Friday, June 19, 2015

সুইস ব্যাংকে বাংলাদেশীদের টাকা বাড়ছে:যুগান্তর

সুইজারল্যান্ডের বিভিন্ন ব্যাংকে (সুইস ব্যাংক) বাংলাদেশী নাগরিকদের জমা টাকার পরিমাণ বেড়েই চলেছে। বাংলাদেশ থেকে সুইজারল্যান্ডের ব্যাংকগুলোতে টাকা পাচার, বিদেশে কর্মরত অনেক বাংলাদেশী নাগরিক সুইজারল্যান্ডের ব্যাংকগুলোতে টাকা জমা রাখেন বলে সেখানে বাংলাদেশীদের জমা টাকার পরিমাণ বেড়েই যাচ্ছে। এক বছরে বাংলাদেশীদের জমা অর্থের পরিমাণ বেড়েছে ৪০ দশমিক ৭২ শতাংশ। সুইস ব্যাংকে ২০১৪ সালে বাংলাদেশীদের জমার পরিমাণ ব
েড়ে দাঁড়িয়েছে ৫০ কোটি ৬০ লাখ সুইস ফ্র্যাংক। স্থানীয় মুদ্রায় এর পরিমাণ ৪ হাজার ৫৫৪ কোটি টাকা (প্রতি সুইস ফ্র্যাংক ৯০ টাকা হিসাবে)। আগের বছর অর্থাৎ ২০১৩ সালে তা ছিল ৩ হাজার ২৩৬ কোটি টাকা। এ হিসাবে এক বছরে বেড়েছে ১ হাজার ৩১৮ কোটি টাকা। এক্ষেত্রে দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে ভারত এবং পাকিস্তানের পরই রয়েছে বাংলাদেশের অবস্থান। বৃহস্পতিবার সুইজারল্যান্ডের কেন্দ্রীয় ব্যাংক সুইস ন্যাশনাল ব্যাংকের প্রকাশিত এক প্রতিবেদন থেকে এসব তথ্য পাওয়া গেছে। প্রতিবেদনে বলা হয়, কোনো বাংলাদেশী তার নাগরিকত্ব গোপন করে টাকা জমা রাখলে সেসব তথ্য এই প্রতিবেদনে নেই। অর্থনীতিবিদরা বলেছেন, দেশে বিনিয়োগ না হওয়ায় পুঁজি পাচার হচ্ছে। পাচার করা টাকার একটি অংশ সুইস ব্যাংকগুলোতে জমা হচ্ছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের উচিত এ বিষয়ে তদন্ত করে দেখা। প্রতিবেদন থেকে পাওয়া তথ্যে দেখা যায়, আলোচ্য সময়ে বিশ্বের অন্যান্য দেশের আমানতও বেড়েছে। ২০১৪ সালে মোট আমানতের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১ লাখ ৩৮ হাজার কোটি ফ্র্যাংক। আগের বছর যা ছিল ১ লাখ ২৩ হাজার কোটি ফ্রাংক। আমানত রাখার ক্ষেত্রে এ বছরও প্রথম অবস্থানে রয়েছে যুক্তরাজ্য। এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক মাহফুজুর রহমান বলেন, অফিসিয়ালি বাংলাদেশ থেকে বিদেশে টাকা নেয়ার কোনো সুযোগ নেই। সুইজ ব্যাংকে যেসব টাকা জমা হয়েছে সেগুলো প্রবাসীদের টাকা। তিনি বলেন, বাংলাদেশ থেকে বিদেশে টাকা যাওয়া তো দূরের কথা, উল্টো বিদেশ থেকে বাংলাদেশে রেমিটেন্স বাবদ প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা আসছে। তিনি আরও জানান, বিষয়টি বাংলাদেশ ব্যাংক খতিয়ে দেখবে। বাংলাদেশীদের আমানত : গত ১২ বছরের মধ্যে ২০১৪ সালেই বাংলাদেশীরা সবচেয়ে বেশি আমানত রেখেছে সুইস ব্যাংকে। আলোচ্য সময়ে সুইস ব্যাংকগুলোতে বাংলাদেশীদের আমানতের পরিমাণ বেড়ে ৫০ কোটি ৬০ লাখ ফ্র্যাংক হয়েছে। স্থানীয় মুদ্রায় এর