উন্নয়ন প্রকল্পে গুণগত মান নিশ্চিত করে দুর্নীতির হার কমিয়ে আনা যাচ্ছে না। যদিও বছরের পর বছর ধরে এ নিয়ে কথা হচ্ছে। পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের বাস্তবায়ন, পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগ (আইএমইডি) বিভিন্ন সময় প্রকল্পের দুর্নীতি ও মান নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে। সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়গুলোকে রিপোর্ট ও প্রয়োজনীয় সুপারিশ করেছে। কিন্তু সংস্থার প্রতিবেদন আমলেই নেয় না সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও বিভাগগুলো। এজন্য উন্নয়ন প্রকল্পের না
মে কোটি কোটি টাকার দুর্নীতি করেও পার পেয়ে যাচ্ছে দুর্নীতিবাজরা। তাহলে প্রশ্ন উঠেছে উন্নয়ন প্রকল্পে দুর্নীতির লাগাম টেনে ধরবে কে। জাতীয় সংসদ ভবনে বৃহস্পতিবার পরিকল্পনা মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির ৭ম বৈঠকে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হয়। এতে আইএমইডির সুপারিশ বা দুর্নীতি সংক্রান্ত বিভিন্ন প্রতিবেদন মূল্যায়ন না করা নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করা হয়। একই সঙ্গে আইএমইডিকে আরও শক্তিশালী ও কার্যকর করতে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণের জোর তাগিদ দেয়া হয়েছে। বৈঠকে পরিকল্পনামন্ত্রী আহম মুস্তফা কামাল বলেন, উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়নে গুণগত মান যদি নিশ্চিত করা যেত তাহলে দেশের অবস্থা সত্যিকার অর্থেই পরিবর্তন হয়ে যেত। তিনি বলেন, উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে বিভিন্ন সমস্যা যেমন, জমি অধিগ্রহণ, ব্যয় না বাড়িয়ে নির্দিষ্ট মেয়াদে শেষ করা ও মান নিশ্চিত করার বিষয়ে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়কে উদ্যোগ নিতে হবে। সব জায়গাতে প্রধানমন্ত্রীকে জড়িয়ে লাভ নেই। কমিটির সভাপতি সাবেক তথ্যমন্ত্রী আবুল কালাম আজাদ প্রশ্ন করেন, প্রতিবেদনের বিষয়ে ব্যবস্থা নেয়া বা ব্যবস্থা নিতে বাধ্য করার বিষয়ে আইএমইডির কোনো ক্ষমতা যদি না থাকে তাহলে তা করে লাভ কি। তিনি বলেন, বিদ্যুৎ ও গ্যাস সংক্রান্ত প্রকল্প বেশি বেশি গ্রহণ করতে হবে। আইএমইডিকে পরামর্শ দিয়ে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়কে সহায়তা করতে হবে। দুর্নীতিবাজদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে না পারলে আইএমইডির প্রয়োজন আছে কিনা- তা নিয়ে প্রশ্ন করেন কমিটির সদস্য মেজর অব. রফিকুল ইসলাম। তিনি বলেন, উন্নয়ন প্রকল্পের মান নিশ্চিত করে দুর্নীতির হার কমাতে সরকারের উচিত এ বিভাগটিকে দ্রুত কার্যকর করা। ব্যবস্থা যেন নিতে পারে সে ক্ষমতা দেয়া। আইএমইডির এক প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০১৩-১৪ অর্থবছরে এ বিভাগের কর্মকর্তারা ১ হাজার ১৪৬টি প্রকল্প পরিদর্শনের জন্য লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করে। এ সময়ে পরিদর্শন করা হয়েছে ৯৫১টি। ৭৭৩ প্রকল্পের প্রতিবেদন সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। পরিদর্শন প্রতিবেদনে প্রকল্পের আওতায় কাজের মান এবং অগ্রগতি ইত্যাদি বিষয় অন্তর্ভুক্ত করে বাস্তবায়নকারী সংস্থা, উদ্যোগী মন্ত্রণালয় ও বিভাগের কাছে প্রেরণ করে বিভাগটি। কোনো দুর্নীতি বা অনিয়ম হয়ে থাকলে এ বিষয়ে ব্যবস্থা গ্রহণেরও সুপারিশ করা হয় এতে। কিন্তু এ বিষয়ে কোনো ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে কিনা তার কোনো জবাব মন্ত্রণালয়গুলো দেয় না। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে এসব রিপোর্টকে আমলেই নেয়া হয় না। আইএমইডির ভারপ্রাপ্ত সচিব শহীদ উল্লাহ খন্দকার যুগান্তরকে বলেন, মন্ত্রণালয়গুলোর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার ক্ষমতা আমাদের নেই। তবে বিভাগটির কার্যক্রম জোরদার করতে শিগগিরই ৭৬৯ জন কর্মকর্তা-কর্মচারী নিয়োগ দেয়া হচ্ছে। কর্মকর্তাদের দক্ষতা বাড়াতে দেশে-বিদেশে প্রশিক্ষণ কর্মসূচি অব্যাহত রয়েছে। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, দেশের স্বার্থে রিপোর্টের সুপারিশ পরিপালনে বাধ্য করার ব্যবস্থা করা প্রয়োজন। উপস্থাপিত প্রতিবেদনে উন্নয়ন প্রকল্পে যথাযথ বাস্তবায়ন না হওয়ার পেছনে ৯টি কারণ চিহ্নিত করা হয়েছে। এতে বলা হয়, অর্থপ্রাপ্তি ও বাস্তবায়নের সামর্থ্য বিবেচনা না করে প্রকল্প গ্রহণ; বাস্তবভিত্তিক কর্মপরিকল্পনা প্রণয়ন ও অনুসরণ না করা; প্রকল্প পরিচালক, সংস্থা, মন্ত্রণালয়/বিভাগ ইত্যাদি বিভিন্ন পর্যায়ে এডিপি ও প্রকল্পের বাস্তবায়ন অগ্রগতি নিয়মিত পর্যালোচনা না করা; এডিপি বাস্তবায়নের নিমিত্ত প্রণীত বার্ষিক ক্রয় পরিকল্পনা (পণ্য, কার্য ও সেবা) নিয়মিতভাবে পর্যালোচনা না করা এবং বার্ষিক কর্মপরিকল্পনা প্রণয়নকালে আবহাওয়া ও অন্যান্য প্রাকৃতিক বিষয় বিবেচনা না করা। এছাড়া গুরুত্বপূর্ণ/অধিক বরাদ্দপ্রাপ্ত প্রকল্পের ক্ষেত্রে পূর্ণকালীন প্রকল্প পরিচালক না থাকা, যেসব প্রকল্পের জন্য ভূমি অধিগ্রহণ প্রয়োজন হয়, সেসব প্রকল্পের জন্য ভূমি অধিগ্রহণের সময় বিবেচনা করে প্রকল্পের বাস্তবায়নকাল নির্ধারণ না করা। এক্ষেত্রে ভূমি অধিগ্রহণের প্রচলিত আইনসমূহ মেনে ভূমি অধিগ্রহণ করতে যথেষ্ট সময়ক্ষেপণ ও ভূমি অধিগ্রহণজনিত ক্ষতিপূরণ বাবদ কম মূল্য পরিশোধ করাও একটি বড় কারণ বলে উল্লেখ করা হয়। সরকারি ও বৈদেশিক সাহায্যে বাস্তবায়িত অর্থে প্রকল্পের ক্ষেত্রে দ্বৈতনীতি, প্রকল্প মূল্যায়ন কমিটি (পিইসি) সুপারিশ ও জনবল কমিটির সিদ্ধান্তে সমন্বয় থাকে না।
No comments:
Post a Comment