সরকারের অন্যতম আলোচিত বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণ প্রকল্পের অনিশ্চয়তা কাটছে না। অর্থায়ন জটিলতা ও সিদ্ধান্তহীনতার কারণে এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। সম্প্রতি এ প্রকল্পের বিষয়ে চীনের একটি প্রতিষ্ঠান আনুষ্ঠানিক চিঠি দিয়েছে। সংশ্লিষ্ট দুটি মন্ত্রণালয়ের কাছে পাঠানো এ প্রস্তাবে অর্থায়নসহ প্রকল্পটির সব ধরনের কাজ সম্পন্ন করার আগ্রহ দেখিয়েছে প্রতিষ্ঠানটি। বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্য-প্রযুক্তিম
ন্ত্রী আবদুল লতিফ সিদ্দিকী অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগে (ইআরডি) একটি চিঠি দিয়েছেন। চিঠিতে এ প্রস্তাবের বিষয়ে দ্রুততার সঙ্গে পর্যালোচনা ও করণীয় ঠিক করতে পরামর্শ দিয়েছেন তিনি। তবে এ বিষয়ে সার্বিক বিবেচনা ও যাচাই-বাছাই না করে এখনই কোনো সিদ্ধান্ত নেয়া ঠিক হবে না বলে মনে করে ইআরডি। ইআরডি সূত্র জানায়, বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণ প্রকল্পে অর্থায়ন করতে আগ্রহী চীনা প্রতিষ্ঠান গ্রেট ওয়াল ইন্ডাস্ট্রিজ সম্প্রতি অর্থ মন্ত্রণালয় এবং ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্য-প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের কাছে আনুষ্ঠানিকভাবে চিঠি দিয়ে এ প্রস্তাব দেয়। এ অবস্থায় ৬ আগস্ট ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্য-প্রযুক্তিমন্ত্রী আবদুল লতিফ সিদ্দিকী এ বিষয়ে করণীয় ঠিক করতে এবং প্রস্তাবকারীদের দ্রুততার সঙ্গে আলোচনা করার পরামর্শ দেন। মন্ত্রীর স্বাক্ষর করা এ চিঠিতে বলা হয়েছে, সোনার বাংলা ও ডিজিটাল বাংলাদেশ বিনির্মাণে বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট প্রকল্প বাস্তবায়ন জরুরি। প্রধানমন্ত্রী অগ্রাধিকার ভিত্তিতে এ প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য নির্দেশনা প্রদান করেছেন বলেও চিঠিতে উল্লেখ করেন তিনি। চীনের প্রতিষ্ঠান ‘চায়না গ্রেট ওয়াল ইন্ডাস্ট্রিজ’ এ বিষয়ে একটি প্রস্তাব দিয়েছে উল্লেখ করে চিঠিতে তিনি আরও বলেন, প্রতিষ্ঠানটি দুই মন্ত্রণালয়ের সচিবদের ডিও (ডিমান্ড অর্ডার) প্রেরণ করে এ বিষয়ে আগ্রহ প্রকাশ করেছে। প্রস্তাবটির প্রযুক্তি ও অর্থনৈতিক দিকের সমগ্র বিষয় দ্রুততার সঙ্গে পর্যালোচনা ও মন্ত্রণালয়ের করণীয় পদক্ষেপ সম্পর্কে মতামত দিতে হবে। এজন্য উল্লিখিত প্রতিষ্ঠানের দায়িত্বশীল প্রতিনিধির সঙ্গে আলোচনার পরামর্শ দেন তিনি। এ বিষয়ে জানতে চাইলে ইআরডির অতিরিক্ত সচিব মোহাম্মদ আসিফ উজ জামান যুগান্তরকে বলেন, এ ধরনের প্রকল্প বাংলাদেশের জন্য একেবারেই নতুন। অভিজ্ঞতাও অনেক কম। ফলে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে হবে অনেক ভেবে-চিন্তে। চায়না কোম্পানির প্রস্তাব সম্পর্কে তিনি বলেন, এ প্রস্তাব তারা আরও আগেই দিয়েছিল; কিন্তু এখন হয়তো আনুষ্ঠানিকভাবে চিঠি দিয়েছে। আলোচনার জন্য মন্ত্রীর চিঠি এলে ইআরডির পক্ষ থেকে ব্যবস্থা নেয়া হবে বলেও