Friday, December 19, 2014

অভিযান আছে উচ্ছেদ নেই:কালের কন্ঠ

ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনে অবৈধ দখলদার উচ্ছেদের অভিযান অর্থের অপচয়ের নামান্তর। ঢাকঢোল পিটিয়ে লোক দেখাতে এসব উচ্ছেদ অভিযান চালানো হয় বলে নগরবাসীর মন্তব্য। কারণ অভিযানের
পরই আবার যথাবস্থায় ফিরে যায় সবকিছু। ফলে সিটি করপোরেশন, পুলিশ ও উচ্ছেদে নিয়োজিত শ্রমিকদের পেছনে ব্যয় করা সরকারি অর্থ কোনো কাজে আসছে না। উচ্ছেদ অভিযান চালানোর পর মাত্র কয়েক ঘণ্টা একটু সরে থাকতে হয় দখলদারদের। এরপর তারা নিজেদের মতো আবারও দখল নেয়। সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলেন, চাহিদামাফিক জনবল না থাকা ও স্থানীয়দের সচেতনতার অভাবেই উচ্ছেদের পর পুনরায় দখলে চলে যায় সবকিছু। ফলে অভিযান কেবল ‘অভিযান’ হয়েই থাকে। এ অবস্থার মধ্যেই গতকাল বৃহস্পতিবারও ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন (ডিএসসিসি) ও ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন (ডিএনসিসি) আলাদাভাবে রাজধানীর ইস্কাটন, রমনা ও প্রগতি সরণিতে উচ্ছেদ অভিযান চালিয়েছে। এ ব্যাপারে ডিএসসিসির নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট কবির মাহমুদ বলেন, ‘অবৈধ দখলদারদের বিরুদ্ধে আমরা নিয়মিত উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনা করে থাকি। কিন্তু যেসব স্থান অভিযান চালিয়ে দখলমুক্ত করা হয়, সেসব স্থানে দুই দিন পর গিয়ে দেখা যায়, আগের মতোই দখল হয়ে গেছে। প্রতিটি ফুটপাত বা উন্মুক্ত স্থান উচ্ছেদ অভিযানের পর সার্বক্ষণিকভাবে দেখভাল করা সম্ভব হয় না। এ ব্যাপারে স্থানীয় জনসাধারণের সচেতনতা বাড়াতে হবে।’ কয়েক বছর ধরে অবৈধ দখলে থাকা রাজধানীর ইংলিশ রোডসংলগ্ন বাবুবাজারের ট্রাকস্ট্যান্ডটি উচ্ছেদের প্রস্তুতি নিয়ে শেষ পর্যন্ত গত ৪ ডিসেম্বর খুঁটি পুঁতে আসে ডিএসসিসি। জানা গেছে, সংস্থার নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট পুলিশ ও প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম নিয়ে ওই স্থানে পৌঁছার পর পরিবহন শ্রমিকরা হট্টগোল শুরু করে। পরিবহন শ্রমিক ইউনিয়নের নেতারাও তাদের সঙ্গে যোগ দিয়ে উচ্ছেদে বাধা দেয়। কয়েক ঘণ্টা অপেক্ষা করে পরিবহন শ্রমিকদের সময় বেঁধে দিয়ে খুঁটি পুঁতে সীমানা নির্দিষ্ট করে দখল বুঝে নেয় ডিএসসিসি। কিন্তু ওই পর্যন্তই। সংস্থার লোকজন স্থান ত্যাগ করতেই আবার তা আগের অবস্থায় ফিরে যায়। ঢাকা জেলা ট্রাক শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি হাজি মো. জয়নাল আবেদীন বলেন, দীর্ঘ সময় ধরে ট্রাকস্ট্যান্ডটি ওখানে রয়েছে। কয়েক হাজার শ্রমিকের রুজি এর সঙ্গে সম্পৃক্ত। হঠাৎ করে নোটিশ ছাড়া সিটি করপোরেশন স্ট্যান্ডটি উচ্ছেদ করতে পারে না। গত ২৩ নভেম্বর শাহবাগে ফুটপাতের ওপর অননুমোদিত অর্ধশতাধিক ফুলের দোকানসহ শতাধিক স্থাপনা উচ্ছেদ করে ডিএসসিসি। নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট কবির মাহমুদের নেতৃত্ব ওই অভিযানে শাহবাগ থানা পুলিশ সহায়তা করে। কিন্তু ২৪ তারিখ থেকেই পুরো ফুটপাতে আগের মতো দোকান বসায় ফুল বিক্রেতারা। অথচ ওই ফুটপাত শাহবাগ থানার দেয়াল ঘেঁষেই রয়েছে। বিক্রেতাদের দাবি, দোকানের ময়লা-আবর্জনা অপসারণের জন্য দোকানপিছু মাসে ৭৫০ টাকা সিটি করপোরেশনকে দেওয়া হয়। গত ২ জুলাই ডিএসসিসি বাংলাদেশ ব্যাংকের সামনে অবৈধ দোকান উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনা করে। ওই দিন করপোরেশনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট অতুল মণ্ডলের নেতৃত্বে ফুটপাত ও সড়কে অভিযান পরিচালনা করা হয়। দোকান বসাতে সুযোগ করে দেওয়ার অভিযোগে জাহাঙ্গীর ও হাসান নামে বাংলাদেশ ব্যাংকের দুই নিরাপত্তারক্ষীকে আটকও করা হয়েছিল। কিন্তু ওই সব স্থানে এখন আগের মতো দোকান বসে গেছে। সম্প্রতি ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের সামনের সড়ক ও ফুটপাতে অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করে ডিএসসিসি। করপোরেশনের ম্যাজিস্ট্রেটের নেতৃত্বে অভিযানে অংশ নেন পুলিশ ও