
আর না ঘটতে পারে, সে জন্য আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পাশাপাশি তৎপর হচ্ছে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন এই জোটের নেতা-কর্মীরাও। গতকাল বৃহস্পতিবার স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের সঙ্গে ১৪ দলের নেতাদের এক বৈঠকে এমন সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। বৈঠকে নাশকতা প্রতিরোধে সারা দেশে ক্ষমতাসীন জোটের সংসদ সদস্যদের তৎপরতা বাড়ানোর ওপর জোর দেন ১৪ দলের নেতারা। পাড়া-মহল্লায় সন্ত্রাসীদের ধরে পুলিশের হাতে সোপর্দ করার যে আহ্বান সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জানিয়েছেন তাতে সাড়া দিয়ে মাঠপর্যায়ে কাজ শুরু করেছে সরকার সমর্থক বিভিন্ন দল ও সংগঠনের নেতা-কর্মীরা। কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকেও সন্ত্রাসীদের ধরে পুলিশের হাতে তুলে দিতে দলের তৃণমূল নেতা-কর্মীদের প্রতি নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন দলটির এক সাংগঠনিক সম্পাদক। জানা গেছে, প্রধানমন্ত্রীর আহ্বান ও দলীয় নির্দেশনা পেয়ে নাশকতাকারীদের ধরতে দেশের বিভিন্ন স্থানে পাহারা দিতে শুরু করেছে ক্ষমতাসীন দলের কর্মীরা। বগুড়া শহরের স্পর্শকাতর বিভিন্ন স্থানে মহাসড়কে পালা করে পাহারায় থাকছে যুবলীগের ৫০-৬০ জন নেতা-কর্মী। এ বিষয়ে জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন কালের কণ্ঠকে বলেন, 'বিএনপি-জামায়াত এখন আর আন্দোলন করছে না, তারা জঙ্গি তৎপরতা চালাচ্ছে। তাদের এ নাশকতা প্রতিরোধে আমরা তৎপরতা বাড়িয়ে দিয়েছি।' তিনি আরো বলেন, 'আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পাড়া-মহল্লায় নাশকতাকারীদের ধরে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হাতে সোপর্দ করার নির্দেশ দিয়েছেন। এ আহ্বানের পরিপ্রেক্ষিতে মঙ্গলবার আমরা সারা দেশের নেতা-কর্মীদের নির্দেশনা দিয়েছি। আমাদের নেতা-কর্মীরা প্রকৃত সন্ত্রাসীদের ধরে পুলিশের হাতে সোপর্দ করবে।' ১৪ দল সূত্রে জানা যায়, স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকে দেশের বিভিন্ন স্থানে কয়েক দিনের নাশকতায় উদ্বেগ প্রকাশ করে এসব ঘটনা প্রতিরোধের কৌশল নির্ধারণের ওপর জোর দেন ১৪ দলের নেতারা। বৈঠকে নাশকতা প্রতিরোধে সরকারদলীয় সব সংসদ সদস্য মাঠে না থাকায় ক্ষোভ প্রকাশ করেন ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক ফজলে হোসেন বাদশা ও ঢাকার সংসদ সদস্য আসলামুল হক। তাঁরা বলেন, ৫ জানুয়ারি নির্বাচনের মধ্য দিয়ে সবচেয়ে বেশি লাভবান হয়েছেন সংসদ সদস্যরা। অথচ এখন বিরোধীদের আন্দোলন মোকাবিলায় সব সংসদ সদস্য সক্রিয় নন। অনেকে নিজের এলাকায় থাকেন না। অথচ জনপ্রতিনিধি হিসেবে তাঁদের দায়িত্ব অনেক বেশি। দলীয় পরিচয়ে সংসদ সদস্য হয়ে এখন দলের পক্ষে মাঠে নামছেন না কেন, তা নিয়েও প্রশ্ন তোলা হয়। বৈঠক সূত্রে জানা গেছে, আলোচনার পর সংসদ সদস্যদের মূল নেতৃত্বে রেখে স্থানীয় পর্যায়ে সন্ত্রাস প্রতিরোধ ও শান্তিরক্ষায় কাজ করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। বিভিন্ন পাড়া-মহল্লায় ১৪ দলের কমিটি গঠনের বিষয়ে নেতারা একমত হন। সন্ত্রাস প্রতিরোধে ১৪ দলের কর্মকাণ্ডে স্থানীয় পুলিশ প্রশাসনকে সহযোগিতা করার নির্দেশ দিতে স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রীকে অনুরোধ করা হয়। ওই সময় স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী জানান, আগামী এক সপ্তাহের মধ্যেই দেশের সব থানায় এ ধরনের নির্দেশনা দিয়ে চিঠি পাঠানো হবে। এ ছাড়া জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় আগের যেসব কমিটি রয়েছে সেগুলোতে ১৪ দলের নেতা-কর্মীদের যুক্ত করারও সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় বৈঠকে। বৈঠকে