তৃণমূলে দলীয় কাঠগড়ায় আওয়ামী লীগের আধা ডজন প্রতিমন্ত্রী ও উপমন্ত্রী। নিজ এলাকায়, নিজ দলের নেতা-কর্মীদের কাছেই ‘আসামি’ তাঁরা। তৃণমূলের চোখে তাঁরা অসাংগঠনিক, অরাজনৈতিক ব্যক্তি। কারো বিরুদ্ধে হঠাৎ আওয়ামী লীগার সাজার অভিযোগও রয়েছে। কারো মতে, এই মন্ত্রীরা দলের জন্য খুবই ক্ষতিকর। কারণ দখলবাজি, চাঁদাবাজি- হেন কাজ নেই যা তাঁরা বা তাঁদের আত্মীয়স্বজনরা করছেন না। আওয়ামী লীগের তৃণমূল নেতা-কর্মীদের কেউ প্রকাশ্য
ে, কেউ নাজেহাল হওয়ার ভয়ে নাম গোপন রেখে কালের কণ্ঠের কাছে এসব অভিযোগ করেছে। ওই প্রতি ও উপমন্ত্রীদের ওপর চরম ক্ষিপ্ত তাঁদের এলাকার নেতা-কর্মীরা। নিজ এলাকার নিজ দলের নেতা-কর্মীদের চোখে অপরাধী ও ব্যর্থ এই মন্ত্রীরা হলেন পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী নজরুল ইসলাম, পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম, স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ প্রতিমন্ত্রী জাহিদ মালেক, তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক এবং যুব ও ক্রীড়া উপমন্ত্রী আরিফ খান জয়। কালের কণ্ঠের অনুসন্ধানে জানা গেছে, এসব প্রতিমন্ত্রী-উপমন্ত্রীর ওপর ভীষণ নাখোশ আওয়ামী লীগের প্রাণশক্তি হিসেবে বিবেচিত তৃণমূল নেতা-কর্মীরা। তৃণমূলের দায়িত্বশীল নেতাদের অভিযোগ, এই মন্ত্রীরা বয়সে নবীন। কিন্তু দায়িত্ব পাওয়ার পর তাঁদের পাত্তা দেন না, সম্মান করেন না এবং তাঁদের সঙ্গে রাজনৈতিক পরামর্শ পর্যন্ত করেন না তাঁরা। তাঁরা তৃণমূল নেতাদের পাশ কাটিয়ে চলেন, তাঁদের অবমূল্যায়ন করেন। এলাকায় প্রতিমন্ত্রী-উপমন্ত্রীদের নামে অভিযোগ, বর্ষীয়ান নেতাদেরও গণ্য করেন না তাঁরা; মুরব্বিদের মতামতের গুরুত্ব দেন না। নাটোর জেলার এক নেতা বলেন, জুনাইদ আহমেদ পলক এমপি ও মন্ত্রী হওয়ার আগে খুবই সাধারণ একজন ছিলেন। স্থানীয় রাজনীতিতে তেমন গুরুত্বপূর্ণও ছিলেন না তিনি। রাজনীতিতে হঠাৎ উত্থান তাঁর। এমপি হওয়ার পরে পরিবর্তন শুরু হয় তাঁর মধ্যে। মন্ত্রী হওয়ার পর তো কথাই নেই, রাতারাতি তাঁর সব কিছু বদলে গেছে। পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী নজরুল ইসলাম নরসিংদী-১ আসন থেকে এমপি নির্বাচিত হয়েছেন। এরপরই প্রতিমন্ত্রী হিসেবে শপথ নিয়েছেন। তৃণমূলের বক্তব্য, মন্ত্রী হওয়ার আগে ভালো ছিলেন তিনি। মন্ত্রী হওয়ার পর তাঁর নামে অসংখ্য অভিযোগ, জানালেন নরসিংদী জেলা আওয়ামী লীগের দায়িত্বশীল নেতারা। তাঁরা বলেন, প্রতিমন্ত্রী জেলার নেতাদের সম্মান করেন না, তাঁদের সঙ্গে কোনো পরামর্শ করেন না, নেতা-কর্মীদের মূল্যায়ন করেন না বরং অসম্মান করেন। আরো অনেক অভিযোগ রয়েছে তাঁর নামে। তৃণমূল নেতারা তাঁর ওপর ক্ষিপ্ত। জানা