পরিমাণ ৪ হাজার ৫৫৪ কোটি টাকা। ২০১৩ সালে ছিল ৩৭ কোটি ২০ লাখ ফ্র্যাংক। স্থানীয় মুদ্রায় যার পরিমাণ ৩ হাজার ২৩৬ কোটি টাকা। ২০১২ সালে ছিল ২২ কোটি ৯০ লাখ ফ্র্যাংক। ২০১১ সালে ছিল ১৫ কোটি ২০ ফ্র্যাংক। এগুলো শুধু নগদ অর্থের হিসাব। ব্যাংকের ভল্টে স্বর্ণালংকার, শিল্পকর্ম বা অন্যান্য মূল্যবান জিনিসপত্র জমা রাখলে তার আর্থিক মূল্য আমানতের এই হিসাবের সঙ্গে যোগ হয়নি। সেগুলোর হিসাব রয়েছে আলাদা। ১০ বছরে বাংলাদেশীদের আমানত : সুইস ব্যাংকগুলোতে বাংলাদেশীদের আমানত ২০০২ সালে ছিল ৩ কোটি ১০ লাখ ফ্র্যাংক, ২০০৪ সালে তা বেড়ে দাঁড়ায় ৪ কোটি ১০ লাখ ফ্র্যাংকে। ২০০৫ সালে এর পরিমাণ দ্বিগুণের বেশিও বেড়ে দাঁড়ায় ৯ কোটি ৭০ লাখ ফ্র্যাংকে। ২০০৬ সালে এর পরিমাণ বেড়ে দাঁড়ায় ১২ কোটি ৪০ লাখ ফ্র্যাংক। ২০০৭ সালে সেনা সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে এর পরিমাণ আগের বছরের চেয়ে দ্বিগুণ বেড়ে দাঁড়ায় ২৪ কোটি ৩০ লাখ ফ্র্যাংকে। ওই সময়ে সরকার বিদেশে পাচার করা টাকা ফেরত আনার প্রক্রিয়া শুরু করলে ২০০৮ সালে এর পরিমাণ নাটকীয়ভাবে কমে দাঁড়ায় ১০ কোটি ৭০ লাখ ফ্র্যাংক। ২০০৯ সালে মহাজোট সরকার ক্ষমতায় এলে সুইস ব্যাংককে বাংলাদেশীদের জমার পরিমাণ আবার বেড়ে ১৪ কোটি ৯০ লাখ এবং ২০১০ সালে তা আরও বেড়ে ২৩ কোটি ৬০ লাখ ফ্র্যাংকে দাঁড়ায়। এশিয়ার অন্যান্য দেশের আমানত : এশিয়ার অন্যান্য দেশের মধ্যে চীনা নাগরিকদের জমা ৮১০ কোটি ফ্র্যাংক, মালয়েশিয়ানদের জমা ৩৩৬ কোটি, থাইল্যান্ডের ৩০৫ কোটি, দক্ষিণ কোরিয়ার ২৭৬ কোটি, ভারতের ১৭৭ কোটি, পাকিস্তানের ১২৩ কোটি, শ্রীলংকার ৮ কোটি ২০ লাখ, নেপালের ১০ কোটি ২০ লাখ, মিয়ানমারের ৬ কোটি, মালদ্বীপের ১ কোটি ৭০ লাখ এবং আফগানিস্তান ১ কোটি ৪০ লাখ ফ্র্যাংক অর্থ জমা রয়েছে। মোট আমানত : প্রতিবেদন অনুসারে, আলোচ্য সময়ে বিশ্বের সবগুলো দেশের আমানত বেড়েছে। ২০১৪ সালে সুইস ব্যাংকে বিদেশীদের মোট আমানতের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১ লাখ ৩৮ হাজার ৮৬৪ কোটি ফ্র্যাংক। আগের বছর অর্থাৎ ২০১৩ সালে ছিল ১ লাখ ২৩ হাজার কোটি ফ্র্যাংক। এ হিসেবে মোট আমানত বেড়েছে ১৫ হাজার ২১৩ কোটি ফ্র্যাংক। ২০১২ সালে ছিল ১ লাখ ২৯ হাজার কোটি ফ্র্যাংক। এ হিসাবে ওই বছর মোট আমানত কমেছিল ৬ হাজার কোটি ফ্র্যাংক। এছাড়া ২০১১ সালে ১ লাখ ৪০ হাজার কোটি, ২০১০ সালে ১ লাখ ৩৪ হাজার কোটি এবং ২০০৯ সালে ছিল ১ হাজার ৩৩ হাজার কোটি ফ্র্যাংক। শীর্ষ দেশ : সুইস ব্যাংকে বিদেশীদের মধ্যে অর্থ জমা রাখার দিক থেকে ২০১৩ সালের মতো ২০১৪ সালেও শীর্ষে রয়েছে যুক্তরাজ্য। দেশটির নাগরিকদের