জেলা পুলিশের সহযোগিতা না পাওয়ায় নারায়ণগঞ্জে সাত খুনের মামলা তদন্ত করবে না পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)। মামলার আসামিদের স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দির অনুলিপি তাদের দিচ্ছে না জেলা পুলিশ। অনুলিপি না পাওয়ায় তাঁদের পক্ষে এ মামলার তদন্ত করা সম্ভব নয় বলে জানিয়েছেন সিআইডির কর্মকর্তারা। হাইকোর্টের নির্দেশে সিআইডি এ মামলার তদন্ত করছে। জেলা পুলিশের এই অসহযোগিতার কথা হাইকোর্টে দেওয়া অগ্রগতি প্রতিবেদ
নে উল্লেখ করা হবে বলে জানিয়েছে সিআইডি। কাল বুধবার সিআইডির অগ্রগতি প্রতিবেদন আদালতে দেওয়া হতে পারে বলে জানা গেছে। সিআইডিকে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দির অনুলিপি না দেওয়া প্রসঙ্গে জানতে চাইলে নারায়ণগঞ্জের পুলিশ সুপার খন্দকার মহিদ উদ্দীন প্রথম আলোকে বলেন, ‘জবানবন্দির অনুলিপি দেওয়ার ব্যাপারে আমি কিছুই জানি না। এটা আমার বিষয় নয়।’ তবে তদন্তের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট একজন কর্মকর্তা প্রথম আলোকে বলেন, এ ঘটনায় এখন পর্যন্ত র্যাব-১১-এর সাবেক অধিনায়ক লে. কর্নেল (অব.) তারেক সাঈদ মোহাম্মাদ, মেজর (অব) আরিফ হোসেন ও লে. কমান্ডার (অব) এম এম রানাসহ চারজন আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। তাঁদের জবানবন্দিতে খুনের ব্যাপারে বিস্তারিত তথ্য রয়েছে। এতে রাজনৈতিক নেতা ও র্যাবের দায়িত্বশীল কর্মকর্তার নাম রয়েছে। তবে এসব তথ্য যাতে প্রকাশ না হয়, সে কারণে রাখঢাক করা হচ্ছে। ওই কর্মকর্তা বলেন, জবানবন্দির ব্যাপারে পুলিশ খুব সতর্ক রয়েছে, যাতে কোনো তথ্য প্রকাশ হয়ে না যায়। সিআইডির কর্মকর্তারা বলেন, জেলা পুলিশ তথ্য দিয়ে তাদের সহযোগিতা করছে না। তদন্তকারীর কাছে বারবার জবানবন্দির অনুলিপি চেয়েও তা পাওয়া যাচ্ছে না। এখন পর্যন্ত স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিই মামলার মূল ভিত্তি। সেটা পাওয়া না গেলে তদন্ত কোনোভাবে এগোবে না। এ কারণে মামলা তদন্ত করা তাদের পক্ষে সম্ভব নয়। নারায়ণগঞ্জে সাতজনকে অপহরণ ও খুনের ঘটনা নিয়ে পত্রিকায় প্রকাশিত প্রতিবেদন বিবেচনায় নিয়ে গত ৫ মে হাইকোর্টের একটি বেঞ্চ স্বতঃপ্রণোদিত রুল জারি করেন। এতে সাতজনকে অপহরণ ও হত্যার ঘটনায় প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কোনো সদস্যের গাফিলতি আছে কি না, এটিসহ পুরো ঘটনা তদন্তে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের একজন অতিরিক্ত সচিবের নেতৃত্বে সাত সদস্যের কমিটি গঠনের নির্দেশ দেওয়া হয়। এ ছাড়া আদালতে এ ঘটনা নিয়ে পুলিশের মহাপরিদর্শক, র্যাবের মহাপরিচালক ও সিআইডির প্রধানকে পৃথক তদন্ত প্রতিবেদন দেওয়ার আদেশ দেন। আদালতের নির্দেশের পরিপ্রেক্ষিতে পুলিশ ও র্যাব এর আগে দুই দফা অগ্রগতি প্রতিবেদন আদালতে দাখিল করে। ৯ জুলাই সর্বশেষ প্রতিবেদনটি দাখিল করবে সিআইডি। এর আগে ৩ জুন আদালতে দেওয়া সিআইডির প্রতিবেদনে বলা হয়েছিল, সাত খুনের ঘটনায় র্যাবের তিন কর্মকর্তাকে জিজ্ঞাসাবাদের পর তদন্তকারীরা নিশ্চিত হয়েছেন এ ঘটনায় গ্রেপ্তার করা র্যাবের তিন কর্মকর্তা প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে অপহরণ এবং অপহরণ-পরবর্তী নৃশংস হত্যাকাণ্ড ও লাশ গুমে জড়িত । এটা তাঁদের ভাড়া করা খুন িক না, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। এ ছাড়া আরও কয়েকজন এ ঘটনায় জড়িত ছিলেন। র্যাব সদস্যরা জড়িত থাকার ব্যাপারে দুজন প্রত্যক্ষ সাক্ষীও ১৬৪ ধারায় আদালতে জবানবন্দি দিয়েছিলেন। গত ২৭ এপ্রিল দুপুরে ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ লিংক রোড থেকে অপহৃত হন নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের প্যানেল মেয়র ও কাউন্সিলর নজরুল ইসলাম, জ্যেষ্ঠ আইনজীবী চন্দন সরকারসহ সাতজন। এর তিন দিন পর ৩০ এপ্রিল শীতলক্ষ্যায় একে একে ভেসে ওঠে সাতজনের মরদেহ। এই সাতজন হলেন এক গাড়িতে থাকা কাউন্সিলর নজরুল ইসলাম, তাঁর সঙ্গী তাজুল ইসলাম, মনিরুজ্জামান স্বপন, লিটন ও তাঁর গাড়িচালক জাহাঙ্গীর আলম এবং আরেকটি গাড়িতে থাকা আইনজীবী চন্দন সরকার ও তাঁর গাড়িচালক ইব্রাহিম। এ ঘটনায় নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের ৪ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর নূর হোসেনকে প্রধান আসামি করে মামলা করেছে নজরুলের পরিবার।
No comments:
Post a Comment