গেছে, নজরুল ইসলাম পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী হিসেবে শপথ নেওয়ার পর তাঁকে সংবর্ধনা দেওয়ার জন্য নরসিংদী জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আসাদুজ্জামান একটি অনুষ্ঠানের আয়োজন করেন। কথা বলে তারিখও ঠিক করেন তিনি। গত ২৬ এপ্রিল অনুষ্ঠানের দিনক্ষণ ঠিক হয়। মন্ত্রী ক্যালেন্ডারের পাতা দেখে নিজেই তারিখ ঠিক করেন। নির্ধারিত তারিখে অনুষ্ঠান হলো ঠিকই, কিন্তু প্রতিমন্ত্রী অনুপস্থিত থেকে প্রমাণ করলেন তিনি জেলা আওয়ামী লীগের সঙ্গে নেই। সেই থেকে জেলা আওয়ামী লীগের প্রবীণ ও দায়িত্বশীল নেতাদের সঙ্গে তাঁর দূরত্ব সৃষ্টি হয়েছে। পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী সম্পর্কে জানতে চাইলে নরসিংদী জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আসাদুজ্জামান কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘অরাজনৈতিক ব্যক্তি হঠাৎ করে এমপি হয়েছেন, এরপরই মন্ত্রী। তাই হঠাৎ আওয়ামী লীগ করা নেতা-কর্মীরাই ওনার কাছে ভিড়েছে। মূল আওয়ামী লীগ যারা করে, যারা নিবেদিতপ্রাণ, তারা তাঁর কাছে মূল্যায়িত নয়। তিনি বলেন, যখন দুর্দিন আসবে, হঠাৎ আওয়ামী লীগাররা থাকবে না। মূল আওয়ামী লীগ যারা করে তারাই থাকবে। প্রতিমন্ত্রী জেলার নেতাদের পরামর্শ গ্রহণ করেন না। নজরুল সাহেব মন্ত্রী হওয়ার পরে নরসিংদীতে সন্ত্রাসী গ্রুপ চাঙ্গা হয়েছে।’ জুনাইদ আহমেদ পলক নাটোর থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত। তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী হিসেবে সরকারের দায়িত্ব পেয়েছেন। এলাকায় অনেক নেতা-কর্মী তাঁর অত্যাচার-নির্যাতনের শিকার বলে জানা গেছে। শুধু তাই নয়, আপন বড় ভাই জুবায়ের আহমেদ নয়ন তাঁর অত্যাচার-নির্যাতনের শিকার। মন্ত্রীর ক্ষমতা দেখিয়ে বড় ভাইয়ের নামে মামলা ঠুকে দিয়েছেন পলক। অবশ্য মাকে দিয়ে মামলাটি করান তিনি। একটি বাড়ি নিয়ে মামলা। সিংরা আওয়ামী লীগের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতারা এসব তথ্য জানান। জেলা আওয়ামী লীগের প্রবীণ এক নেতা নাম গোপন রাখার শর্তে কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতাদের কাছে সে খুব সৎ, ভালো নেতা। প্রকৃত পক্ষে সে ভীষণ কুৎসিত।’ তিনি বলেন, ২০০৮ সালের নির্বাচনে পলক দলের মনোনয়ন পাননি। মরহুম অ্যাডভোকেট হানিফ আলী শেখকে মনোনয়ন দেওয়া হয়। তৃণমূলের ভোটেও এগিয়ে ছিলেন হানিফ আলী শেখ। পরে যে ভাইয়ের নামে মামলা করেছে পলক সেই ভাইয়ের মেয়ে রীতি মৃত্তিকা নয়ন শেখ হাসিনার সঙ্গে সাক্ষাৎ করে তাঁর আবেগকে নাড়া দিয়ে পলককে মনোনয়ন পাইয়ে দেয়। সেই ভাতিজি মৃত্তিকা বিনা চিকিৎসায় মারা