Sunday, October 12, 2014

বোনের উত্ত্যক্তকারীরা পিটিয়ে মারল ভাইকে:কালের কন্ঠ

খালাতো বোনকে উত্ত্যক্ত করার প্রতিবাদ করায় ইট আর জিআই পাইপ দিয়ে নির্মমভাবে পিটিয়ে হত্যা করা হয় ২৫ বছরের যুবক নাসির উদ্দিন সর্দারকে। গত শুক্রবার রাত ১টার দিকে রাজধানীর ভাসানটেক নামা এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। এর আগে খিলগাঁও, উত্তরা, ধানমণ্ডি, মতিঝিল ও রামপুরা এলাকায় বখাটেদের নির্যাতনে আরো কয়েকজনের মৃত্যু হয়। নাসিরের বড় ভাই মোশারফ হোসেন গতকাল শনিবার সকালে হাসপাতালে সাংবাদিকদের বলেন, সন্ত্রাসীদের বখাটেপনার প্
রতিবাদ করার কারণেই নাসিরকে হত্যা করা হয়। তিনি জানান, নাসির টঙ্গী এলাকায় থাকতেন। ঈদের পর তিনি ভাসানটেক এলাকায় তাঁর বোনের বাসায় বেড়াতে আসেন। একই এলাকার দ্বীন মোহাম্মদ কলোনিতে তাঁদেরও বাসা। বোনের বাসা থেকে গত শুক্রবার রাতে খালাতো বোনের বাসায় যান নাসির। বোনের স্বামী সোহাগের সঙ্গে দেখা হলে তিনি নাসিরকে জানান, স্থানীয় বখাটেরা লাবনীকে উত্ত্যক্ত করে। ওই বখাটেরা এক সপ্তাহ আগে সোহাগকে রাস্তায় মারধর করে। এ নিয়ে প্রতিবাদ করলে বখাটেরা তাঁকে হত্যার হুমকি দেয়। নাসির পুলিশকে বিষয়টি জানাতে চান। মোশারফ হোসেন বলেন, ‘সন্ত্রাসীরা নাসিরের পা থেকে গলা পর্যন্ত ইট দিয়ে নির্মমভাবে আঘাত করে হত্যা করে। নাসিরের শরীরে অসংখ্য জখম রয়েছে। এমন নির্যাতন করে কোনো মানুষ কাউকে হত্যা করে? ওই বখাটেরা আগে থেকেই এলাকায় সন্ত্রাসী হিসেবে পরিচিত। পুলিশও তাদের অপকর্ম সম্পর্কে জানত। কিন্তু এলাকায় প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়ালেও তাদের কখনো গ্রেপ্তার করা হয়নি।’ নাসিরের খালাতো বোন জানান, স্কুলে যাওয়ার সময় স্থানীয় বখাটেরা তাঁকে উত্ত্যক্ত করত। এ নিয়ে তাঁর স্বামী প্রতিবাদ করলে এলাকার বখাটে বাবলু, মামুন, সোহেল, সুজন, কানা আলম তাঁর স্বামীকেও হুমকি দেয়। সম্প্রতি নাসিরকে তিনি বিষয়টি বললে নাসির বখাটেদের সঙ্গে এ নিয়ে কথা বলেন। এরপর রাতে নাসিরকে বখাটেরা ধরে নিয়ে হত্যা করে। এ হত্যার ঘটনায় ভাসানটেক থানায় সাতজনকে আসামি করে একটি হত্যা মামলা করেছেন নিহত নাসিরের বড় ভাই মোশারফ হোসেন। এজাহারভুক্ত আসামিরা হলো মামুন (২৭), বাবলু (৩০), আলম (৩০), খোকন (২৮), চোক্কা (১৮), সোহেল (২৬) ও সুজন (২২)। এদের প্রত্যেকের বিরুদ্ধে স্থানীয় থানায় একাধিক অভিযোগ থাকলেও অনেকটা প্রকাশ্যেই ঘুরে বেড়াত। পুলিশ কখনো তাদের গ্রেপ্তার করেনি। স্থানীয় এক প্রভাবশালী রাজনৈতিক নেতার প্রশ্রয়ে এরা সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে সম্পৃক্ত বলে