Thursday, October 30, 2014

ক্লিন ইমেজের নতুন নেতৃত্বের অপেক্ষায় টাঙ্গাইলবাসী:যুগান্তর

স্থানীয় আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে ক্লিন ইমেজের নতুন নেতৃত্বের অপেক্ষায় প্রহর গুনছেন টাঙ্গাইলবাসী। জেলার রাজনীতিতে নতুন এই শক্তিকে স্বাগত জানাতে প্রস্তুত সবাই। আওয়ামী লীগের ঘাঁটি হিসেবে পরিচিত এই জনপদের সাধারণ মানুষ চাচ্ছেন সুস্থধারার রাজনীতি। দলীয় শান্তিপ্রিয় সাধারণ নেতাকর্মীরা আর সন্ত্রাসী পরিবারের কাউকে গুরুত্বপূর্ণ পদে দেখতে চায় না। মূলত সন্ত্রাসের বিপক্ষে জনগণ ও সাধারণ নেতাকর্মীদের প্রত্যাশার প্র
তিফলন ঘটাতেই নীরবে সৃষ্টি হয়েছে নতুন শক্তির চাহিদা। এখন অপেক্ষা কেবল সময় ও সুযোগের। তবে এর সঙ্গে দলীয় হাইকমান্ডের আশীর্বাদ ও সুবিবেচনাপ্রসূত সিদ্ধান্তেরও প্রয়োজন বলে মনে করছেন জেলার নেতাকর্মীরা। জেলা আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি আলমগীর খান মিনু জানান, আগামী ডিসেম্বরে তারা কাউন্সিল করার চিন্তাভাবনা করেছেন। তাদের আশা কাউন্সিলরদের প্রত্যক্ষ ভোটে সাধারণ নেতাকর্মীদের প্রত্যাশা অনুযায়ী নেতৃত্ব নির্বাচিত হবে। তিনি আরও বলেন, ‘আমরা সভানেত্রীর (শেখ হাসিনা) নেতৃত্বে রাজনীতি করি। কোনো গুণ্ডাপাণ্ডার নয়। সুতরাং এ নিয়ে চিন্তার বা ঝুঁকির কিছু নেই।’ স্থানীয় রাজনীতির সঙ্গে সংশ্লিষ্টরা বলেন, জেলার রাজনীতিতে পেশিশক্তির আবির্ভাব দুই প্রভাবশালী পরিবারের হাত ধরে। স্বাধীনতার পর থেকেই নিয়ন্ত্রকের ভূমিকায় রয়েছে ‘সিদ্দিকী’ পরিবার। কিন্তু ১৯৯৯ সালে বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী আওয়ামী লীগ থেকে বহিষ্কৃত হওয়ার পর জেলার রাজনীতিতে একক আধিপত্য পেয়ে যায় খান পরিবার। এই সুযোগে রাজনীতি ও ব্যবসা-বাণিজ্যসহ সবকিছুই কুক্ষিগত করে ফেলেন তারা। বিশেষ করে রাজনীতিতে যখনই যে মাথা তুলে দাঁড়িয়েছে, তখনই তাকে দুনিয়া থেকে বিদায় নিতে হয়েছে। যার সর্বশেষ দৃষ্টান্ত হলেন জেলার আওয়ামী লীগের প্রভাবশালী নেতা মুক্তিযোদ্ধা ফারুক আহমেদ। তিনি জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক হতে চেয়েছিলেন। এটাই তার জন্য কাল হয়ে দাঁড়ায়, নির্মমভাবে তাকে খুন করা হয়। এর আগেও আরও একাধিক নেতাকে প্রাণ দিতে হয়েছে বলে অভিযোগ রয়েছে। ‘সন্ত্রাসনির্ভর’ সিদ্দিকী পরিবারের বিকল্প হিসেবে এই শক্তির উত্থানকে সাধারণ মানুষ ও দলীয় নেতাকর্মীরা স্বাগত জানিয়েছিলেন। কিন্তু জনগণ হতাশ হয়েছে। পরিবারটি ছাত্রলীগ, যুবলীগ, মহিলা লীগসহ সব অঙ্গসংগঠন তারা ধীরে ধীরে দখলে নেয়। এরপর গত প্রায় দু’দশকে তারাও এলাকাটিকে ‘সন্ত্রাসের জনপদে’ পরিণত করেন। যে কারণে সাধারণ মানুষসহ খোদ আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরাও তাদের দিক থেকে মুখ ফিরিয়ে নেয়। সর্বশেষ লতিফ সিদ্দিকী দল