বেতন-বোনাস নিয়ে টালবাহানা করতে পারেন এমন পাঁচ শতাধিক গার্মেন্ট মালিকের তালিকা করা হচ্ছে। সেই তালিকা ধরে বেতন-বোনাস পরিশোধের জন্য সরকারের তরফ থেকে চাপ দেওয়া হবে। আর সে অনুযায়ী কাজ না হলে নেওয়া হবে আইনি ব্যবস্থা। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও পুলিশ সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে। অন্যদিকে বাংলাদেশ রপ্তানিকারক সমিতি (ইএবি) মনে করে, প্রণোদনার অর্থ ছাড় করা হলে ঈদের আগে বেতন-ভাতা দেওয়া সহজ হবে। আগামী ১৫ জুলাইয়ের ম
ধ্যে প্রণোদনার অর্থ ছাড় করার জন্য গত বুধবার অর্থমন্ত্রীকে চিঠি দিয়েছে ইএবি। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, ঈদের আগে শ্রমিক অসন্তোষের কারণে যাতে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি না ঘটে সে জন্য রোজা শুরুর ২৫ দিন আগে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে এক বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। গত ৫ জুন স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এ বৈঠক আইজিপি হাসান মাহমুদ খন্দকার, র্যাবের মহাপরিচালক মোখলেছুর রহমান, ডিএমপি কমিশনার বেনজীর আহমেদ, শিল্প পুলিশের প্রধান আবদুস সালাম, বিজিএমইএ সভাপতি মো. আতিকুল ইসলাম, বিকেএমইএর ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মো. হাতেমসহ স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও বিভিন্ন সংগঠনের নেতারা উপস্থিত ছিলেন। ওই সভায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর তরফ থেকে রোজা ও ঈদের আগে গার্মেন্ট শ্রমিকদের বেতন-বোনাস নিয়ে আন্দোলনের ফলে যে সমস্যার সৃষ্টি হয় সে ব্যাপারে আলোচনা হয়। তখন গার্মেন্ট মালিকদের সংগঠনের নেতাদের পক্ষ থেকে সঠিক সময়ে বেতন-বোনাস দিয়ে দেওয়া হবে বলে সভাকে জানানো হয়েছিল। কিন্তু গত বুধবার তোবা গ্রুপের গার্মেন্ট কারখানার শ্রমিকরা রাজধানীর উত্তর বাড্ডায় বকেয়া বেতন-ভাতা পরিশোধের দাবিতে সড়ক অবরোধ করে। একপর্যায়ে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষেও জড়ায় শ্রমিকরা। ঈদ যতই এগিয়ে আসছে ততই শ্রমিক অসন্তোষের আশঙ্কা করা হচ্ছে। এ অবস্থায় শিল্প পুলিশের তরফ থেকে গার্মেন্ট মালিকদের সঙ্গে দফায় দফায় বৈঠক করা হচ্ছে বলে শিল্প পুলিশ সূত্রে জানা গেছে। শিল্প পুলিশ সূত্র জানায়, গার্মেন্ট শ্রমিকরা যাতে বেতন-বোনাসের জন্য রাস্তা অবরোধসহ কোনো ধরনের ঝামেলা সৃষ্টি করতে না পারে সে জন্য সরকারের তরফ থেকে রোজার শুরুর আগে থেকেই উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। দেশে তিন হাজার সাত শর মতো গার্মেন্ট রয়েছে। ওই গার্মেন্টগুলোর মধ্যে কোন কোন গার্মেন্টে শ্রমিক অসন্তোষ সৃষ্টি হচ্ছে তা জানার চেষ্টা করছেন শিল্প পুলিশের গোয়েন্দারা। বেতন-বোনাস দেওয়া-না দেওয়ার ক্ষেত্রে মালিকদের মনোভাব জানার চেষ্টা করা হচ্ছে। অতীত অভিজ্ঞতা ও গোয়েন্দা কার্যক্রমে পাঁচ শতাধিক গার্মেন্ট কারখানার মালিক বেতন-বোনাস নিয়ে টালবাহানা করবেন বলে তথ্য পাচ্ছে শিল্প পুলিশ। সেই মালিকদের নাম তালিকাভুক্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, বিজিএমইএ ও বিকেএমইএতে দেওয়া হবে। শিল্প পুলিশের প্রধান ডিআইজি আবদুস সালাম গতকাল বৃহস্পতিবার কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘শ্রমিকরা যাতে সঠিক সময়ে বেতন-বোনাস পায় সে জন্য আমরা চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। গার্মেন্ট মালিকদের পক্ষ থেকে অনেক আগে থেকেই আশ্বাস দেওয়া হচ্ছে, এ বছর তাঁরা সঠিক সময়ে বেতন-বোনাস দেবেন। এর পরও খবর পাওয়া যাচ্ছে, কিছু গার্মেন্ট মালিক বেতন-বোনাস নিয়ে ঝামেলা করতে পারেন। কোন কোন গার্মেন্টে এ ধরনের সংকট তৈরি হবে তা জানার চেষ্টা করছি আমরা।’ পুলিশের এই কর্মকর্তা আরো জানান, শিল্প পুলিশের তরফ থেকে দেশের যেসব এলাকায় গার্মেন্ট কারখানা রয়েছে সেখানে মালিকদের সঙ্গে বৈঠক করা হচ্ছে। এরই মধ্যে নারায়ণগঞ্জ, চট্টগ্রাম, গাজীপুরসহ কয়েকটি স্থানে পৃথক বৈঠক করা হয়েছে। গার্মেন্ট মালিকদের কেউ কেউ বিভিন্ন সমস্যার কথা জানিয়েছেন। তবে তাঁরা বেতন-বোনাস দেওয়ার ক্ষেত্রে আশ্বাস দিয়েছেন। তবে শুধু বেতন বোনাস নয়, অন্য ইস্যুতেও অসন্তোষ দেখা দিচ্ছে গার্মেন্টগুলোতে। শিল্প পুলিশের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা গতকাল কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘আজও (বৃহস্পতিবার) গাজীপুরের একটি গার্মেন্টে অসন্তোষ দেখা দেয়। এটা বেতন-বোনাসের জন্য নয়। ইফতারির টাকা বাড়ানো নিয়ে।’ তিনি জানান, রোজার শুরু থেকে ওই গার্মেন্টে ৩০ টাকা করে ইফতারির টাকা দেওয়া হচ্ছিল। বুধবার থেকে তারা ৬০ টাকা করে দেওয়ার জন্য চাপ দিচ্ছে। মালিকপক্ষ দিতে রাজি না হওয়ায় এ নিয়ে অসন্তোষ তৈরি হয়। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, গত বছর ঈদের আগেও এ ধরনের চেষ্টা চালানো হয়েছিল সরকারের পক্ষ থেকে। রোজার শুরু থেকে চেষ্টা করা হলেও শেষ পর্যন্ত দুই শতাধিক গার্মেন্টের মালিক বেতন-বোনাস দেননি। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা গতকাল কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘যারা বেতন-ভাতা দেওয়ার প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ করবে তাদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য সংগঠনগুলোকে জানানো হবে। এতে তাদের সংগঠনের সদস্য পদ স্থগিত করাসহ লেবার কোর্টে মামলাও হতে পারে।’
No comments:
Post a Comment