সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা ড. হোসেন জিল্লুর রহমান বলেছেন, রানা প্লাজার ঘটনার পরেও প্রবৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে। সফল উদ্যেক্তারা এ ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখছেন। কিন্তু মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএ সেই উদ্যোক্তাদের প্রতিনিধিত্ব করছে না। তারা রাজনৈতিক শক্তির সাথে আঁতাত করে ত্রুটিপূর্ণ কারখানার মালিকদের পক্ষে কাজ করছে। তিনি বলেন, সরকার ও বিজিএমইএ কেন তোবার মালিক দেলোয়ারের প্রতিনিধিত্ব করছে তা আমা
র বোধগম্য নয়। সস্তা শ্রম শুরু থেকে বাংলাদেশের পোশাক শিল্পের চালিকাশক্তি হিসেবে কাজ করেছে। তবে প্রবৃদ্ধির গতি বজায় রাখতে হলে এখন আর শুধু সস্তা শ্রমের ওপর নির্ভর করলে চলবে না। দরকার দ শ্রমশক্তি। এর প্রতিফলন না ঘটলে এই শিল্প বেশি দূর এগোতে পারবে না। গতকাল জাতীয় প্রেস কাবে ‘পোশাক শিল্পে চ্যালেঞ্জ এবং উত্তরণের উপায়’ শীর্ষক জাতীয় সংলাপে তিনি এ কথা বলেন। গবেষণা সংগঠন চিন্তার চাষ ও দি ঢাকা ফোরাম যৌথভাবে সংলাপটি আয়োজন করে। বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গর্ভনর ড. সালেহউদ্দিন আহমেদের সভাপতিত্বে সংলাপে উপস্থিত ছিলেন সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আরেক উপদেষ্টা মাহবুব জামিল, বিশিষ্ট কলামিস্ট সৈয়দ আবুল মকসুদ, বিআইডিএসের গবেষণা পরিচালক ড. বিনায়ক সেন, অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক এম এম আকাশ, সিপিডির অতিরিক্ত গবেষণা পরিচালক ড. খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম, ঢাকা বিশ্বব্যিালয়ের অধ্যাপক কে এ এম সা’দউদ্দিন, ড. এ আই মাহবুব উদ্দীন আহমেদ, বিজিএমইএর সাবেক সভাপতি আব্দুস সালাম মুর্শেদী, বিকেএমইএর ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম, বিকেএমইএর সাবেক সভাপতি ফজলুল হক, চিন্তার চাষের চেয়ারম্যান মুহাম্মাদ শফিকুর রহমান, গার্মেন্টস শ্রমিক সংহতির সভাপতি তাসলিমা আক্তার লিমা, শ্রমিক নেতা বাহারানে সুলতান বাহার প্রমুখ। সংলাপে মূল প্রবন্ধ পাঠ করেন অর্থনৈতিক গবেষণা ব্যুরোর পরিচালক ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক ড. শফিকউজ্জামান। সভাপতির বক্তব্যে ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেন, যেকেনো েেত্র নীতিনির্ধারকদের সিদ্ধান্ত নিতে সমস্যা তৈরি হলে জটিলতার সৃষ্টি হয়। এখনো দেশে উদ্যোক্তাদের উন্নয়ন হয়নি। সৈয়দ আবুল মকসুদ বলেন, তোবায় অনশনরত মেয়েদের নির্মমভাবে পেটানো হয়েছে। সেখানে সংশ্লিষ্ট কেউ এগিয়ে আসেনি। অবস্থাদৃষ্টে মনে হয়েছে নিরীহ গার্মেন্টস কর্মীদের পেটানোই সঠিক। মালিক জেলখানা থেকে বের হয়ে শ্রমিকদের তালা মেরে দিলেন। আবার সেখান থেকে পিটিয়ে বের করে জেলে ঢুকিয়ে দিলেন। এটি আমাদের কাক্সিত ছিল না। পোশাক শিল্পকে বাঁচাতে হলে মালিক শ্রমিক সম্পর্কের উন্নয়ন ঘটাতে হবে। আর এই শিল্পের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় গবেষণা দরকার, যা করতে বিজিএমইএকে দায়িত্ব নিতে হবে। বিনায়ক সেন বলেন, বিকেন্দ্রীকরণের মাধ্যমে যারা ঢাকার বাইরে কারখানা করবে তাদের জন্য অবকাঠামোগত সুবিধা দিতে হবে। যার পুরো দায়িত্ব সরকারকে নিতে হবে। মাহবুব জামিল বলেন, রাজনৈতিকভাবে এখন ট্রেড ইউনিয়ন ব্যবহার হচ্ছে। এ থেকে বেরিয়ে এলে ট্রেড ইউনিয়ন আরো ভূমিকা রাখতে পারত। আবার সরকারের অনেক কিছু করার থাকলেও তারা তা করছে না। এম এম আকাশ বলেন, সরকারের দায়িত্বটা কতটুকু কার্যকর হবে তা রাজনৈতিক স্থিতিশীলতার ওপর পুরোপুরি নির্ভর করে। শ্রমিকদের অধিকার, নিয়মিত মজুরি কিংবা সঠিক তিপূরণ দিতে পারছি না আমরা। গোলাম মোয়াজ্জেম বলেন, পোশাক খাতে মালিক শ্রমিক উন্নতি যতটুকু হয়েছে ততটুকু সামাজিকভাবে হয়নি। শ্রমিকদের অতিরিক্ত কাজ ও উৎপাদনশীলতা একরকম নয়। তাদের চাপ দিয়ে ওভারটাইমের কাজ নির্ধারিত সময়ের মধ্যে করা হচ্ছে বলে মনে করেন তিনি। আব্দুস সালাম মুর্শেদী বলেন, এই শিল্পকে এগিয়ে নিতে চাইলে ঢাকার বাইরে বিদ্যুৎ, গ্যাস সংযোগ দিতে হবে। কোনো কারখানায় দুর্ঘটনা ঘটলে তদন্ত করে ব্যবস্থা নিতে হবে। রাস্তায় অ্যাক্সিডেন্ট হলে গার্মেন্টসে হামলার রীতি দূর করতে হবে। তাসলিমা আক্তার লিমা বলেন, এই শিল্পের ৩০ বছর পার হলেও কোনো দুর্ঘটনা হলে মালিক পক্ষ বলছে আমরা শিখছি। মানুষ ১৮ বছরে প্রাপ্তবয়স্ক হলেও গার্মেন্টস শিল্পের মালিকেরা ৩০ বছরেও প্রাপ্তবয়স্ক হচ্ছেন না। তাজরীন, রানা প্লাজার ক্ষতিগ্রস্তরা ক্ষতি পূরণ পাচ্ছে না। তিনি শ্রমিকদের মজুরি ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করার দাবি জানান।
No comments:
Post a Comment