Monday, July 7, 2014

একটি মহলের প্ররোচনায় বিশ্বব্যাংক পদ্মা সেতুর বরাদ্দ বন্ধ করে দেয় : প্রধানমন্ত্রী:নয়াদিগন্ত

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সময় মতো পদ্মা সেতুর নির্মাণকাজ শেষ করার ওপর গুরুত্বারোপ করে সেতু নির্মাণে আর যাতে কোনো বাধা না আসে সে ব্যাপারে সবাইকে সতর্ক থাকার আহ্বান জানিয়েছেন।  ‘পদ্মা সেতু নির্মাণ নিয়ে অনেক তোলপাড় হয়ে গেলো। এটা নিয়ে অন্য উদ্দেশ্য ছিল। কোনো কারণ ছাড়া বিশ্বব্যাংকের সাবেক প্রেসিডেন্ট তার শেষ কার্য দিবসে এ দেশের একটি মহলের প্ররোচনায় পদ্মা সেতুর বরাদ্দ বন্ধ করে দেন বলে প্রধানমন্ত্রী উল্লে
খ করেন।  তিনি বলেন, বিশ্বব্যাংক পদ্মা সেতু নিয়ে দুর্নীতি হয়েছে অভিযোগ করার পর আমরা চ্যালেঞ্জ করলাম। কী দুর্নীতি হয়েছে তার ডকুমেন্ট চাইলাম। কিন্তু তারা যে কাগজপত্র দেখালো তা ছিল আগের সরকারের আমলের ঢাকা-ময়মনসিংহ চার লেন সড়কের কাজ নিয়ে।   ‘ওরা অনেক চালাকি করেছে। নানা শর্ত জুড়ে দেয়। একবার বলে অমুক অমুককে বাদ দিতে হবে। আবার বলে এদের অ্যারেস্ট করলে অর্থ বরাদ্দ পাওয়া যাবে’ এ কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, অনেক চড়াই-উতরাই পার হয়ে নিজস্ব অর্থায়নে এই পদ্মা সেতু নির্মাণের সব প্রস্তুতি শেষে এর বাস্তবায়নের কাজ শুরু হয়েছে। মূল সেতু নির্মাণে চায়না মেজর ব্রিজ কোম্পানি লিমিটেডের সাথে আমাদের চুক্তি হয়েছে। এ কোম্পানিকে কার্যাদেশ দেয়া হয়েছে। সেতুর উভয় পাড়ের নদী শাসন কাজের আর্থিক দরপত্রের মূল্যায়ন চলছে।  প্রধানমন্ত্রী গতকাল বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের ধারাবাহিক পরিদর্শনের অংশ হিসেবে যোগাযোগ মন্ত্রণালয় পরিদর্শনকালে এ বক্তব্য রাখেন। যোগাযোগমন্ত্রী ওবায়দুল কদের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে স্বাগত জানিয়ে বক্তব্য রাখেন। সেতু বিভাগের সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম, সড়ক বিভাগের সচিব এম এ এন সিদ্দিক এবং প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব এ কে এম শামীম চৌধুরীসহ মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা এ সময় উপস্থিত ছিলেন। মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের উদ্দেশে তিনি বলেন, আমরা যে কাজটি শুরু করেছি তা যেন ভালোভাবে করতে পারি সে ব্যাপারে নজর রাখতে হবে। মুক্তিযুদ্ধ করে স্বাধীনতা অর্জন করতে পারলে একটা ব্রিজ বানাতে কেন পারবো না। বৈদেশিক মুদ্রার অভাব নেই উল্লেখ করে তিনি বলেন, দেশে এখন রিজার্ভ ২১ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। তার থেকে এক দুই বিলিয়ন খরচ করলে সমস্যা হবে না।  পদ্মা পাড়ে হংকং-এর মতো শহর নির্মাণ করা হবে। সেখানে একটি আন্তর্জাতিক কনভেনশন সেন্টার তৈরি করা হবে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ভবিষ্যতে আন্তর্জাতিক বাণিজ্যিক মেলা সেখানেই অনুষ্ঠিত হবে। কর্মকর্তাদের উদ্দেশে প্রধানমন্ত্রী বলেন, শুধু রাস্তা তৈরি করাই নয় তার রণাবেণের জন্য খরচ হয়। কোন রাস্তা কতটুকু ব্যবহার হবে, প্রতি সেকেন্ডে কত গাড়ি চলবে, কতটুকু যানবাহন ধারণ করবে সে হিসেবে প্ল্যান-প্রোগ্রাম তৈরি করতে হবে। তিনি বলেন, মন্ত্রী-এমপিদের বাড়ি থাকলে রাস্তা ঘুরিয়ে নিতে হবে এ রকম একটি প্রবণতা আছে। অল্প জায়গায় রাস্তা তৈরি হয়ে যেতে পারে। কিন্তু অনেক সময় তা ঘুরিয়ে নেয়া হয়। এ মানসিকতা বাদ দিতে হবে। উন্নত সমৃদ্ধ দেশ গড়তে উন্নত যোগাযোগ ব্যবস্থার কোনো বিকল্প নেই উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমাদের যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়ন করতে হবে। এ জন্য প্রতিবছরই বাজেট বরাদ্দ থাকে। এবারো যোগাযোগ খাতে পর্যাপ্ত বাজেট বরাদ্দ দেয়া হয়েছে।  