দেশ থেকে জঙ্গি নির্মূলে নিষিদ্ধ করা হয়েছে পাঁচটি জঙ্গি সংগঠনকে। আরো ১১টিকে নিষিদ্ধ করার প্রক্রিয়া চলছে। জঙ্গিদের ধরতে পুরস্কার ঘোষণা করেছে সরকার। পুলিশ-র্যাব-গোয়েন্দারা চালাচ্ছে নানা গবেষণা ও অভিযান। তৈরি হচ্ছে তালিকার পর তালিকা। কিন্তু জঙ্গি তৎপরতা থেমে নেই দেশে। কালের কণ্ঠের অনুসন্ধানে জানা গেছে, আত্মগোপনে থেকেই সুসংগঠিত হচ্ছে তারা। জেএমবি ও হুজির সদস্যরা অনেকটা এক হয়ে গেছে। নতুন সংগঠনের ব্যানা
রে প্রকাশ্যে আসার চেষ্টায় আছে তারা। ইন্টারনেটের মাধ্যমে কর্মী সংগ্রহ করা হচ্ছে। শিক্ষিত ও প্রশিক্ষিতদের দলে ভেড়ানো হচ্ছে। বিদেশ থেকে আসছে অর্থ। বিদেশে থাকা জঙ্গিরাও তৎপর। নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ওরা সুযোগের অপেক্ষায় আছে; ২১ আগস্টের মতো বড় ধরনের নাশকতা ঘটিয়ে ফেলতে পারে যখন-তখন। ওদিকে হদিস নেই আফগানফেরত সেই ৮৪ জঙ্গির। জানা গেছে, তাদের সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ আছে আল-কায়েদার একাধিক শীর্ষ নেতার। দেশের বিভিন্ন আদালতে বিচারাধীন মামলায় ২৬৬ জঙ্গি জামিন নিয়ে কারাগার থেকে বের হয়ে গেছে। তার মধ্যে ৮৭ জনই পালিয়ে গেছে দেশের বাইরে। মাত্র ৩২ জঙ্গি আদালতে নিয়মিত হাজিরা দিচ্ছে, বাকিরা লাপাত্তা। স্থবির হয়ে আছে জঙ্গিদের বিরুদ্ধে দায়ের করা শতাধিক মামলার তদন্ত। মামলাগুলোও হয়েছে দুর্বলভাবে। তদন্ত কর্মকর্তারা প্রয়োজনীয় তথ্য-প্রমাণ আদালতে উপস্থাপনে ব্যর্থ হওয়ায় বিচারপ্রক্রিয়াও হচ্ছে দীর্ঘায়িত। এদিকে জঙ্গিবাদবিরোধী কাজে নিয়োজিত ১৭টি প্রতিষ্ঠানের কোনো ধরনের কর্মকাণ্ড নেই। নিয়মিত মিটিং হওয়ার কথা থাকলেও তা হয় না। জঙ্গিদের সুপথে আনতে মসজিদের ইমামদের সহায়তা নেওয়ার সিদ্ধান্ত হলেও তা হচ্ছে না। স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খানের দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে কালের কণ্ঠকে তিনি বলেন, ‘জঙ্গি সংগঠনগুলোকে পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে আনতে নতুন করে নানা কৌশল হাতে নেওয়া হয়েছে। ইসলামের ভুল ব্যাখ্যা দিয়ে ওরা যেন নতুন করে কাউকে জঙ্গি সংগঠনে ভেড়াতে না পারে, সে জন্য মসজিদের ইমাম থেকে শুরু করে আলেমসমাজকে কাজে লাগানো হবে। সক্রিয় করা হবে ১৭টি প্রতিষ্ঠানকে। মসজিদ-মাদ্রাসা, স্কুল, কলেজ ও সরকারি-বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে নজরদারি বাড়ানো হবে। জঙ্গিদের যারা পৃষ্ঠপোষকতা করেছিল, তাদের চিহ্নিত করার কাজ চলছে। আমাদের কাছে তথ্য রয়েছে, রাজনৈতিক লেবাসে জঙ্গিরা আবারও সক্রিয় হয়ে ওঠার চেষ্টা করছে। তবে তাদের সেই খায়েশ পূরণ হবে না বলে আশা করছি।’ সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, জামা’আতুল মুজাহিদীন- জেএমবি, হরকাতুল জিহাদ- হুজি, শাহাদৎ আল হিকমা, জাগ্রত মুসলিম জনতা ও হিযবুত তাহ্রীরকে নিষিদ্ধ করার পর তাদের কর্মকাণ্ড একটুও থেমে থাকেনি। হুজি নেতা মুফতি শফিকুর রহমান ও মাওলানা তাজউদ্দিন, জেএমবি নেতা মাওলানা সায়েম ভারত ও দক্ষিণ আফ্রিকা থেকে এ দেশে কলকাঠি নাড়ছেন। কারাগারে আটক হুজি নেতা মুফতি হান্নান ও জেএমবি নেতা সাইদুর রহমানও বিশেষ নির্দেশনা পাঠিয়েছেন আপাতত আন্ডারগ্রাউন্ডে এককাতারে থাকার জন্য। এই দুটি সংগঠন নিষিদ্ধ হওয়ায় তারা গোপনে জামায়াতুল মুসলেমিন ও আনসারউল্লাহ বাংলা টিমকে সহযোগিতা করছে। সম্প্রতি বিশেষ আয়োজনে এই প্রতিবেদকের সঙ্গে কথা হয় জেএমবির এক নেতার। তিনি বলেন, ‘আমরা চাচ্ছি সমাজে আল্লাহর আইন বাস্তবায়ন করতে। কোনো সরকারকে ঘায়েল করার জন্য আমরা কাজ করছি না। কিন্তু সরকার আমাদের নেতাদের ধরে ফাঁসি কার্যকর করেছে। আমরা এখন আন্ডারগ্রাউন্ডে থেকে সংগঠিত হচ্ছি। জেএমবি ও হুজির সদস্যরা মোটামুটি এক হয়ে গেছে। নতুন একটি সংগঠন গঠন করার চেষ্টা চলছে। নামও চূড়ান্ত হয়েছে। তবে তা এখনই বলা যাবে না। কিছু সদস্য আনসারউল্লাহ বাংলা টিম ও জামায়াতুল মুসলেমিনে চলে গেছে, এটা সত্য। তবে তারা আমাদের নতুন সংগঠনে ফিরে আসবে। ইতিমধ্যে দেশের বাইরে চলে গেছে কিছু নেতা। তারাও তৎপর আছে। সুযোগমতো আমরা লাইমলাইটে আসব।’ এক প্রশ্নের জবাবে ওই নেতা বলেন, ‘বিদেশ থেকে অর্থ আসছে। সৌদি আরব, মিসর, কাতারসহ বিভিন্ন দেশে আমাদের সাথি ভাইয়েরা আছে। তারা আমাদের সহায়তা করছে।’ এর বেশি কিছু বলতে তিনি অস্বীকৃতি জানান। পুলিশের মহাপরিদর্শক হাসান মাহমুদ খন্দকার কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘দেশ থেকে জঙ্গি নিধন হয়েছে তা বলব না। তবে জঙ্গি সংগঠনগুলোর কর্মকাণ্ড পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে আছে। বড় ধরনের হামলা চালানোর শক্তি নেই তাদের। গোপনে থেকে জঙ্গিরা সংগঠিত হওয়ার পাঁয়তারা করলে লাভ হবে না। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর অভিযান অব্যাহত আছে। ইসলামকে পুঁজি করে যেন আর কেউ দেশে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টি করতে না পারে, সেদিকে বিশেষ নজর দেওয়া হচ্ছে।’ জঙ্গি মামলার তদন্ত স্থবির : ঢাকাসহ সারা দেশে অন্তত শতাধিক জঙ্গি মামলার তদন্ত নেই বললেই চলে। মামলার তদন্ত কর্মকর্তারা তথ্য-প্রমাণ আদালতে উপস্থাপন করতে ব্যর্থ হওয়ায় বিচারপ্রক্রিয়া দীর্ঘায়িত হচ্ছে এবং অপরাধীরা খালাসও পেয়ে যাচ্ছে। গত ২৩ ফেব্রুয়ারি কাশিমপুর কারাগার থেকে ময়মনসিংহ আদালতে নেওয়ার পথে ত্রিশালে জেএমবির তিন শীর্ষ নেতা সালাউদ্দিন ওরফে সালেহীন, রাকিব হাসান ওরফে হাফেজ মাহমুদ ও জাহিদুল ইসলাম ওরফে বোমারু মিজানকে ছিনিয়ে নেওয়ার ঘটনায় দায়ের হওয়া মামলার তদন্তও ঝুলে আছে। এখনো পলাতক তিন জঙ্গির কোনো হদিস নেই। তাদের ধরারও কার্যত উদ্যোগ নেই। এ অবস্থায় কারাবন্দি জঙ্গিরাও নানাভাবে তৎপর হয়ে উঠছে। পাশাপাশি অনেক জঙ্গি তথ্য ও পরিচয় গোপন করে জামিনে মুক্ত হয়ে আগের অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে পড়ছে বলে গোয়েন্দারা নিশ্চিত হয়েছে। এই প্রসঙ্গে স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান বলেন, সারা দেশে যেসব জঙ্গি মামলার তদন্ত এখনো শেষ হয়নি, তা দ্রুত সম্পন্ন করতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে বিশেষ নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। ইতিমধ্যে ১৭ আগস্টসহ অন্যান্য জঙ্গি হামলার একাধিক মামলার বিচারপ্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়েছে। দেশে আগের মতো জঙ্গিদের অপতৎপরতা নেই বললেই চলে। ত্রিশালে ছিনিয়ে নেওয়া তিন জঙ্গিকে ধরার চেষ্টা চলছে। পুলিশ সদর দপ্তর সূত্র জানায়, ২০১০ সাল থেকে গত বছরের ১৮ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত র্যাব ও পুলিশের অভিযানে গ্রেপ্তার হওয়া জঙ্গি ও তাদের বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলার অগ্রগতি সম্পর্কিত একটি প্রতিবেদন সম্প্রতি পুলিশ সদর দপ্তরে এসেছে। ওই প্রতিবেদনে দেখা যায়, গত তিন বছরে সারা দেশে নিষিদ্ধঘোষিত সংগঠন হিযবুত তাহ্রীরের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে ৮৩টি। এর মধ্যে তদন্তাধীন মামলার সংখ্যা ১১ আর বিচারাধীন রয়েছে ৭২টি। দীর্ঘসূত্রতার কারণে এখন পর্যন্ত একটি মামলারও রায় হয়নি। এরই মধ্যে জামিনে ছাড়া পেয়েছে ১০৯ জন আসামি, পলাতক রয়েছে পাঁচজন। র্যাব ও পুলিশের দায়ের করা মামলায় ২৬৫ জন আসামির মধ্যে গ্রেপ্তার হয়েছে ১৫১ জন। একই সময় জঙ্গি সংগঠন হিজবুত তাওহীদের ২৬ নেতা-কর্মীকে আসামি করে দুটি মামলা করে বরিশাল পুলিশ। মামলা দুটি বিচারাধীন। একজন আসামি কারাগারে থাকলেও এরই মধ্যে জামিনে বেরিয়ে গেছে ২৫ জন জঙ্গি। আল্লাহর দল নামে পরিচিত জঙ্গি সংগঠনের নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে সাতটি মামলার মধ্যে তদন্তাধীন দুটি; বিচারাধীন তিনটি; রায় ঘোষণা হয়েছে