চট্টগ্রাম নগরীর বাকলিয়া এলাকা একটি পরিবারের সন্ত্রাসী কার্যকলাপের কাছে জিম্মি হয়ে আছে পুরো একটি থানা এলাকার কয়েক হাজার মানুষ। ওই পরিবারে রয়েছে ছয়জন তালিকাভুক্ত সন্ত্রাসী। চট্টগ্রাম মহানগর পুলিশের তালিকাভুক্ত তিন সন্ত্রাসী শরীফুল হক ওরফে নাইক্যা কাজল ও তার ছোট ভাই হানিফুল হক ওরফে ভোলাইয়া। তাদের আরেক ভাই শীর্ষ সন্ত্রাসী ছুইট্যা কয়েক বছর আগে র্যাবের ক্রসফায়ারে নিহত হয়। তাদের বোন রাবেয়া বসরী বকুলী ও
তার ছেলে চট্টগ্রামের ছিনতাইকারী দল ব্লেড পার্টির প্রধান সাদ্দাম হোসেন ও সুরুইত্তা নানা সন্ত্রাসী কার্যকলাপে জড়িত। ওই পরিবারের লোকজন এলাকার মানুষের কাছে মূর্তিমান আতঙ্ক। বুধবার রাতে সিএমপির বাকলিয়া থানা পুলিশ ব্লেড পার্টির প্রধান সাদ্দাম হোসেনকে গ্রেফতার করে। বাকলিয়া থানার ওসি মুহাম্মদ মহসীন নয়া দিগন্তকে বলেন, ‘সাদ্দাম ছিনতাইকারী দল ব্লেড পার্টির নিয়ন্ত্রণকারী। তার বিরুদ্ধে এক পোশাকশ্রমিককে গণধর্ষণসহ কয়েকটি মামলা রয়েছে। গ্রেফতারকৃত সাদ্দাম বাকলিয়া থানার শাহ আমানত সেতুসংযোগ সড়ক এলাকার শাহ আলমের ছেলে। তার মা রাবেয়া বসরী বকুলের (বকুলী) বিরুদ্ধে বাকলিয়ার বস্তি এলাকায় নারী অপরাধীদের একটি সিন্ডিকেট নিয়ন্ত্রণের অভিযোগ রয়েছে। বকুলী নিজেকে জাতীয় পার্টির নেতা পরিচয় দিয়ে থাকেন। সরেজমিন বাকলিয়া এলাকায় ঘুরে জানা গেছে, সিএমপির তালিকাভুক্ত ওই সন্ত্রাসী পরিবারের বেশ কয়েকজন এলাকায় আবারো ফিরে এসেছে। মূলত তারাই মাদক ব্যবসায়সহ অসামাজিক কর্মকাণ্ডে লিপ্ত রয়েছে। শাহ আমানত সেতু এলাকায় গাড়ি ও ভ্রাম্যমাণ দোকানপাট থেকে নিয়মিত সন্ত্রাসী নাইক্ক্যা কাজল, ভুলাইয়াসহ বিভিন্ন সন্ত্রাসীর নামে চাঁদা তোলা হচ্ছে। বাকলিয়ার রাজাখালী, কর্ণফুলী নদী লাগোয়া বাস্তুহারা সমিতি এলাকা ও ভেড়া মার্কেট এলাকার মিল-কারখানা, গার্মেন্ট, বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান এবং ছোট বড় প্রতিষ্ঠান থেকে চাঁদা আদায় করছে নাইক্যা কাজল বাহিনী। এ ছাড়া রাজাখালী ব্্িরজ এলাকায় মাদক ব্যবসায়, পতিতাবৃত্তি ও বালু মহল নিয়ন্ত্রণ করে যাচ্ছে এ বাহিনী। প্রায় সময় তাদের বাহিনীর সাথে এলাকাবাসী ও তাদের প্রতিদ্বন্দ্বী বাহিনীর সদস্যদের সাথে চলছে বন্দুকযুদ্ধ। অভিযোগ রয়েছে, সন্ত্রাসী নাইক্যা