উপস্থিত একাধিক নেতা জানান, নাশকতা প্রতিরোধে রংপুর, নোয়াখালী, ফেনী, গাইবান্ধা ও সাতক্ষীরা- এ পাঁচ জেলায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে বিশেষ তৎপরতা দেখাতে স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রীকে পরামর্শ দেন ১৪ দলের নেতারা। ওই সময়ে স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী বলেন, নাশকতা ঠেকাতে রংপুর-ঢাকা মহাসড়কে দুই কিলোমিটার পর পর বসছে পুলিশের তাঁবু। গণপরিবহনগুলোতে অগ্নিনির্বাপক ব্যবস্থা রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। মহাসড়কে পুলিশ প্রহরায় চলাচলকারী গাড়িগুলোকে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর নির্দেশনা মেনে চলার জন্য জোরালোভাবে বলা হচ্ছে। মিঠাপুকুরে বাসে অগ্নিসংযোগের বিষয়ে আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেন, যে বাসটিতে আগুন দেওয়া হয় তাতে অগ্নিনির্বাপক ব্যবস্থা ছিল না। অথচ বাসগুলোকে অগ্নিনির্বাপক ব্যবস্থা রাখতে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া পুলিশ প্রহরায় বহরের সঙ্গে থাকা বাসটি হঠাৎ যাত্রী তোলার জন্য রাস্তায় দাঁড়িয়ে পড়ে। এতে সন্ত্রাসীরা অগ্নিসংযোগের সুযোগ পায়। বৈঠক সূত্রে জানা যায়, সাবেক পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী রিয়াজ রহমানের ওপর হামলায় জড়িতদের চিহ্নিত করার বিষয়ে স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রীর কাছে জানতে চান ১৪ দলের কয়েকজন নেতা। তখন স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী বলেন, তাঁরা রিয়াজ রহমানের ওপর হামলাকারীদের খুঁজে বের করার খুব কাছাকাছি রয়েছেন। যেকোনো মুহূর্তে হামলাকারীদের ধরা হবে। জানা যায়, বৈঠকে সহিংসতাপ্রবণ এলাকা উত্তরবঙ্গের রংপুর ও গাইবান্ধায় দুটি সমাবেশ করার সিদ্ধান্ত নেয় ১৪ দল। ১৭ জানুয়ারি দুপুর ২টায় রংপুরের মিঠাপুকুরে এবং ১৮ জানুয়ারি গাইবান্ধার পলাশবাড়ীতে এ জনসভা দুটি অনুষ্ঠিত হবে। এ সমাবেশে ১৪ দলের জাতীয় নেতারা উপস্থিত থাকবেন। এ ছাড়া সন্ত্রাস, নৈরাজ্য, চোরাগোপ্তা বোমা হামলা ও জঙ্গি নাশকতামূলক কর্মকাণ্ডের বিপক্ষে ঢাকা মহানগরসহ সারা দেশে ২০ দলীয় জোটের গণসংযোগ, পথযাত্রা, শান্তি মিছিল ও শান্তি সমাবেশ করারও সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য মোহাম্মদ নাসিমের সভাপতিত্বে ১৪ দলের বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন আওয়ামী লীগ নেতা মাহবুব-উল-আলম হানিফ, জাহাঙ্গীর কবির নানক, সুজিত রায় নন্দী, জাসদ নেতা শরীফ নূরুল আম্বিয়া, ওয়ার্কার্স পার্টির ফজলে হোসেন বাদশা ও কামরুল আহসান, তরিকত ফেডারেশনের নজিবুল বশর মাইজভাণ্ডারী, কমিউনিস্ট কেন্দ্রের অসিত বরণ রায়, ন্যাপের ইসমাইল হোসেন প্রমুখ। বগুড়ায় মহাসড়কে পাহারা সরকার সমর্থকদের : বগুড়া থেকে আমাদের নিজস্ব প্রতিবেদক জানান, বগুড়ায় প্রতিটি ওয়ার্ডে নাশকতার বিরুদ্ধে সচেতনতামূলক কার্যক্রম শুরু করেছে আওয়ামী লীগ। এ ছাড়া হরতাল-অবরোধে নাশকতা ঠেকাতে মহাসড়কে পাহারা দিচ্ছেন সরকার সমর্থকরা। রাতের বেলায় বগুড়া শহরের স্পর্শকাতর স্থান গোকুলসহ বিভিন্ন স্থানে মহাসড়কে পালা করে পাহারায় থাকছেন যুবলীগের ৫০-৬০ জন নেতা-কর্মী। মহাসড়কে এই পয়েন্টে অবরোধ চলাকালে প্রায় প্রতি রাতেই গাড়ি ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করা হতো। এ পাহারা কার্যক্রম শুরু করার পর সেখানে নির্বিঘ্নে যানবাহন চলাচল করতে পারছে। এ বিষয়ে জেলা যুবলীগ নেতা আমিনুল ইসলাম ডাবলু জানান, 'কেউ সড়কে বের হলে তার ওপর হামলা চালানো কাপুরুষের কাজ। কেন্দ্রীয় ও জেলার নেতাদের পরামর্শে আমরা মহাসড়কে নেমেছি। এখন আর কেউ এই এলাকায় তাণ্ডব চালাতে পারছে না।'
No comments:
Post a Comment