স্থানীয় বিভিন্ন সূত্রের দাবি। ঢাকা মহানগর পুলিশের মিরপুর বিভাগের উপকমিশনার নিসারুল আরিফ কালের কণ্ঠকে বলেন, এজাহারভুক্ত আসামিরাই নাসির উদ্দিন সর্দারকে হত্যা করেছে বলে ধারণা পাওয়া গেছে। ঘটনার আগে গত শুক্রবার রাত ৯টার দিকে মামাতো ভাই আজিজুলের চায়ের দোকানে বসে চা পান করছিলেন নাসির উদ্দিন সর্দার। এমন সময় এক যুবক সেখানে গিয়ে তাঁর সামনে দাঁড়ায়। নাসিরকে সে বলে, ‘ভাই ডাকছে’। চা পান না করে নাসির ওই যুবকের সঙ্গে যান। এরপর নাসিরকে তারা প্রধান সড়ক থেকে একটু ভেতরে সরু গলি দিয়ে বালুর মাঠে নেয়। সেখান থেকে অন্য একটি বালুর মাঠে (নামা এলাকা) নিয়ে তাঁকে ইট ও জিআই পাইপ দিয়ে নির্মমভাবে পিটিয়ে হত্যা করা হয়। পেটানোর সময় ওই সন্ত্রাসীরা নাসিরকে বিভিন্ন ধরনের গালাগাল দেয় এবং পুলিশের সোর্স বলে চিৎকার করে। স্থানীয়দের অনেকেই রাতে লুকিয়ে ওই দৃশ্য দেখেছে। ওই যুবকের চিৎকার শোনার পরও কেউ সন্ত্রাসীদের ভয়ে এগিয়ে যায়নি। প্রত্যক্ষদর্শীরা তাৎক্ষণিক পুলিশকেও খবর দেয়নি। সকালে তদন্তে সার্বিক তথ্য জানা যায়। গতকাল ভাসানটেক এলাকায় গিয়ে ওই সন্ত্রাসীদের সম্পর্কে নানা তথ্য পাওয়া যায়। ভাসানটেক এলাকায় ছোট-বড় অনেক বস্তিতে সন্ত্রাসীদের বিচরণ করার খবর মেলে। সেই সঙ্গে এজাহারভুক্ত আসামিরা এলাকায় মাদক ও অস্ত্র ব্যবসায় সম্পৃক্ত বলেও তথ্য পাওয়া যায়। গত এক সপ্তাহে এসব সন্ত্রাসী ভাসানটেক এলাকায় বেশ কয়েকটি বাড়িতে লুটপাট চালায়। সে কারণে ভাসানটেক থানায় তাদের বিরুদ্ধে মামলা হয়। কিন্তু পুলিশ তাদের গ্রেপ্তার করেনি। স্থানীয় রাজনৈতিক ছত্রছায়ায় এসব সন্ত্রাসীর দাপট চলে। স্থানীয় এক প্রভাবশালী সন্ত্রাসী ওই এলাকায় ইয়াবা, গাঁজা ও অন্যান্য মাদকের পাশাপাশি অস্ত্র ব্যবসায় সম্পৃক্ত। এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, নাসির উদ্দিন সর্দারের মা রিজিয়া বেগম দ্বীন মোহাম্মদ কলোনির একটি টিনশেড বাড়িতে আহাজারি করছিলেন। তিনি বলছিলেন, ‘গত শুক্রবার বিকেলে ছেলে রিকশায় চড়ে যাওয়ার সময় দূর থেকে আমারে দেখতে পেয়ে মা বলে চিৎকার করে ডাক দেয়। আমি বলি কই যাচ, পোলা আমারে কয় রাতে ফিরমুনে। পোলায় রাতে ফেরে নাই। সকালে ওর হত্যার খবর আমাকে দেওয়া হয়।’ প্রত্যক্ষদর্শী ও পুলিশ সূত্রে জানা যায়, শুক্রবার রাত দেড়টার দিকে বালুর মাঠ থেকে নাসির উদ্দিন সর্দারকে মারাত্মক যখম অবস্থায় উদ্ধার করে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়। সেখানে গভীর রাতে চিকিৎসাধীন অবস্থায় নাসির উদ্দিন মারা যান। গতকাল বিকেলে মর্গ থেকে তাঁর লাশ এলাকায় নেওয়া হয়।

No comments:

Post a Comment