গেছে। পলক যার জন্য আজ মন্ত্রী তাকে দেখতে হাসপাতালে পর্যন্ত যাননি। ২৭ মার্চ ২০১৩ মৃত্তিকা নয়ন পৃথিবী ছেড়ে চলে যায়। সেদিন সিংরায় জামায়াত নেতা রওশন আলীর মেয়ের বিয়েতে যান পলক, কিন্তু আপন ভাতিজিকে শেষবারের মতো দেখতে যাননি। এ হলো তাঁর সহোদর ও ভাতিজির সঙ্গে আচরণ। দলের নেতা-কর্মীদের সঙ্গে তাঁর আচরণ কত মর্মান্তিক হতে পারে তা এ প্রতিবেদককে ভেবে নিতে বলেন প্রবীণ এ নেতা। জানতে চাইলে পলকের বড় ভাই জুবায়ের আহমেদ নয়ন কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘পলক মনোনয়ন পায়নি ২০০৮ সালের নির্বাচনে। আমার মেয়ে মৃত্তিকা তার চাচাকে মনোনয়ন পাইয়ে দিতে সাহায্য করে। অথচ আমার সেই মেয়ে বিনা চিকিৎসায় মারা গেছে। ভাইয়ের সহযোগিতায় বা ভাতিজির চিকিৎসায় হাত বাড়ায়নি সে।’ নাটোর জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি অ্যাডভোকেট সাজেদুর রহমান খান কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘বয়সের কিছু ভুল-ভ্রান্তি আছে, এগুলো সময়ে ঠিক হয়ে যাবে।’ তবে এসব প্রসঙ্গে প্রতিমন্ত্রী পলকের সঙ্গে কথা বলা সম্ভব হয়নি। তিনি বিদেশে রয়েছেন। রাজশাহীর ছয়টি আসনের মধ্যে দুটি আসনে গত সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। বাকি চার আসনেই বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় এমপি নির্বাচিত হয়েছেন। নির্বাচন হওয়া দুটি আসনের একটি রাজশাহী-৬। এ আসনে দলীয় বিদ্রোহী প্রার্থী রায়হানুল হকের সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেই জয়ী হন শাহরিয়ার আলম। এর কারণ দলের মধ্যে তাঁকে ঘিরে প্রবল কোন্দল। এই কোন্দল মেটাতে বরাবর ব্যর্থ হয়েছেন শাহরিয়ার। বরং তাঁর বিরুদ্ধে এলাকায় ঝাড়ু মিছিল করেছে বিক্ষুব্ধ নেতা-কর্মীরা। জানা গেছে, এখনো শাহরিয়ার আলমের সঙ্গে দলের সাবেক প্রবীণ নেতা রায়হানুল আলম, চারঘাট পৌরসভার মেয়র নার্গিস পারভীন, আড়ানী পৌর আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি মাজদার রহমানসহ কয়েক শ নেতা-কর্মীর সম্পর্ক খুবই খারাপ। বাঘার এক নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘শাহরিয়ার আলম চার-পাঁচজন দালাল নিয়ে দল চালান। এ কারণে দলের মধ্যে কোন্দল তিনি মেটাতে পারেননি। বরং তাঁর আচরণে তাঁকে ঘিরে কোন্দল আরো বেড়েছে।’ চারঘাটের প্রবীণ নেতা রায়হানুল আলম বলেন, ‘জনগণই তাঁকে ভোট দিয়ে নির্বাচিত করেছে। তবে কিছু বিষয় নিয়ে তাঁর সঙ্গে মতানৈক্য তৈরি হয়েছে আমাদের। তবে দলের বাইরে আমরা নই।’ দলীয় সূত্রে জানা গেছে, গত ১৯ জুন পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলমের বাসায় গভীর রাতে বাউসা ইউনিয়নের ৩ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি প্রার্থী রেজাউল করিম নিজল নতুন কমিটি ঘোষণার বিষয়ে পরামর্শ নিতে গেলে তাঁর ওপর ক্ষিপ্ত হন আড়ানী পৌর যুবলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও প্রতিমন্ত্রীর ঘনিষ্ঠজন কামরুজ্জামান নিপ্পন। নিজলকে পিস্তল দেখিয়ে হত্যার হুমকি দেন এবং ওই বাসা থেকে পিটিয়ে বের করে দেন নিপ্পন। নেত্রকোনা সদর থেকে নির্বাচিত আরিফ খান জয়। তৃণমূলের ভোটে মনোনয়ন দৌড়ে জয়ের অবস্থান না থাকলেও পরে তিনিই পান দলের মনোনয়ন। তৃণমূলের ভোটে পাস করেন শামসুর রহমান লিটন। কিন্তু তাঁকে মনোনয়ন দেওয়া হয়নি। প্রথমবার সংসদ সদস্য হয়েই উপমন্ত্রী। নেত্রকোনাবাসী তাঁকে নিয়ে স্বপ্ন দেখলেও এখন তা দুঃস্বপ্ন হয়ে গেছে। দলের নেতা-কর্মীদের ওপর অত্যাচার-নির্যাতন, জমি দখল- হেন কাজ নেই জয় ও জয়ের ভাইরা করছেন না। বিশেষ করে তাঁর ভাই ও স্বজনদের ব্যাপারেই অভিযোগ বেশি। তাদের কর্মকাণ্ডে অতিষ্ঠ আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মীরা। জয়ের আরো পাঁচ ভাই রয়েছেন। তাঁরা হলেন টিটু, মিঠু, বিপ্লব, শুভ্র ও জনি। জয় মন্ত্রী হওয়ার পর তাঁরা নেত্রকোনার রাজনীতি নিয়ন্ত্রণ করছেন। সঙ্গে রয়েছেন জয়ের মামা গোলাম মোহাম্মদ খান পাঠান বিমল। মামা-ভাইয়েরা মিলে সাবেক সংসদ সদস্য আশরাফ আলী খসরু ও ফজলুর রহমান খানের পরিবার দুটিকে প্রায় ঘরে তুলে দিয়েছেন। দুই সাবেক এমপিই আগে জয় ও পরে জয়ের পরিবারকে রাজনীতিতে পুনর্বাসন করেন বলে এলাকাবাসীর সঙ্গে যোগাযোগ করে জানা গেছে। জেলা ও পৌর আওয়ামী লীগের দুজন নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে কালের কণ্ঠকে বলেন, আওয়ামী লীগের চিরশত্রু আমতলী উইনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান এখন জয়ের এবং তাঁর ভাইদের কাছের লোক। জয় বিএনপির এ নেতাকে আমতলী উচ্চ মাধ্যমিক স্কুলের সভাপতি করতে ডিও লেটার দিয়েছেন বলে জানা গেছে। জয় মন্ত্রী হওয়ার পর তাঁর আসনের সব স্কুল-কলেজের কমিটি পরিবর্তন করে দেওয়া হয়েছে। তাঁর ভাই ও তাঁর বলয়ের লোকদের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। সদরের বীণাপাণি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের জায়গা দখল করে এক ভাই মিঠু একটি বিল্ডিং করেছেন, আরেক ভাই বিপ্লব স্কুলের জায়গা দখল করে বিল্ডিং বানিয়ে সেখানে বসবাস করছেন বলে সূত্র জানিয়েছে। জানা গেছে, সম্প্রতি জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক প্রশান্ত কুমার রায়কে হত্যার হুমকি দিয়েছে জয়ের লোকজন। এত অনিয়ম করলেও জয়ের বিরুদ্ধে বা তাঁর ভাইদের বিরুদ্ধে প্রকাশ্যে কেউ কিছু বলতে রাজি নয় অত্যাচার-নির্যাতনের