বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল কর্তৃক সাংবাদিক ডেভিড বার্গম্যানের বিরুদ্ধে আদালত অবমাননার অভিযোগে দেয়া রায় যুদ্ধাপরাধের বিচারপ্রক্রিয়া নিয়ে পর্যবেক্ষকদের মন্তব্য করার সীমিত সুযোগকে আরো সঙ্কুচিত করবে। অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল, হিউম্যান রাইটস ওয়াচ ও ইন্টারন্যাশনাল কমিশন অব জুরিস্টস এ মন্তব্য করেছে। সংস্থা তিনটির মন্তব্যসহ হিউম্যান রাইটস ওয়াচের প্রতিবেদনটি গত শুক্রবার প্রকাশিত হয়। ট্রা
ইব্যুনালের বিচারপ্রক্রিয়া নিয়ে তিনটি ব্লগ পোস্টে মন্তব্য করায় বার্গম্যানকে প্রতীকী কারাদণ্ড ও পাঁচ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়। অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের এশিয়া-প্যাসিফিক বিভাগের ডিরেক্টর রিচার্ড বেনেট বলেন, ‘মত প্রকাশের স্বাধীনতাকে সম্মান না জানিয়ে ট্রাইব্যুনাল কিছু সমালোচকদের বিরুদ্ধে অবমাননার অভিযোগ এনেছে, যেখানে শাস্তিপ্রাপ্তদের আপিলের কোনো সুযোগ নেই। বার্গম্যানের দণ্ডাদেশ সাংবাদিক ও মানবাধিকার কর্মীদের কাছে এই বার্তা দিয়েছে যে, এই ট্রাইব্যুনাল যৌক্তিক সমালোচনাও সহ্য করবে না।’ প্রতিবেদনে বলা হয়, আদালতের বিচারপ্রক্রিয়া নিয়ে আরো যারা সমালোচনা করেছেন, তাদের বিরুদ্ধেও আংশিক অবমাননার অভিযোগ আনা হয়েছে। সমালোচনার পথ বন্ধ করতেই ট্রাইব্যুনালের কিছু দিক ও বিষয় নিয়ে রিপোর্ট প্রকাশ করায় হিউম্যান রাইটস ওয়াচ, দ্য ইকোনমিস্টের সাংবাদিকসহ স্থানীয় সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে আদালত অবমাননার অভিযোগ এনে বিচার করা হয়েছে। প্রতিবেদনে বলা হয়, বার্গম্যানের বিরুদ্ধে দেয়া রায়ে রীতির ব্যতিক্রম ঘটিয়ে তার একটি ব্লগ পোস্টকে বিবেচনায় নিয়েছে ট্রাইব্যুনাল, যেখানে ১৯৭১ সালের যুদ্ধে নিহতের সংখ্যার যৌক্তিকতা নিয়ে প্রশ্ন তোলা হয়েছে। যুদ্ধে ৩০ লাখ লোক নিহত হয়েছে বলে বাংলাদেশ সরকার বরাবর বলে এসেছে। ট্রাইব্যুনালও এ সংখ্যাটিকে প্রমাণিত তথ্য হিসেবে গ্রহণ করেছে। কিছু পর্যবেক্ষকের মতে, এই নিহতের সংখ্যাটি তিন লাখের কাছাকাছি। আরো অনেকের মতে, সংখ্যাটা তিন ও ৩০ লাখের মাঝামাঝি। ‘‘ট্রাইব্যুনালের রায়ে বলা হয়, যুদ্ধে নিহতের সংখ্যা নিয়ে কোনো প্রতিষ্ঠিত তথ্য আছে কি না এমন প্রশ্ন তুলে বার্গম্যান জাতির আকাক্সা ও পবিত্র আবেগকে অসম্মানিত ও ছোট করেছেন। এবং এটি আদালতকে বিতর্কিত করার অসৎ উদ্দেশ্য নিয়ে করা হয়েছে। রায়ে তাকে ‘ঐতিহাসিকভাবে প্রমাণিত বিষয়’ নিয়ে না লিখতেও আদেশ দেয়া হয়।” প্রতিবেদনে বলা হয়, হিউম্যান রাইটস ওয়াচ, দ্য ইন্টারন্যাশনাল কমিশন অব জুরিস্টস ও অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল ১৯৭১ সালের যুদ্ধে নিহতের সংখ্যা নিয়ে কোনো পক্ষাবলম্বন করে না। তবে তারা বিশ্বাস করে, বিষয়টি নিয়ে যুক্তিবাদী ও বিবেচনাবোধসম্পন্ন মানুষ দ্বিমত পোষণ করতে পারেন।
No comments:
Post a Comment