দুটি মামলার। বিভিন্ন মেয়াদে সাজা হয়েছে ১০ জনের। জামিনে আছে ৩৬ জন। র্যাব ও পুলিশ গ্রেপ্তার করেছে ২১ জনকে। সাতটি মামলার আসামির সংখ্যা ৫৭। লস্কর-ই-তৈয়বার নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলাগুলোর মধ্যে বিচারাধীন সাতটি। একটি মামলারও রায় হয়নি। আট আসামির মধ্যে জামিনে আছে দুজন। কারাগারে আছে ছয়জন। জইশ-ই-মোহাম্মদের দুটি মামলার মধ্যে একটির রায় হয়েছে; একটির বিচারকাজ চলছে। আটজন আসামির মধ্যে কারাদণ্ড হয়েছে একজনের। জামিনে আছে তিনজন। কারাগারে আছে চারজন। আইনজীবীরা বলেছেন, জঙ্গিদের ব্যাপারে পুলিশ জোরালো তথ্য দিতে পারেনি এবং পারছে না; যার ফলে বিচারপ্রক্রিয়া এখনো শেষ হচ্ছে না। আইনজীবী মোহাম্মদ শহিদুল্লাহ কালের কণ্ঠকে বলেন, আবার কিছু মামলার বিচার হলেও তথ্য-প্রমাণের অভাবে জঙ্গিরা খালাস পেয়ে গেছে। এখনো অনেক মামলা বিচারাধীন। নব নব জঙ্গি : পুলিশ সদর দপ্তরের এক কর্মকর্তা বলেন, বগুড়ার ঠনঠনিয়ায় বিইএম নামে একটি নতুন জঙ্গি সংগঠনের আত্মপ্রকাশের রেশ কাটতে না কাটতে আরেকটি জঙ্গি সংগঠনের অস্তিত্ব ধরা পড়ে। এটির নাম জামায়াতে আরাকান। এরই মধ্যে কয়েকজন ধরা পড়েছে। তাদের কাছ থেকে উদ্ধার হয়েছে নাশকতার সরঞ্জাম। আরাকানের সদস্যরা কক্সবাজার, রাঙামাটি, বান্দরবান, চট্টগ্রাম, রাজশাহী, বরিশাল, মিয়ানমার সীমান্তসহ আরো কয়েকটি স্থানে সক্রিয়। এ সংগঠনের পেছনে সব ধরনের কলকাঠি নাড়ছেন সেনাবাহিনী থেকে বহিষ্কৃত মেজর জিয়াউল হক। এ ছাড়া জিয়ার সঙ্গে আনসারউল্লাহ বাংলা টিমেরও যোগাযোগ রয়েছে। ওই কর্মকর্তা আরো বলেন, জঙ্গিদের অত্যাধুনিক তথ্যপ্রযুক্তি শাখা রয়েছে। বিচারাধীন ২৬৬ জঙ্গির জামিন : গত তিন বছরে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে জেএমবি ও হুজির শীর্ষ নেতাসহ ২৬৬ জন আদালত থেকে জামিন নিয়ে কারাগার থেকে বের হয়ে গেছে। তারা আত্মগোপনে থেকে সংগঠনকে সুসংগঠিত করার চেষ্টা করছে বলে গোয়েন্দারা নিশ্চিত হয়েছে। এরই মধ্যে র্যাব ও পুলিশ জামিনপ্রাপ্তদের তালিকা করেছে। এদের মধ্যে রয়েছে জেএমবির শুরা সদস্য তরিকুল্লাহ রুবেল, সুমন আবদুল্লাহ, জাহিদুর রহমান, ইউসুফ আল আসাদুল্লাহ বিন ওয়াহিদুল্লাহ, আবদুল মতিন ওরফে জাহিদ, এস এম আশরাফুজ্জামান, শাহনেওয়াজ আল মারুফ, এরমানুল হক ওরফে মইনুল ওরফে আবু তোবা, আবু বক্কর সিদ্দিক ওরফে হানিফ, মো. তৌফিকুল ইসলাম, আতাউর রহমান, হাসান ওরফে সিহাব ওরফে রেজাউল করিম, শহীদুল ইসলাম, মো. ইউসুফ আলী, আবদুল আলিম, মো. একরামুল হক, জামালপুরের রুকনুজ্জামান, হাসান শেখ, হুজির শীর্ষ নেতা ঢাকার মোহাম্মদপুরের