ভয়ে। একটি সূত্র জানায়, জয় মন্ত্রী হওয়ার পর এলাকায় মাদকাসক্তদের একটি গ্রুপ সক্রিয় হয়েছে। এর নেতৃত্বে রয়েছে সদরের শেখ হেলাল নামের একজন। যারা জয়ের বিরুদ্ধে কথা বলবে তাদেরই এ গ্রুপের হাতে লাঞ্ছিত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক জেলা আওয়ামী লীগের এক নেতা কালের কণ্ঠকে বলেন, রাজনীতি, সমাজ, আওয়ামী লীগ- নেত্রকোনার সবই ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে। জেলা কৃষক লীগের এক নেতা বলেন, ‘কিছু বলে এলাকায় টিকে থাকা যাবে না। তাই কিছু জেনেও জানি না। জয়ের ওপর দলের নেতা-কর্মীসহ সবাই বিক্ষুব্ধ। তবে ক্ষমতার কারণে সবাই চুপ থাকে।’ উপমন্ত্রী জয় ও তাঁর পরিবারের দুর্নীতির আরো কিছু তথ্য জয়ের কেন্দ্রীয় বা স্থানীয় রাজনীতিতে শক্ত অবস্থান না থাকলেও দুর্নীতির তথা অর্থ-সম্পদের মালিক হওয়া শুরু গতবার আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পর। পাট মন্ত্রণালয়ের পরিচালক থাকাকালে জয় মন্ত্রণালয়ের পরিত্যক্ত গোডাউন, ইন্ডাস্ট্রি বিক্রি করে মন্ত্রী লতিফ সিদ্দিকীকে টাকার একটি অংশ দিয়ে বাকি অংশ নিজে এবং লতিফ সিদ্দিকীর পিএস অর্ধেন্দু শেখর রায় মিলে ভোগ করেছেন। দুজনের বাড়ি নেত্রকোনায় হওয়ায় তাঁদের ব্যক্তিগত সম্পর্ক আগে থেকেই ভালো ছিল। নেত্রকোনা পৌর এলাকায় পাট মন্ত্রণালয়ের প্রায় ৯০ শতক জমির ওপর কয়েকটি গোডাউন ছিল। ওই জমি পরিত্যক্ত ঘোষণা করে জয় তাঁর শ্যালকের নামে প্রায় ৯ কোটি টাকার সম্পত্তি মাত্র ৬০ লাখ টাকায় ৯৯ বছরের জন্য লিজ নেন। মন্ত্রী হওয়ার পর তাঁর দাপট আরো বেড়েছে। তাঁর কাছে আত্মীয়স্বজন ও পরিবার-পরিজন সবার আগে। তাদের সমর্থন, পৃষ্ঠপোষকতায় জয় ও তাঁর পরিবার নেত্রকোনার সাখুয়া এলাকায় ২০-২৫ কাঠা জমি কিনে তার সঙ্গে গরিব কৃষকদের ও সরকারের প্রায় ১০০ কাঠা জমি দখল করে নিয়েছে। জয়ের বড় ভাই টিটু চায়ের বাগানে চাকরি করতেন। ভাই মন্ত্রী হওয়ার পর চাকরি ছেড়ে দেন। সারা দিন ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ে বসে থাকেন তিনি। ভাইয়ের প্রভাবে সারা দিন তদবির আর ঠিকাদারদের সঙ্গে লিয়াজোঁ করাই এখন তাঁর মূল কাজ। অল্প দিনের মধ্যে ঢাকায় বাড়ি ও গাড়িসহ প্রচুর অর্থের মালিক হয়েছেন বলে অভিযোগ। আরেক বড় ভাই মিঠু নেত্রকোনা শহরের ঠিকাদারি, সার ব্যবসা ও পরিবহন ব্যবসা সব কিছুর তদারকি করেন। তিনি নেত্রকোনায় বাড়ি-গাড়িসহ প্রচুর অর্থের মালিক হয়েছেন বলে স্থানীয়রা জানায়। সূত্র জানায়, জয়ের আরেক বড় ভাই বিপ্লব নেত্রকোনার মাদকসম্রাট। ছোট ভাই শুভ্র নিজেকে জয়ের পিএস পরিচয় দেন। সারা দিন মন্ত্রণালয়ে তদবির করাই তাঁর কাজ। নিয়োগ ও বদলি বাণিজ্য করে তিনিও বড়লোক বনে