ঢাকা সিটি কর্পোরেশনে (ডিসিসি) ২০০৭-২০০৯ অর্থবছরে নানা খাতে ৪৪ কোটি ৩৮ লাখ টাকার দুর্নীতি হয়েছে। বিধিবহির্ভূতভাবে জ্বালানি তেলের বিল পরিশোধ, ভ্যাট কর্তন ও নির্ধারিত হারে আয়কর আদায় না করা, বিভিন্ন খাতের আদায়কৃত অর্থ জমা না দেয়া, বিধিবহির্ভূতভাবে ঠিকাদারকে ফি দেয়া, প্রকল্প প্রণয়নের আগেই কনসালটেন্ট নিয়োগ, নিুমানের কাজ ও অস্বাভাবিক দর বৃদ্ধিতে এসব দুর্নীতি হয়েছে। স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় থেকে ৫ জানুয়া
রি ঢাকার দুই সিটি কর্পোরেশনের কাছে পাঠানো সরকারি হিসাব সংক্রান্ত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির বৈঠকের প্রতিবেদনে এ দুর্নীতির চিত্র তুলে ধরা হয়। প্রতিবেদনের তথ্য মতে, উল্লিখিত সময়ে রাজধানীতে বিলবোর্ড স্থাপনকারী প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে বিজ্ঞাপনের ওপর ভ্যাট আদায় না করায় সরকারের রাজস্ব ক্ষতি হয়েছে ৪২ লাখ ২ হাজার ১৩২ টাকা। বিভিন্ন ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের বিল পরিশোধের সময় নির্ধারিত হারে ভ্যাট কর্তন না করায় ক্ষতি ১১ লাখ ২৮ হাজার ২৫২ টাকা। ইজারা মূল্যের ওপর ৫ শতাংশের জায়গায় ৩ শতাংশ আয়কর আদায় করায় সরকারের রাজস্ব ক্ষতির পরিমাণ ১৩ লাখ ৭৭ হাজার ৩১ টাকা। এছাড়া পশুর হাটের খাস আদায় বাবদ মূসক ও আয়কর বাবদ ৪০ লাখ ৫৫ হাজার ৯২৫ টাকা সরকারি কোষাগারে জমা করা হয়নি। অস্থায়ী কোরবানি পশুর হাট থেকে এ বাবদ ১ কোটি ৩০ লাখ ২৮ হাজার ৩৩১ টাকা রাজস্ব খাতে জমা দেয়া হয়নি। হাট-বাজার ইজারা মূল্যের ৫ শতাংশ সেলামি বাবদ ১০ লাখ ১৩ হাজার ৯৮১ টাকা সরকারি কোষাগারে জমা করা হয়নি। বাংলাদেশ পুলিশ কো-অপারেটিভ সোসাইটি লিমিটেডের হোল্ডিং ট্যাক্স বাবদ ৫৩ লাখ ৩৭ হাজার ৩৯৪ টাকা আদায় করেনি ডিসিসি। জ্বালানি তেলের বিলে বিধিবহির্ভূতভাবে ১০ শতাংশ হারে লভ্যাংশ যোগ করে বিল পরিশোধ করায় সংস্থার ৩৫ লাখ ৩৭ হাজার ৩৫১ টাকার ক্ষতি হয়েছে। প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, ডিসিসির টায়ার ডোজার নম্বর-১, টায়ার ডোজার নম্বর-০৩-এর ক্রয়মূল্য ৩৭ লাখ ৬১ হাজার ৭৩৪ টাকা হলেও মেরামত কাজে ব্যয় দেখানো হয়েছে ১ কোটি ১৯ লাখ ৮৮ হাজার ৯৫ টাকা, যা বাস্তবসম্মত নয়। বিধিবহির্ভূতভাবে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে কনসালটেন্সি