Friday, June 19, 2015

মুস্তাফিজ নামের বিস্ময়:প্রথম অালো

সেজো ভাই মোখলেছুর রহমানের কথা খুব মনে পড়ছিল। শীতের ভোরে এই ভাই-ই তো মোটরসাইকেলে চড়িয়ে বাড়ি থেকে ৪০ কিলোমিটার দূরের সাতক্ষীরা শহরে দিয়ে আসতেন তাঁকে অনুশীলনের জন্য! ওয়ানডে অভিষেকেই ৫ উইকেট, সে সুবাদে ম্যান অব দ্য ম্যাচের পুরস্কারও উঠে গেল হাতে। শেরেবাংলা স্টেডিয়ামের এমন আলো ঝলমলে রাতে সেই ভাইকে কীভাবে ভুলে থাকেন ১৯ বছর বয়সী মুস্তাফিজুর রহমান! মুস্তাফিজের মনে পড়ল পরিবারের অন্য সদস্যদের কথা
ও, যাদের অকৃত্রিম সহযোগিতায় তিনি আজ ক্রিকেটার, বাংলাদেশের ক্রিকেটের উজ্জ্বলতম নবীন তারকা। মনে পড়ল বরেয়া মিলনি স্কুল আর সাতক্ষীরার কালীগঞ্জ উপজেলার তেঁতুলিয়া গ্রামের কথা, যেখানে একসময় ফাইভ স্টার বলে ব্যাটসম্যান হিসেবে শুরু তাঁর ক্রিকেটার জীবনের। অনূর্ধ্ব-১৭ ক্রিকেটারদের ক্যাম্পে অংশ নিয়ে প্রথম ঢাকার ক্রিকেট দেখা সেই মুস্তাফিজ বাংলাদেশ দলের আরেকটি ভারত-বধের নায়ক। ম্যাচ-পরবর্তী সংবাদ সম্মেলনের কেন্দ্রীয় চরিত্রও। কাছের মানুষদের কাছে মুস্তাফিজ মোটেও লাজুক ছেলে নন। আবার খুব যে হইচই করা ছেলে, তাও না। সদ্য কৈশোরোত্তীর্ণ আর দশটা ছেলের মতোই তাঁর জীবন, চরিত্র। কিন্তু সংবাদ সম্মেলনের মুস্তাফিজকে দেখে কে বলবে সে কথা? যে রাতে ভারতীয় ব্যাটসম্যানদের অমন নাকানিচুবানি খাইয়ে ছাড়লেন, সেই রাতেই কত নিচু তাঁর স্বর! মাইক্রোফোনের সামনে বসেও শ্রোতাদের শোনাতে পারছিলেন না সব কথা। কখনো বিসিবির মিডিয়া ম্যানেজার রাবীদ ইমাম, কখনোবা অধিনায়ক মাশরাফি বিন মুর্তজা মাইক্রোফোন টেনে উত্তর দিয়ে দিচ্ছিলেন তাঁর হয়ে। পাঁচ উইকেট পাওয়া নিয়ে মুস্তাফিজের সংক্ষিপ্ত প্রতিক্রিয়া, ‘প্রথম ওয়ানডেতে ৫ উইকেট পেয়েছি, তাও ভারতের বিপক্ষে...সে জন্য খুব খুশি লাগছে।’ তা এর মধ্যে কোন উইকেটটা পেয়ে বেশি ভালো লেগেছে? এবার উত্তরটা আরও সংক্ষিপ্ত, ‘সব উইকেট পেয়েই ভালো লেগেছে।’ এক ম্যাচেই বিখ্যাত হয়ে যাওয়া তাঁর স্টক বল ‘কাটার’ নিয়েও অনেক কৌতূহল দেশি-বিদেশি সাংবাদিকদের। মুস্তাফিজ সেটা মেটালেন এভাবে, ‘অনূর্ধ্ব-১৯ দলে থাকা অবস্থায়, এরপর জাতীয় দলের অনুশীলনেও এটা অনেক প্র্যাকটিস করেছি।’ এই প্রশ্নে বাড়তি একটা গল্পও শোনালেন তিনি, ‘প্র্যাকটিসে বিজয় (এনামুল) ভাইয়া আমাকে বলেছিলেন এই বলটা করে দেখতে। করার পর দেখলাম উনি নিজেও এটা খেলতে পারছেন না।’ প্রথম ওয়ানডের একাদশে চার পেসার নেওয়ার মতোই বিস্ময় হয়ে এসেছিল নতুন বলে মুস্তাফিজের প্রথম ওভার করা। রোহিত শর্মা-শিখর ধাওয়ানদের বিপক্ষে এমন গুরুদায়িত্ব পেয়ে ভীষণই রোমাঞ্চিত হয়ে উঠেছিলেন তিনি। সে জন্য ধন্যবাদ দিলেন অধিনায়ক মাশরাফিকেও। গল্পের বাকিটা বললেন মাশরাফি, ‘আমি অনেক আগে থেকেই ঠিক করে রেখেছিলাম ওকে দিয়ে প্রথম ওভার করাব। কারণ ও একদমই নতুন বোলার, তার কাটারটা খেলা খুব কঠিন। স্পিনারদের বলের চেয়েও বেশি টার্ন করে ওটা। এ ধরনের উইকেটে এই বল খেলা যায় না।’ বাঁহাতি এই পেসারের দলে আসার পেছনেও কাজ করেছে তাঁর বোলিং বৈচিত্র্য। ‘আরাফাত সানির সাম্প্রতিক যা পারফরম্যান্স, ওকে আসলে বাদ দেওয়া যায় না। কিন্তু আমার মনে হয়েছিল মুস্তাফিজ এখানে সফল হবেই। ওকে বাদ দিলে আমাদের কী ধরনের ক্ষতি হবে, দল নির্বাচনের সময় আমরা বরং সে আলোচনাই বেশি করেছি’—বলছিলেন মাশরাফি। ম্যাচ শেষে ভারত অধিনায়ক মহেন্দ্র সিং ধোনিও পঞ্চমুখ হয়েছেন বাংলাদেশের ক্রিকেটে নতুন আবিষ্কৃত এই তরুণ পেসারের, ‘ওর বোলিং বৈচিত্র্য অনেক ভালো। সেটা কাজে লাগিয়েই সফল হয়েছে সে।’ আর তাতেই বিধ্বস্ত পরাক্রমশালী ভারতীয় ব্যাটিং! জেগে উঠছে বাংলাদেশের সিরিজ জয়ের স্বপ্নও। বাংলাদেশ অধিনায়ক অবশ্য একটা ম্যাচ জিতেই আকাশে উড়তে চাইছেন না। এগোতে চান ম্যাচ ধরে ধরেই। তার মানে আপাতত তাদের চোখ ২১ জুনের দ্বিতীয় ওয়ানডের ওপর। কিন্তু ওটা জিতলেই যে জেতা হয়ে যায় সিরিজও! প্রথম ম্যাচে জেতার পর সিরিজে বাংলাদেশের নতুন লক্ষ্যটার কথা কি আর বলে দেওয়ার প্রয়োজন আছে?

No comments:

Post a Comment