গেছেন বলে কথা রটেছে। জয়ের আরেক ছোট ভাই জনি ব্যবসা, চাঁদাবাজি, জমি দখল- এসব করেন। এলাকার লোকজন জানায়, জয় এলাকায় যেসব পোস্টার লাগান সেগুলোতে কেবল তাঁর ছবিই থাকে। দলীয় সভাপতি শেখ হাসিনা বা বঙ্গবন্ধুর ছবি থাকে না। তিনি নিজেকে নেত্রকোনা জেলা আওয়ামী লীগের প্রেসিডেন্ট দাবি করেন। তাঁর বেয়াদবির কারণে জেলার কোনো আওয়ামী লীগ এমপিই তাঁকে দেখতে পারেন না। তাঁরা দলের কাজে সক্রিয় হন না তাঁর কারণে। মানিকগঞ্জ থেকে নির্বাচিত সংসদ সদস্য জাহিদ মালেক স্বপন স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ প্রতিমন্ত্রী। তৃণমূলের ভোটাভুটিতে পিছিয়ে থাকলেও শেষ পর্যন্ত মনোনয়ন পান তিনি। জেলা কমিটির সদস্য ছিলেন। মন্ত্রী হওয়ার আগে এলাকার লোকজনের কাছে ভালোই ছিলেন। সময় দিতেন, এলাকায় যেতেন, রাজনৈতিক শলাপরামর্শ করতেন। সবই ভালো ছিল তৃণমূলের দলীয় নেতা-কর্মীদের কাছে। যেই মন্ত্রী হলেন, রাতারাতি বদলে গেলেন জাহিদ মালেক। কথাগুলো বলছিলেন মানিকগঞ্জের বিভিন্ন পর্যায়ের আওয়ামী লীগ নেতারা। এখন দুর্নীতি, জমি দখল, বালুমহাল দখল, চাঁদাবাজি- সব তকমাই তাঁর নামের পাশে রয়েছে। জেলা আওয়ামী লীগের শীর্ষস্থানীয় একজন নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে কালের কণ্ঠকে বলেন, জাহিদ মালেকের কর্মকাণ্ড দলের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করছে। টাকা উপার্জনই তাঁর কাছে প্রধান। জাতীয় পার্টির লোকজনের সঙ্গে তাঁর সখ্যের কথা জানিয়ে তিনি বলেন, একজন মন্ত্রীর বাসস্ট্যান্ড থেকে চাঁদা তোলার বিষয়টা মানা যায় না। সূত্র মতে, মানিকগঞ্জ বাসস্ট্যান্ডে জায়গা দখল করে জাহিদ মালেক টাওয়ার করেছেন মন্ত্রী। মুজিবুর রহমান লাবু নামের এক ব্যক্তির জায়গা দখল করে এ টাওয়ার করা হয়েছে। সূত্র আরো জানায়, স্থানীয় সংগঠনের সঙ্গে জাহিদ মালেকের সম্পর্ক নেই। হাতে গোনা কয়েকজনকে নিয়ে এলাকায় তাঁর পদচারণ। এসব বিষয়ে জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য কাজী জাফরউল্যাহ কালের কণ্ঠকে বলেন, প্রথমবারের মতো দ্বিতীয় মেয়াদেও একঝাঁক তরুণ নেতা বেছে নিয়ে মন্ত্রিসভা গঠন করেছে আওয়ামী লীগ। রাজনৈতিকভাবে খানিকটা দুর্বল এলাকা থেকে নির্বাচিত হয়ে আসা তরুণ নেতাদের স্থান দেওয়া হয়েছে মন্ত্রিসভায়। উদ্দেশ্য, দুর্বল ওই সব এলাকায় সংগঠনকে শক্তিশালী ভিত্তির ওপর দাঁড় করানো। সেই উদ্দেশ্য অনেক ক্ষেত্রে পূরণ হয়নি। তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনায়েদ আহমেদ পলক দেশের বাইরে রয়েছেন। অন্য চারজনের মুঠোফোনে বারবার চেষ্টা করেও যোগাযোগ করা যায়নি। ফলে এ বিষয়ে তাঁদের মন্তব্য জানা সম্ভব হয়নি।
No comments:
Post a Comment