কাজলের বোন রাবেয়া বসরী বকুলী বেগম তার ভাই ও ছেলে সাদ্দামকে দিয়ে অপরাধ জগৎ নিয়ন্ত্রণ করে। ২০১৩ সালের ২ জুন বকুলী বেগমের ছেলে সাদ্দাম ও তার সহযোগীরা এক যুবতীকে পালাক্রমে ধর্ষণ করে। চট্টগ্রামে সিএমপির তালিকাভুক্ত দুই সন্ত্রাসী সহোদর বাকলিয়া থানার মানুষের ঘুম হারাম করে দিয়েছে। সূত্র মতে, ২০০১ সালে একের পর এক রাজনৈতিক, ব্যবসায়ী, সমাজপতি এবং পুলিশ পেটানো, বোমা হামলা, চাঁদাবাজি ও বেপরোয়া সন্ত্রাস শুরু করার পর র্যাব-পুলিশ হন্যে হয়ে খুঁজছিল তিন সহোদর ও তাদের বোন রাবেয়াকে। তাদের মধ্যে র্যাবের ক্রসফায়ারে নিহত হয় তাদের এক সহোদর ছুইট্যা। এরপর র্যাবের তাড়া খেয়ে দীর্ঘ দিন ধরে এলাকা ছাড়া সন্ত্রাসী নাইক্যা কাজল, ভোলাইয়া ও রাবেয়া বসরী বকুলী। বর্তমানে আবারো তারা এলাকায় ফিরে এসেছে। তারা এলাকায় ফিরে আসায় শান্তি ফিরে গেছে এলাকা থেকে। চট্টগ্রাম নগর গোয়েন্দা পুলিশ জানায়, নাইক্যা কাজল বাকলিয়া থানার তালিকাভুক্ত সন্ত্রাসীর তালিকায় ২ নম্বর এবং তার ছোটভাই হানিফুল হক ভোলাইয়া ৮ নম্বরে। নাইক্যা কাজলের বিরুদ্ধে খুনসহ ১৩টি মামলা রয়েছে। হানিফের বিরুদ্ধে ১১টি। তাদের অপর এক ছোটভাই আনিসুল হকের বিরুদ্ধে চান্দগাঁও ও বাকলিয়া থানায় সাতটি মামলা রয়েছে। তাদের বোন রাবেয়া বসরী বেগমের ছেলে সুরুইত্তা বাকলিয়া থানার তালিকাভুক্ত সন্ত্রাসীর মধ্যে চতুর্থ। তার বিরুদ্ধে ৯টি মামলা রয়েছে। এলাকাবাসী জানান, সন্ত্রাসী নাইক্যা কাজল ও সন্ত্রাসী ভুলাইয়া ফিরে আসায় বাকলিয়া এলাকায় অপরাধ প্রবণতা বেড়েছে। প্রতিদিন কোনো না কোনো অঘটন ঘটছে বাকলিয়া, রাজাখালী ও নতুন ব্্িরজ এলাকায়। এ ব্যাপারে বাকলিয়া থানার ওসি মো: মহসীন নয়া দিগন্তকে বলেন, ‘মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ ও সন্ত্রাসীদের গ্রেফতারে পুলিশ কাজ করছে। সন্ত্রাসীরা যদি এলাকায় ফিরতে চায় তাহলে তাদের ছাড় দেয়া হবে না। এ দিকে বুধবার রাতে ব্লেড পার্টির প্রধান সাদ্দামকে গ্রেফতারের পর এলাকায় স্বস্তি নেমে এসেছে। সম্প্রতি তার বাহিনী নিয়ে নয়া দিগন্তে বিস্তারিত একটি রিপোর্ট প্রকাশিত হলে পুলিশ তৎপর হয়। অবশেষে বুধবার রাতে পুলিশ তাকে গ্রেফতার করতে সম হয়। তাকে গ্রেফতার পর মিষ্টি বিতরণ করেন এলাকাবাসী।
No comments:
Post a Comment