তিরিশ বছর আগের মাও সে তুংয়ের চীন হিসেবে পরিচয় দিতে এখন আর তেমন একটা আগ্রহ নেই দেশটির মতাসীন সিপিসির নেতা ও বিশেষজ্ঞদের। সংস্কার বিপ্লবের সফলতার ফসল চোখধাঁধানো উন্নয়নের পর এখন তারা চীনকে নিউ চায়না বলতেই বেশি স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন। তারা অনেকটা উচ্ছ্বসিতকণ্ঠেই বলেছেন, উই আর বিগ পাওয়ার। আমরা পৃথিবীর একটি বড় শক্তি। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রও বড় শক্তি। আমাদের দু’টি বড় শক্তির মধ্যে সম্পর্ক খুবই ভালো। তবে আমরা
বাংলাদেশেরও ঘনিষ্ঠ ও বিশ্বস্ত বন্ধু হতে চাই। এশিয়ার অর্থনৈতিক উন্নয়নের েেত্র বাংলাদেশ এখন আমাদের কাছে অনন্য মর্যাদা ও গুরুত্বের আসনে। কারণ বাংলাদেশের লণ ভালো, শক্তির ব্যারোমিটার ঊর্ধ্বমুখী। উঠে দাঁড়ানোর জন্য কঠোর পরিশ্রম করছে। বাংলাদেশ এখন অর্থনৈতিক সমৃদ্ধির বিষয়ে খুবই সক্রিয়। তারা বলেন, এই অঞ্চলের দেশগুলোর মধ্যে বন্ধুত্বের সেতুবন্ধন হতে পারে প্রস্তাবিত বিসিআইএম (বাংলাদেশ-চীন-ভারত-মিয়ানমার) অর্থনৈতিক করিডোর। এটি প্রতিষ্ঠা করা গেলে চার দেশের মানুষের জীবনমান পাল্টে যাবে। এক বেল্টে যুক্ত হবে চার দেশীয় বন্ধুত্ব। হাতে-হাত রেখে সামনে এগোবে অর্থনৈতিক উন্নয়ন। চার দেশের মধ্যে নদীর পানি বণ্টন ও সীমান্ত সমস্যার মতো বিদ্যমান সমস্যা সমাধানের পথও সুগম হবে। এ ছাড়া পর্যটন খাত, নিরাপত্তা ও প্রযুক্তির উন্নয়ন যেমন ঘটবে, তেমনি কানেক্টিভিটির ফলে যাতায়াতে কমে আসবে সময় ও খরচ। বাড়বে পারস্পরিক বাণিজ্য, আমদানি-রফতানি। এই প্রস্তাবিত করিডোর চার দেশের ৪৪ কোটি লোককে সংযুক্ত করবে। চার দেশের জনগণের সাথে জনগণের সম্পর্ক জোরদারে এটি হতে পারে নতুন দিগন্ত। তবে এসব বিষয়কে সামনে রেখে চীন ও বাংলাদেশসহ এশিয়ার দেশগুলোকে একযোগে কাজ করতে হবে। নইলে এই অঞ্চলের সমন্বিত উন্নয়ন সম্ভব হবে না, রা পাবে না এখানকার পরিবেশও। চীন সরকারের আমন্ত্রণে গত ২৩ থেকে ৩০ নভেম্বর কলামিস্ট সাদেক খানের নেতৃত্বে বাংলাদেশের ১৫ সদস্যের একটি মিডিয়া প্রতিনিধিদল দেশটির রাজধানী বেইজিং ও ইউনান প্রদেশের কুনমিংসহ বিভিন্ন অঞ্চল সফরকালে বিভিন্ন মতবিনিময় সভায় তারা এসব মন্তব্য করেন। আলোচনায় ভারতের সাথে বাংলাদেশের বিরাজমান দ্বিপীয় সমস্যার কথাও উঠে আসে। প্রস্তাবিত বিসিআইএম অর্থনৈতিক করিডোর প্রতিষ্ঠায় বিশেষ করে রোহিঙ্গা ইস্যু একাধিকবার আলোচনায় এসেছে। এ বিষয়ে ইউনান প্রদেশের ইনস্টিটিউট অব সাউথ এশিয়া স্টাডিজ ইউনান অ্যাকাডেমি অব সোসাল সায়েন্সের (আইএসএএস) উপপরিচালক অধ্যাপক ইয়াং সিলিংয়ের ইয়াং সিলিং বলেন, বাংলাদেশ-ভারতের মধ্যকার দীর্ঘ দিনের কিছু সমস্যা এখনো মেটেনি, বিষয়টি আমাদের অজানা নয়। রোহিঙ্গা ইস্যুতে মিয়ানমারের সাথে বাংলাদেশের সমস্যার কথাও আমাদের জানা। তবে এগুলোর কারণে করিডোর প্রতিষ্ঠার বিষয়টি ঝুলে থাকা সমীচীন হতে পারে না। চীনা কমিউনিস্ট পার্টির ভাইস মিনিস্টার গুয়ো ইয়েঝুও