মেহেরপুর বিএনপির জেলা কমিটি আছে। কিন্তু দলীয় কর্মকাণ্ডে ওই কমিটির নেতাদের চেয়ে ÿকমিটিতে না থাকা মাসুদ অরুণের কর্তৃত্ব বেশি। দলের জেলা কার্যালয়ে কমিটির শীর্ষ নেতাদের যাতায়াতও কম। মাসুদ অরুণ বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য, জেলা কমিটির সাবেক সভাপতি ও সাবেক সাংসদ। মাসুদ অরুণের কর্তৃত্বের বিষয়টি স্বীকার করে জেলা বিএনপির সভাপতি ও সাবেক সাংসদ আমজাদ হোসেন জানান, তিনি মেহেরপুর-২ (গাংনী) সংসদীয় এল
াকায় দলের বহুবিভক্ত রাজনীতি ও তাঁর বিরুদ্ধে থাকা রাজনৈতিক মামলায় আদালতে হাজিরা দেওয়া নিয়ে বেশি ঝামেলায় থাকেন। যে ঝামেলা অরুণের নেই। ফলে দলীয় কার্যালয়ে তাঁর যাওয়া হয় কম। তাই দলে অরুণের কর্তৃত্ব বাড়লেও নেতৃত্বে কমিটির নেতারাই আছেন। সরেজমিেন দেখা গেছে, মেহেরপুরে জেলা বিএনপির কার্যালয় ও সাইনবোর্ড দুটি। একটি শহরের সাহাজীপাড়ায় ইলিয়াস গ্রুপের নামে, অপরটি শহরের বোসপাড়ায় অরুণ গ্রুপের নামে পরিচিত। তবে গত বছর ইলিয়াস গ্রুপের প্রধান ও জেলা কমিটির সাবেক সহসভাপতি ইলিয়াস হোসেন যোগ দেন মাসুদ অরুণের সঙ্গে। তাই ওই কার্যালয়টি এখন নিষ্ক্রিয়। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিএনপির একাধিক নেতা বলেন, মাসুদ অরুণ এক-এগারোর সময় দলের সংস্কারপন্থী গ্রুপে যোগ দেন। তখন বিএনপির মূলধারা থেকে ছিটকে পড়েন। এ সময় ইলিয়াস গ্রুপ চাঙা হয়ে ওঠে। সংসদ নির্বাচনে অরুণ পরাজিত হন। পরে তাঁকে বাদ দিয়ে জেলা বিএনপির কমিটি হয়। দলে অরুণ কোণঠাসা হয়ে পড়েন। কিন্তু রাজনীতি তাঁর সার্বক্ষণিক নেশা ও পেশা হওয়ায় সেই সংকট কাটিয়ে তিনি আবার মূলধারার রাজনীতিতে শক্ত অবস্থান নিয়েছেন। এমনও অভিযোগ রয়েছে, কমিটির নেতাদের তোয়াক্কা না করে নিজেই দলীয় কর্মসূচি ঘোষণা ও পালন করেন মাসুদ অরুণ। দলের নেতৃত্বে আছি। কিন্তু কর্তৃত্ব অরুণের হাতে। মেহেরপুরে নেতার নেতৃত্বে দল চলে না।-আমিরুল ইসলাম, সাধারণ সম্পাদক এ প্রসঙ্গে জেলা বিএনপির জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি সাবেক পৌর চেয়ারম্যান আবদুর রহমান বলেন, বিএনপির জেলা কমিটি আছে। জেলা কার্যালয় আছে। অফিস পরিচালনা ব্যয় মাসে প্রায় এক লাখ টাকা। অথচ জেলা বিএনপির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদককে জেলা কার্যালয়ে পাওয়া যায় না। এ কারণে নেতা-কর্মীরা আবার অরুণমুখী হয়ে পড়েছেন। জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আমিরুল ইসলাম বলেন, দলের নেতৃত্বে আছি। কিন্তু কর্তৃত্ব অরুণের হাতে। মেহেরপুরে নেতার নেতৃত্বে দল চলে না। অরুণ ডাকলে নেতা-কর্মীরা কার্যালয়ে যান, না হলে যান না। দলের সাবেক সহসভাপতি ইলিয়াস হোসেন বলেন, তিনি কিছুদিন আগেও অরুণবিরোধী গ্রুপের নেতা ছিলেন। সেটা তাঁর ভুল ছিল। তাই এখন সংখ্যাগরিষ্ঠের দিকে ফিরে গেছেন। অরুণবিরোধী অংশে জনবিচ্ছিন্ন কিছু নেতা ছাড়া আর কেউ নেই বলে দাবি করেন তিনি। অরুণবিরোধী শক্ত অবস্থানে থাকা বিএনপির একাংশের নেতা ও বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির সাবেক সদস্য মোখলেছুর রহমান বলেন, দুর্নীতির অভিযোগে ইলিয়াস হোসেনকে তাঁরা বাদ দিয়েছেন। জেলা কমিটির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের সঙ্গে তাঁদের নিয়মিত যোগাযোগ আছে। তাঁরা সংস্কারপন্থী মাসুদ অরুণমুক্ত বিএনপি চান। কিন্তু দলের নেতৃত্ব অরুণের কাছে জিম্মি হয়ে গেছে। এ ব্যাপারে মাসুদ অরুণ বলেন, প্রতিদিন আন্দোলন প্রতিদিন সংগ্রাম নীতিতে তিনি রাজনীতি করেন। তাই দলে তিনি কর্মীমুখী। তিনি বলেন, বিএনপির অফিস দুটি হলেও দল একটি। কেননা, ইলিয়াস হোসেন ফিরে আসার পর ওই গ্রুপে সরকার-সমর্থিত কিছু বিএনপি নেতা আছেন। যাঁদের অস্তিত্ব নেই। দলের নেতৃত্বে রয়েছেন। তিনি সেই নেতৃত্ব মেনেই রাজনীতি করেন।
No comments:
Post a Comment