হাসপাতালের আনসার সদস্যরা। সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের দাবি, হাসপাতালের জরুরি বিভাগ ও বহির্বিভাগের সামনের ফুটপাতে বিভিন্ন ধরনের অস্থায়ী দোকান থাকায় রোগী ও চিকিৎসকদের চলাচলে বিঘ্ন সৃষ্টি হয় বলে উচ্ছেদ অভিযান হয়েছে। আগেও কয়েকবার ওই স্থানে উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনা করা হয়েছে। কিন্তু অভিযান শেষ করে ম্যাজিস্ট্রেট চলে যাওয়ার পরই আবার তা দখলে চলে যায়। জানা গেছে, জরুরি বিভাগের সামনে যুবলীগের একটি ক্লাবঘর রয়েছে। সেখান থেকেই এসব অবৈধ স্থাপনা নিয়ন্ত্রণ করা হয়, টাকা আদায় করা হয়। ফলে কোনো উচ্ছেদ অভিযানই স্থায়ী হয় না। বরং উচ্ছেদ করতে গেলে দখলদারদের সঙ্গে সংঘর্ষের ঘটনাও ঘটে। গত ২০ এপ্রিল ঢাকা মেডিক্যাল কলেজের জরুরি বিভাগের সামনে উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনার সময় দোকানিদের সঙ্গে আনসারদের সংঘর্ষ হয়। সম্প্রতি রাজধানীর মিরপুর-১-এ অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ অভিযান চালায় ডিএনসিসি। রাস্তার দুই পাশে থাকা যাবতীয় অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করা হয়। ক্যাপিটাল মার্কেট, হকার্স মার্কেট, মুক্তিযোদ্ধা মার্কেট এলাকাসহ বিভিন্ন স্থানে ফুটপাতের দোকান ও অন্যান্য অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করা হয়। সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত অভিযানে প্রায় তিন শ দোকান ও অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করা হয়েছে। কিন্তু পরদিনই সব আগের অবস্থায় ফিরে যায়। শিশু একাডেমি-সংলগ্ন ফুটপাতে দুই দশকে গড়ে ওঠা দোকানগুলো অবৈধ স্থাপনা হিসেবে উচ্ছেদ করে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন। ১০২টি অস্থায়ী দোকান উচ্ছেদ করা হয় ঢাকঢোল পিটিয়ে। কারণ হিসেবে বলা হয়, অবৈধ স্থাপনাগুলো আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের নিরাপত্তার জন্য হুমকি। ওই পর্যন্তই। এখন ওই ফুটপাতে প্রায় দেড় শ দোকান রয়েছে। একই অবস্থা তেজগাঁও বেগুনবাড়ী রাস্তায়। সেখানে ডিএনসিসি এ পর্যন্ত তিনবার উচ্ছেদ অভিযান চালিয়ে রাস্তার দুই পাশে থাকা প্রায় তিন শ অবৈধ দোকান গুঁড়িয়ে দেয়। কিন্তু আবারও অবৈধ দখলদাররা দোকান নিয়ে বসতে শুরু করেছে সেখানে। গতকালের উচ্ছেদ অভিযান : গতকাল বৃহস্পতিবার ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশন পৃথকভাবে উচ্ছেদ অভিযান চালিয়েছে। ডিএনসিসি কাওরান বাজার এলাকায় অভিযান চালিয়ে পাঁচ শতাধিক ফুটপাতের অবৈধ দোকান উচ্ছেদ করে। ট্রেড লাইসেন্স ছাড়া ও নোংরা পরিবেশে খাবার বিক্রির দায়ে চার দোকান মালিককে ৪০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়। রাস্তা দখল করে মালামাল বিক্রি করায় এক সাইকেল দোকানিকে পাঁচ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়। ডিএনসিসির নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ইবাদত হোসেন দুপুর ২টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত অভিযান পরিচালনা করেন। ইবাদত হোসেন বলেন, ‘অবৈধভাবে ফুটপাত ও রাস্তা দখল করে দোকান বসানোয় আমরা কাওরান বাজার থেকে সরকারি বিজ্ঞান কলেজ হয়ে কাঁচাবাজার পর্যন্ত পাঁচ শতাধিক দোকান উচ্ছেদ করেছি। নোংরা পরিবেশে খাবার বিক্রি করায় চার দোকানদারকে ১০ হাজার টাকা করে ৪০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে।’ একই দিন রাজধানীর বেইলি রোড, ইস্কাটন এবং রমনা পার্ক এলাকায় অভিযান চালিয়ে অবৈধ কাঁচাবাজার উচ্ছেদ করে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন (ডিএসসিসি)। নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট কবির মাহমুদের নেতৃত্বে অভিযান চালানো হয়। সকাল ৭ থেকে ১১টা পর্যন্ত অভিযান চলে।  কবির মাহমুদ বলেন, অবৈধভাবে ফুটপাত ও রাস্তা দখল করে কাঁচাবাজার বসানোয় সেগুলো উচ্ছেদ করা হয়েছে। অভিযানে ৫৮ কেজি মাছ, ১০০ কেজি টমেটো, ৪৭ কেজি পেঁয়াজ, ৫৫৮ কেজি সবজি ও ২৫টি লাউ জব্দ করা হয়।

No comments:

Post a Comment