Thursday, August 21, 2014

সরকারকে দ্রুত নির্বাচন দিতে বাধ্য করা হবে:কালের কন্ঠ

সরকার যত কথাই বলুক না কেন, সংলাপে তাদের বসতেই হবে এবং ২০১৯ সালের অনেক আগেই সুষ্ঠু নির্বাচন দিতে বাধ্য হবে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি বলেন, ৫ জানুয়ারির তামাশার নির্বাচনে ক্ষমতাসীন হয়ে এ সরকার যদি ভাবে ২০১৯ সাল পর্যন্ত মসনদে বসে থাকবে তাহলে তারা ভুলের স্বর্গে বসবাস করছে। তিনি বলেন, যে নির্বাচনে দেশের সব রাজনৈতিক দল অংশ নিতে পারে সেই নির্বাচনী পরিবেশ
সৃষ্টি করতে হবে। তিনি বলেন, ‘সরকারকেই সংলাপের উদ্যোগ নিতে হবে। আমরা রাস্তায় আন্দোলন করতে চাই না। সরকার আলোচনার মাধ্যমে একটি সুষ্ঠু নির্বাচন দিলে আর কোনো কিছুর দরকার হবে না।’ গতকাল বুধবার ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি আয়োজিত সাগর-রুনি মিলনায়তনে ‘মিট দ্য প্রেস’ অনুষ্ঠানে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হন বিএনপি নেতা মির্জ ফখরুল ইসলাম আলমগীর। গতকাল অনুষ্ঠানের শুরুতে বিএনপির মুখপাত্র মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর দেশের সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ে বক্তব্য দেন। তিনি দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি, বিএনপি তথা ২০ দলের আন্দোলনের কর্মকৌশল, ৫ জানুয়ারির নির্বাচন বর্জন, জঙ্গিবাদ ও  মৌলবাদ, জাতীয় সম্প্রচার নীতিমালা, বিচারপতিদের অভিশংসন আইনসহ বিভিন্ন প্রসঙ্গে সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তর ও দলের অবস্থান তুলে ধরেন। এ সময় মঞ্চে উপস্থিত ছিলেন ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির সভাপতি শাহেদ চৌধুরী ও সাধারণ সম্পাদক ইলিয়াস খান প্রমুখ। ক্ষমতাসীন সরকারের পতন ঘটাতে বিএনপির কোনো ট্রামকার্ড আছে কি না জানতে চাইলে মির্জা ফখরুল বলেন, বিএনপি কোনো ট্রামকার্ড রাজনীতিতে বিশ্বাস করে না। জনগণকে সঙ্গে নিয়েই চূড়ান্ত আন্দোলনের মাধ্যমে সরকারকে ক্ষমতা থেকে বিদায় করা হবে। তিনি বলেন, ৫ জানুয়ারি ভোটারবিহীন নির্বাচন করে সরকার ভাবছে ২০১৯ সাল পর্যন্ত তারা অবৈধভাবে দেশ পরিচালনা করবে। তারা একেবারেই ভুলের স্বর্গে বাস করছে। জনগণ ওই নির্বাচন কখনো মেনে নেয়নি। বিশ্ববাসীও সমর্থন করেনি। তিনি বলেন, বিএনপি জনগণের ওপর বিশ্বাস রাখে। অতি দ্রুত দেশের মানুষ রাস্তায় নেমে আসবে। তখন সরকারের পতন অনিবার্য। ৫ জানুয়ারির নির্বাচন বর্জনের পর বিএনপি জোট নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে আগাম নির্বাচনের দাবি জানালেও সরকারের পক্ষ থেকে তা বরাবরই প্রত্যাখ্যান করা হচ্ছে। আওয়ামী লীগ নেতারা বিএনপিকে পাঁচ বছর পর্যন্ত অপেক্ষা করতে বলার পাশাপাশি বলছেন, এই মুহূর্তে কোনো ধরনের আন্দোলনে জনগণ সাড়া দেবে না। এরপর গত ১২ আগস্ট বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোট ১৩ দিনের কর্মসূচি ঘোষণা করলেও তাতে মিছিল, সমাবেশ ও গণসংযোগের বাইরে কোনো কঠোর কর্মসূচি নেই। অথচ বিএনপির শীর্ষস্থানীয় নেতারা ঈদের পর সরকারের বিরুদ্ধে কঠোর আন্দোলনের হুমকি দিলে আওয়ামী লীগের নেতারাও মাঠে থাকার পাল্টা ঘোষণা দেন। ঈদের পর বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া কিছুটা নমনীয় সুরে বলেন, আন্দোলন হবে নিয়মতান্ত্রিক পদ্ধতিতে। কর্মসূচি হবে শান্তিপূর্ণ। এ বিষয়ে জানতে চাইলে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘গাড়ি যেমন প্রথমে ফার্স্ট, সেকেন্ড ও পরে থার্ড গিয়ার দিয়ে গতি বাড়াতে হয়, তেমনি আন্দোলনও তীব্র থেকে তীব্রতর হবে। আমরা বিশ্বাস করি,  নির্বাচনের দাবিতে জনগণ যত দ্রুত রাজপথে নেমে আসবে, তত দ্রুত আন্দোলন টপ গিয়ারে উঠবে। জনগণকে সঙ্গে নিয়ে এই সরকারের বিদায় নিশ্চিত করা হবে।’ তিনি বলেন, বিগত দিনে বিএনপির আন্দোলন ব্যর্থ হয়নি। বাংলাদেশের মানুষ নিশ্চিত হয়েছে যে, আন্দোলন ছাড়া এই সরকারকে ক্ষমতা থেকে বিদায় করা যাবে না। তাই আন্দোলনের বিকল্প নেই। অসহিংস ও শান্তিপূর্ণ আন্দোলনের মাধ্যমে সরকারকে বিদায় করা সম্ভব হবে কি না জানতে চাইলে মির্জা ফখরুল বলেন, বিএনপি কোনো সহিংস আন্দোলন করেনি। সহিংসতা যা করার তা সরকার তার আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের দিয়ে করিয়েছে। জামায়াতে ইসলামীর সঙ্গে জোটবদ্ধ থাকলে আওয়ামী লীগ বিএনপির সঙ্গে সংলাপে বসতে আগ্রহী নয়- এ ব্যাপারে মন্তব্য করতে বলা হলে মির্জা ফখরুল বলেন, এর আগেও তারা বলেছে জামায়াত থাকলে কোনো আলোচনা হবে না। কিন্তু আলোচনা হয়েছে। দুই দিন হলেও সরকার আমাদের সঙ্গে সংলাপ করেছে। সংলাপে বসতে ক্ষমতাসীনদের আনুষ্ঠানিকভাবে প্রস্তাব দেবেন কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, বিএনপি বারবার সংলাপের কথা বলে আসছে। সরকার এতে কর্ণপাত করছে না। সংলাপের জন্য আনুষ্ঠানিক বা অনানুষ্ঠানিক প্রস্তাব দেওয়ার কিছু নেই। যারা ক্ষমতায় থাকে তাদেরকেই সংলাপের উদ্যোগ নিতে হয়। মির্জা ফখরুল বলেন, বিচারকদের অভিসংশনের ক্ষমতা সংসদের হাতে যাওয়া গণতন্ত্রের জন্য অত্যন্ত বিপজ্জনক। বিচারকরা যাতে করে সরকারের বিরুদ্ধে কোনো রায় দিতে না পারেন, সে জন্যই এই উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। বিএনপি ক্ষমতায় এলে সম্প্রচার নীতিমালা বাতিল করা হবে কি না প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, বিএনপি আগামীতে ক্ষমতায় এলে সম্প্রচার নীতিমালাসহ সব অবৈধ অনৈতিক আইন বাতিল করা হবে। মুক্ত গণমাধ্যমের ব্যবস্থা নিশ্চিত করা হবে। সব সাংবাদিক হত্যার বিচার করা হবে।

No comments:

Post a Comment