাত হানে। এ ছাড়া ১৯৩৪ সালে বিহারে ৮ দশমিক ১ মাত্রার এবং ২০০৫ সালে কাশ্মীরে ৭ দশমিক ৬ মাত্রার ভূমিকম্প হয়। হিমালয় অঞ্চলের এসব ভূমিকম্পের মধ্যে শেষের দুটি ঘটনায় এক লাখ লোকের মৃত্যু হয়। কয়েক লাখ লোক হয় গৃহহীন। সূত্র: বিবিসি
No comments:
Post a Comment