মোট জমার পরিমাণ ৩২ হাজার ১৫৫ কোটি ফ্র্যাংক। দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে ওয়েস্ট ইন্ডিজ, তাদের নাগরিকদের জমার পরিমাণ ৯ হাজার ২০৬ কোটি ফ্র্যাংক। তৃতীয় অবস্থানে রয়েছে জার্মানি, তাদের জমা ৫ হাজার ১৪৩ কোটি ফ্র্যাংক। চতুর্থ অবস্থানে রয়েছে হংকং, তাদের জমা ৩ হাজার ৩৪৭ কোটি ফ্র্যাংক। পানামা রয়েছে পঞ্চম অবস্থানে, তাদের জমা ২ হাজার ৮৫৯ কোটি এবং ষষ্ঠ অবস্থানে রয়েছে সিঙ্গাপুর, তাদের জমার পরিমাণ ২ হাজার ৪১০ কোটি ফ্র্যাংক। এর আগে মালয়েশিয়ান সরকারের এক প্রতিবেদনে দেখা গেছে, বাংলাদেশ মালয়েশিয়ার সেকেন্ড হোম প্রকল্পে বিনিয়োগে দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে। চীন প্রথম অবস্থানে। এগুলো সবই হয়েছে টাকা পাচারের মাধ্যমে। নিয়ম অনুযায়ী কোনো নাগরিকের বিদেশে টাকা নিতে হলে বাংলাদেশ ব্যাংকের অনুমতি নিতে হয়। কিন্তু বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে অনুমতি নিয়ে বিদেশে কোনো ব্যক্তি বিনিয়োগ করেনি। কেন্দ্রীয় ব্যাংক এই ধরনের কোনো অনুমোদনও দেয় না। ফলে ওই খাতে বাংলাদেশীরা যেসব অর্থ বিনিয়োগ করেছে তা পাচারের মাধ্যমে করেছে। তবে বিদেশে যারা আয় করেন তাদের সুইস ব্যাংকে টাকা জমা রাখতে বাংলাদেশের আইনে কোনো সমস্যা নেই। আর তিনি আয়করের আওতায় এবং প্রবাসী কোটায় কোনো সুবিধা নিয়ে থাকলে বিদেশে সম্পদ থাকার তথ্যও তার আয়কর রিটার্নে উল্লেখ করতে হবে। এই নিয়মের ব্যত্যয় ঘটিয়ে কোনো নাগরিক বিদেশে টাকা রাখলে তা দেশ থেকে পাচার বলে গণ্য হবে। এ ব্যাপারে জানতে চাইলে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক অর্থ উপদেষ্টা ড. এবি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম বৃহস্পতিবার যুগান্তরকে বলেন, গত কয়েক বছর পর্যন্ত টাকা পাচার নিয়ে আলোচনা হচ্ছে। এর কারণ হল দেশে বেসরকারি বিনিয়োগ নেই। ফলে বিদেশে টাকা পাচার হচ্ছে। তিনি বলেন, বিনিয়োগে স্থবিরতার পরও মূলধনী যন্ত্রপাতি আমদানি ব্যয় বেড়েছে। এটি অস্বাভাবিক। এর অর্থ হল ওভার ইনভয়েসিংয়ের মাধ্যমে দেশ থেকে টাকা পাচার হয়েছে। সূত্র জানায়, সুদীর্ঘ সময় ধরে ধনীদের অর্থ গোপনে জমা রাখার জন্য বিখ্যাত সুইজারল্যান্ড। ৮০ লাখ মানুষের এ দেশটিতে ব্যাংক আছে ২৮৩টি। বিশ্বের বড় বড় ধনীরা অর্থ পাচার করে দেশটির বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোতে জমা রাখে। ব্যাংকগুলোও কঠোর গোপনীয়তায় তা রক্ষা করে। আগে সুইস ব্যাংকে জমা টাকার কোনো প্রতিবেদন প্রকাশ করা হতো না। এমনকি আমানতকারীর নাম-ঠিকানাও গোপন রাখা হতো। একটি কোড নম্বরের ভিত্তিতে টাকা জমা