থেকে বহিষ্কৃত হওয়ায় সিদ্দিকী পরিবারের আপাতত রাজনীতিতে যবনিকাপাত ঘটেছে। আর জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক ফারুক আহমেদের খুনের ঘটনায় খান পরিবারের প্রভাবশালী চার সদস্যের জড়িয়ে পড়ার অভিযোগে তারাও আপাতত কোণঠাসা হয়ে পড়েছেন। এই সুযোগেই বিকল্প শক্তির আবির্ভাবের মঞ্চ প্রস্তুত হয়ে গেছে। ভারপ্রাপ্ত সভাপতি আলমগীর খান মিনু স্বীকার করেন, নেতিবাচক রাজনীতির কারণে আওয়ামী লীগ থেকে সাধারণ মানুষ মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে। তিনি বলেন, ‘ভেতরে ভেতরে টাঙ্গাইলের মানুষ আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে চলে গেছে। এখন এই পরিস্থিতি থেকে উত্তরণ দরকার।’ তিনি আরও বলেন, ছাত্রলীগসহ সব অঙ্গসংগঠনে খান পরিবারের প্রভাব রয়েছে। যে কারণে খুনের ঘটনায় তাদের সংশ্লিষ্টরা প্রকাশের খবরে শহরে মিছিল হয়েছে। তবে এর জন্য অঙ্গসংগঠনের কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব বেশি দায়ী। তারা এ সব কমিটি গঠনের আগে স্থানীয় আওয়ামী লীগের পরামর্শ নেয়নি। আর জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট জোয়াহেরুল ইসলাম যুগান্তরকে বলেন, সাধারণ নেতাকর্মীরা পরিবারতন্ত্রের হাত থেকে মুক্তি চায়। এ জন্য এখন সুষ্ঠু ধারার রাজনীতি চর্চা জরুরি হয়ে পড়েছে। নয়া মেরুকরণে যারা : দুই পরিবারের বাইরে বর্তমানে যারা রাজনীতিতে সক্রিয় হতে চাইছেন তাদের মধ্যে অন্যতম হলেন দলটির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট জোয়াহেরুল ইসলাম, সাংগঠনিক সম্পাদক ও নিহত ফারুক আহমেদের স্ত্রীর বড় ভাই খন্দকার আশরাফুজ্জামান স্মৃতি। খান পরিবারের অবৈধ প্রভাবের কারণে এতদিন এরা রাজনীতি থেকে দূরে ছিলেন। তবে এখন এই নেতারা নিজেদের অনুসারী নিয়ে নিয়মিত বৈঠক করছেন। এদের সঙ্গে ২০১২ সালে খান পরিবারের সদস্য আমানুর রহমান খান রানার পক্ষে উপনির্বাচনে পক্ষে না থাকার অপরাধে (!) এলাকাছাড়া হওয়া এমনকি বিদেশ চলে যাওয়া নেতা যুবলীগের কেন্দ্রীয় যুগ্ম সম্পাদক মামুনুর রশিদেরও যুক্ত হওয়ার কথা জানিয়েছেন এলাকার অনেকে। এদের সঙ্গে অন্য নেতারাও যুক্ত হয়েছেন। এমনকি খান পরিবারের সঙ্গে যারা ছিলেন তাদের অনেকেই নতুন ধারার সঙ্গে যুক্ত হতে চাইছেন। ফলে শক্তিশালী একটি অংশের আবির্ভাব ঘটতে পারে। নতুন কাউন্সিলের গুঞ্জন : জেলা আওয়ামী লীগের সর্বশেষ কাউন্সিল অনুষ্ঠিত হয় ২০০৪ সালের ৫ জানুয়ারি। ৭১ সদস্যবিশিষ্ট এ কমিটির ১৩ জন ইতিমধ্যে মারা গেছেন। এদের মধ্যে রয়েছেন খোদ সভাপতি শামসুর রহমান খান শাহজাহান (চার ভাইয়ের চাচা), সহ-সভাপতি নুরুল ইসলাম, অ্যাডভোকেট বাদশাহ মিয়া, কৃষি সম্পাদক আবদুর রশিদ, উপ-দফতর সম্পাদক মনজুরুল হক তালুকদার, সদস্য শওকত মোমেন শাহজাহান, শওকত আলী তালুকদার প্রমুখ। তাছাড়া আওয়ামী