প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, আন্দোলনের নামে আবারও ‘হত্যা-অরাজকতা’ চললে সরকার কঠোর হবে। তিনি বিএনপির আন্দোলনের হুমকির জবাবে বলেন, ‘দু-চারটা মানুষ মারার’ নাম আন্দোলন নয়। আন্দোলনের নামে সহিংসতা হলে তা প্রতিহত করতে জনগণের প্রতি আহ্বান জানান তিনি। প্রধানমন্ত্রী বলেন, নির্বাচনের আগে ট্রানজিট গভর্নমেন্ট হিসেবে ছিলাম। তখন অনেক কিছু করতে পারিনি। এখন নির্বাচিত সরকার ক্ষমতায়। এখন আমার দেশের একটা মানুষের
গায়ে হাত দিয়ে দেখুক। দেশের একটা মানুষের ক্ষতি করলে তার পরিণতি কী হয়- দেখবেন। বৃহস্পতিবার গণভবনে ইতালি সফর-পরবর্তী সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির সঙ্গে কোনো ধরনের আলোচনার সম্ভাবনা নাকচ করে দেন প্রধানমন্ত্রী। এ সংবাদ সম্মেলনে তিনি চার দিনের ইতালি সফরের অর্জন ও সফলতার কথা তুলে ধরেন। বিকাল সাড়ে ৪টায় গণভবনের ব্যাঙ্কুয়েট হলে লিখিত বক্তব্যের পর সমসাময়িক বিভিন্ন বিষয় নিয়ে করা বিভিন্ন প্রশ্নের জবাব দেন প্রধানমন্ত্রী। এক ঘণ্টার কিছু বেশি সময় ধরে চলা সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির আন্দোলনের হুমকির জবাব দেয়া ছাড়াও তিনি সাবেক মন্ত্রী ও দলীয় নেতা আবদুল লতিফ সিদ্দিকীর প্রসঙ্গে কথা বলেন। এ সময় মঞ্চে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে ছিলেন সংসদ উপনেতা সৈয়দা সাজেদা চৌধুরী, পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাহমুদ আলী এবং প্রধানমন্ত্রীর তথ্য উপদেষ্টা ইকবাল সোবহান চৌধুরী। সাংবাদিকদের প্রতি বিএনপির সঙ্গে সংলাপ নিয়ে আর প্রশ্ন না করার পরামর্শ দিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, বারবার খুনিদের সঙ্গে আলোচনায় বসতে এত তাগিদ কেন? যারা রাজনীতির আঁস্তাকুড়ে চলে গেছে, তাদের সঙ্গে আলোচনা কেন? ‘তারা আপনাদের কী দিয়েছে’ বলে মন্তব্য করেন প্রধানমন্ত্রী। ইতালিতে অনুষ্ঠিত আসেম সম্মেলনের সময় ৫ জানুয়ারির নির্বাচন নিয়ে কোনো প্রশ্নের মুখে পড়তে হয়নি জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, সেখানে অনেক দেশের রাষ্ট্র ও সরকারপ্রধানের সঙ্গেই দেখা হয়েছে। তারা সবাই দ্বিতীয়বার সরকার গঠনের জন্য অভিনন্দন জানিয়েছেন। নির্বাচন নিয়ে কেউ প্রশ্ন তোলেননি। তার মতে, নির্বাচনকে যারা অবৈধ বলছে তারা হয় কূপমণ্ডুকতায় ভুগছে, না হয় বিশেষ উদ্দেশ্য নিয়ে চলছে। বিএনপির প্রতি ইঙ্গিত করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিরোধী দল সংসদে স্থিতিশীলতা বজায় রেখেছে। আর যে দল নির্বাচনে আসেনি তাদের নিয়ে কারও কোনো মাথাব্যথা নেই। দেশে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা রয়েছে, এটার প্রশংসা সবাই করেছেন। তিনি বলেন, দেশে-বিদেশে যারা বিভিন্ন সময়ে আওয়ামী লীগের সমালোচনা করেছে, কমনওয়েলথ পার্লামেন্টারি অ্যাসোসিয়েশন ও ইন্টার পার্লামেন্টারি ইউনিয়নে বাংলাদেশের জয়ের পর তাদের দূরদর্শিতার অভাবই প্রমাণিত হয়েছে। নির্বাচনের পর অনেক দেশের প্রতিনিধি প্রশ্ন তুলেছিলেন, আসেম সম্মেলনে সেসব দেশের প্রধানরাই অভিনন্দন জানিয়েছেন। আবদুল লতিফ সিদ্দিকী প্রসঙ্গে এক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমি যখনই তার ওই বক্তব্যের কথা শুনেছি তখনই তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিয়েছি। তাই হরতালের কোনো যৌক্তিকতা নেই। লতিফ সিদ্দিকীকে গ্রেফতারের দাবি প্রসঙ্গে তিনি বলেন, তাকে আপনারা ধরিয়ে দিন অথবা জানান কোথায় আছে। হাতের মুঠোয় থাকলে বলুন। এ সময় হতাশা প্রকাশ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, তিনি তো দেশে নেই। দেশে না থাকলে কিভাবে গ্রেফতার করা যায়? খালেদা জিয়ার আদালতে হাজিরার দিন হরতাল দেয়া প্রসঙ্গে শেখ হাসিনা বলেন, ‘চোরের মনে পুলিশ-পুলিশ। হরতাল ডাকা হয়, যেন আদালতে হাজিরা না দিতে হয়। ওনার এত ভয় কিসের জন্য। নির্দোষ হলে আদালতে আসেন। আমি তো আদালতে হাজিরা দিতে ভয় পাইনি। মামলার তারিখ এলেই উনি হুমকি-ধমকি দেন।’ পলায়নপর মনোবৃত্তি বাদ দিতে তিনি খালেদা জিয়ার প্রতি আহ্বান জানান। বিএনপি চেয়ারপারসনের নির্বাচনের দাবি প্রসঙ্গে হাসিনা বলেন, ‘বিদেশে বিভিন্ন নির্বাচনে জিতে আসছি। উনি কি এটা দেখেন না।’ গণমাধ্যমের স্বাধীনতা প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, আমাদের দেশের গণমাধ্যম অবাধ স্বাধীনতা ভোগ করছে। পৃথিবীর অন্য কোনো দেশের গণমাধ্যম এতটা স্বাধীন নয়। আসেম সম্মেলন প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী জানান, সেখানে আগত রাষ্ট্র ও সরকারপ্রধানদের সঙ্গে তার কথা হয়েছে। তিনি বলেছেন, জঙ্গিদের কোনো ধর্ম নেই, কোনো দেশ নেই। জঙ্গি ও সন্ত্রাসীদের কাছে অস্ত্র বিক্রি না করার আহ্বান জানান। প্রধানমন্ত্রী ইতালি সফরকে অত্যন্ত সফল ও ফলপ্রসূ বলে দাবি করেন। যমুনায় যাবে সম্রাট শাহজাহান : প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে যমুনা টেলিভিশনের টক শোতে আমন্ত্রণ জানান প্রতিষ্ঠানটির পরিচালক (সংবাদ ও অনুষ্ঠান) জ.ই. মামুন। জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমি এত রাতে জেগে থাকতে পারি না। এত টক টক কথা কার বিরুদ্ধে বলব। এ সময় তিনি হাসতে হাসতে আরও বলেন, যমুনায় যাওয়ার ইচ্ছে তার নেই। ওখানে তো সম্রাট শাহজাহান যাবে। সাংবাদিকরা কৃপণ : সংবাদ সম্মেলনের প্রশ্নোত্তর পর্বের শুরুর দিকে বেশ খোশমেজাজে ছিলেন প্রধানমন্ত্রী। ইতিমধ্যে দু’জন সাংবাদিক প্রশ্ন করেছেন, আরেকজন করার পথে। এ সময় প্রধানমন্ত্রীর টিপ্পনি, ‘সাংবাদিকরা এত কৃপণ আগে জানতাম না। কমনওয়েলথ পার্লামেন্টারি অ্যাসোসিয়েশন (আইপিএ) ও ইন্টার পার্লামেন্টারি ইউনিয়নে (আইপিইউ) জয়ী হলাম অথচ কোনো সাংবাদিক একটু অভিনন্দনও জানাল না!’ প্রধানমন্ত্রীর এই রসিকতায় প্রশ্ন করতে দাঁড়ানো ওই সাংবাদিক সঙ্গে সঙ্গে জানান, তিনি অভিনন্দন জানানোর প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন। সুখে থাকলে ভূতে কিলায় : দেশের মানুষ সুখে আছেন- এমন দাবি করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আসলে সুখে থাকলে ভূতে কিলায়। তিনি বলেন, আগে তো একটি মোবাইল অপারেটর ছিল। তাও আবার বিএনপির পররাষ্ট্রমন্ত্রীর কোম্পানি। তখন ১০ টাকা মিনিট মোবাইল কলচার্জ ছিল। করলেও দশ টাকা, ধরলেও দশ টাকা। আর এখন ১৬ কোটি মানুষের ১১ কোটির মোবাইল সিম রয়েছে। এ সুযোগ আমিই করে দিয়েছি। আসলে সুখে থাকলে ভূতে কিলায়। সাবেক মন্ত্রীদের প্রতিযোগিতা : সংবাদ সম্মেলনস্থলে মন্ত্রিসভার সদস্যদের তেমন উপস্থিতি দেখা না গেলেও অনেক আগেই সামনের আসন দখল করেন সাবেক মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রীরা। তারা যে কোনোভাবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সামনে নিজের উপস্থিতি জানান দিতে সচেষ্ট ছিলেন। সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডা. দীপু মনি, সাবেক খাদ্যমন্ত্রী ড. আবদুর রাজ্জাক, সাবেক বিমানমন্ত্রী ফারুক খান, সাবেক তথ্যমন্ত্রী আবুল কালাম আজাদ, সাবেক মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী ক্যাপ্টেন (অব.) এবি তাজুল ইসলাম এবং সাবেক শিল্পমন্ত্রী দিলীপ বড়–য়া সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন। এর বাইরে আওয়ামী লীগের শীর্ষ পর্যায়ের নেতাদের বিশেষ কাউকে দেখা যায়নি।
No comments:
Post a Comment