রাখা হতো। কিন্তু বিশ্বব্যাপী টাকা পাচার রোধে মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ আইন ব্যাপকভাবে কার্যকর করায় আন্তর্জাতিক চাপে সুইস ব্যাংক জমা টাকার তথ্য প্রকাশের সিদ্ধান্ত নেয়। ফলে তারা ওই সময় থেকে বিভিন্ন দেশের জমা টাকার তথ্য প্রকাশ করছে। ওই প্রতিবেদনে কোন দেশের কত টাকা জমা আছে সে তথ্য তারা প্রকাশ করছে। তবে আমানতকারীদের নাম-ঠিকানা প্রকাশ করছে না। ফলে পাচারকারীদের মুখোশ উন্মোচিত হচ্ছে না। পাচারকারীরা পর্দার আড়ালেই থেকে যাচ্ছে। টাকা পাচার : অর্থনীতির স্বাভাবিক নিয়ম অনুসারে সঞ্চয় ও বিনিয়োগের মধ্যে ভারসাম্যহীনতায় পুঁজি পাচার হয়। এ হিসেবে দেখা গেছে, দেশে সঞ্চয় বাড়ছে, কিন্তু বিনিয়োগ বাড়ছে না। ওই টাকা দেশ থেকে পাচার হয়ে যাচ্ছে। নানাভাবে টাকা পাচার হচ্ছে। পণ্য আমদানির নামে ঋণপত্রের মাধ্যমে। কম দামে কম পণ্য এনে দেনা শোধ করা হচ্ছে বেশি দাম বা বেশি পণ্য দেখিয়ে। রফতানি পণ্যের একটি অংশের মূল্য দেশে আসছে না। ওই টাকাও পাচার হয়ে যাচ্ছে। দেশ থেকে হুন্ডির মাধ্যমে টাকা পাচার হচ্ছে। নগদ ডলার বা স্বর্ণের মাধ্যমেও দেশ থেকে টাকা চলে যাচ্ছে বিদেশে। এছাড়া চিকিৎসা ব্যয়, বিদেশ ভ্রমণ, লেখাপড়ার খরচ এসব মাধ্যমেও টাকা পাচার হচ্ছে। সীমান্ত এলাকা দিয়ে চোরাচালানের মাধ্যমেও টাকা পাচারের ঘটনা ধরা পড়েছে। সাম্প্রতিক সময়ে মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে টাকা পাচারের ঘটনা আবিষ্কৃত হয়েছে। ওয়াশিংটনভিত্তিক প্রতিষ্ঠান গ্লোবাল ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টিগ্রিটি (জিএফআই) রিপোর্ট অনুসারে ২০০১ থেকে ২০১২ সাল পর্যন্ত এক যুগে বাংলাদেশ থেকে ২ হাজার ১৩ কোটি ডলার পাচার হয়েছে। স্থানীয় মুদ্রায় যার পরিমাণ ১ লাখ ৬১ হাজার কোটি টাকা, যা দিয়ে ৬টা পদ্মা সেতু বানানো সম্ভব। আলোচ্য সময়ে দেশে সরাসরি বিদেশী বিনিয়োগ (এফডিআই) এসেছে ৯০৩ কোটি ডলার। স্থানীয় মুদ্রায় যার পরিমাণ ৭২ হাজার ২৪০ কোটি টাকা। অর্থাৎ যে পরিমাণ এফডিআই দেশে এসেছে তার চেয়ে দ্বিগুণের বেশি অর্থ দেশ থেকে পাচার হয়েছে। জিএফআইয়ের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০১২ সালে দেশ থেকে পাচার হয়েছে ১৭৮ কোটি ডলার। স্থানীয় মুদ্রায় যার পরিমাণ ১৪ হাজার ২৪০ কোটি টাকা। ২০১১ সালে পাচার হয়েছিল ২৮০ কোটি ৫০ লাখ ডলার বা ২২ হাজার ৪৪০ কোটি টাকা। ২০১০ সালে পাচার হয়েছিল ২১৯ কোটি ১০ লাখ ডলার বা ১৭ হাজার ৫২৮ কোটি টাকা। ওই এক বছরে দেশ থেকে টাকা পাচার বেড়েছে ২৮ শতাংশ। আলোচ্য সময়ে গড়ে প্রতি বছর গড়ে ১৬৭ কোটি ৭৮ লাখ ডলার বা ১৩ হাজার ৪২২ কোটি টাকা