লীগের গঠনতন্ত্রে জেলা কমিটির মেয়াদ ৩ বছর। তাই ১১ বছর হতে চলা এই মেয়াদোত্তীর্ণ কমিটির কাউন্সিল অনিবার্য। এই সম্ভাব্য কাউন্সিলকে সামনে রেখেই ফারুক আহমেদ নিজেকে সাধারণ সম্পাদক প্রার্থী হিসেবে ঘোষণা দিয়েছিলেন। কিন্তু এই একই পদের প্রার্থী ছিলেন সহিদুর রহমান খান মুক্তি। বড় বাধা হিসেবে ভেবেই ফারুককে দুনিয়া থেকে সরিয়ে দেয়া হয় বলে ইতিমধ্যে ফারুক হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় জড়িত হিসেবে গ্রেফতারকৃতরা ১৬৪ ধারায় আদালতে জবানবন্দি দিয়েছেন। এ অবস্থায় খান পরিবারের এ সদস্য ইচ্ছাপূরণ করতে পারলে জেলায় সন্ত্রাসের রাজনীতিই প্রতিষ্ঠা পাবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এই কীর্তির কারণেই জেলার সাধারণ সম্পাদক পদে মুক্তির প্রার্থিতা বড় আকারের ধাক্কা খেয়েছে। তার এই পদ প্রাপ্তির সম্ভাবনা এখন নির্ভর করছে হাইকমান্ডের ইচ্ছার ওপর। যদিও গত ১৩ অক্টোবর ফারুকের স্ত্রী এবং ১৪ অক্টোবর সাবেক এমপি ড. আবদুর রাজ্জাকের সঙ্গে প্রধানমন্ত্রীর সাক্ষাৎ ও সেখানকার আলাপ-আলোচনায় মুক্তিসহ এই পরিবারের রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ নেই বললেই চলে। নেতাকর্মীরা জানান, এ অবস্থায় কাউন্সিল হলে জেলা কমিটিতে সভাপতি হিসেবে বর্তমান ভারপ্রাপ্ত সভাপতি আলমগীর খান মিনু ও সাধারণ সম্পাদক ফজলুর রহমান খান ফারুক গুরুত্বপূর্ণ প্রার্থী। এছাড়া এ পদে অনেকেই সাবেক খাদ্যমন্ত্রী ড. আবদুর রাজ্জাক ভোলার নামও বলছেন। আর সাধারণ সম্পাদক হিসেবে উল্লিখিত বর্তমান যুগ্ম সম্পাদক অ্যাডভোকেট জোয়াহেরুল ইসলাম ও সাংগঠনিক সম্পাদক খন্দকার আশরাফুজ্জামান স্মৃতির নামও শোনা যাচ্ছে। সাধারণ নেতাকর্মীরা বলছেন, তারা চাচ্ছেন ইতিবাচক রাজনীতি। তাই জেলার নতুন কমিটিতে ‘ক্লিন ইমেজের’ নেতা চাচ্ছেন তারা। পাশাপাশি তারা রাজনীতিতে সুস্থ ও ইতিবাচক প্রতিযোগিতা প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে টাঙ্গাইলের সব উপজেলা থেকে জেলা কমিটিতে প্রতিনিধিত্বমূলক নেতৃত্ব রাখারও পরামর্শ দিয়েছেন। এ ক্ষেত্রে টাঙ্গাইলের ৮টি আসনের সব এমপিকে জেলা কমিটিতে রাখার পক্ষে মতামত দিয়েছেন অনেকে। নাম প্রকাশ না করে স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা জানান, এই বাস্তবতায় এখন সাধারণ মানুষের মাঝে দলীয় জনপ্রিয়তা অটুট রাখতে জেলায় সুস্থধারার রাজনীতির অভিষেক জরুরি। আর এই রাজনীতি প্রতিষ্ঠার জন্য দলীয় হাইকমান্ডের সদিচ্ছা প্রয়োজন। নির্দিষ্ট কোনো ব্যক্তি বা পরিবারকে নয়, যেসব নেতা ইতিবাচক রাজনীতির নেতৃত্ব দিতে প্রস্তুত তাদের ওপর দলীয় হাইকমান্ডের আশীর্বাদ দেয়া প্রয়োজন। পাশাপাশি নির্দিষ্ট ব্যক্তিরা যাতে দলীয় ও প্রশাসনিক ক্ষমতার অপব্যবহার করতে না পারে, সেটাও নিশ্চিত করা প্রয়োজন।  

No comments:

Post a Comment