মাওলানা মো. ইদ্রিস আলী, মাওলানা আবদুল লতিফ, রমনার মাওলানা আকবর হোসেন, সাভারের আশরাফুল ইসলাম, গোপালগঞ্জের বাসুদেব সাহা, রাজবাড়ীর মতিয়ার রহমান, ময়মনসিংহের সাইফুল ইসলাম প্রমুখ। পালিয়েছে ৮৭ জঙ্গি: জামিন নিয়ে ৮৭ জঙ্গি সীমান্ত এলাকা দিয়ে পালিয়ে গেছে বলে গোয়েন্দারা নিশ্চিত হয়েছে। তাদের মধ্যে আছে মাওলানা আকবর হোসেন ওরফে হেলাল উদ্দিন, মাওলানা তাজউদ্দিন, মুফতি শফিকুর রহমান, মাওলানা সাব্বির ওরফে হান্নান, হাফেজ আবু বকর ওরফে সেলিম হাওলাদার, মুফতি আব্দুল হাই ওরফে আবু নাইম, হাফেজ জাহাঙ্গীর বদর, গোপালগঞ্জের মাওলানা আমিরুল ইসলাম, আনিছুর রহমান খোকন, ইউনুছ আলী সরদার, জুলফিকার আলী, রাঙামাটির রুহুল আমিন, গিয়াস উদ্দিন, মৌলভীবাজারের মারুফ মোহাম্মদ ইউসুফ, ময়মনসিংহের আবদুস সামাদ, মুক্তাগাছার হাতেম আলী, ময়মনসিংহের আমিনুল ইসলাম, আবদুল হালিম, সিলেটের ডাক্তার আরিফ আহম্মেদ মমতাজ, নারায়ণগঞ্জের আবদুল আজিজ সৈকত, রবিউল ইসলাম সোহাগ, লক্ষ্মীপুরের নজরুল ইসলাম সুমন, লিয়াকত শেখ, আবদুল আহাদ খান, আমির খান, মাওলানা ওবাইদুর রহমান, আবু নোমান আমানউল্লাহ, মাওলানা আমিরুল ইসলাম, আনিরুল ইসলাম ওরফে আনিস, এইচ এম শফিকুল ইসলাম ওরফে শাকির, নুর সাঈদী ওরফে তিতুমীর, টাঈাইলের মাওলানা আবু তাহের, নারায়ণগঞ্জের আমিনুল হক ইমন, ময়মনসিংহের কাজী নুর আলম সিদ্দিকী, ময়মনসিংহের আমিনুল ইসলাম, ভোলার বোরহানউদ্দিনের ফয়সাল মোস্তফা প্রমুখ। এ প্রসঙ্গে পুলিশ সদর দপ্তরের এক কর্মকর্তা বলেন, তাদের ধরতে ইন্টারপোলের সহায়তা চাওয়া হবে। তাদের ছবি সংগ্রহ করা হচ্ছে। ৮৪ আফগানফেরত জঙ্গি ও আল-কায়েদা সম্পর্ক! : গোয়েন্দাদের কাছে তথ্য এসেছে, ৮৪ জন আফগানফেরত জঙ্গির যোগাযোগ আছে আল-কায়েদার সঙ্গে। বিশেষ করে মোল্লা ওমরের সঙ্গে তারা একাধিকবার বৈঠক করেছে। কিন্তু তারা কোথায় কেউ বলতে পারে না। এরই মধ্যে একটি গোয়েন্দা সংস্থা তাদের তালিকা করেছে। তালিকাভুক্তদের মধ্যে মাওলানা শহীদুল ইসলাম, মাওলানা মুফতি মাহমুদুল হাসান, মুফতি মোহম্মদ হাসান, মুফতি আব্দুর রশিদ, মুফতি সাইদ নুর, মুফতি রুহুল আমিন, মাওলানা সাইফুল ইসলাম, মাওলানা ইমরানুজ্জামান, মাওলানা আবুল বাশার, মাওলানা নুরুল আমিন, মাওলানা রুহুল আমিন, মাওলানা আবু তাহের, মুফতি দেলোয়ার হোসেন প্রমুখ সক্রিয় আছে। বিদেশি জঙ্গিরাও তৎপর : লস্কর-ই-তৈয়বা ও মুজাহিদীনের একাধিক সদস্য বাংলাদেশে তৎপর। এই দুটি সংগঠনের বেশির ভাগ সদস্য ভারত ও পাকিস্তানের নাগরিক। তারা জাল মুদ্রার ব্যবসাও করছে। ভিনদেশি জঙ্গিদের মধ্যে খুররুম খৈয়াম, জয়নাল আবেদীন, মাওলানা