ফি বাবদ ৪০ লাখ টাকা দেয়ায় সরকারের আর্থিক ক্ষতি হয়েছে। আধা যান্ত্রিক কসাইখানা নির্মাণের প্রকল্প প্রণয়নের পূর্বে কনসালটেন্ট নিয়োগ এবং কসাইখানা নির্মিত না হওয়ায় কনসালটেন্সি ফি বাবদ দেয়া ১৬ লাখ ৫৭ হাজার ৭৪৯ টাকা অপচয় হয়েছে। ত্র“টিপূর্ণ প্রাক্কলনের মাধ্যমে কমিউনিটি সেন্টার কমপ্লেক্স নির্মাণের জন্য আংশিক কাজ সম্পাদনের কাজ স্থগিত রাখায় এবং কর্তৃপক্ষের সময়োচিত সিদ্ধান্তের অভাবে ৬৯ লাখ ৭৯ হাজার ৬৫৫ টাকার ক্ষতি হয়েছে। প্রতিবেদন থেকে আরও জানা যায়, ডিসিসির বিভিন্ন কাজের ক্ষেত্রে কম হারে আয়কর ও ভ্যাট কর্তন করায় ১৮ লাখ ২১ হাজার ৮৮৪ টাকার ক্ষতি হয়েছে। ওসমানি উদ্যানের সার্বিক উন্নয়ন, শ্রীবৃদ্ধিকরণ ও আধুনিকরণ (২য় পর্যায়) শীর্ষক প্রকল্পে ঠিকাদারকে ২২ লাখ ৮৩ টাকার আর্থিক সুবিধা দেয়া হয়েছে বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে। এছাড়া ৮১ নম্বর ওয়ার্ড গেণ্ডারিয়া শরাফতগঞ্জ কমিউনিটি সেন্টার কমপ্লেক্সের পাইলিং কাজে এমএস রডের মূল্যবাবদ ৬১ লাখ ১০ হাজার ৫১৪ টাকা অতিরিক্ত দেয়া হয়েছে ঠিকাদারকে। এয়ারপোর্ট রোড-রোকেয়া সরণি লিংক রোড শীর্ষক প্রকল্প ব্যয় ধাপে ধাপে বাড়িয়ে ৩২ কোটি ৮৭ লাখ ২৪ হাজার টাকা করা হয়েছে। এ সংক্রান্ত ফাইলপত্র উপস্থাপন করা হয়নি। নথিপত্র ও পরিমাণ বহি অডিটে নেই এমন ব্যয়ের পরিমাণ ৫ কোটি ৩১ লাখ ৪৩ হাজার ১৩৮ টাকা। ডিসিসির অধীনস্ত বিভিন্ন সড়ক ও ড্রেনেজ অবকাঠামো উন্নয়ন শীর্ষক প্রকল্পের ৪ কোটি ২৬ লাখ ৯০ হাজার ৩৪১ টাকা ব্যয়ের সমর্থনে নথি উপস্থাপন করা হয়নি। সংসদীয় কমিটির প্রতিবেদনে উত্থাপিত দুর্নীতির অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে অবিভক্ত ঢাকা সিটি কর্পোরেশনের ও বর্তমানে ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের প্রধান অডিট কর্মকর্তা মো. মারুফ হাসান যুগান্তরকে বলেন, মন্ত্রণালয় থেকে বিষয়গুলো সঠিকভাবে উপস্থাপন না করায় কিছু ক্ষেত্রে ভুল হিসাব এসেছে। আর রাজস্ব আদায় করা সম্ভব হয়নি এমন অনেক ঘটনাও রয়েছে। সংস্থার পক্ষ থেকে এসব বিষয়ের ঘাটতি পূরণের চেষ্টা চলছে। এ ধরনের অডিট আপত্তি দুর্নীতির পর্যায়ে পড়ে কিনা জানতে চাইলে তিনি স্পষ্ট করে কিছু বলেননি। তবে তিনি বলেন, পরবর্তী সময় মন্ত্রণালয়ের বৈঠকে বিষয়গুলো পরিষ্কার করে তুলে ধরা হবে।
No comments:
Post a Comment