দেশ থেকে পাচার হয়েছে। সুইস ব্যাংকের পরিচিতি : সুইস ন্যাশনাল ব্যাংক (এসএনবি) হল সুইজারল্যান্ড সরকারের কেন্দ্রীয় ব্যাংক। বিশেষ আইন দ্বারা পরিচালিত এই ব্যাংকটির নীতিনির্ধারণ সবই স্বাধীনভাবে পরিচালিত হয়। ২শ’ বছরের পুরনো ইউরোপের এ প্রতিষ্ঠানটি মুদ্রা পাচারকারীদের নিরাপদ স্বর্গ। ১৮৯১ সালে সুইজারল্যান্ডে সংবিধানে অন্তর্ভুক্ত একটি ধারার অধীনে ১৯০৭ সালে স্বাধীন কেন্দ্রীয় ব্যাংক হিসেবে কার্যক্রম শুরু করে। এরপর থেকে ব্যাংকটির মুদ্রানীতি এবং সুশৃংখল কার্যক্রম বিশ্বের উন্নত দেশগুলো অনুসরণ করে। তবে পাচারকারীদের আশ্রয় দাতা হিসেবে আন্তর্জাতিক মহলে দেশটির পরিচিতি রয়েছে। ব্যাপক সমালোচনার মুখে ২০০২ সাল থেকে দেশভিত্তিক আমানতকারীদের তথ্য প্রচার শুরু করেছে তারা। যেসব দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সঙ্গে সমঝোতা চুক্তি রয়েছে, সেসব দেশের ব্যক্তিগত পর্যায়ে তথ্য দেয়া হয়। এর কারণে সাম্প্রতিক সময়ে বিদেশীদের আমানত কমেছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের এই সুযোগ থাকলেও তা ব্যবহার করা হচ্ছে না। ফলে বাংলাদেশীরা এখনও পাচার করা টাকা রাখার নিরাপদ স্থান হিসেবে মনে করে। আইন সংশোধন হচ্ছে : আন্তর্জাতিকভাবে ব্যাপক সমালোচনার মুখে সুইজারল্যান্ডের ব্যাংকগুলোতে আমানতকারীদের গোপনীয়তা রক্ষার বিষয়ে প্রচলিত আইনের সংশোধন করার উদ্যোগ নিয়েছে সে দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংক। ইতিমধ্যে এ বিষয়টি নিয়ে সে দেশের ব্যাংকগুলোর সঙ্গে বৈঠক করেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। আইনের খসড়াটি এখন ব্যাংকাররা পর্যালোচনা করে দেখছেন। আইনের সংস্কার হলে সুইস ব্যাংকে রাখা আমানতের তথ্য কিছুটা হলেও পাওয়া যাবে বলে মনে করা হচ্ছে। এদিকে গত বছর সুইস ব্যাংকের প্রতিবেদন প্রকাশিত হলে এটি সারা বিশ্বে ব্যাপক আলোচিত হয়। বাংলাদেশেও এটি ব্যাপকভাবে আলোচনায় আসে। ফলে কেন্দ্রীয় ব্যাংক সুইস ব্যাংকে চিঠি দিয়ে কারা টাকা জমা রেখেছে তাদের তালিকা চেয়েছিল। কিন্তু এখনও এ ব্যাপারে সুইস ব্যাংক কোনো সাড়া দেয়নি। সুইস কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সঙ্গে একটি সমঝোতা স্মারক করার জন্য বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে চিঠি দেয়া হয়েছে। এ ব্যাপারেও কোনো সাড়া মেলেনি। এইচএসসিবির মাধ্যমে বাংলাদেশ থেকে টাকা পাচারের ঘটনা প্রকাশিত হলে সুইস কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কাছে তালিকা চেয়ে চিঠি দেয়া হয়েছিল। কিন্তু তারও কোনো সাড়া মেলেনি।  

No comments:

Post a Comment