জানান তিনি। নাম প্রকাশ না করার শর্তে ইআরডির একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা জানান, প্রতিষ্ঠানটির পক্ষে ২০ থেকে ২৫ আগস্টের মধ্যে আলোচনার জন্য কর্মসূচি চেয়ে আবেদন করা হয়। ইআরডি সচিব মোহাম্মদ মেজবাহ উদ্দিন বিদেশ সফর শেষে দেশে ফিরলে এ বিষয়ে বৈঠক হতে পারে বলে জানান ওই কর্মকর্তা। মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণ প্রকল্পটি ২০১২ সালের ২৬ জানুয়ারি অনুমোদন দেয় জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি (একনেক)। এটি ২০১৫ সালের জুনের মধ্যে বাস্তবায়নের কথা রয়েছে। এটি বাস্তবায়নের দায়িত্বে রয়েছে ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্য-প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়। অনুমোদনের পরই দাতাদের কাছ থেকে সহজ শর্তে ঋণ পাওয়ার চেষ্টা চালানো হয়। এ জন্য বিশ্বব্যাংক, এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি), ইউনাইটেড ন্যাশন ডেভেলপমেন্ট প্রোগ্র্রাম (ইউএনডিপি), সুইস এজেন্সি ফর ডেভেলপমেন্ট অ্যান্ড কোঅপারেশন (এসডিসি) এবং ইউরোপীয় ইউনিয়নকে সহজ শর্তে অর্থায়নের জন্য অনুরোধ জানানো হয় সরকারের পক্ষ থেকে। কিন্তু এসব উৎস থেকে সহজ শর্তে ঋণ পাওয়ার বিষয়ে কোনো সাড়া পাওয়া যায়নি। বিশেষ করে বিশ্বব্যাংক ও এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি) থেকে এ প্রকল্পের জন্য সহজ শর্তে ঋণ দেবে না বলে জানানো হয়। বাকি দাতা দেশ ও সংস্থাগুলোর আগ্রহ দেখা যায়নি। চায়না কোম্পানিটি মন্ত্রণালয়ে দেয়া চিঠিতে বলেছে, এ প্রতিষ্ঠানটি স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণ বিষয়ে অত্যন্ত পারদর্শী, যা ১৯৫৯ সালে প্রথম স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণের অভিজ্ঞতা অর্জন করে। ৫৫ বছরের অভিজ্ঞতায় বিশ্বব্যাপী এ পর্যন্ত ১২০০ স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণের সঙ্গে জড়িত ছিল এটি। একাডেমিসিয়ান এমএফ রাসিনেভ ‘ইনফরমেশন স্যাটেলাইট সিস্টেম’ (আইএসএস-রাসিনেভ) নামক এ প্রতিষ্ঠান এখন স্যাটেলাইট ডিজাইন, ম্যানুফ্যাকচার স্পেস সিস্টেমের সর্বাধুনিক প্রযুক্তি নিয়ে কাজ করছে। এর মধ্যে রয়েছে- স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণের কার্যাবলী ও সরবরাহ, প্লাটফর্ম তৈরি ও উৎক্ষেপণসংক্রান্ত সব বিষয়ে কাজ করে থাকে। চিঠিতে বাংলাদেশে বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট প্রকল্পেও একইভাবে কাজ করার আগ্রহ প্রকাশ করে প্রতিষ্ঠানটি। জানা গেছে, সরকারের পক্ষ থেকে এ বিষয়ে আগ্রহ দেখালে চীনের কাছ থেকে সহজ শর্তে ঋণ পাওয়া নিয়ে সহায়তা করবে প্রতিষ্ঠানটি। তবে ইআরডি বলছে, এ পর্যন্ত অর্থায়ন করতে ৫টি দেশ ও সংস্থা প্রস্তাব দিয়েছে। তবে কোন উৎস থেকে ঋণ নেয়া হবে সেটি এখনও চূড়ান্ত হয়নি। বাংলাদেশের জন্য নতুন হওয়ায় তাড়াহুড়া না করে সবকিছু বিচার-বিবেচনা করে বাস্তবসম্মত সিদ্ধান্ত নিতে আগ্রহী ইআরডি।
No comments:
Post a Comment