বর্ষা, রোজা এবং ঈদকে সামনে রেখে উন্নয়ন কাজ একেবারে বন্ধ না করার নির্দেশ দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, মানুষের যাতে চলাফেরার সমস্যা না হয় সে ব্যাপারে নজর দিতে হবে।  দেশের উন্নয়ন করতে হলে প্রতিবেশী দেশগুলোর সাথে সম্পর্ক উন্নয়ন করতে হবে জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, ঢাকা-কুনমিং পর্যন্ত বিসিআইএম ইকোনমিক করিডোর চীন-মিয়ানমারের সাথে হচ্ছে। এতে বাণিজ্যের প্রসার হবে। তিনি বলেন, গত পাঁচ বছরে টেকসই, নিরাপদ ও মানসম্মত সড়ক অবকাঠামো এবং আধুনিক গণপরিবহন ব্যবস্থা গড়ে তোলার ল্েয ১৪৬টি নতুন প্রকল্প গ্রহণ করা হয়। এর মধ্যে ১০০টি প্রকল্পের কাজ শেষ হয়েছে। বাকি প্রকল্পের কাজ চলছে। চলতি অর্থবছরে মেট্রোরেল, দ্বিতীয় কাঁচপুর, দ্বিতীয় মেঘনা ও দ্বিতীয় গোমতী সেতু নির্মাণ, ঢাকা-চট্টগ্রাম জাতীয় মহাসড়ককে চার লেনে উন্নীতকরণ, জয়দেবপুর-চন্দ্রা-টাঙ্গাইল-এলেঙ্গা জাতীয় মহাসড়ক চার লেনে উন্নীতকরণ, জয়দেবপুর-ময়মনসিংহ জাতীয় মহাসড়ক চার লেনে উন্নীতকরণ এবং ইস্টার্ন বাংলাদেশ ব্রিজ ইম্প্র“ভমেন্ট প্রকল্পসহ ১২১টি প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হচ্ছে বলে তিনি জানান।  তিনি বলেন, আমরা ঢাকা পরিবহন সমন্বয় কর্তৃপরে অধীনে উত্তরা থেকে মতিঝিল পর্যন্ত মাস রেপিড ট্রানসিট লাইন-৬ বাস্তবায়নে যথাযথ ব্যবস্থা নিয়েছি। মন্ত্রিসভায় মেট্রোরেল আইন ২০১৪ নীতিগতভাবে অনুমোদিত হয়েছে।  শুধু সড়ক বিভাগের আওতায় গত পাঁচ বছরে সারা দেশে ১২৬৬ কিলোমিটার নতুন সড়ক নির্মাণ এবং প্রায় তিন হাজার কিলোমিটার সড়ক প্রশস্ত ও মজবুত করাসহ প্রায় ৪৩ হাজার মিটার কংক্রিট সেতু নির্মাণ করা হয়েছে বলে প্রধানমন্ত্রী তার বক্তব্যে উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, ইতোমধ্যে নবীনগর-ডিইপিজেড-চন্দ্রা এবং ঢাকা-আরিচা মহাসড়কের সাভার-নবীনগর অংশ চার লেনে উন্নীত করা হয়েছে। এ অর্থবছরেই জয়দেবপুর-ময়মনসিংহ এবং ঢাকা-চট্টগ্রাম জাতীয় মহাসড়ক চার লেনে উন্নীত করার কাজ শেষ হবে বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন। চট্টগ্রামে কর্ণফুলী নদীর তলদেশে ট্যানেল নির্মাণের সম্ভাব্যতা জরিপ শেষ হয়েছে। ৩ দশমিক ৪০ কিলোমিটার দীর্ঘ বাংলাদেশে প্রথম এই ট্যানেল নির্মাণে ব্যয় হবে প্রায় ৫ হাজার ৬০০ কোটি টাকা।  তিনি বলেন, এটি নির্মিত হলে কর্ণফুলী নদীর অপর প্রান্তে নতুন নতুন শিল্প কারখানা গড়ে উঠবে। তা ছাড়া ভবিষ্যতে সোনাদিয়ায় গভীর সমুদ্রবন্দরের সাথে ঢাকা এবং চট্টগ্রামের সরাসরি সড়ক যোগাযোগ স্থাপিত হবে এবং এটি এশিয়ান হাইওয়ের সাথেও সংযুক্ত হবে।  এ ছাড়া হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের কুতুবখালী পর্যন্ত প্রায় ৪৬ কিলোমিটার এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের নির্মাণকাজও আগামী সেপ্টেম্বরের মধ্যে শুরু করা যাবে বলে তিনি তার বক্তব্যে উল্লেখ করেন। প্রধানমন্ত্রী অভিযোগ করেন, ২০০১ সালে বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারে এসে বিআরটিসিকে লুটপাটের প্রতিষ্ঠানে পরিণত করে। কর্মকর্তা-কর্মচারীদের নিজস্ব জমা তহবিলের অর্থও তখন লুটপাট করা হয়। এ জন্য বিআরটিসিকে সুদাসলে ৪২ কোটি টাকা পরিশোধ করতে হয়েছে। তারা বিআরটিসির মূল্যবান জায়গা ও স্থাপনা নামমাত্র মূল্যে আত্মীয়স্বজন এবং দলীয় কর্মীদের ইজারা দেয়।  ২০০৯ সালে সরকারে এসে বিআরটিসিকে পুনরায় লাভজনক প্রতিষ্ঠানে পরিণত করেন উল্লেখ করে তিনি বলেন, এবার আমরা সরকারে আসার পর বিআরটিসির জন্য বিভিন্ন ধরনের ৯৫৮টি বাস সংগ্রহ করেছি।  প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা এগিয়ে যাচ্ছি। আমরা আরো এগিয়ে যাবো। বাংলাদেশ আজ পরমুখাপেী নয়। আমরা উন্নয়নের মডেল।

No comments:

Post a Comment