Wednesday, September 3, 2014

বেশি খুন স্বামী ও তাঁর পরিবারের সদস্যদের হাতে:প্রথম অালো

স্বামী ও তাঁর পরিবারের সদস্যদের হাতে ২০০৯ সাল থেকে গত পাঁচ বছরে খুন হয়েছেন এক হাজার ১৭৫ জন নারী। অথচ খুন হওয়া নারীর পরিবারের পক্ষ থেকে মামলা দায়েরের সংখ্যা বরাবরের মতোই নগণ্য। মানবাধিকার সংগঠন আইন ও সালিশ কেন্দ্র (আসক) জানিয়েছে, চলতি বছরের জুন পর্যন্ত সময়ে (ছয় মাস) ১৫৩ জন নারী শুধু পারিবারিক বলয়ে খুন হয়েছেন। এর মধ্যে স্বামীর হাতে খুন হয়েছেন ১১২ জন। তবে মামলা হয়েছে মাত্র ৭১টি। স্বামীর পরি
বারের সদস্যরা মিলে খুন করেছেন ৪১ জন নারীকে। এ ক্ষেত্রেও মামলা হয়েছে মাত্র ২৪টি। আসকের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ২০০৯ সালে স্বামীর হাতে খুন হন ১৯৭ জন নারী। মামলা হয় ৯৮টি। স্বামীর পরিবারের সদস্যদের হাতে খুন হন ২৬ জন, মামলা হয় ১৫টি। ২০১০ সালে স্বামীর হাতে খুন হন ২২৫ জন, মামলা হয় ৯৩টি। স্বামীর পরিবারের সদস্যদের হাতে খুন হন ৪৭ জন, মামলা হয় ১৯টি। ২০১৩ সালে স্বামীর হাতে খুনের ঘটনা ২১১, মামলা হয় ১২৬টি। একইভাবে এ সময় স্বামীর পরিবারের হাতে ৪৮ জন খুন হলেও মামলা হয় ৩৮টি। আসক ১২টি দৈনিক পত্রিকা থেকে এসব তথ্য সংগ্রহ করে একটি প্রতিবেদন তৈরি করেছে। প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, ২৫ থেকে ৩০ বছর বয়সী নারীদের বেলায় এ ধরনের ঘটনা বেশি ঘটছে। যৌতুক না দেওয়া, স্ত্রীর পরকীয়া বা পরকীয়া করার সন্দেহ অথবা ছোটখাটো পারিবারিক কলহের কারণে এসব খুনের ঘটনা ঘটছে। শ্বশুরবাড়ি থেকে বেশির ভাগ খুনের ঘটনাকেই আত্মহত্যা, দুর্ঘটনা বা অপমৃত্যু বলে চালিয়ে দেওয়ার চেষ্টা চলে বলে জানান ভুক্তভোগী পরিবারের সদস্যরা। মামলা করলে তা তুলে নেওয়ার জন্য হুমকি বা আসামিপক্ষের সঙ্গে আপসের ঘটনাও ঘটে। জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের নারী অধিকারবিষয়ক কমিটির চেয়ারম্যান মাহফুজা খানম প্রথম আলোকে বলেন, এই নারীদের বেঁচে থাকার অধিকার ছিল। শুধু নির্যাতনের শিকার হয়ে এভাবে খুন হওয়া মানবাধিকারের চরম লঙ্ঘন।  শ্বশুরবাড়িতেই যে নির্যাতনের ঘটনা বেশি ঘটছে, তা সরকারের পরিসংখ্যানেও উঠে এসেছে। নারী নির্যাতন নিয়ে বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) প্রথমবারের মতো পরিচালনা করা জরিপে অংশ নেওয়া ৮৮ শতাংশ নারী জানিয়েছেন, শারীরিক নির্যাতনের ঘটনা বেশি ঘটে স্বামীর বাড়িতে। যৌন নির্যাতনের ঘটনাও বেশি ঘটে স্বামীর বাড়িতে। কিছু ঘটনা: ‘বাবা, তুমি আইসা আমারে নিয়া যাও, ওরা আমারে মাইরা ফালাইতাছে’—গত ২২ আগস্ট ভোর পৌনে ছয়টায় মোবাইল ফোনে এভাবেই মমতা রানী বেঁচে থাকার জন্য আকুতি জানিয়েছিলেন তাঁর বাবা নিতাই চন্দ্র পালের কাছে। আদরের মেয়েকে বাঁচাতে ঠিক তখনই যোগীনগরের বাড়ি থেকে ছুটে যান বাবা নিতাই। কিন্তু মমতার শ্বশুরবাড়ি ৭১/১ শাহ সাহেব লেনের পাঁচতলার বাসায় গিয়ে দেখতে পান মেয়ের নিথর দেহ। নিতাই চন্দ্র পালের অভিযোগ, যৌতুকের জন্য তাঁর মেয়েকে হত্যা করা হয়েছে। তবে মমতার শ্বশুরবাড়ির বক্তব্য, ফ্যানে ঝুলে আত্মহত্যা করেছে মমতা। ২৩ আগস্ট জয়পুরহাটের আক্কেলপুর উপজেলায় রেললাইনের ওপর থেকে রিমা খাতুনের (২০) লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। রিমার পরিবারের অভিযোগ, রিমার স্বামী ও অন্যরা মিলে রিমাকে শ্বাসরোধ করে হত্যা করে রেললাইনে ফেলে রেখে যায়। রিমার বিয়ে হয়েছিল মাত্র তিন মাস আগে। ২৬ আগস্ট একই দিনে সারা দেশে গাজীপুরের শ্রীপুরে, মানিকগঞ্জের সিঙ্গাইর উপজেলা, পাবনার ঈশ্বরদীতে তিনজন নারী স্বামী ও তাঁর পরিবারের সদস্যদের হাতে খুন হন। মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী মেহের আফরোজ প্রথম আলোকে বলেন, এখন আর নারীরা নির্যাতন হলে তা মুখ বুজে সহ্য করেন না। প্রতিবাদ করেন। এর ফলেই খুনের মতো ঘটনা বাড়ছে। তবে প্রতিবাদকারী নারীর পাশে সরকার এবং পরিবার থাকলে এ ধরনের ঘটনা কমে আসবে। এ ছাড়া আইনেরও যথাযথ বাস্তবায়ন জরুরি। বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের সভাপতি আয়শা খানম বলেন, সমাজে নারী-পুরুষের সমঅধিকারের কথা বলা হচ্ছে। এতে অনেক পুরুষের অহং-এ লাগছে। সমাজে এ ধরনের খুনের ঘটনা বেড়ে যাওয়ায় নারী আন্দোলনের কর্মকাণ্ডকে নতুনভাবে মূল্যায়ন করার সময় এসেছে। নারীদের সম্পর্কে প্রচলিত নেতিবাচক ধারণাগুলো পরিবর্তনে সরকারের সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়সহ সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়গুলোকেও জোরালো ভূমিকা পালন করতে হবে।

No comments:

Post a Comment