রহিম, মাওলানা জনি সব ধরনের কলকাঠি নাড়ছে। এ প্রসঙ্গে র্যাবের এক কর্মকর্তা বলেন, ভিনদেশি জঙ্গিদের বেশ কয়েকজনকে এরই মধ্যে ধরা হয়েছে। তার মধ্যে দাউদ মার্চেন্ট অন্যতম। জামায়াতে আরাকান সংগ্রহ করছে রোহিঙ্গাদের : পাহাড়ি অঞ্চলে তৎপর জামায়াতে আরাকান নামের একটি জঙ্গি সংগঠনের সদস্যরা কক্সবাজার, বান্দরবান, খাগড়াছড়ি, টেকনাফসহ আরো কয়েকটি স্থানে বেশি সক্রিয়। এর মূল হোতা সেনাবাহিনী থেকে বহিষ্কৃত মেজর জিয়াউল হক। সংগঠনের ব্যানারে দুর্গম পাহাড়ে জঙ্গিরা মিটিং করে। থমকে আছে ১৭ প্রতিষ্ঠানের তৎপরতা : স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় গঠিত জঙ্গিবাদ প্রতিরোধ ও প্রতিকারবিষয়ক জাতীয় কমিটির কোনো কর্মকাণ্ড নেই বললেই চলে। বাংলাদেশ ব্যাংক, স্থানীয় সরকার, পররাষ্ট্র, শিক্ষা, তথ্য, সমাজকল্যাণ, ধর্ম মন্ত্রণালয়, ইসলামিক ফাউন্ডেশন, পুলিশ, র্যাব, বিজিবিসহ কয়েকটি গোয়েন্দা সংস্থার জঙ্গি নিধনে কাজ করার কথা। কিন্তু কমিটির কোনো বৈঠকও হচ্ছে না। বিশেষজ্ঞরা বলেন... : সাবেক নির্বাচন কমিশনার ও নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞ ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) এম সাখাওয়াত হোসেন কালের কণ্ঠকে বলেন, জঙ্গিরা ঘাপটি মেরে সুযোগের অপেক্ষায় আছে। কেউ যদি মনে করে দেশ থেকে জঙ্গি তৎপরতা শেষ হয়ে গেছে, তা হবে ভুল। এখন থেকেই গোয়েন্দা নজরদারি বাড়াতে হবে। দুর্বল মামলা হওয়ার কারণেই জঙ্গিরা জামিন পেয়ে যাচ্ছে। একই কথা বলেছেন আরেক নিরাপত্তা বিশ্লেষক মেজর জেনারেল (অব.) আবদুর রশীদ। তিনি বলেন, স্পেশাল ট্রাইব্যুনাল গঠন করে জঙ্গিদের বিচার করতে হবে। অর্থ প্রদানকারীদের দ্রুত চিহ্নিত করে ব্যবস্থা নিতে হবে। তা না হলে জঙ্গিদের অপতৎপরতা কিছুতেই রোধ করা সম্ভব হবে না। পুলিশের নির্দেশনা : পুলিশ সদর দপ্তরের এক কর্মকর্তা কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘জঙ্গিরা আন্ডারগ্রাউন্ডে থেকে কলকাঠি নাড়ছে বলে আমরা তথ্য পেয়েছি। এই জন্য ৬৪ জেলা পুলিশ সুপারের কাছে দিকনির্দেশনা পাঠানো হয়েছে। নির্দেশনার মধ্যে আছে জামায়াত-শিবিরের ক্যাডারদের ওপর নজরদারি, চরমপন্থীদের চিহ্নিত করা, আবাসিক হোটেলগুলোতে সার্বক্ষণিক নজরদারি, গুরুত্বপূর্ণ রাস্তায় চেকপোস্ট বসিয়ে তল্লাশি, গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনায় নজরদারি বৃদ্ধি, মসজিদের ইমামদের ধর্মীয় কাজে লাগানো, প্রতি শুক্রবার জুমার দিন ইসলাম সম্পর্কে বক্তব্যে জঙ্গিদের বিরুদ্ধে সচেতনতা বাড়ানো ইত্যাদি।
No comments:
Post a Comment