রেলওয়ের জায়গা দখল করে তিনি ঘর নির্মাণ করেছেন। বসিয়েছেন অনুমোদনহীন হাট। সন্ধ্যায় তাঁর লোকজনের হাতে ব্যবসায়ীদের চাঁদার টাকা তুলে দিতে হতো। না দিলে নেমে আসত নির্যাতন। নিজেকে তিনি সাংসদ মঈন উদ্দীন খান বাদলের ভাগনে বলে পরিচয় দিতেন। তাই ভয়ে তাঁর বিরুদ্ধে কেউ মুখ খুলতেন না। তাঁর নাম মিজানুর রহমান ওরফে বাপ্পী। চট্টগ্রাম নগরের মোহরার রাস্তার মাথা এলাকায় মোহরার কাজীর হাট, কামাল বাজার ও রাস্তার মাথা এলা
কার পাঁচ শতাধিক ব্যবসায়ীকে এভাবে জিম্মি করে রেখেছিলেন মিজানুর। ২০০৯ সালে মহাজোট সরকার ক্ষমতায় আসার পর তাঁর উত্থান ঘটে। ওয়ার্ড কাউন্সিলর মোহাম্মদ আজম প্রথম আলোর কাছে অভিযোগ করেন, ‘সাংসদ মঈন উদ্দীন খান বাদলের ছত্রচ্ছয়ায় ও যুবলীগের নাম ভাঙিয়ে মিজানুর দীর্ঘদিন ধরে চাঁদাবাজি ও সন্ত্রাসী কার্যকলাপ চালাচ্ছে। সাংসদ এলাকার বিভিন্ন অনুষ্ঠানে মিজানুরকে যুবলীগের নেতা বলে সম্বোধন করেন। অথচ যুবলীগের কোনো পদে নেই তিনি।’ সাংসদ মঈন উদ্দীন অবশ্য বলেন, ‘আমি কোনো দিন চাঁদাবাজি ও সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডকে প্রশ্রয় দিইনি। মিজানুর নামে আমার কোনো ভাগনে নেই। ব্যবসায়ীকে আটক ও চাঁদাবাজির অভিযোগ শোনামাত্র আমি তাকে গ্রেপ্তার করতে পুলিশকে নির্দেশ দিয়েছি।’ এলাকাবাসী জানান, পবিত্র ঈদুল ফিতরের আগের দিন চাঁদার দাবিতে কাজীর হাট ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি সাইফুদ্দিন সওদাগরকে আটকে রাখেন মিজানুর। এ ঘটনায় বিক্ষুব্ধ এলাকাবাসী ঈদের দিন তাঁকে গণপিটুনি দিয়ে পুলিশে সোপর্দ করেন। তাঁর দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিতে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির নেতা-কর্মীরা একসঙ্গে কর্মসূচি পালন করেন। সাইফুদ্দিন সওদাগর অভিযোগ করেন, ‘মিজানুর আমার কাছ থেকে পাঁচ লাখ টাকা, মুদি দোকানদার নুরুচ্ছাফার কাছ থেকে ৬৫ হাজার টাকা এবং চায়ের দোকানদার হক মিয়ার কাছ থেকে ২০ হাজার টাকা চাঁদা নেন। তিনি নিজেকে সাংসদের ভাগনে বলে পরিচয় দেন। ফলে অনেকের কাছ থেকে চাঁদা নিলেও ভয়ে কেউ মুখ খুলছেন না।’ গতকাল শনিবার সরেজমিনে দেখা গেছে, মোহরার কাপ্তাই রাস্তার মাথা এলাকায় রেললাইনের পাশে প্রায় ৩০০ ফুট দীর্ঘ জায়গায় টিনের ঘর। সেখানে মাছ ও সবজির প্রায় ৬০টি দোকান রয়েছে। মিজানুর গ্রেপ্তার ও ঈদের কয়েক দিন বন্ধ থাকার পর মঙ্গলবার থেকে পুরোদমে বাজারটি চালু হয়েছে। বাজারের আশপাশের ফুটপাত, রাস্তা ও রেললাইন ঘেঁষে রয়েছে আরও অর্ধশত ভাসমান সবজির দোকান। এসব দোকানও নিয়ন্ত্রণ করতেন মিজানুর। এলাকার বৈধ বাজার দুটি সপ্তাহের নির্ধারিত দিনে বসে। আর মিজানুরের বাজার বসে প্রতিদিন। রেলওয়ের পূর্বাঞ্চলের বিভাগীয় ভূ-সম্পদ কর্মকর্তা মো. জসীম উদ্দিন গতকাল প্রথম আলোকে বলেন, ‘মিজানুরকে কাপ্তাই রাস্তার মাথায় রেলওয়ের কোনো জমি ইজারা দেওয়া হয়নি। তিনি জোরজবরদস্তির মাধ্যমে বাজার করেছেন। উচ্ছেদের নোটিশ দিয়েছি। ১৫-২০ দিনের মধ্যে বাজারটি উচ্ছেদ করা হবে।’ বাজারের সবজিবিক্রেতা নবী হোসেন, আবদুল কুদ্দুস, বাবুল ও মোহাম্মদ ফিরোজ বলেন, মিজানুরের লোকজন প্রতিদিন সন্ধ্যায় মাছের দোকান থেকে ১০০-১৫০ টাকা এবং সবজির দোকান থেকে ৮০ টাকা করে নিত। টাকা না দিলে মারধর করা হতো। তবে মিজানুর গ্রেপ্তার হওয়ার পর তাঁরা আর কাউকে চাঁদা দেননি। চান্দগাঁও থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সৈয়দ আবদুর রউফ বলেন, ‘অভিযোগ পেয়ে মিজানুরসহ দুজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। পুলিশ ও সাইফুদ্দিন সওদাগর বাদী হয়ে মিজানুরসহ পাঁচ-ছয়জনকে আসামি করে দুটি মামলা করেছে। তাদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।’ ওসি জানান, মিজানুরকে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। কারাগারে থাকায় এ ঘটনায় মিজানুরের বক্তব্য জানা যায়নি। তবে ৪ আগস্ট মিজানুরের বাবা কামালউদ্দিন চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করে তাঁর ছেলেকে নির্দোষ দাবি করেন। তিনি বলেন, তাঁর ছেলে স্থানীয় নোংরা রাজনীতির শিকার।
No comments:
Post a Comment