বাংলাদেশের সাথে আরো ঘনিষ্ঠ হয়ে কাজ করার আগ্রহ ব্যক্ত করে বলেন, চীনের শক্তি এখন প্রমাণিত। এখন আমরা আমাদের দেশকে বলি নিউ চায়না। আমরা বাংলাদেশকে বন্ধু হিসেবে পেতে চাই। কারণ বাংলাদেশও উঠে দাঁড়ানোর জন্য কঠোর পরিশ্রম করে যাচ্ছে। বাংলাদেশের লণ ভালো, শক্তির ব্যারোমিটার এখন ঊর্ধ্বমুখী। মিডিয়া প্রতিনিধিদলের সাথে মতবিনিময়কালে মতাসীন দলের নেতা, সরকারি কর্মকর্তা ও বিশেষজ্ঞরা বলেন, এই অঞ্চলের দেশগুলোর মধ্যে বন্ধুত্বের সেতুবন্ধন হতে পারে প্রস্তাবিত বিসিআইএম অর্থনৈতিক করিডোর। এটি প্রতিষ্ঠা করা গেলে চার দেশের মানুষের জীবনমান পাল্টে যাবে। এক বেল্টে যুক্ত হবে চার দেশীয় বন্ধুত্ব। এ বিষয়ে বাংলাদেশ মিডিয়া প্রতিনিধিদলের সদস্য বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থার প্রধান সম্পাদক ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক আবুল কালাম আজাদ বলেছেন, শান্তিময় এশিয়া প্রতিষ্ঠায় বাংলাদেশ সরকারও চীনের সাথে আরো ঘনিষ্ঠ হয়ে কাজ করতে চায়। ইতোমধ্যে চীনের সাথে বাংলাদেশের দ্বিপীয় সম্পর্কে নাটকীয় উন্নয়ন ঘটেছে, সামনে এটি দৃঢ় থেকে দৃঢ়তর হবে। নিউজ টুডের সম্পাদক রিয়াজউদ্দিন বলেছেন, পুরো এশিয়াকে যুক্ত করতে না পারলে এ অঞ্চলের টেকসই উন্নয়ন সম্ভব হবে না। এর জন্য সবার আগে দরকার রাজনৈতিক অঙ্গীকার ও স্থিতিশীলতা। এ জন্য সংশ্লিষ্ট সবাইকে আন্তরিক হতে হবে। অধ্যাপক ইয়াং সিলিং বলেন, বাংলাদেশ এখন অর্থনৈতিক সমৃদ্ধির বিষয়ে খুব সক্রিয়। সম্পর্ক জোরদারে আমাদের উচিত বাংলাদেশের ব্যবসায়ীদের জন্য সহযোগিতার হাত আরো সম্প্রসারিত করা। এ জন্য একটি ম্যাকানিজম খুঁজে বের করা দরকার। ইউনান প্রদেশের পররাষ্ট্র বিভাগের উপ মহাপরিচালক হাও কুন জানান, ইউনান রাজ্য সরকার ঢাকার সাথে উষ্ণ সম্পর্ক চায়। কারণ ঢাকা ইউনানের খুবই কাছে। কুনমিং থেকে বিমানে বেইজিং যেতে তিন ঘণ্টা লাগে, ঢাকা যেতে লাগে মাত্র দুই ঘণ্টা। হাও কুন বলেন, এর আগে বাংলাদেশ থেকে এত বড় প্রকল্প বাস্তবায়নের তহবিল নিয়ে সংশয় প্রকাশ করা হয়েছিল। এ পরিপ্রেেিত নভেম্বর মাসের শুরুতে চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং এ প্রকল্পের অবকাঠামো উন্নয়নে চার হাজার কোটি ডলারের তহবিল গঠনের প্রস্তাব করেছেন। ফলে এ করিডোর চার দেশের জনগণের জীবনমানকে কত উচ্চতায় নিয়ে যাবেÑ তা তাদের বুঝতে হবে। কুনমিংয়ে বাংলাদেশের কনসাল জেনারেল শাহনাজ গাজী বলেন, ঢাকা-কুনমিং নিয়মিত ফাইট চলাচল করছে। বাংলাদেশের নির্মাণ খাতে চীনের বহুলোক কাজ করছেন। কক্সবাজারসহ বাংলাদেশের পর্যটন স্থানগুলোর প্রতি চীনাদের আকর্ষণ বেড়েছে। সুন্দরবনের অপরূপ সৌন্দর্যও চীনাদের আগ্রহ বাড়াবে বলে তিনি মনে করেন। বাংলাদেশের মিডিয়া প্রতিনিধিদল কুনমিংয়ের সাথে চট্টগ্রাম বা কক্সবাজারের বিমান সার্ভিস চালুর বিষয়টি গুরুত্বের সাথে বিবেচনায় নেয়ার জন্য সংশ্লিষ্টদের উদ্যোগী হওয়ার পরামর্শ দেন।
No comments:
Post a Comment