মেসিনির্ভর আর্জেন্টিনা। অর্থাৎ দলটি ওয়ানম্যান শো। মেসি ভালো খেলবেন, গোল করবেন, তবেই আর্জেন্টিনা জিতবে গত কিছু দিন ধরে এটাই হয়ে গিয়েছিল প্রতিষ্ঠিত। কথাটি তো আসলেই সত্য। গ্রুপে আর্জেন্টিনাকে তিনটি ম্যাচই জিতেয়েছেন অধিনায়ক লায়নেল মেসি। করেছেন ৪ গোল। দ্বিতীয় রাউন্ডে তার পাস থেকেই জয়সূচক গোল। এ সবই তো আর্জেন্টিনার মেসিনির্ভরতার প্রমাণ। এই গ্রেট ফুটবলারের অবদান সবাই স্বীকার করছেন। কিন্তু কোয়ার্টার ফাইনা
ল এবং সেমিফাইনালে মেসি ছিলেন নিষ্ক্রিয়। কোয়ার্টার ফাইনালে তো এক প্রকার দাঁড়িয়েই ছিলেন। সেমিতে দুই-একটা টান দিলেও ডাচ ডিফেন্ডারদের কড়া মার্কিংয়ে বেশি দূর এগোতে পারেননি। তারপরও নকআউট পর্বের এ দু’ম্যাচ জিতে ফাইনালে উঠেছে আর্জেন্টিনা। ১৩ জুলাই ব্রাজিলের বিখ্যাত মারাকানা স্টেডিয়ামে ফাইনালে পাচ্ছে জার্মানিকে। মেসির টানা দুই বাজে দিনের পরও আর্জেন্টিনা জিতেছে, হারিয়েছে নেদারল্যান্ডস আর বেলজিয়ামকে, যা জানিয়ে দিলো মেসি ভালো না খেললেও জিততে পারে আর্জেন্টিনা। কারণ দলটি এখন অনেক ঐক্যবদ্ধ জানান মাসকেরানো, জাবালেতারা। টাইব্রেকারে নেদারল্যান্ডসের বিপক্ষে ৪-২ গোলে জয়ের পর সাওপাওলোর এরিনা করিস্থিয়াস্থ স্টেডিয়ামের মিক্সড জোন আর্জেন্টিনার সংবাদকর্মীতে পরিপূর্ণ। এই ভেনুতে চলতি বিশ্বকাপের শেষ ম্যাচ। তাই মিক্সড জোনের দায়িত্বশীলদের মধ্যেও একটু ছাড় দেয়া মনোভাব। ফলে কোনো সাংবাদিককে আর বেশিক্ষণ দরজার বাইরে থাকতে হলো না। মিক্সড জোনে সাংবাদিকদের সব সময়ই বেশি সময় দেন আর্জেন্টিনার সাবেক অধিনায়ক হ্যাভিয়ার মাসকেরানো। এরপরই অবস্থান পাবলো জাবালেতার। বলা হয় আর্জেন্টিনা মেসিনির্ভর। এখন দেখা গেল টানা দুই ম্যাচে মেসি ভালো খেলতে পারেননি। কিন্তু আর্জেন্টিনা জিতেছে। এটাকে কিভাবে দেখছেন আপনি। মাসকেরানোর জবাব, ‘মেসি নিঃসন্দেহে আমার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ খেলোয়াড়। গ্রেট ফুটবলার সে। সব দিন সে ভালো খেলবে এমন নয়। তার বাজে দিনে অন্যদের দায়িত্ব নিয়ে ভালো খেলতে হবে। সেটা কিন্তু করছে আর্জেন্টিনা দলের অন্য খেলোয়াড়রা। তাই আমরা জিতেছি।’ এরপর যোগ করেন, ‘মোদ্দা কথা আর্জেন্টিনা দল এখন অনেক বেশি ঐক্যবদ্ধ। পরস্পরের মধ্যে চমৎকার বোঝাপড়া। দেশের জন্য সবাই অন্তর দিয়ে খেলে।’ ঠোঁটে তিন সেলাই নেয়া ডিফেন্ডার পাবলো জাবালেতার মতে, আমরা জিতেছি ঠিকই কিন্তু প্রত্যাশামাফিক ভালো খেলাটা হচ্ছে না আমাদের। মেসিও দুই ম্যাচ তার সুনাম অনুযায়ী খেলতে পারেনি। এরপরও জিতেছি। কারণ আমাদের দলটা এখন অনেক বেশি সংগঠিত, যা কিছু দিন আগেও অনেকে কল্পনা করতে পারেনি। সব ফুটবলার এক সুতায় গাঁথা। সাফল্যের জন্য এমন ঐক্যবদ্ধতাই প্রয়োজন। স্ট্রাইকার ইজ্জেকুয়েল ল্যাভেজ্জির বক্তব্য, ট্যাকটিক্যালি আরো উন্নতি করতে হবে আমাদের। তবে মাঠে আমরা সবাই একতাবদ্ধ হয়ে খেলেছি। পরস্পরের প্রতি শ্রদ্ধা, ভালোবাসা, সম্মান আছে, যা আমাদের এত দূর নিয়ে এসেছে। তাদের মতো ম্যাক্সি রডরিগুয়েজ, রোজো, হিগুয়েইন, অ্যাগুয়েরোরা খুবই উৎফুল্ল দল ২৪ বছর পর বিশ্বকাপের ফাইনালে ওঠায়। কিন্তু ফাইনাল নিয়ে জাবালেতার আশঙ্কা, আর্জেন্টিনা দল ১২০ মিনিট ম্যাচ খেলেছে সেমিতে। দ্বিতীয় রাউন্ডেও তাই। এর একটা ধাক্কা পড়েছে দলের খেলোয়াড়দের ওপর। আর জার্মানি তো এক দিন আগে সেমিফাইনাল খেলে ফাইনালের জন্য এক দিন বেশি বিশ্রামের সুযোগ পেয়েছে।
No comments:
Post a Comment