সারা দেশে ১৩ হাজার ৯০২টি কওমি মাদ্রাসায় শিক্ষার্থীর সংখ্যা প্রায় ১৪ লাখ। এর মধ্যে ঢাকা বিভাগে সবচেয়ে বেশি মাদ্রাসা, ৪ হাজার ৫৯৯টি। সবচেয়ে কম বরিশালে, ১ হাজার ৪০টি। বেশির ভাগ মাদ্রাসাই মফস্বল এলাকায় অবস্থিত। প্রথমবারের মতো কওমি মাদ্রাসা বিষয়ে পূর্ণাঙ্গ এ তথ্য সংগ্রহ করেছে বাংলাদেশ শিক্ষা তথ্য ও পরিসংখ্যান ব্যুরো (ব্যানবেইস)। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের নির্দেশে এই তথ্যের সংক্ষিপ্ত প্রতিবেদন সম্প্রত
ি শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে জমা দিয়েছে ব্যানবেইস। ব্যানবেইসের পরিসংখ্যান বিভাগের প্রধান শামছুল আলম প্রথম আলোকে বলেন, সরকার চাইছে আলাপ-আলোচনা করে কওমি মাদ্রাসাকেও মূলধারার শিক্ষার সঙ্গে একধরনের সংযোগ সৃষ্টি করতে। এ জন্যই এ তথ্য সংগ্রহ করা হয়েছে, যা কওমি মাদ্রাসা বিষয়ে পরিকল্পনা নিতে সহজ হবে। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তাদের মাধ্যমে এ তথ্য সংগ্রহ করা হয়েছে বলে জানান শামছুল আলম। তিনি বলেন, এটিই উপজেলাভিত্তিক কওমি মাদ্রাসার পূর্ণাঙ্গ তথ্য। ভারতের দারুল উলুম দেওবন্দ মাদ্রাসার আদলে ১৮০০ সালের শেষের দিকে এ দেশে কওমি মাদ্রাসার গোড়াপত্তন হয়। কওম শব্দের অর্থ জাতি। মুসলিম জাতির অনুদান ও সহযোগিতায় এ শিক্ষা চলে আসছে। এ দেশে কওমি মাদ্রাসা শিক্ষার প্রাক্-প্রাথমিক স্তর শুরু হয় শিশুর চার-পাঁচ বছর বয়স থেকে। সর্বোচ্চ স্তর হলো দাওরায়ে-ই-হাদিস। এটিকে কওমি মাদ্রাসার শিক্ষা বোর্ড সাধারণ শিক্ষার স্নাতকোত্তর ডিগ্রির সমমান বলে। ব্যানবেইসের তথ্য বলছে, মোট কওমি মাদ্রাসার মধ্যে ১২ হাজার ৬৯৩টি পুরুষ ও ১ হাজার ২০৯টি মহিলা মাদ্রাসা রয়েছে। এসব মাদ্রাসায় ১০ লাখ ৫৮ হাজার ৬৩৬ জন ছাত্র ও তিন লাখ ৩৯ হাজার ৬১৬ জন ছাত্রী পড়াশোনা করছে। সারা দেশে শিক্ষক আছেন ৭৩ হাজার ৭৩১ জন। এর মধ্যে পুরুষ ৬৬ হাজার ৯০২ জন এবং মহিলা ৬ হাজার ৮২৯ জন। ব্যানবেইসের তথ্য বলছে, সংখ্যার দিক দিয়ে ঢাকার পরেই চট্টগ্রামে মাদ্রাসা বেশি, ২ হাজার ৯৮৪টি। এর পরে রাজশাহীতে ১ হাজার ৭০২টি, সিলেটে ১ হাজার ২৪৬টি, রংপুরে ১ হাজার ১৭৬টি, খুলনায় ১ হাজার ১৫৫টি। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সূত্রমতে, আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন বিগত সরকারের শেষ দিকে কওমি মাদ্রাসার শিক্ষা সনদের স্বীকৃতি দেওয়ার উদ্যোগ নেওয়া হয়। এ জন্য ‘বাংলাদেশ কওমি মাদ্রাসা শিক্ষা কর্তৃপক্ষ’ গঠনেরও সিদ্ধান্ত হয়েছিল। এই কর্তৃপক্ষ গঠনের জন্য আইনের খসড়া অর্থ, জনপ্রশাসন ও প্রশাসনিক উন্নয়ন-সংক্রান্ত সচিব কমিটির সভায় অনুমোদন শেষে মন্ত্রিসভার বৈঠকেও উত্থাপন করা হয়। কিন্তু খসড়াটি আরও পরীক্ষা-নিরীক্ষার জন্য ফেরত পাঠানো হয়। এরই ধারাবাহিকতায় এখন কওমি মাদ্রাসার পূর্ণাঙ্গ তথ্য সংগ্রহ করা হয়েছে। জানতে চাইলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক ও জাতীয় শিক্ষানীতি প্রণয়ন কমিটির সদস্য মোহাম্মদ সিদ্দিকুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, কওমি শিক্ষাকে সরকারের আওতায় এনে সংস্কার করে যুগোপযোগী করা উচিত। ধর্মশিক্ষার পাশাপাশি কওমি মাদ্রাসার শিক্ষার্থীদের ইহজাগতিক শিক্ষা দেওয়া উচিত। কারণ বিদ্যমান অবস্থায় তারা দুনিয়ার শিক্ষা কম পাচ্ছে। ফলে চাকরিতে তারা বঞ্চিত হচ্ছে। তাই কওমি শিক্ষাকে আধুনিকায়ন করা উচিত। কওমি মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ডের (বেফাক) যুগ্ম মহাসচিব মাহফুজুল হক প্রথম আলোকে বলেন, তাঁরা শুধু কওমি শিক্ষার স্বীকৃতি চান। তাঁরা সরকারের কোনো অনুদান, নিয়ন্ত্রণ ও হস্তক্ষেপ চান না। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কয়েকজন কর্মকর্তা প্রথম আলোকে বলেন, ২০০৮ সালে একবার কওমি মাদ্রাসা শিক্ষাব্যবস্থার ওপর একটি গবেষণা সমীক্ষা চালায় ব্যানবেইস। ওই গবেষণায় কওমি শিক্ষাব্যবস্থাকে দেশের প্রচলিত অন্যান্য শিক্ষাব্যবস্থার মতো সরকারের আওতায় আনতে ছোট-বড় ১৯টি কওমি শিক্ষা বোর্ড স্বাধীনভাবে পরিচালিত না হয়ে সমন্বয়ের মাধ্যমে একই ধারার মাদ্রাসাগুলোকে কেন্দ্রীয়ভাবে পরিচালনার সুপারিশ করা হয়েছিল। এরপর ২০১০ সালে আরেকটি গবেষণায় একই ধরনের কিছু সুপারিশ করা হয়েছিল।
No comments:
Post a Comment